গল্প- 'অনেক দিন আগের দিনেরা' by রনি আহম্মেদ
বলা যায় দানেশ স্মৃতির পথে ভাবছিল… গাছের ডালপালার ধাঁধা দিয়ে রোদের ছটাগুলো ঘষামাজা পেতল তীর, বেরিয়ে আসছিল স্থির… তার শৈশবের ফেলে আসা গ্রামের কথা… তীর গেঁথে যাচ্ছিল সামনের ছোট লনটার ছোট ঘাসের গোড়ায়।… সে জানে এবং সে জানে না গ্রামটা ছিল অন্য কোথাও, যেখানে ছিল তার চেয়েও বেশি কোথাও… কাছেই ধাঁধার ভেতর থেকে দাঁড়কাক উঠেছিল ডেকে… বিদ্ধ রোদের দিকে সে তাকালে আশা করা সম্ভব পানি দিয়ে রোদগুলো ধুয়ে সাফ করে দেয়া সম্ভব।… কাকটা যখন ডাকলো তখন সে দেখতে পেলো এবং দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।… রোদগুলো প্রায় ধুয়ে আসছে, সবুজ চোখা ঘাসে পানির সাথে মিশে যাওয়া রোদের মিশ্রণ কাঁপছে সোনালী রং-এ। রোদ কেঁপে কেঁপে ধোঁয়াটে অস্বচ্ছতায় উঠে আসছে সেই অন্য গ্রামটা… হঠাৎ কাকটা গাঙচিলের ভঙ্গিতে উড়ে বসেছিল পাশের বাসার শ্যাওলা ধরা কার্নিশে।… সুতরাং চোখ নিঃশব্দে প্রবেশ করে গ্রামের ভেতর।… কাকটা আবার উড়ে বিদায় নিয়েছিল, যা ছিল এক চিলতে মেঘ/এক খণ্ড গ্রানাইট।… রুপালী দীঘিটা, রোদে ঝিকমিক, আকাশে যখন সাদা গর্ত — থাকবে চাঁদ — দীঘিটা হবে তীক্ষ্ণ আরও।… লনের ঘাসে কাঁচা সবুজ ঘাসফড়িং আসে। ফড়িংটার অবস্থান দুর্ভাগ্যপীড়িত — সেও হয়ে যাচ্ছে ঘাস।… চোখের সামনে, চোখের ভেতরে এবং কোথাও নয়, এক ফোঁটা উলঙ্গ ছেলের উপস্থিতি ধরা পড়ে, জটাধারী এবং মাংসের হৃদয় থেকে উঠে আসা তার গায়ের আন্তরিক রং, ইঁদুর ছানার মত লিঙ্গ তার — সে দাঁড়িয়ে পুকুরপাড়ের প্রকাণ্ড পাথরের উপর। পাথরটা কোনো কিছুর প্রতীক্ষায় অনেক দিনে নিজের ভেতর যে কিছুটা জীবন আনেনি অন্যমনস্ক লোক ছাড়া কেউই তা জোর দাবি করবে না। দৃষ্টির আনন্দ দেহে ছড়িয়ে সেই পাথর থেকে/খাঁ খাঁ পাথর থেকে ঝাঁপ দেয় রুপালী দীঘির দৃষ্টিপথে ফলে বাতাস চিৎকার করে এবং সে দীঘি পিঠে সাঁতরে যায় প্রায় আজীবন।… ফড়িংটাকে শনাক্ত করার মত যন্ত্র আর নেই। সে বিনা কারণে পাশের গোল বেতের টেবিলে পড়ে থাকা ধর্মীয় গ্রন্থটি তুলে নেয়।… একসময় ছেলেটি ক্লান্ত হয় ও দীঘি থেকে উঠে আসলে তার শরীরের এসব ওসব বেয়ে পড়তে থাকা পানির ধারার শব্দও শোনা যায়। ছেলেটি এবার গা ঝাড়া দিয়ে কয়েকটি বলশালী মহীষ হয়ে গ্রামের সবুজ ছায়ায় ধূলো উড়িয়ে মুছে যায় এবং তাদের অনুসরণ কাজ শেষে দেখতে হয় প্রান্তর। প্রান্তর দিগন্তের উপরের মেঘগুলো একশোভাগই কাল্পনিক। সে কারণে তাদের প্রকটতা সামান্যও কম নয়।… গ্রন্থটির পাতার লেখাগুলোর প্রতিটি লাইনই অনবরত অসংখ্য দিগন্ত ছাড়া কিছু নয়। মৃদু বাতাসে হাতে মেলে ধরা গ্রন্থটির পাতা উল্টে যাচ্ছিল। দানেশের বিয়েতে তার এক মুসল্লী বন্ধু লিন্ডাকে এটা উপহার দেবার পর, চিরকালই গ্রন্থটি বুকসেল্ফের কোনায় পড়ে থাকার ফলে সামনের ও পেছনের মলাটে অপরিচিত মাছের মোটা আঁশ গজিয়ে ওঠে। কাল রাতে বেশ কিছুটা পরিশ্রমের পর ছোট চাকুটা দিয়ে আঁশগুলো ছাড়ায় দানেশ। এরপর আঁশগুলো বয়েমে ভরে ডীপ ফ্রীজে রেখে দেয়। আঁশবিহীন ভারমুক্ত বইটা পড়বার ইচ্ছা থাকলে দু তিন পেইজ পড়া হয় মাত্র। পুরো মনোযোগ ইদানিং কিছুতেই দেয়া যায় না এবং ব্লুফিল্মেও। লিন্ডা ও সে যখন কোনো রাতে উত্তেজনায় মাত্রা যোগ লোভে ব্লুফিল্ম দেখে তখন দেখা যায় দানেশের মাথার চুলগুলো প্রবল একঘেয়েমিতে লম্বা হতে শুরু করেছে, লম্বা হতে হতে পুরো ঘরটাই একেবারে ঠেঁসে বোঝাই করে ফেলেছে আর লিন্ডা সেই চুলের ভেতর জট পাকিয়ে আত্মমিথুনরত — ব্লুয়ের গ্রুপ সেক্স তখন একটি বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যাওয়া ফটোগ্রাফ, ফিল্ম শেষে দানেশের মোলায়েম চুল স্বাভাবিক মাপে ফিরে আসে এবং আত্মমিথুনে ক্লান্ত লিন্ডার ঘর্মাক্ত শরীর জটমুক্ত, দানেশ তখন পারস্পরিক মিথুনের জন্য ঝাপ দেয় সুতরাং এবার ঠঈজ টা বন্ধ করো! রাত জেগে গ্রন্থটি পড়ার চেষ্টা করার জন্য লিন্ডার সাথে বোধহয় কথা কাটাকাটিও হয় কিছুটা। বাতি জ্বালালে লিন্ডার আবার ঘুম আসতে চায় না — মুশকিল।
“তুমি টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করলেই তো পারো। আমার ঘুমের সুবিধা হয়।”
“চোখ বন্ধ করে ঘুমাবে।”
একদম হালকা কণ্ঠে দানেশের তামাশা। কিন্তু লিন্ডা ওভার রিঅ্যাকশনে পিঠ ঘুরিয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই লিন্ডা চমকে দিয়ে খিল করে হেসে ওঠে।
“কী হলো, হাসছ কেন?”
লিন্ডা নিরব — উত্তর দেয় না। দানেশ তখন, ‘তোমা কর্তৃক কিছু হবে না’ এরকম ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে ডানে বামে — এবং এই মাথা নড়ানোতে তার কোনো হাত ছিল না। হয়তো সে আগে কোথাও কাউকে মাথা নাড়তে দেখেছে আর সেই অনুর্বর মুহূর্তে সেটাই সে করে ফেলে।
তুচ্ছ আচরণের কোনটি দানেশের ভবিষ্যৎ আচরণে প্রভাব ফেলবে সেটা সে যেমন জানে না তেমনি জানে না আর সবাই। আবার হতে পারে সবারই জানা।… কাল্পনিক প্রকট মেঘগুলোর পিঠ ফেঁসে ওঠে মাস্তুল — সে সব মাস্তুলে ফুটে ওঠে সাবলীল নীলচে পাল, আর মহিষেরা ঘাসহীন লালচে প্রান্তর দিগন্তে একটানা স্থির তাকিয়ে তখন। তারা জ্ঞানী হয় যখন বোঝে তারা অনন্ত এবং ক্ষণস্থায়ী। প্রান্তরের এদিক ওদিক আকাশছোঁয়া পাতাহীন বটগাছগুলো অক্টোপাসের মত ডালপালা ছড়িয়ে বহুশতকের শ্রান্তিতে দাঁড়িয়ে আছে কোনোরকম। সেখানেই কোথাও জীর্ন সাইনবোর্ডে লেখা থাকে কয়েকটি নাম — কিন্তু তাদের পাঠোদ্ধার আত্মহত্যা করলেও সম্ভব নয়। হাওয়া বয় আর ফুলে ওঠে নীলচে পাল এবং শেষ পর্যন্ত সরতে থাকে পরিববর্তনশীল গন্তব্যে। আলো মহিষদের জাপটে ধরে পড়ে যায় মাটিতে ছায়া হয়ে — মহিষদের ভাবঘন কষা চোখে স্বপ্ন উঠে আসে, জমে ওঠে। মহিষদের দেহ স্বপ্নের ব্যাপক ভরে দেহের কোনো বিন্দুতে সংকুচিত হয়ে কেন্দ্রীভূত হতে চায় — তারা মুখ উঁচু করে একটি সর্পাকার আর্তনাদ নীলিমায় পাঠিয়ে দিলে ধাতব গুণাগুণ সম্পন্ন আর্তনাদটি সূর্যকে সমস্যায় ফেলে, সূর্যের পরিসীমায় অস্থিরতা আসে — সেখান থেকে হলুদাভ তামাটে গন্ধবিহীন লালা ঝরতে থাকে — সেই লালা শোঁ শোঁ শব্দে কম সময়ে ডুবিয়ে দেয় প্রান্তর।… অনেক রাতে ঘুম ভেঙে গেল। দেখা গেল বাতি না নিভিয়েই গ্রন্থটির উপর ঝুঁকে ঘুমিয়ে গেছে কখন। লিন্ডার মাথার কাছের চুপচাপ বেড সাইড টেবিলটায় চোখ যায় তখন। ঘুমের বড়ির শূন্য স্ট্রাপ পড়ে আছে। পাশে খালি গ্লাস আধখালি ক্রিস্টাল জগ। লিন্ডা খেয়ে ঘুমিয়েছে। সে অভ্যস্ত নয় তবু মাঝে মধ্যে খায়। মাঝখানে কাচ খাওয়ার অভ্যাস হয়েছিল লিন্ডার। কাচের রঙিন চুড়ি, চাইনিজ ফ্লাওয়ার ভাস, কাজ করা গ্লাস প্লেট, ক্রিস্টালের ডেকোরেশন পীস — এ ধরনের দৃষ্টিমনোহর কাচদ্রব্য ভেঙে ছোট টুকরো করে ভাতের সঙ্গে খেতো। ঠোঁটে দেখা দিতো সুন্দর সব ক্ষত। লিন্ডার থুতনী বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তো ভাতের থালায় গলিত গোলাপের মত। দানেশ ফরাসি চুম্বনে হারিয়ে যেত সেই ঠোঁটের ভেতর — সে মুহূর্তে সে সবচেয়ে সরল। হঠাৎই একদিন কাচে অরুচি এসে যায় লিন্ডার।
দানেশ জড়তা নিয়ে বাতি নেভাবে বলে ওঠে। স্যান্ডেলের খস খস শব্দে লিন্ডার ঘুম ভেঙে যায়, ওর পাতলা ঘুম, বড়িতেও কাজ হয় না; ভেঙে যায়। লিন্ডা তবু ঘুমের উপর ভাসতে ভাসতে শুধুমাত্র চেতনার দূরবর্তী ছায়ায় মাখামাখি হয়ে জড়ানো কণ্ঠে বলেছিল, “বাতিটা নিভেয়ে দাও।” দানেশ বাতি নিভিয়ে ফিরে এসেছিল বিছানায়। আঁধারে তার হাত লিন্ডার খোঁজ করে, আর স্পর্শ করে লিন্ডার নীল স্লিপিং গাউনের ঘাড়, তার মিথুনের ইচ্ছা হয় — তার পাঁচটি আঙুলের ডগায় একটি করে পাঁচটি চোখের জন্ম হয়। কালো উষ্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থেকে নিজেদের ইচ্ছাগুলো গুটিয়ে নেয় কিন্তু হাতটা সে সরায় না, বাঘের নখের মত থাবার ভেতর পঞ্চ চোখ ঢুকে গেলে শৈশব এসে দাঁড়ায়। মা, মায়ের সাথে ঘুমাবার সময় অন্ধকারে যখন তার ভয় করতো সে মায়ের শরীর ছুঁয়ে নিত, নিশ্চিন্ত ভয়হীন হয়ে ঘুমিয়ে যেত আবার আর দানেশ জানে না ছনের উপর দিয়ে বয়ে যেত নদীর বাতাস, সে হাওয়া তাদের ভিটা পেরিয়ে কোনো শষ্যক্ষেতের গায়ে ফুঁ দিয়ে দিত; আন্দোলিত শস্যক্ষেতের মত সেও আন্দোলিত ঘুমে-স্বপ্নে।
“হাত সরাও না।”
ঘুমে ভাসতে ভাসতে লিন্ডা আপত্তি করেছিল। দানেশ চমকে অপ্রস্তুত হয়ে হাতটা সরিয়ে নিলেও স্লিপিং গাউনের ঘাড় মাংসসহ ছিঁড়ে গিয়ে তার হাতে লেগে গিয়েছিল — কিছুক্ষণ পরে লিন্ডা কোথাও খসে পড়ে গেলে আবারও শৈশব ঘরে প্রবেশ করে।
প্রতিদিন গ্রামের শেষ মাথায় স্কুল থেকে হেঁটে ফিরে ক্ষুধার্ত কণ্ঠে ‘মা’ বলে উচুস্বরে ডেকেছে, সে ডাকে মা-এর কী প্রতিক্রিয়া হত সেটা আর মনে নেই। কারণ স্মৃতির ভবিষ্যৎ এরকম অনিশ্চিত একটা সময়ে স্মৃতির অতীত মুছে বা বদলে যেতে পারে সম্পূর্ণই। যতদুর সম্ভব মা ডাক শুনে মা হাসতে থাকতো, কিন্তু সেই হাসিটা অন্য সব হাসির মত ছিল না, হাসিটার সাথে ভবিষ্যতের সম্পর্ক ছিল। তবে সেই অসরল মুহূর্তে সময়ের বাইরে অতীত বর্তমানের ককটেলে সে লিন্ডাকে মা জ্ঞান করে ডেকেছিল ‘মা-আ’ কিন্তু ভাসতে থাকা লিন্ডা অনেকদিন আগে ডুবে যায়।… প্লাবিত প্রান্তর থেকে মহিষদল নিজেদের টেনে হিঁচড়ে গ্রামের দিকে নিয়ে চলে।… গ্রন্থটির লেখা ঝাপসা লাগছে। চোখের কি বারোটা বাজছে? সেদিন লিন্ডাকেও সে চিনতে পারেনি; ভেবেছিল তার শৈশবের কুয়োতলায় কড়ই গাছের ডালে গলায় ফাঁস দেয়া ছোট চাচি। ছোট চাচি মূল বাসস্থান হতে বিচ্ছিন্ন একটা ঘরে জাম গাছটার উত্তর পাশে থাকত। মাথা ছিল পুরোই ছিটাল। নিচু স্বরে মশার মত কাঁদতো আর তর্জনী ঝাঁকিয়ে অদৃশ্য কাউকে নিঃশব্দে শাঁসাত, মারপিট করত। কথা বলত খুব, একা একা নয় নিজের চুল থেকে লালচে কালচে উকুনগুলোর সাথে। বলতে বলতে হঠাৎই আঙুলের ঢেঁকি তৈরি করে টিপে মারত। একমাত্র মাকে সহ্য করতে পারতো সে, কেন করতে পারতো দুজনের একজনকেও জিজ্ঞেস করা হয়নি… গ্রামে শীত আস্লে চটকদার লাল কমলা নকশা করা নৌকায় আসতো ইরু বয়াতীর দল। ইরু পাগলা বলতো সবাই, কাযেম মাঝির ভাস্তে ছিল সে। ইরু পাগলার মাথা থেকে কল কল শব্দে কালো ঝর্না পিঠের গিরিখাত হয়ে থেমেছিল কোমরে, কালো মুখটা ছিল লোহার, হাতের আঙুলগুলো রবারের। আণবিক ব্যাঙের ছাতার মত বটগাছ যার তলেই পাগলার আসর চলতো শেষ রাত অবধি। লোহার মুখমণ্ডলে চাঁদের আলো, আঁধারের বিরুদ্ধে ছিল তা মৃদু অভিযোগ আর রবারের আঙুলগুলো একতারাটায় ব্যাস্ত হাটুরের দ্রুততায় হেঁটে যেত। ভাঙে আফিমে চূড় হয়ে যাওয়া গায়ক শ্রোতারা আধ্যাত্মলোকের সন্ধানে এত ভারি হয়ে যেত যে তাদের বাসায় পৌঁছাবার জন্য দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হত। দেখা যেত ব্যায়ামপুষ্ট কিছু লোক ভোরের হালকা আঁধারে প্রায় অচেতন অস্পষ্ট কিছু লোককে দড়ি বেঁধে টেনে হেঁচড়ে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে এবং তারা দেহের টানে মাটিতে রেখে যাচ্ছে থেতলে যাওয়া সাপের মত দেহছাপ। গ্রামটার চেহারা ছিল বোকার মত। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘরবাড়ি অতিরিক্ত সরলতায় এদকি ওদিক ছড়ানো ছিটানো আর উপর কৃত্রিম-অকৃত্রিম আকাশ — আষাঢ়ে মূষল নামাত বৃষ্টি। পুরানো আম বাগানটা পেরিয়ে ছিল ভাঙা নামহীন জমিদারবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। সেই পরিত্যক্ত সবুজাভ দালানটাতে একবার লাশ পাওয়া যায়, ডাকাতদের কাজ। লাশের মুণ্ডু ছিল না। দাফন করা হয় গাজীর বাড়ির বেশ কিছুটা দক্ষিণে — বাবা দানেশকে সে লাশ দেখতে দেয়নি — দানেশ কল্পনা করে নিয়েছিল। পরে যখনই সে প্রগাঢ় নিরবতায় ঝোপঝাড়ে দুর্বোধ্য সবুজাভ দালানটায় গিয়েছে সে লাশটাকে খোঁজার চেষ্টা করেছে। ফলে সে লাশটাকে প্রায়ই দেখতে পেয়েছে, অন্যেরা সে সুযোগ পায়নি।
গ্রামের একদিক দিয়ে ক্ষীণস্রোতা ‘তকশা’ বয়ে যেত। মসজিদের পথে প্রতিদিন বাপের হাত ধরে যেতে যেতে ঘাটে বাঁধা নৌকাগুলো লক্ষ্য করেছে ও। একটা না একটা গয়না নৌকাকে প্রাধান্য দিয়ে ঘিরে থাকতো কিছু ডিঙ্গি নৌকা। গঞ্জ থেকে ক্ষুদ্র-মাঝারী ব্যবসায়ীরা রবিবারের হাটে জমা হত নদীপথে। বেদেরা আসতো বিবিধ প্রজাতির সাপ নিয়ে।
একবার বেদেদের দল রবিবারের হাটে ফেলে গেল এক বেতের জুড়ি। কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল ঝুড়ির ভেতর থেকে। খুলে দেখা গেল ওটার ভেতর দুমাথাওয়ালা একটি শিশু। শিশুটির হলুদাভ ত্বকে সাপের দেহের মত চক্রাবক্রা নকশা কাটা। এঘটনায় গ্রামে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু গাজীর ছোট মেয়ে শিশুটিকে দত্তক নেয়। ছমাস সব ঠিকই ছিল, ছমাস পর মা ও শিশু কোন জনারণ্যে হারিয়ে যায় কেউই তা বলতে পারে না — সম্ভবত আজ পর্যন্ত।
অবশ্য এত কিছু স্মরণে আসে না। আবার সবকিছুই স্মরণে চলে আসে, কারণ স্মৃতি সরে না মানুষ সরে আসে। তার মনে পড়ে সেই ডিসেম্বর মাসেই বাবার হাপানী তীব্র হয়ে পড়তো। এরকমই কোনো হাঁপানীতে মধ্যশীতে তার বাবার মৃত্যু হল। বাপের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পুরো কাফনে পবিত্র কুরআনের কিছু মূল্যবান আয়াত লিখে কবর দেয়া হয় মাটির ১২ ফুটি গভীরে। সেই থেকে সে একা চলছে, গ্রাম ছেড়ে কি না ছেড়ে এসে পৌঁছেছে বিদেশি কোম্পানীর মাঝারী চাকরিটায়। এই সেদিনই / এই সেদিনও দানেশ বাথরুমে দাড়ি কামিয়ে সদ্য পরিষ্কার মুখমণ্ডল আয়নায় দেখছিল। বাবার সাথে মিল পাচ্ছিল চেহারায়, যদিও বাবার নূরানী দাড়িটা তার নাই। মাঝে মাঝে বাবাটা যেন চেহারা থেকে বেরিয়ে আসে। নাকটা, কপাল, ভ্রুটা, চোখ, থুতনীটা মিলে গিয়েছিল। মিলে যায়। মিল থাকলেও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সে পায়নি, তার বাবা ছিল ধর্মপ্রাণ একগুয়ে গ্রাম্য ব্যক্তিবিশেষ। অথচ সে মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন আধুনিক মানুষ। ধর্ম অর্থহীন, যদিও ছেলেবেলায় তার শেকড় ধর্মের নির্যাসে বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু সে শেকর আজ মাটি বদলেছে। আচার আচরণে শহুরে গোলমরিচ ছিটানো, ফলে গ্রাম্য সকল কিছুই চাপা পড়ে গেছে কোথায় কে যেন। সে ভালো করেই জানে বাবামার সেই সহজ জীবনের না বুঝে বেঁচে থাকার আরামপ্রদ খেলাটি সে ইচ্ছা করলেও এখন খেলতে পারবে না। ফলে সে বাবা মায়ের ছায়া থেকে অনেক দূরে। তবে এটাও ঠিক কোন জীবনটা গুরুত্বপূর্ণ এটাও বলে দেয়া ঠিক না।
তবু বাবামার ছায়া বা প্রভাব থাকাটা ছিল স্বাভাবিক একটি ঘটনা, কিন্তু থাকেনি, থেকেছে অন্য অনেকের, আধুনিকতার — লিন্ডার। আয়নায় সদ্য কামানো মুখে বাবাকে সে ঠিকই পায়, কিন্তু নিজ চেহারায় পেয়েছিল এক যন্ত্রশীতল যুক্তিবাদী ছাপ, যেটা বাবার মাটির মুখে ছিল না। পল্লীর গৃহস্থ বাই মসজিদের ইমাম ভোতা গোত্রের হবে। তবু, তবু তার একটু খারাপ লেগেছিল — অযথা মনে হয়েছিল মিলটা — সমান সমান হলে ভালো হত, তার যৌক্তিক শীতলতাটা হয়তো দেয়াল, একটি দেয়াল, দুজন মানুষের জন্ম দিয়েছে যা। “কী হল তোমাকে ডেকে আমি হয়রান। তুমি শোনোনি?”
দানেশ বোঝে না কী হয় / কী হয়েছে, একটু সময় মস্তিষ্ক জনশূন্য থেকে লিন্ডাকে চায়ের কাপ হাতে ৯০ ডিগ্রি অবস্থানে টেবিলের সামনে দাঁড়ানো দেখে। চায়ের কাপের জ্যামিতিক নকশাগুলোই প্রধান হয়ে পরিবেশ শক্তিময় করার দায়িত্ব বিনা আপত্তিতে নিয়ে নেয়।
“ও তুমি।”
“তোমার চা। রান্নাঘর থেকে ৩/৪ বার ডেকেছি।”
“কেন? ছেলেটা কোথায়, ওকে দিয়েই পাঠিয়ে দিতে।”
“না, দোকানে ডিম আনতে পাঠিয়েছি। কুমীরের ডিম।” লিন্ডা রস করার চেষ্টা করে, দানেশ হাসতে পারে না, পরপরই লিন্ডার কথায় ফিরে আসা গেল, লিন্ডা একবার রান্নাঘরে ঢুকলে বের হতে চায় না, যতটা পারে কাজের ছেলেটাকে দিয়ে বাইরের কাজগুলো করিয়ে একেবারে রান্নার ঝামেলা শেষ করে বের হয়, এটা তার নিয়ম, শিথিল শক্তের মাঝামাঝি। লিন্ডার তবু কেমন মনে হয়, অন্য কোনো সময় চায়ের জন্যে কাজের ছেলেটার অনুপস্থিতে সে দানেশকে ডাকে না, ডাকাটা ভদ্রতায় বাঁধে। নিজেই চলে আসে চা-টা নিয়ে। আজ ডাকলো কেন? ভুলে গিয়েছিল? নাকি কোনো গোপন বিরক্তি, দানেশের প্রতি, যার ফলে চতুর ক্রোধ তাকে এ কাজ করিয়ে নিয়েছে? কিন্তু আমরা জানি ঘটনাপ্রবাহ মানুষকে দিয়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় আচরণে বাধ্য করে, কেননা ঘটনাপ্রবাহ নিজেই তেমন কোনো অর্থ ধারণ করে না — অর্থ টেনে বের করা হয়। সে তার হালকা ভুলটাকে কোথাও পাঠিয়ে দিয়ে নিচের ঠোঁটটাকে সামান্য নামিয়ে দানেশের দিকে চা-এর কাপ এগিয়ে দেয় এবং পাশের চেয়ারে বসে পড়ে।
“তোমার ছুটি কিন্তু শেষ হয়ে আসছে।”
“কীসের ছুটি?” প্রশ্নটাতে লিন্ডার মুখে আবছা উজ্জ্বলতা আসে। উজ্জ্বলতা আসবে, সে এখন দানেশের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু বলতে যাচ্ছে যা বলতে যাচ্ছে তা তাকে বুঝতে হয়েছে, মানুষের স্বভাব যেমন কিছু বুঝলে কমবেশি খুশি হয়ে ওঠা।
“তুমি এত অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড হয়ে যাচ্ছ। কীসের আবার ছুটি, বলো তো কীসের?”
“অফিস, অফিসের।”
দানেশের মনে হলো প্রশ্নটার উত্তর না দিয়ে নিরবে মুখভঙ্গি দিয়ে বুঝিয়ে দিলে ব্যাপারটা ভারসাম্য পেত, উত্তর দেয়ায় সে যেন কিছুটা নির্বোধ সরলতা প্রকাশ করে ফেলেছে।
দাঁড়কাকটা আবার ফিরে আসে। কোথায় গিয়েছিল? গ্রানাইটটা কি লনটার পোষা? তার মায়ের মত লিন্ডাও দাঁড়কাকে সহ্য করতে পারে না। হয়তো অমঙ্গল মনে করে। সামান্য কুসংস্কার দুকালের দুই মানুষকে কী রকম এক ফ্রেমে বেঁধে ফেলল সেকেন্ডের জন্য, তাই না?… তারপর ছেলেটি আবারও নিভাজ রুপালি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে ধারালো শব্দ বাতাসকে চিড়ে ফেলে। ছেলেটি এরকম পানিতে সাঁতরে যাবার চেষ্টা করে ফলে সে সক্ষম না হলে হাতপা নাড়িয়ে ভেসে থাকার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে দুঃখজনক সত্যতে তলিয়ে যাবার সূচনা করে রুপালি পানির তলপেটে।… লিন্ডা যখন আঁশমুক্ত গ্রন্থটা দানেশের হাত থেকে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে যাবে তখনই দাঁড়কাকটা সবাইকে চমকে দিয়ে গগণ পর্যন্ত ডেকে উঠলে লিন্ডা কাকটা তাড়ানোর জন্য হুস হুস শব্দ করলে দাঁড়কাকটা কী করে? কাকটা গাঙচিলের ভঙ্গিতে উঠে পাশের বাড়ির কার্নিশে বসে আবারও ।… স্বপ্নপুষ্ট দেহ বলেই সে ডুবে যায়, কারণ আপনাদের অনেকেরই জানা আছে স্বপ্নের অসাধারণ প্রাবল্যের কথা… লিন্ডা বইটায় চোখ রাখলে তাকে হাসতে হয়। হাসতে হাসতে বলতে হয়, “আমি তো খেয়ালই করিনি তুমি মকসুদুল মোমেনীন নিয়ে বসেছো। তোমার মত পাপী পাপ ত্যাগ করলো কেন?”
“করেনি। আমার মাকে সবসময় এটা নাড়াচাড়া করতে দেখতাম।”
“মাকে মনে পড়ছে খুব?” কণ্ঠস্বরে সহানুভূতি। কিন্তু দানেশের সন্দেহপ্রবণ অনুভূতি বলে ওঠে, হয়ত এটা ব্যঙ্গ।
“হ্যাঁ। কিন্তু দুতিন পাতা পড়তে পেরেছি।”
“কাল তো অনেক রাত জেগে পড়ছিলে।” “না। পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, ঘুম ভেঙে লাইট নেভাই।” লিন্ডা তালু মেলে চোখের হালকা রোদ আড়াল করে। দানেশ লক্ষ্য করে বার্ধক্য লিন্ডাকে বিব্রত করেনি। দানেশকেও দেখলে ৩০/৩১ মনে হয় কিন্তু সে ৪৭/৪৮। লিন্ডা তো রীতিমতো যুবতী, যথেষ্ঠ যৌনআবেদনময়ী, তার দেখা হয়েছে, তার বন্ধুরা লিন্ডার ভৌগলিক কারুকাজ সুযোগ পেলেই চোখে বসিয়ে নেয়। আর যা দানেশের দেখা নাই তা হলো বন্ধুরা চোখে বসানো তীব্র যৌনাবেদনাময়ী লিন্ডাকে নিয়ে নিজ নিজ বাথরুমে বা কামরা বন্ধ করে এবং হস্তমৈথুন পর্ব শুরু করে, লিন্ডার উরু, নিতম্ব, বুক, ঠোঁট, পাতলা শিফন শাড়ির ভেতর দিয়ে দেখা নাভীমূল তাদের হাতের গতি নিয়ন্ত্রণ করে যতক্ষণ না বীর্য উপচে পড়ে নিষ্পাপ দেবদূতের মত। লিন্ডার দৈহিক সৌন্দর্যের তীব্রতার ব্যাপারটা প্রকটভাবে ধরতে পারে গত মাসে টিকাটুলিতে ইয়াকুবের (একুব মেটাল ড্রাম ম্যানুফ্যাকচারিং-এর মালিক) বাসায় আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য পার্টিতে। যাই হোক, এগুলো কোনো বিগ ডিল নয়। সে বুঝেছে লিন্ডা এগুলো উপভোগই করে, সে হলেও করতো। আচ্ছা, তাদের যদি এক বা একাধিক সন্তান থাকতো? তাদের জীবনধারণ অন্য হতো বোধহয়। তারা কি অনেক বুড়িয়ে যেত? জ্বী হ্যা, তাদের সন্তান হয় না। অক্ষমতা কার সেটাও তারা পরীক্ষা করে বের করতে চায় না। দাম্পত্য জীবনে জটিলতা আসতে পারে এই ভয়ে তারা জানতে চায় না তাদের ভেতর কে অক্ষম। অথচ তারা যখন একা নিজেদের চিন্তাভাবনার জগতে থাকে তখন নিজেকেই তারা দোষী মনে করে আলাদা ভাবে আবার কখনও মনে মনে একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে দায়মুক্ত অথবা বিশেষ প্রকারের মুক্তি চায়। বাড়ির কাজের ছেলেটা হয়ত তাদের অনুর্বরতার কারণে সন্তানস্নেহের কিছুটা পেয়ে থাকে। একদিন লিন্ডা কাজের ছেলেটার জন্য পনেরটা ফীডার কিনে এনেছিল, যদিও তার বয়স ১৩ বছর। লিন্ডার নির্দেশে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন তাকে চার ফিডার করে দুধ খেতে হত।
দানেশ রেডিওর মত একটি তথ্য প্রচার করে হঠাৎ। “নস্টালজিয়া। বাবামাকে মনে পড়ছে, মনে পড়ছে আমার গ্রামকে।” দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ। তারপর গোলাপী নিরবতা ভেঙে সবার অপত্তি সত্ত্বেও দানেশ বলে ওঠে, “জানো কাল রাতে আমি তোমাকে ‘মা’ ডেকেছিলাম।” কথাটা বলেই দানেশ চমকে যায়।
“কদিন পর তুমি আমাকে নানি দাদি ডাকা শুরু করবে।”
লিন্ডা হাসি চাপলো। এরই মধ্যে ঘাসফড়িংটা উড়ে আসলো টেবিলটায়। দানেশ লিন্ডার মুখোমুখি তাকাতে লজ্জা পেল। সে আলতো করে চোখ বুঁজে ফেললো। চোখের আঁধার দেখতে দেখতে সে বললো — বললো পুরোপুরি আত্মনিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় — “সরি, তোমাকে আর ‘মা’ ডাকবো না।” লিন্ডাকে নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকতে হয়। বুঝে নিতে হয় দানেশের বলার ভঙ্গিটা।
“তোমার কিছু একটা হয়েছে।”
কিছুক্ষণ রঙশূন্য নিরবতা ভাঙে না।
“আমি চাকরী ছেড়ে দিয়েছি।”
“ছেড়ে দিয়েছো?”
“হু।” লিন্ডা প্রশ্ন করে না, দানেশকে প্রশ্ন আশা করতে হয়, একটা বানোয়াট উত্তর তার আছে। উত্তর থাকবে, দানেশের অবস্থা ভালো নয়, জ্ঞান আসছে তো চলে যাচ্ছে, তবে বেশি চিন্তা করবেন না, আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি।”
“শুনবে না কেন?”
“না।”
“কেন?”
“আমি জানি তুমি চাকরি ছাড়ো নি।”
“বেশি বোঝো তুমি।”
আদিকাল থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ সকল কিছুর দাস — পরিবেশেরও। তাই দানেশ কথাটা অপেক্ষাকৃত উঁচু শব্দে বললে লিন্ডাকে নিরুপায় হয়ে ব্যক্তিত্ব আনার জন্য ভ্রু কোঁচকাতে হয়। “বুঝি। আমি ঠিকই বলেছি।”
দানেশ চুপ। লিন্ডাকে মুখ চোখ ধারালো করার সিন্ধান্ত নিতে হয়। “ঠিক বলিনি?”
“হু।”
“তুমি আমাকে এড়ানোর জন্য এসব বলছো। তোমাকে তো চিনি আমি। বলছো না বলো তো?” লিন্ডা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। দানেশ ভেবে পায় না লিন্ডা সব বুঝে ঝায় কেন। দু’একটা জিনিস বাদে।… দীঘিপিঠে মহিষ দলের গলে যাওয়া শিথিল হয়ে যাওয়া মৃতদেহ ভাসে — তাদের পূর্ণ আয়ত চোখ মৃত্যুর আকার দেখে ব্যথাতুর তাকিয়ে থাকে। গলিত সে সব দেহ থেকে নিঃশব্দে গল গল ঘন পঙ্গলে স্বপ্ন বেরিয়ে আসে, যেমন ভয়ার্ত মাছ ছুটে যায় নষ্ট কম্পাসকে নকল করে। স্বচ্ছ রুপালী পানি পিঙ্গল হলে এবং আরও পিঙ্গল হলে শেষ অধ্যায় চলে আসতে কি দেরি হয়?
না, সুতরাং আমাদের আপাত প্রতিক্ষিত শেষ অধ্যায় চলেই আসে। শেষ পর্যায়ে তরল পিঙ্গল স্বপ্নের ভেতর মৃত মহিষদল ভাসতে থাকলে একটা সময় আসে যখন চিহ্নিত করবার জন্য আপনি আর দায়িত্ব পান না।
গভীর, অতএব, রোদের ভেতর বাধ্য হয়ে দীঘিটি তার পিঙ্গল চোখ বিস্ফারিত করে তাকিয়ে থাকে শাঁই শাঁই দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া আকাশের দিকে… তবে লিন্ডার প্রশ্নটিতে দানেশ উত্তর খোঁজে। ফলাফল হয় সে কয়েকটি বেঁচে থাকা থেকে অনেকটা সরে দাঁড়িয়ে বলে দেয়, “কী জানি হবে হয়তো।” ফড়িংটা উড়ে ঘাসে ফিরে আসে, ফলে চায়ের কাপটা নিঃসঙ্গ হয় এবং সময় হাঁপায় এবং দাঁড়কাকটা একবার ডেকে হয়ে যায় অদৃশ্য এবং লিন্ডাও আবছা হয়ে আসে এবং দানেশের পিঠ ফুড়ে হয়তো দুটো কালো ডানা গজায় এবং কাজের ছেলেটি কোথা থেকে এসে সারা বারান্দা জুড়ে প্রশ্রাব করে নীতিশূন্য হয়ে এবং সবকিছুই হয়ে যায় সম্পূর্ণ ইমমোবাইল।
রচনা: উত্তরা, ঢাকা ১৯৯০-১৯৯৬
অলঙ্করণ: রনি আহম্মেদ
=====================রনি আহম্মেদ জন্ম: ঢাকা, ১২/১০/১৯৭১
রনি আহম্মেদ এর ওয়েব লিংক
=================================
গল্প- আলিমের নিভৃতিচর্চা by রাশিদা সুলতানা গল্প- প্রত্যাবর্তন: আমার ‘ফেরা’ নিয়ে যে কাহিনী না ..মানষ চৌঃ গল্প- 'বীচিকলায় ঢেকে যায় মুখ ও শিরোনাম' by আনোয়ার ... গল্প- 'প্রীত পরায়া' by সিউতি সবুর গল্প- 'চলিতেছে' by মাহবুব মোর্শেদ গল্প- 'গোপন কথাটি' by উম্মে মুসলিমা গল্প- 'রূপকথা' by লুনা রুশদী সঞ্জীব চৌধুরীর কয়েকটি গল্প গল্প- 'অস্বস্তির সঙ্গে বসবাস' by ফাহমিদুল হক গল্প- 'মঙ্গামনস্ক শরীরীমুদ্রা' by ইমতিয়ার শামীম গল্প- 'হাজেরার বাপের দাইক দেনা' by জিয়া হাশান গল্প- ‘অপঘাতে মৃত্যু’ ও ‘সাদামাটা’ by লীসা গাজী গল্প- 'দ্বিতীয় জীবন' by ইরাজ আহমেদ গল্প- 'পুষ্পের মঞ্জিল' by সাগুফতা শারমীন তানিয়া গল্প- 'একশ ছেচল্লিশ টাকার গল্প' by কৌশিক আহমেদ গল্প- 'একে আমরা কাকতালীয় বলতে পারি' by মঈনুল আহসান.. গল্প 'গহ্বর' by জাহিদ হায়দার গল্প- 'পুরির গল্প' by ইমরুল হাসান গল্প- 'নওমির এক প্রহর' by সাইমুম পারভেজ গল্প- 'মরিবার হলো তার সাধ' by আহমাদ মোস্তফা কামাল গল্প- 'নিষুপ্ত শেকড়' by নিরমিন শিমেল গল্প- 'লাল ব্যাসার্ধ্ব' by শামীমা বিনতে রহমান গল্প- 'সেদিন বৃষ্টি ছিল' by মৃদুল আহমেদ ক. কিছুদিন হয় সেই নগরে কোন বৃষ্টি হচ্ছিল না। কিছুদ.. গল্প- 'তুষার-ধবল' by সায়েমা খাতুন গল্প- 'কোষা' by পাপড়ি রহমান গল্প- 'কর্কট' by রাশিদা সুলতানা গল্প- 'তিতা মিঞার জঙ্গনামা' by অদিতি ফাল্গুনী গল্প- 'সম্পর্ক' by তারিক আল বান্না
bdnews24 এর সৌজন্যে
লেখকঃ রনি আহম্মেদ
এই গল্পটি পড়া হয়েছে...
No comments