দলীয় সিদ্ধান্তে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে: রুমীন ফারহানা by আদিত্য রিমন
বিএনপি
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে শপথ নেবেন না, সরকার তা আগে থেকেই
জানতো বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমীন ফারহানা। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে
তিনি বলেন, ‘সরকার এটাও জানতো যে, বিএনপির চার সংসদ সদস্য শপথ নেবেন।
কারণ, শপথ নেওয়ার জন্য আগে থেকেই তাদের ওপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।’ তবে তার
নিজের ওপর কোনও চাপ ছিল না। দলীয় সিদ্ধান্তেই তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন বলে
জানান রুমীন।
গত ২৮ মে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হিসেবে রুমীনের নাম ঘোষণা করে।
বিএনপির এমপিদের শপথগ্রহণ, দলের সাংগঠনিক অবস্থান ও নেতৃত্ব এবং আগামী দিনের আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন রুমীন ফারহানা।
বাংলা ট্রিবিউন: কারও চাপে নাকি দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে শপথ নিয়েছেন?
রুমীন ফারহানা: শপথ নেওয়ার জন্য আমাদের এমপিদের ওপর তীব্র চাপ ছিল। আশ্চর্যের বিষয়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন যখন বললেন চার জন শপথ নেবেন, ঠিক চার জনই শপথ নিয়েছেন। কখনও বলেনি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেবেন। অর্থাৎ সরকার আগে থেকেই জানতো— কারা শপথ নেবেন। কাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তারা তা জানেন। সে অনুযায়ী তারা কথা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে, আমরা দেখেছি।
তিনি আরও বলেন, কোনোটা কমবেশি নয়। সম্মিলিত সিদ্ধান্তে শপথ নিয়েছেন তারা। এখানে সরকারের চাপ যেমন ছিল, বিএনপির কৌশলগত সিদ্ধান্তও ছিল। বিএনপি ভেবেছে, এই সীমিত সুযোগটুকুও ব্যবহার করতে পারি আমরা, কারণ সংসদ হলো কথা বলার জায়গা।
বাংলা ট্রিবিউন: সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার জন্য আপনার ওপর কোনও চাপ ছিল কিনা?
রুমীন ফারহানা: দলীয় সিদ্ধান্তে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পদে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল থেকে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপর দলের স্থায়ী কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যৌথ সিদ্ধান্তে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
বাংলা ট্রিবিউন: বিএনপির নেতারা বলছেন, কৌশলের অংশ হিসেবে এমপিরা শপথ নিয়েছেন। সেই কৌশলটা কী?
রুমীন ফারহানা: ২৯ ডিসেম্বর ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে জাল ভোট দেওয়ার উৎসবের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন জাতীয় গণমাধ্যম যতটা না স্পষ্ট করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, দ্য হিন্দুসহ প্রত্যেকটি গণমাধ্যম বলেছে— একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। হাস্যকর এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। টিআইবির রিপোর্টেও একই কথা এসেছে। নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করে নিয়েছে, রাতে ব্যালট বাক্স ভরার একটি প্রচলন শুরু হয়েছে। একই কথা বলেছে ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরাও। বাম গণতান্ত্রিক জোটের গণশুনানিতে প্রহসনের নির্বাচনের কথা এসেছে। সুতরাং এই নির্বাচন শুধু বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেনি, আন্তর্জাতিকভাবেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি ভোট দিতে পেরেছেন? উত্তর আসবে, অবশ্যই না। আমিও ভোট দিতে পারিনি। যে নির্বাচনটি মানুষের ভোট ছাড়া হয়েছে, সেই সংসদকে বৈধতা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন আমাদের নেই। সেই কারণে শুরু থেকে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছি, এই সংসদকে আমরা জনগণের সংসদ বলে মনে করি না। তারপরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়ার কারণও দল থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
বিএনপিকে সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারগুলোও চর্চা করতে পারছি না। এক লাখ মামলায় প্রায় ২৬ লাখ নেতাকর্মী আসামি। তারা নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাদের দীর্ঘসময় সাক্ষাৎ হয় না।
বাংলা ট্রিবিউন: যে কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপি শপথ নিয়েছে, তাতে কতটুকু লাভবান হয়েছে?
রুমীন ফারহানা: আমাদের শপথ নেওয়ার সময় হলো ২০ দিন। ফলে এখনই লাভের হিসাব করাটা একটু বেশি দ্রুত হয়ে যায়। আর আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও আমি এখনও শপথগ্রহণ করিনি। আগে সংসদে যাই, তারপর বোঝা যাবে কতটুকু লাভ হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: সংসদে আপনি কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবেন?
রুমীন ফারহানা: তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আপসহীন নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। তার মামলার আইনজীবী হিসেবে আমি বলতে পারি, যদি মেরিট পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে সর্ব অর্থে তিনি জামিন লাভের যোগ্য। জামিন তার অধিকার। সেই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তার বয়স, জেন্ডার, শারীরিক অসুস্থতা ও মামলার মেরিট অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জামিন লাভের যোগ্য। শুধু সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর যে অডিও ফাঁস হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট বোঝা গেছে, নির্বাহী বিভাগের নির্দেশ ছাড়া বাংলাদেশের কোনও আদালতের সাধ্য নেই খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া। এই বিষয়গুলো নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা সংসদে কথা বলবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা কথা বলবো গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে। অসংখ্য নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। রাশেদ খান মেনন একবার বলেছেন, বাংলাদেশ এখন ধর্ষণের রঙ্গমঞ্চ। এখন অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে ৮ ঘণ্টায় ৪১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যদি একটিও ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, দেশে আইনের শাসন থাকতো, মানুষ ন্যায়বিচার পেতো, তাহলে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয় না। মাদক দমনে যেভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে, তা কোনও সভ্য দেশে হতে পারে না।
মেগা প্রজেক্টের নামে দেশে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে বলে দাবি করে রুমীন ফারহানা বলেন, ১০ মেগা প্রজেক্টে দফায় দফায় সময় ও মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার সবচেয়ে বেশি গর্ব করে। ২০০৭ সালে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন ৪০ হাজার কোটি টাকায় চলে গেছে। বিএনপির সময়ে যমুনা সেতু করা হয়েছে। তখন যে সময় ও টাকার মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল, সেই সময়ের মধ্যেই তা করা হয়েছে। এখন দেশে মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হয় দুর্নীতির জন্য। কয়েক দিন আগে রূপপুর প্রকল্পের আসবাবপত্র কেনাকাটার দুর্নীতির চিত্র আমরা দেখেছি। এসব বিষয় আমরা সংসদে তুলে ধরবো।
বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, যে কোনও ঘটনায় ভুক্তভোগী সবকিছু বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চায়। সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চায়। কেন, বাংলাদেশে আইন-আদালত, বিচার বিভাগ নাই? বাংলাদেশে যদি বিচার কাজও প্রধানমন্ত্রী করেন, নির্বাহী কাজও প্রধানমন্ত্রী করেন, আইন প্রণয়নও প্রধানমন্ত্রী করেন, কোথাও আগুন লাগলেও প্রধানমন্ত্রী লক্ষ করেন— তাহলে বিচার বিভাগ, সংসদ থেকে লাভটা কী? সবকিছু তো এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত। এইভাবে একটা রাষ্ট্র চলতে পারে না।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের কথা সংসদে কতটুকু গুরুত্ব পাবে, বা কতটুকু কার্যকর সংসদ হবে?
রুমীন ফারহানা: এখানেও আমি বলবো— দায়টা সরকারি দলের। কারণ, আমাদের দলীয় সংসদ সদস্যের সংখ্যা খুবই সীমিত। যদি ন্যায্য কথা একজনও বলে, তাহলে সংখ্যাকে প্রাধান্য না দিয়ে তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি দেশের, সাধারণ জনগণের, সরকারের ভুলত্রুটির কথা যৌক্তিকভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে একজনও তুলে ধরেন, তার জন্য যেন যথেষ্ট সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: গত ১৬-১৭ মাস ধরে খালেদা জিয়া কারাবন্দি। তার মুক্তির দাবিতে আপনারা কার্যকর কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। তাহলে কি সমঝোতার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করবেন?
রুমীন ফারহানা: সমঝোতা করা হলে ২০০৭ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। সমঝোতার রাজনীতি বিএনপি কোনোদিনও করেনি। এরশাদ বা ১/১১ সরকারের সঙ্গেও বিএনপি সমঝোতা করেনি। সুতরাং আজকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে বিএনপি সমঝোতা করবে, এই প্রশ্নই অবান্তর। আমরা বিশ্বাস করি, সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের দিকে যাওয়া। বিএনপি নিশ্চেই সেই দিকেই যাবে।
বাংলা ট্রিবিউন : কবে আপনারা আন্দোলনে যাবেন?
রুমীন ফারহানা: দিন তারিখ দিয়ে তো আন্দোলন হয় না। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, এখন তাদের বেঁচে থাকাটাই একটা বড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। সেই রকম একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা এলাকায় যেতে পারেন না, সারাদিন মামলার হাজিরা দিতেই চলে যায়, তারা গুম হয়ে যান। এই সময়ে হাত-পা বেঁধে বিএনপিকে যদি সাঁতার কাটতে বলা হয়, তাহলে সম্ভব নয়। এছাড়া, একটা স্বৈরাচার সরকারকে হটানোর দায়িত্ব একটা নির্দিষ্ট দলের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।
রুমীন ফারহানার দাবি, বর্তমানে দেশে মানুষ ভোট দিতে পারে না, ব্যাংকের টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পায় না। এগুলো জাতীয় সংকট ও সমস্যা। আগে মনে করা হতো বিএনপি করলে গুম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষও হারিয়ে যায়। যখন একটি জবাবদিহিতাহীন সরকার থাকে, তখনই এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণ দেখেই রোগ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করতে হবে। সেই রোগের চিকিৎসা কোনও একটা দলের পক্ষে করা সম্ভব নয়। দলমত নির্বিশেষে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: শিগগিরই খালেদা জিয়ার মুক্তি লাভের সম্ভাবনা দেখছেন না?
রুমীন ফারহানা: আমি মনে করি, তিনি আজকেই জামিন লাভের হকদার। তার জামিন হয়েছিলও, কিন্তু আপিল ডিভিশনে তা আটকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন নতুন মামলায় তাকে আটক দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ সরকার যে কোনোভাবে বেগম জিয়াকে জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার পাঁয়তারা করছে। সুতরাং কথা হচ্ছে সরকার তাকে বের হতে দেবে কিনা।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার নাম চূড়ান্ত করার আগে দলের স্থায়ী কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি, তাহলে আপনাদের দলের সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে হচ্ছে?
রুমীন ফারহানা: কে বললো স্থায়ী কমিটির মিটিং হয়নি? প্রত্যেকের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরামর্শ করেছেন। শুধু যে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করেছেন, তাই নয়। দেশের সুশীল সমাজ, সচেতন নাগরিকদের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। ফলে এটা কোনও একক সিদ্ধান্তে হয়নি। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এখানে দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও দলের সব পর্যায়ের নেতার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনও সিদ্ধান্ত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গেও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বে আছেন। তিনি যে কয়টি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রত্যেকটি সঠিক সিদ্ধান্ত। সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্যে আমার নাম তৃণমূল থেকে আসে। হঠাৎ করে আমার নাম আসেনি।
বাংলা ট্রিবিউন: তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে দলের চার সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন, এমনটা বলেছিলেন মির্জা ফখরুল। তাহলে তো দলের সব সিদ্ধান্ত এককভাবে তিনিই নিচ্ছেন?
রুমীন ফারহানা: দলের স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে যখন একমত হতে পারছে না, তখন তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। তিনি নিজে থেকে কোনও ভার নেননি। তখন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলাপ করার পর স্থায়ী কমিটির অনুমোদনক্রমেই সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সুতরাং তিনি যে কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা একেবারেই সঠিক নয়।
বাংলা ট্রিবিউন : সংসদে সংরক্ষিত আসন কি নারীর জন্য মর্যাদার, নাকি এতে মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়?
রুমীন ফারহানা: বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে আমাদের বিবেচনা করতে হয়। আমি কখনও সংরক্ষিত নারী আসনের পক্ষে নই। নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসবে সেটাই কাম্য। কিন্তু আমাদের বাস্তব প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমি কিন্তু নিজেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম, প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়াও হয়। পরবর্তী সময়ে যেহেতু সেখানে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সাবেক সংসদ সদস্য আছেন, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি নিজেও সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হই। তিনি জয়লাভ করেছেন। সুতরাং আমি মনে করি, ধীরে ধীরে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন কমিয়ে আনা উচিত। আমি নিজেও পরবর্তী সময়ে সরাসরি নির্বাচনের দিকে যাবো।
গত ২৮ মে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হিসেবে রুমীনের নাম ঘোষণা করে।
বিএনপির এমপিদের শপথগ্রহণ, দলের সাংগঠনিক অবস্থান ও নেতৃত্ব এবং আগামী দিনের আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন রুমীন ফারহানা।
বাংলা ট্রিবিউন: কারও চাপে নাকি দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে শপথ নিয়েছেন?
রুমীন ফারহানা: শপথ নেওয়ার জন্য আমাদের এমপিদের ওপর তীব্র চাপ ছিল। আশ্চর্যের বিষয়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন যখন বললেন চার জন শপথ নেবেন, ঠিক চার জনই শপথ নিয়েছেন। কখনও বলেনি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেবেন। অর্থাৎ সরকার আগে থেকেই জানতো— কারা শপথ নেবেন। কাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তারা তা জানেন। সে অনুযায়ী তারা কথা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে, আমরা দেখেছি।
তিনি আরও বলেন, কোনোটা কমবেশি নয়। সম্মিলিত সিদ্ধান্তে শপথ নিয়েছেন তারা। এখানে সরকারের চাপ যেমন ছিল, বিএনপির কৌশলগত সিদ্ধান্তও ছিল। বিএনপি ভেবেছে, এই সীমিত সুযোগটুকুও ব্যবহার করতে পারি আমরা, কারণ সংসদ হলো কথা বলার জায়গা।
বাংলা ট্রিবিউন: সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার জন্য আপনার ওপর কোনও চাপ ছিল কিনা?
রুমীন ফারহানা: দলীয় সিদ্ধান্তে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পদে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল থেকে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপর দলের স্থায়ী কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যৌথ সিদ্ধান্তে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
বাংলা ট্রিবিউন: বিএনপির নেতারা বলছেন, কৌশলের অংশ হিসেবে এমপিরা শপথ নিয়েছেন। সেই কৌশলটা কী?
রুমীন ফারহানা: ২৯ ডিসেম্বর ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে জাল ভোট দেওয়ার উৎসবের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন জাতীয় গণমাধ্যম যতটা না স্পষ্ট করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, দ্য হিন্দুসহ প্রত্যেকটি গণমাধ্যম বলেছে— একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। হাস্যকর এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। টিআইবির রিপোর্টেও একই কথা এসেছে। নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করে নিয়েছে, রাতে ব্যালট বাক্স ভরার একটি প্রচলন শুরু হয়েছে। একই কথা বলেছে ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরাও। বাম গণতান্ত্রিক জোটের গণশুনানিতে প্রহসনের নির্বাচনের কথা এসেছে। সুতরাং এই নির্বাচন শুধু বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেনি, আন্তর্জাতিকভাবেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি ভোট দিতে পেরেছেন? উত্তর আসবে, অবশ্যই না। আমিও ভোট দিতে পারিনি। যে নির্বাচনটি মানুষের ভোট ছাড়া হয়েছে, সেই সংসদকে বৈধতা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন আমাদের নেই। সেই কারণে শুরু থেকে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছি, এই সংসদকে আমরা জনগণের সংসদ বলে মনে করি না। তারপরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়ার কারণও দল থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
বিএনপিকে সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারগুলোও চর্চা করতে পারছি না। এক লাখ মামলায় প্রায় ২৬ লাখ নেতাকর্মী আসামি। তারা নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাদের দীর্ঘসময় সাক্ষাৎ হয় না।
বাংলা ট্রিবিউন: যে কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপি শপথ নিয়েছে, তাতে কতটুকু লাভবান হয়েছে?
রুমীন ফারহানা: আমাদের শপথ নেওয়ার সময় হলো ২০ দিন। ফলে এখনই লাভের হিসাব করাটা একটু বেশি দ্রুত হয়ে যায়। আর আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও আমি এখনও শপথগ্রহণ করিনি। আগে সংসদে যাই, তারপর বোঝা যাবে কতটুকু লাভ হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: সংসদে আপনি কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবেন?
রুমীন ফারহানা: তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আপসহীন নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। তার মামলার আইনজীবী হিসেবে আমি বলতে পারি, যদি মেরিট পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে সর্ব অর্থে তিনি জামিন লাভের যোগ্য। জামিন তার অধিকার। সেই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তার বয়স, জেন্ডার, শারীরিক অসুস্থতা ও মামলার মেরিট অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জামিন লাভের যোগ্য। শুধু সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর যে অডিও ফাঁস হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট বোঝা গেছে, নির্বাহী বিভাগের নির্দেশ ছাড়া বাংলাদেশের কোনও আদালতের সাধ্য নেই খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া। এই বিষয়গুলো নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা সংসদে কথা বলবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা কথা বলবো গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে। অসংখ্য নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। রাশেদ খান মেনন একবার বলেছেন, বাংলাদেশ এখন ধর্ষণের রঙ্গমঞ্চ। এখন অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে ৮ ঘণ্টায় ৪১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যদি একটিও ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, দেশে আইনের শাসন থাকতো, মানুষ ন্যায়বিচার পেতো, তাহলে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয় না। মাদক দমনে যেভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে, তা কোনও সভ্য দেশে হতে পারে না।
মেগা প্রজেক্টের নামে দেশে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে বলে দাবি করে রুমীন ফারহানা বলেন, ১০ মেগা প্রজেক্টে দফায় দফায় সময় ও মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার সবচেয়ে বেশি গর্ব করে। ২০০৭ সালে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন ৪০ হাজার কোটি টাকায় চলে গেছে। বিএনপির সময়ে যমুনা সেতু করা হয়েছে। তখন যে সময় ও টাকার মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল, সেই সময়ের মধ্যেই তা করা হয়েছে। এখন দেশে মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হয় দুর্নীতির জন্য। কয়েক দিন আগে রূপপুর প্রকল্পের আসবাবপত্র কেনাকাটার দুর্নীতির চিত্র আমরা দেখেছি। এসব বিষয় আমরা সংসদে তুলে ধরবো।
বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, যে কোনও ঘটনায় ভুক্তভোগী সবকিছু বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চায়। সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চায়। কেন, বাংলাদেশে আইন-আদালত, বিচার বিভাগ নাই? বাংলাদেশে যদি বিচার কাজও প্রধানমন্ত্রী করেন, নির্বাহী কাজও প্রধানমন্ত্রী করেন, আইন প্রণয়নও প্রধানমন্ত্রী করেন, কোথাও আগুন লাগলেও প্রধানমন্ত্রী লক্ষ করেন— তাহলে বিচার বিভাগ, সংসদ থেকে লাভটা কী? সবকিছু তো এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত। এইভাবে একটা রাষ্ট্র চলতে পারে না।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের কথা সংসদে কতটুকু গুরুত্ব পাবে, বা কতটুকু কার্যকর সংসদ হবে?
রুমীন ফারহানা: এখানেও আমি বলবো— দায়টা সরকারি দলের। কারণ, আমাদের দলীয় সংসদ সদস্যের সংখ্যা খুবই সীমিত। যদি ন্যায্য কথা একজনও বলে, তাহলে সংখ্যাকে প্রাধান্য না দিয়ে তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি দেশের, সাধারণ জনগণের, সরকারের ভুলত্রুটির কথা যৌক্তিকভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে একজনও তুলে ধরেন, তার জন্য যেন যথেষ্ট সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: গত ১৬-১৭ মাস ধরে খালেদা জিয়া কারাবন্দি। তার মুক্তির দাবিতে আপনারা কার্যকর কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। তাহলে কি সমঝোতার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করবেন?
রুমীন ফারহানা: সমঝোতা করা হলে ২০০৭ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। সমঝোতার রাজনীতি বিএনপি কোনোদিনও করেনি। এরশাদ বা ১/১১ সরকারের সঙ্গেও বিএনপি সমঝোতা করেনি। সুতরাং আজকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে বিএনপি সমঝোতা করবে, এই প্রশ্নই অবান্তর। আমরা বিশ্বাস করি, সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের দিকে যাওয়া। বিএনপি নিশ্চেই সেই দিকেই যাবে।
বাংলা ট্রিবিউন : কবে আপনারা আন্দোলনে যাবেন?
রুমীন ফারহানা: দিন তারিখ দিয়ে তো আন্দোলন হয় না। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, এখন তাদের বেঁচে থাকাটাই একটা বড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। সেই রকম একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা এলাকায় যেতে পারেন না, সারাদিন মামলার হাজিরা দিতেই চলে যায়, তারা গুম হয়ে যান। এই সময়ে হাত-পা বেঁধে বিএনপিকে যদি সাঁতার কাটতে বলা হয়, তাহলে সম্ভব নয়। এছাড়া, একটা স্বৈরাচার সরকারকে হটানোর দায়িত্ব একটা নির্দিষ্ট দলের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।
রুমীন ফারহানার দাবি, বর্তমানে দেশে মানুষ ভোট দিতে পারে না, ব্যাংকের টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পায় না। এগুলো জাতীয় সংকট ও সমস্যা। আগে মনে করা হতো বিএনপি করলে গুম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষও হারিয়ে যায়। যখন একটি জবাবদিহিতাহীন সরকার থাকে, তখনই এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণ দেখেই রোগ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করতে হবে। সেই রোগের চিকিৎসা কোনও একটা দলের পক্ষে করা সম্ভব নয়। দলমত নির্বিশেষে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: শিগগিরই খালেদা জিয়ার মুক্তি লাভের সম্ভাবনা দেখছেন না?
রুমীন ফারহানা: আমি মনে করি, তিনি আজকেই জামিন লাভের হকদার। তার জামিন হয়েছিলও, কিন্তু আপিল ডিভিশনে তা আটকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন নতুন মামলায় তাকে আটক দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ সরকার যে কোনোভাবে বেগম জিয়াকে জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার পাঁয়তারা করছে। সুতরাং কথা হচ্ছে সরকার তাকে বের হতে দেবে কিনা।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার নাম চূড়ান্ত করার আগে দলের স্থায়ী কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি, তাহলে আপনাদের দলের সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে হচ্ছে?
রুমীন ফারহানা: কে বললো স্থায়ী কমিটির মিটিং হয়নি? প্রত্যেকের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরামর্শ করেছেন। শুধু যে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করেছেন, তাই নয়। দেশের সুশীল সমাজ, সচেতন নাগরিকদের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। ফলে এটা কোনও একক সিদ্ধান্তে হয়নি। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এখানে দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও দলের সব পর্যায়ের নেতার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনও সিদ্ধান্ত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গেও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বে আছেন। তিনি যে কয়টি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রত্যেকটি সঠিক সিদ্ধান্ত। সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্যে আমার নাম তৃণমূল থেকে আসে। হঠাৎ করে আমার নাম আসেনি।
বাংলা ট্রিবিউন: তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে দলের চার সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন, এমনটা বলেছিলেন মির্জা ফখরুল। তাহলে তো দলের সব সিদ্ধান্ত এককভাবে তিনিই নিচ্ছেন?
রুমীন ফারহানা: দলের স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে যখন একমত হতে পারছে না, তখন তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। তিনি নিজে থেকে কোনও ভার নেননি। তখন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলাপ করার পর স্থায়ী কমিটির অনুমোদনক্রমেই সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সুতরাং তিনি যে কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা একেবারেই সঠিক নয়।
বাংলা ট্রিবিউন : সংসদে সংরক্ষিত আসন কি নারীর জন্য মর্যাদার, নাকি এতে মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়?
রুমীন ফারহানা: বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে আমাদের বিবেচনা করতে হয়। আমি কখনও সংরক্ষিত নারী আসনের পক্ষে নই। নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসবে সেটাই কাম্য। কিন্তু আমাদের বাস্তব প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমি কিন্তু নিজেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম, প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়াও হয়। পরবর্তী সময়ে যেহেতু সেখানে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সাবেক সংসদ সদস্য আছেন, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি নিজেও সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হই। তিনি জয়লাভ করেছেন। সুতরাং আমি মনে করি, ধীরে ধীরে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন কমিয়ে আনা উচিত। আমি নিজেও পরবর্তী সময়ে সরাসরি নির্বাচনের দিকে যাবো।
No comments