ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিতে কেন বিশ্বাস নেই ভারতের কৃষকদের? by জাহিদুল ইসলাম জন
কৃষকদের
জীবনমানের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন
ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ) বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন
ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট। তবে মানবাধিকার গ্রুপগুলো
বলছে, অনেক কৃষকের অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। কৃষকদের
ভাগ্যোন্নয়নে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ই্উনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স-ইউপিএ
২০০৪ সালে একটি কমিশন গঠন করলেও সেই কমিশনের সুপারিশ পূর্ণাঙ্গভাবে
বাস্তবায়নের কোনও উদ্যোগ নেয়নি কোনও সরকারই। সে কারণে দিনকে দিন তাদের
পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে লাখ লাখ কৃষক। এমন বাস্তবতায়
এবারের নির্বাচনেও কংগ্রেস ও বিজেপির পক্ষ থেকে কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নের
আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে অতীত অভিজ্ঞতার কারণেই কৃষকদের তাতে আস্থা নেই।
ভারতের ৫০ শতাংশ শ্রম শক্তি কৃষিখাতের। খরা, সেচের অভাব, ঋণের ফাঁদসহ নানা সংকটের কারণে গত কয়েক বছরে দেশটির এই ভোটার গ্রুপটি এই নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যেও বড় আকারের বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ করেছে। বহু আগেই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে কৃষকের আত্মহত্যা। সরকারি তথ্য সংগ্রহ করে মুম্বাইভিত্তিক এনজিও ডাউন টু আর্থ এর হিসেবে ১৯৯৫ সাল থেকে দেশটিতে প্রায় দুই লাখ কৃষক আত্মহত্যা করেছে। গত বছর সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেছে ১২ হাজার ৬০২ জন কৃষক।
কৃষকদের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে ২০০৪ সালের ১৮ নভেম্বর ন্যাশনাল কমিশন অন ফার্মাস নামে একটি কমিশন গঠন করে তৎকালীন ইউপিএ সরকার। ভারতের পরিবেশ আন্দোলন সবুজ বিপ্লবের শীর্ষ নেতা প্রফেসর এম এস স্বামীনাথানের নেতৃত্বাধীন ওই কমিশন ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। কমিশনের তরফে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সহজে পানি, প্রযুক্তি ও মূলধন সরবরাহ, খাদ্য শস্যের সর্বনিম্ন মূল্য বেধে দেওয়া এবং শুস্ক এলাকায় খরা সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ। তবে এখন পর্যন্ত কোনও সরকারই ওই সুপারিশগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। ভারতীয় কৃষক সংঘের প্রেসিডেন্ট সাতনাম সিংহ বেহরু বলছেন, স্বামীনাথান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় জীবিকার ক্ষেত্রে ক্রমাগত কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। চরম-ভাবাপন্ন আবহাওয়া, ক্রমাগত বাড়তে থাকা উৎপাদন ব্যয় আর খাদ্য শস্যের মূল্য হ্রাসের কারণে ভারতের লাখ লাখ কৃষক সংকটে পড়েছে। সরকারি তথ্য মতে গত দুই দশকে ভারতে তিন লাখেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছে।
ভারতের ৫০ শতাংশ শ্রম শক্তি কৃষিখাতের। খরা, সেচের অভাব, ঋণের ফাঁদসহ নানা সংকটের কারণে গত কয়েক বছরে দেশটির এই ভোটার গ্রুপটি এই নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যেও বড় আকারের বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ করেছে। বহু আগেই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে কৃষকের আত্মহত্যা। সরকারি তথ্য সংগ্রহ করে মুম্বাইভিত্তিক এনজিও ডাউন টু আর্থ এর হিসেবে ১৯৯৫ সাল থেকে দেশটিতে প্রায় দুই লাখ কৃষক আত্মহত্যা করেছে। গত বছর সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেছে ১২ হাজার ৬০২ জন কৃষক।
কৃষকদের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে ২০০৪ সালের ১৮ নভেম্বর ন্যাশনাল কমিশন অন ফার্মাস নামে একটি কমিশন গঠন করে তৎকালীন ইউপিএ সরকার। ভারতের পরিবেশ আন্দোলন সবুজ বিপ্লবের শীর্ষ নেতা প্রফেসর এম এস স্বামীনাথানের নেতৃত্বাধীন ওই কমিশন ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। কমিশনের তরফে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সহজে পানি, প্রযুক্তি ও মূলধন সরবরাহ, খাদ্য শস্যের সর্বনিম্ন মূল্য বেধে দেওয়া এবং শুস্ক এলাকায় খরা সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ। তবে এখন পর্যন্ত কোনও সরকারই ওই সুপারিশগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। ভারতীয় কৃষক সংঘের প্রেসিডেন্ট সাতনাম সিংহ বেহরু বলছেন, স্বামীনাথান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় জীবিকার ক্ষেত্রে ক্রমাগত কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। চরম-ভাবাপন্ন আবহাওয়া, ক্রমাগত বাড়তে থাকা উৎপাদন ব্যয় আর খাদ্য শস্যের মূল্য হ্রাসের কারণে ভারতের লাখ লাখ কৃষক সংকটে পড়েছে। সরকারি তথ্য মতে গত দুই দশকে ভারতে তিন লাখেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে ২০১১ সাল থেকে কৃষিখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মোট অপরিশোধিত কৃষি ঋণের পরিমাণ দাড়ায় এক লাখ কোটি রুপিতে। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার কোটি রুপি। চলমান এনডিএ জোট সরকারের শাসনামলে বেশ কয়েকটি বড় ধরণের বিক্ষোভ করেছে ভারতের কৃষকেরা। সরকারি কমিশনের সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছিলেন তারা। কৃষক নেতা বেহরু বলেন, বিজেপি সরকার আমাদের পেছন থেকে ছুরি মেরেছে। সাত ধাপের ভারতীয় নির্বাচন শুরুর মাত্র কয়েক দিন আগে উত্তর ভারতের কৃষক ঈশ্বর চন্দ্র শর্মা আত্মহত্যা করলে তার পকেটে একটি চিরকুট পায় পুলিশ। তাতে লেখা ছিল ’বিজেপিকে ভোট দিও না’। পুলিশ ওই চিরকুটের সত্যতা নিশ্চিতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ঈশ্বরের ছেলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, যে ঋণের কারণে তার ৬৫ বছর বয়সী বাবা বিষপানে বাধ্য হয়েছিলেন সেই ঋণের জন্য ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির(বিজেপি) নীতিকে দায়ী করতেন তিনি।
সমালোচনার জবাবে বিজেপি মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল রয়টার্সকে বলেন, গত পাঁচ বছরে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে তার দল। গত বছর স্বামীনাথন কমিশনের একটি সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাজারে কৃষিপণ্যের দাম পড়ে গেলে কৃষকদের ন্যুনতম লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, কৃষকদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ২০৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি, বনায়ন ও মৎস খাত থেকে জিডিপি ২ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৫ শতাংশ। খামার উৎপাদনের সঙ্গে দারিদ্রের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় জিডিপির এই হার উদ্বেগজনক। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কৃষিখাতের বার্ষিক জিডিপির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবারও তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রান্তিক মানুষ ও কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দারিদ্র দূরীকরণে বড় ধরনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ন্যুনতম আয় যোজনা নামের এই কর্মসূচির আওতায় সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবারকে বার্ষিক ৭২ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়া হবে। কংগ্রেসের তথ্য অনুযায়ী যতদূর সম্ভব বাড়ির নারীদের কাছে এই অর্থ হস্তান্তর করা হবে। অন্যদিকে কৃষকদের ভার লাঘবে প্রায় ৩৬ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে এই ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি এসেছে। ২০২২ সাল নাগাদ কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। তারপরও আশ্বস্ত হতে পারছেন না দিল্লির যমুনা নদী তীরের প্রান্তিক কৃষক মোহাম্মদ মুজাবির। মার্কিন সংবাদমাধ্য সিএনএন-কে তিনি জানান, তার মতো প্রায় এক হাজার ক্ষুদ্র কৃষক রয়েছেন যমুনা তীরে। তারাও আশাবাদী নন এসব রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে তাদের কোনও ফায়দা হবে। তিনি বলেন, এখানকার কোনও কৃষকই লাভবান হয়নি। কিছুই হয়নি। তারা শুধু বলেই যায়।
No comments