ইস্যু ছাড়াই ফের গণগ্রেফতার চলছে : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, কোনো ইস্যু বা আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ অভিযানের নামে দেশব্যাপি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আবারো গণগ্রেফতার শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ অভিযানের নামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ হানা দিয়ে ব্যাপক তান্ডব চালাচ্ছে। বাড়িতে নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এমনকি শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছেনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ণ থেকে। আজ সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রিজভী বলেন, গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা দিয়ে নয়াপল্টনস্থ ভাসানী ভবনে মহানগর বিএনপি কার্যালয় থেকে ফেরার পথে মতিঝিল থানার ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো: শামসুদ্দিন বকুল এবং মো: হারুন মিয়াকে মতিঝিল থানা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শিল্প নগরী টঙ্গী এলাকায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা মিলে অভিযানের নামে গোটা এলাকায় তান্ডব চালিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এসময় ২০ দলীয় জোটের ১৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এই তান্ডবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার এমনকি মাদক ব্যবসায়ীরাও যুক্ত হওয়ায় পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ত্ব কায়েম হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে টঙ্গীতে একযোগে ১৫টি ওয়ার্ডে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশির নামে হামলা চালানো হয়। রিজভী বলেন, গত দুদিনে জামালপুরে বিশেষ অভিযানের নামে ১৮৯ জন বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাতক্ষীরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানের নামে ৪১ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে, সেখানে গত কয়েকদিনে গ্রেফতার করা হয় শতাধিক নেতাকর্মীকে। গত দুদিন আগে বাগেরহাটে পুলিশী বিশেষ অভিযানে বিএনপি নেতা মোদাশ্বের আলী, কামরুল ইসলাম, গফফার, হুমায়ুন মোড়ল, ইদরিস তালুকদার, আলমগীর মেম্বার, আসাদ ও মোতাহারসহ বিরোধী দলীয় ৩৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, পঞ্চগড় জেলায় মেয়র তৌহিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ, এ্যাডভোকেট হাসান প্রধান, আনোয়ার হোসেনসহ অনেক নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে। গত তিন দিন আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হেলালউদ্দিনকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। গ্রেফতার করা হয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর একরাম হোসেন বাবুকে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে। মেহেরপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুনসহ ২০০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা জেলা,
সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশী অভিযানের নামে ব্যাপক ধরপাকড় ও হয়রানী নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শওকত আলী ফরাজীকে দিনে-দুপুরে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যগতভাবেই প্রতিহিংসাপরায়ণ ও খুন-খারাবী নির্ভর একটি রাজনৈতিক দল। আমি শওকত আলী ফরাজীকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। তিনি বলেন, আকস্মিকভাবে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারে সাঁড়াশী অভিযান চালানোর কারনগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সরকারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়ে চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে, যে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরীহ ছাত্র ও আলেমদের ওপর পৈচাশিক রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে তা দেশব্যাপী ভুলে যায়নি। বিশেষ নজরদারির নামে সারাদেশে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জঙ্গীদের সাথে যুক্ত করে যেভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা পুলিশরা দলন-পীড়ণ করে হয়রানী ও জুলুম করেছে তা নজীরবিহীন। এখন আবার সরকার সেই হেফাজতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে চাচ্ছে শুধুমাত্র ভোটের জন্য। এটা বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ও সরকার প্রধানের আপোষকামী অনৈতিক রাজনীতির এক কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত। অতীতেও বর্তমান সরকারপ্রধান ধর্মীয় লেবাস পরিধান করে জনগণকে ধোকা দিয়েছেন। ভোট শেষ হওয়ার পরে লেবাস খুলে স্বমূর্তি ধারণ করেন। তাঁর এই দ্বিচারিমূলক রাজনীতি যাতে কেউ ধরতে না পারে সেজন্য দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযান চলছে। আরো হচ্ছে- সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যেসব সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি করেছেন সেটি নিয়ে সারাদেশের মানুষ ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। দেশের মানুষের আকাঙ্খাকে তাচ্ছিল্য করে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়ার জন্য দেশবাসী এই ভোটারবিহীন সরকারকে ধিক্কার জানাচ্ছে। ভারতের সাথে এই সমঝোতা স্মারক চুক্তিতে গোটা জাতির নিরাপত্তা এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছ থেকে একটি সরিষার দানাও আদায় করতে পারেনি, তিস্তার এক বালতি পানি পাওয়ারও গ্যারান্টি পাননি। কুটনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শণের বদলে প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র দেশ বেচা-বিক্রির খেলায় মেতে উঠেছেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জসহ হাওড় এলাকাগুলোতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে বয়ে আসা পানির ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা এখন হাহাকার করছে। পাহাড়ী ঢলে হাওড় এলাকায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা ঢাকতেই দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। রিজভী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি লুটপাটের ওপর নির্ভরশীল। প্রকাশ্যে দুর্নীতিকে সমর্থন ও আশকারা দিয়েছে বর্তমান ভোটারাবহীন আওয়ামী সরকারের প্রচন্ড ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা। তার ওপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো ডলালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, আর এই কারণে হু হু করে বাড়ছে আমদানি পন্যের দাম। ক্ষমতাসীনদের সৃষ্ট জাতীয় অর্থনীতির চরম দুর্দশা আড়াল করতেই দেশব্যাপী এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে এই পুলিশী সাঁড়াশী অভিযান। রিজভী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারী অভিযান, বাসায় বাসায় পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান এবং সরকারী ক্যাডারদের বেপরোয়া রক্তারক্তির শিকার হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
No comments