খালেদার বিচার হবে ট্রাব্যুনালে -শেখ হাসিনা
পেট্রলবোমা
হামলার নির্দেশ দানকারী হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার
সহযোগীদের বিচারে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনের
পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। গতকাল সংসদে লিখিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা একথা বলেন। সরকারি দলের সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রলবোমা হামলার মামলার
মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মামলাসমূহ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের
ব্যবস্থা করা হবে। পেট্রলবোমা হামলার প্রতিটি ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এসব
মামলার তদন্ত সুষ্ঠু ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া
হয়েছে, যা যথাযথভাবে প্রতিপালনের বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে। তিনি জানান, ওই
ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এ আইনের অধীন অপরাধগুলোর দ্রুত
বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য দায়রা জজ বা দায়রা জজ কর্তৃক অতিরিক্ত দায়রা
জজের কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত দায়রা জজকে বিচারকার্য
সম্পন্ন করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট
নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হুকুমে এ বছর ৫ই জানুয়ারি থেকে চলমান হরতাল ও
অবরোধকালীন এবং গত ২রা জুন ২০১৫ তারিখে পবিত্র শবেবরাতের রাতে কুমিল্লায়
একাটি বাসে ৬ জনসহ পেট্রলবোমা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৩৪ জনকে
হত্যা করা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে নিহত ও
আহতদের পরিবারের সহায়তার পরিসংখ্যান উল্লেখ করেন। তিনি জানান, পেট্রলবোমায়
গুরুতর আহত ৪ জনকে (এসএসসি পরীক্ষার্থী অনিক ও হৃদয়, নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল কাদের এবং ট্রাক ড্রাইভার লিটন মিয়া) উন্নত চিকিৎসার
জন্য একাধিকবার বিদেশে পাঠানো হয়েছে। তাদের চিকিৎসা খরচ নির্বাহের জন্য
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ৩৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
মাথাপিছু আয় দুই হাজার মার্কিন ডলার
সরকারি দলের সদস্য মো. মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্য মেয়াদের ষষ্ঠ ও পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর মেয়াদে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা মেয়াদ শেষে ২০২১ সালে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় হবে প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলার। ফলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১-এর বাস্তব রূপান্তরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বিশ্বে অগ্রগামী ও উন্নত জনপদে পরিণত করতে আমরা জাতিকে শিগগিরই রূপকল্প ২০৪১ উপহার দেবো।
বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ হাজার মেগাওয়াট
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি আমরা ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুৎ কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াটে। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে ফেলে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা তাৎক্ষণিকভাবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করি। ফলে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা বাড়িয়ে চলেছি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন। ২০০৬ সালে সঞ্চালন লাইন ছিল ৬৬ হাজার ৯৭৩ সার্কিট কিলোমিটার, বর্তমান সঞ্চালন লাইন হচ্ছে ৯ হাজার ৫৫৫ কিলোমিটার। একইভাবে ২০০৬ সালে বিতরণ লাইন ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার কিলোমিটার।
বাংলাদেশের অনুকূলে ১১১টি ছিটমহল
স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে মোট ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অনুকূলে আসবে। এর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯, কুড়িগ্রাম জেলায় ৩৬, পঞ্চগড় জেলায় ১২ এবং নীলফামারী জেলায় ৪টি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ২০১১ সালের হেডকাউন্টিংয়ের তথ্য অনুযায়ী এর মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮৬ এবং ১৭ হাজার ১৬১ একর জমি বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যদিকে ভারতের অনুকূলে ৫১টি ছিটমহল যাবে। যেখানে নাগরিকের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯০ এবং জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর।
খালেদা জিয়া মিথ্যাচার করছেন
এদিকে অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় প্রতিদিন বিএনপি নেত্রী মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। নিজের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। পবিত্র রমজান মাসে মিথ্যাচারের জন্য আল্লাহই তার বিচার করবেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯২ দিনব্যাপী হরতাল-অবরোধের নামে ভয়াল নাশকতা-সন্ত্রাস ও পেট্রলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার অসংখ্য আলোকচিত্র সংসদে প্রদর্শন করে বলেন, বিএনপি নেত্রী ইফতার মাহফিলে শুধু আমাদের বিরুদ্ধেই অপবাদ বা মিথ্যাচার করছেন না, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিচ্ছেন সেই পুলিশ বাহিনীকে জড়িয়েও মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেন, ইফতার মাহফিলে বিএনপি নেত্রী বলেছেন, পুলিশ বাহিনী নাকি পেট্রলবোমা মেরে মানুষ খুন করেছে! রমজান মাসে এমন মিথ্যাচার শুনে তাজ্জব হয়ে যাই। রমজান মাসে কীভাবে উনি এমন মিথ্যাচার করেন? অথচ সব দেশবাসীই জানেন এবং দেখেছেন, কীভাবে বিএনপি নেত্রীর নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, পেট্রলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করে হত্যা করেছে। নিজের দোষ উনি পুলিশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। এ প্রসঙ্গে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, তখনও বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আমিই মেরেছি! তখনকার মতো এখনও নিজের দোষ বিএনপি নেত্রী অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্যে রাখেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার প্রেসিডেন্টের আদেশ পাঠের পর বিকাল চারটায় বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ঘোষণা করেন। এর আগে গত ১লা জুন বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ৪ঠা জুন সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা ৩০শে জুন পাস হয়। সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। হতদরিদ্রের সংখ্যা ৭ দশমিক ৯ ভাগে নামিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাচ্ছে- ঠিক তখন দেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোটের জুলুম-নির্যাতন সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। আন্দোলনের নামে ৯২ দিন ধরে দেশের মানুষকে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নাশকতা মোকাবিলা করেছে। বিএনপি নেত্রী ওই সময় নিজের দলীয় কার্যালয় থেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমার পতন না হওয়া পর্যন্ত উনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু কিছু অর্জন ছাড়াই উনাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করেই ঘরে ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। উনি ভাল করেই জানেন, আদালতে গেলে তার দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। এ কারণে উনি আদালতে লাঠিসোটা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সবশেষে আদালতেই তাকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। ‘গ্রামে খাবার নেই, কাজ নেই’- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের একজন দিনমজুর দিনে যা আয় করেন, তা দিয়ে ৮-১০ কেজি চাল কিনতে পারেন। গ্রামে খাবার ও কাজ না থাকলে দিনমজুর ও শ্রমিকের মজুরি এত বেশি বৃদ্ধি পেলো কীভাবে? তার এসব অভিযোগ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যানজট প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার অভিযোগের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, দেশের অর্থনীতি যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে, যানবাহনের সংখ্যাও তত বাড়ছে। এরশাদ সাহেব আমার ইফতার মাহফিলে এলেন, কিন্তু যানজটের কারণে বিরোধী দলের নেতা নাকি আসতে পারেননি। কিন্তু দুজনে যদি একসঙ্গে এক গাড়িতে আসতেন তবে এ অসুবিধাও হতো না, যানজটও কিছুটা কম হতো। এভাবে একাধিক গাড়ি ব্যবহারের কারণেই যানজট বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা বসে নেই, বসে থাকলে দেশের এত উন্নয়ন হতো না। প্রতিদিন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, মানব পাচারকারীদের ধরা হচ্ছে। আমরা এক কোটি ২৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। এখন আর বিদেশে যেতে মানুষের ঘরবাড়ি বেচতে হয় না। তিনি বলেন, আমার ক্ষমতায় আসার আগে সৌদি আরবে সাড়ে ৮ লাখ এবং মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৬ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসেই সফল কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সবাইকে বৈধ করিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরলসভাবে আমরা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। ১৬ কোটি জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হলেও আমরা সেই কঠিনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা চার গুণ বিশাল বাজেট দিয়েছি। এ বাজেটও বাস্তবায়ন করে আমরা দেশকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
মাথাপিছু আয় দুই হাজার মার্কিন ডলার
সরকারি দলের সদস্য মো. মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্য মেয়াদের ষষ্ঠ ও পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর মেয়াদে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা মেয়াদ শেষে ২০২১ সালে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় হবে প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলার। ফলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১-এর বাস্তব রূপান্তরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বিশ্বে অগ্রগামী ও উন্নত জনপদে পরিণত করতে আমরা জাতিকে শিগগিরই রূপকল্প ২০৪১ উপহার দেবো।
বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ হাজার মেগাওয়াট
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি আমরা ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুৎ কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াটে। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে ফেলে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা তাৎক্ষণিকভাবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করি। ফলে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা বাড়িয়ে চলেছি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন। ২০০৬ সালে সঞ্চালন লাইন ছিল ৬৬ হাজার ৯৭৩ সার্কিট কিলোমিটার, বর্তমান সঞ্চালন লাইন হচ্ছে ৯ হাজার ৫৫৫ কিলোমিটার। একইভাবে ২০০৬ সালে বিতরণ লাইন ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার কিলোমিটার।
বাংলাদেশের অনুকূলে ১১১টি ছিটমহল
স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে মোট ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অনুকূলে আসবে। এর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯, কুড়িগ্রাম জেলায় ৩৬, পঞ্চগড় জেলায় ১২ এবং নীলফামারী জেলায় ৪টি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ২০১১ সালের হেডকাউন্টিংয়ের তথ্য অনুযায়ী এর মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮৬ এবং ১৭ হাজার ১৬১ একর জমি বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যদিকে ভারতের অনুকূলে ৫১টি ছিটমহল যাবে। যেখানে নাগরিকের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯০ এবং জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর।
খালেদা জিয়া মিথ্যাচার করছেন
এদিকে অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় প্রতিদিন বিএনপি নেত্রী মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। নিজের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। পবিত্র রমজান মাসে মিথ্যাচারের জন্য আল্লাহই তার বিচার করবেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯২ দিনব্যাপী হরতাল-অবরোধের নামে ভয়াল নাশকতা-সন্ত্রাস ও পেট্রলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার অসংখ্য আলোকচিত্র সংসদে প্রদর্শন করে বলেন, বিএনপি নেত্রী ইফতার মাহফিলে শুধু আমাদের বিরুদ্ধেই অপবাদ বা মিথ্যাচার করছেন না, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিচ্ছেন সেই পুলিশ বাহিনীকে জড়িয়েও মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেন, ইফতার মাহফিলে বিএনপি নেত্রী বলেছেন, পুলিশ বাহিনী নাকি পেট্রলবোমা মেরে মানুষ খুন করেছে! রমজান মাসে এমন মিথ্যাচার শুনে তাজ্জব হয়ে যাই। রমজান মাসে কীভাবে উনি এমন মিথ্যাচার করেন? অথচ সব দেশবাসীই জানেন এবং দেখেছেন, কীভাবে বিএনপি নেত্রীর নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, পেট্রলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করে হত্যা করেছে। নিজের দোষ উনি পুলিশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। এ প্রসঙ্গে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, তখনও বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আমিই মেরেছি! তখনকার মতো এখনও নিজের দোষ বিএনপি নেত্রী অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্যে রাখেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার প্রেসিডেন্টের আদেশ পাঠের পর বিকাল চারটায় বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ঘোষণা করেন। এর আগে গত ১লা জুন বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ৪ঠা জুন সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা ৩০শে জুন পাস হয়। সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। হতদরিদ্রের সংখ্যা ৭ দশমিক ৯ ভাগে নামিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাচ্ছে- ঠিক তখন দেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোটের জুলুম-নির্যাতন সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। আন্দোলনের নামে ৯২ দিন ধরে দেশের মানুষকে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নাশকতা মোকাবিলা করেছে। বিএনপি নেত্রী ওই সময় নিজের দলীয় কার্যালয় থেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমার পতন না হওয়া পর্যন্ত উনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু কিছু অর্জন ছাড়াই উনাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করেই ঘরে ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। উনি ভাল করেই জানেন, আদালতে গেলে তার দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। এ কারণে উনি আদালতে লাঠিসোটা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সবশেষে আদালতেই তাকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। ‘গ্রামে খাবার নেই, কাজ নেই’- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের একজন দিনমজুর দিনে যা আয় করেন, তা দিয়ে ৮-১০ কেজি চাল কিনতে পারেন। গ্রামে খাবার ও কাজ না থাকলে দিনমজুর ও শ্রমিকের মজুরি এত বেশি বৃদ্ধি পেলো কীভাবে? তার এসব অভিযোগ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যানজট প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার অভিযোগের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, দেশের অর্থনীতি যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে, যানবাহনের সংখ্যাও তত বাড়ছে। এরশাদ সাহেব আমার ইফতার মাহফিলে এলেন, কিন্তু যানজটের কারণে বিরোধী দলের নেতা নাকি আসতে পারেননি। কিন্তু দুজনে যদি একসঙ্গে এক গাড়িতে আসতেন তবে এ অসুবিধাও হতো না, যানজটও কিছুটা কম হতো। এভাবে একাধিক গাড়ি ব্যবহারের কারণেই যানজট বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা বসে নেই, বসে থাকলে দেশের এত উন্নয়ন হতো না। প্রতিদিন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, মানব পাচারকারীদের ধরা হচ্ছে। আমরা এক কোটি ২৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। এখন আর বিদেশে যেতে মানুষের ঘরবাড়ি বেচতে হয় না। তিনি বলেন, আমার ক্ষমতায় আসার আগে সৌদি আরবে সাড়ে ৮ লাখ এবং মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৬ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসেই সফল কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সবাইকে বৈধ করিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরলসভাবে আমরা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। ১৬ কোটি জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হলেও আমরা সেই কঠিনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা চার গুণ বিশাল বাজেট দিয়েছি। এ বাজেটও বাস্তবায়ন করে আমরা দেশকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
No comments