মালয়েশিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ উপ-প্রধানমন্ত্রীর
প্রায়
৭০ কোটি ডলার দুর্নীতির অভিযোগে জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়েছেন
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। এমন কি তার দল ইউনাইডেট মালয়স
ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (উমনো) ভাঙন ধরার আলামত পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। গতকাল
সকালের দিকে পুলিশ জালান সুলতান ইসমাইল এলাকায় ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট
বেরহাদ’ (১এমডিবি) অফিসে তল্লাশি চালিয়েছে। তারা সেখান থেকে বেশ কিছু
দলিলপত্র নিয়ে যায়। নাজিব রাজাক যতই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করুন না
কেন, এরই মধ্যে দৃশ্যত তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট
জার্নাল যে ডকুমেন্টারি অভিযোগ উত্থাপন করেছে মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সে
ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন উমনো’র ভাইস
প্রেসিডেন্ট শাফি আবদাল। এর মধ্য দিয়ে দলে ভাঙনের সুস্পর্শ একটি ইঙ্গিত
মিলেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ওয়াল স্ট্রিট
জার্নালের প্রকাশক ডো জনসের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার জন্য আইনজীবী
নিয়োগ করেছেন। কিন্তু এমন হুমকিতে ভীত নন ডো জোনস। তার পত্রিকায় যে
রিপোর্ট, প্রমাণমূলক ডকুমেন্ট প্রকাশ হয়েছে তার যথার্থতার সম্পর্কে তিনি
নিশ্চিত। তবে কি করে তারা মালয়েশিয়ার ব্যাংকের এসব ডকুমেন্ট পেলেন তা তদন্ত
করে বের করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন মালয়েশিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক খালিদ
আবু বকর। আবার এরই মধ্যে এই দুর্নীতি সংক্রান্ত কারণে ছয়টি ব্যাংক একাউন্ট
জব্দ করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল গনি পাতাইল বলেছেন এর মধ্যে নাজিব
রাজাকের কোন একাউন্ট নেই। অন্যদিকে কিভাবে ৭০ কোটি ডলারের আর্থিক
কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়েছে তা তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সবকিছু
মিলে এই যখন অবস্থা তখন গতকাল মালয়েশিয়ার স্টার পত্রিকা প্রধানমন্ত্রী ও
তার দল উমনোর জন্য স্পর্শকাতর সময় শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে
বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রশাসনের জন্য ‘ওয়ান মালয়েশিয়া
ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ’ (১এমডিবি) ইস্যুটি এখন রাজনৈতিক দৈত্যের রূপ নিচ্ছে। এ
অবস্থায় নাজিব রাজাক তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গত শুক্রবার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে
যে, ১এমডিবি তহবিলের প্রায় ৭০ কোটি ডলার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত
ব্যাংক একাউন্টে স্থানান্তর হয়েছে। এর স্বপক্ষে তারা এরই মধ্যে ৯টি
ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে। এ ঘটনা এখন আর্থিক খাত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে
ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। দুর্নীতির এ অভিযোগকে নাজিব রাজাক কতিপয়
সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির কারসাজি বলে দাবি করেছেন। তার দাবি, ব্যক্তিগত
স্বার্থে তিনি কোন অর্থ ব্যবহার করেন নি। এই অভিযোগ উঠার আগে পর্যন্ত দলে
নাজিব রাজাকের সমর্থন ছিল ব্যাপক। উমনোর প্রধানদের মধ্যেও তার প্রতি ছিল
সমর্থন। তারা এখনও তার পাশে থাকতে চান। কিন্তু তার জন্য তাদের প্রয়োজন একটি
পরিষ্কার জবাব। নাজিব পরিষ্কার করেছেন যে, তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের
বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তার আইনজীবী ডো জোনসের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করতে
প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ মামলা করা হবে যেন, তার নাম এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত
না থাকে অথবা তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। কিন্তু নাজিব রাজাকের ওপর চাপটা
আরও বেড়ে গেছে যখন মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ চারটি রেগুলেটরি বডি ও আইন
প্রয়োগকারীরা একটি যৌথ বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, ১এমডিবি
দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগে যে ছয়টি ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে তা
তদন্ত করছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। এসব ব্যাংক একাউন্ট কার কার তা জানানো হয়
নি। ফলে তদন্ত যে এখন গুরুতর মোড় নিয়েছে এবং তা জটিল হয়ে উঠছে তা বলা যায়।
সন্দেহের যে ‘স্নো বল’ তা আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করেছে। স্টার পত্রিকা
লিখেছে, উপ-প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন আরও চাপে ফেলেছেন নাজিব
রাজাককে। কারণ, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল ইউনাইডেট
মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (উমনো)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফি আবদাল।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের এ সময়ে তাদের এ ভূমিকা দলে
রাজনৈতিক বিভক্তি নিশ্চিত করে। দল এরই মধ্যে লক্ষ্য করছে, কিছুদিন আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের ওপর হামলার পর তিনি নীরব রয়েছেন।
এর অর্থ হতে পারে দুটি। এক. তিনি মনে করতে পারেন তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
অর্জিত হয়েছে। তিনি নাজিব রাজাককে একপেশে করে ফেলতে পেরেছেন। দুই. দল থেকে
তিনি প্রধানকে সরাতে সক্ষম হয়েছেন। ওদিকে রোববার রাতে উমনোর সুপ্রিম
কাউন্সিলের সদস্যরা নাজিবের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। ওই
সাক্ষাৎ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। এতে ধারণা করা হয়, বৈঠকে
অংশগ্রহণকারীরা হয়তো দলীয় প্রধানের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে
থাকতে পারেন। যদি তা-ই না হতো তাহলে তারা কেন এতটা গোপনীয়তা বজায় রাখবেন।
গতকাল আবারও নাজিব রাজাক বলেছেন, তিনি ১এমডিবি তহবিল থেকে কখনও ব্যক্তিগত
স্বার্থে অর্থ নেন নি। ওদিকে পুলিশ মহাপরিদর্শক খালিদ আবু বকর বলেছেন,
ব্যাংক কর্মকর্তা, এমনকি ব্যাংক নেগারা মালয়েশিয়াসহ প্রতিটি ব্যক্তিকে
তদন্তের আওতায় আনা হবে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে ১এমডিবি কেলেঙ্কারির এ
দলিলগুলো কিভাবে ফাঁস হলো। তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকিং ডকুমেন্টগুলোর বিষয়ে
বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়ার জন্য দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালেও তদন্ত করবো।
No comments