পর্যাপ্ত বরাদ্দ কমানোর যুক্তি কী by নূরুননবী শান্ত
২৮
জুন জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী
হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ঘানা ও কেনিয়ার মতো দেশেও শিক্ষা খাতের বরাদ্দ
বাজেটের শতকরা ৩১ ভাগ। আর বাজেটের বরাদ্দ শতকরা ৪ দশমিক ৩ ভাগ। (প্রথম আলো
২৯ জুন) শিক্ষামন্ত্রী স্পিকারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানব সম্পদে পরিণত
করার প্রয়োজনে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর জন্য
(ডেইলি স্টার ২৯ জুন)। ১০১৫-১৬ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার এতটাই বড় যে,
অর্থমন্ত্রী নিজে এটাকে উচ্চাকাক্সক্ষী হিসেবে অভিহিত করেছেন। অবশ্য
ইতোমধ্যে এই বাজেট পাসও হয়ে গেছে। বাজেট যখন বড় হয় তখন সাধারণভাবে ধরে নেয়া
যায় যে, গুরুত্ব বিবেচনায় সব খাতেই আনুপাতিক হারে বাজেট বাড়বে। কিন্তু
বাজেট প্রণয়নে এ ধরনের সংস্কৃতি অনুপস্থিত। বিশেষ করে, শিক্ষার মতো
গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমে আসার প্রবণতায় আমরা হতাশ হই। ২ লাখ ৯৫ হাজার
কোটি টাকার বিশাল বাজেটের মাত্র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার জন্য রাখা হয়েছে,
যা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। আনুপাতিক হিসেবে গত বছরও শিক্ষা বাজেট ছিল
জিডিপির ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। বাজেটের আকার রেকর্ড ভাঙলেও শিক্ষায় বাজেট কমে
যাচ্ছে। বরাদ্দের সিংহভাগই প্রাথমিক ও গণশিক্ষার হওয়ায় মাধ্যমিক ও
উচ্চশিক্ষা পুরোপুরি বাজারের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে যা গরিবদের
শিক্ষা অধিকার ক্ষুন্ন করবে। আবার বৃহৎ প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বাজেট কমানোর
কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পারফরমেন্সের ভিত্তিতেও তো শিক্ষায়
বাজেট আনুপাতিকভাবে বাড়ার কথা। কিন্তু শিক্ষা প্রাধান্যের ক্রমাবনতিই
স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ হিসেবে মানব সম্পদকে বিবেচনা করা
হয়।
২০১০ থেকে ২০১৪ সময়কালে বিশ্বব্যাংক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগই ১৪ বছর বয়সের কমে জনগণের মধ্যমা বয়স (মিডিয়ান এজ) এখন ২৫.৪ বছর (http://www.worldometers.info/world-population/bangladesh-population/)। তার মানে জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স পঁচিশের নিচে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সর্বোচ্চ সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে আমরা আছি। এই সুবিধার সঠিক ব্যবহারের ওপরেই নির্ভর করছে আমাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন। এর বাইরে আরো দুটি দৃশ্যমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট আমাদের তৈরি হয়েছে। প্রথমত, মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার প্রান্তিক অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগণের হাতেও পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয়ত, অবাধ অপরিকল্পিত দ্রুত বর্ধমান নগরায়নের বিপরীতে নাগরিক সুবিধা সীমিত হচ্ছে। একইসঙ্গে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে গিয়ে সেবা খাতের অবদান বাড়ছে অথচ আনুপাতিকভাবে শিল্পায়নের বিকাশ থমকে আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের বিরাট জনসংখ্যার অর্ধেক, অর্থাৎ নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত, দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার ওপরেই নির্ভর করছে আগামী দিনের সত্যিকার টেকসই উন্নয়ন। অতএব শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
আমরা বিশ্বাস করি, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের স্বতঃস্ফূর্ত সুবিধার ওপর ভর করে আমরা হয়তো মধ্য আয়ের দেশে সময়মতোই পৌঁছে যাব, দারিদ্র্যও আশানুরূপ কমে যাবে, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম সে অর্জন ধরে রাখতে সক্ষম না হলে সবকিছু অর্থহীন হয়ে পড়বে, যেমনটা হয়েছে নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনের উন্নয়ন ইতিহাস থেকে আমার শিক্ষা নেয়ার আছে। শিক্ষা প্রাসঙ্গিক ও মানসম্পন্ন হলে প্রজন্ম স্বতঃস্ফূর্তভাবেই দায়িত্বশীলতা ও দায়বদ্ধতা অর্জন করবে। এর ইতিবাচক প্রভাব আপনা-আপনি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সবক্ষেত্রেই পড়বে। বিশ্বব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক মহলই অবশ্য বলছে যে, শিক্ষায়; বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ তুলনামূলক ভালো। কিন্তু এই প্রশংসা করার আগে বাংলাদেশের শিক্ষা গ্রহণের যোগ্য বয়সীদের সংখ্যা ও আনুপাতিক প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় নিতে হবে। অন্যদিকে, আমাদের শিক্ষামন্ত্রীসহ সবাই জানেন ও মানেন যে শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। পঞ্চম শ্রেণী পাস করেও আমাদের অনেক শিশু মাতৃভাষায় শুদ্ধ বাক্য লিখতে সক্ষম হচ্ছে না। এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষার পরে শিশুরা ঝরে পড়ে, মানসম্মত শিক্ষকের অভাব প্রকট এবং এই (মাধ্যমিক) স্তরে শিক্ষার মান নিম্ন পর্যায়ে আছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এই বাস্তব উপলব্ধি সত্ত্বেও ঘোষিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। এটা নীতি-নির্ধারকদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বটে। আজকাল বাজেট ঘোষণা টেলিভিশনের পর্দায় দেখা এখন প্রায় ক্রিকেট খেলা দেখার মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাজেট বক্তৃতা দীর্ঘ বা হ্রস্ব যাই হোক, দর্শক তথা জনসাধারণের মনোজগতে তা একটা প্রভাব ফেলে। তরুণরা এখান থেকে শিক্ষাও গ্রহণ করে। বাজেট এখন জনপ্রিয় ডিসকোর্স। করের আওতা বাড়লেও, কর্পোরেট কর কমানো; কালো টাকা সাদা করার চিরায়ত ব্যবস্থা কিংবা বিদেশের ব্যাংকে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া ইত্যাদি বিষয়ে জনগণ সরকারের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করে। ধনীদের টাকা পাচার করার প্রবণতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রচার মাধ্যমের সামনে অর্থমন্ত্রী যখন বলেন যে, ‘এটা আসলে দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ’, তখন এভাবে বিশাল অঙ্কের কর লোকসান মেনে নেয়াকে দুর্নীতিগ্রস্ততাকে উৎসাহিত করার শামিল বিবেচনা করা যায়। করারোপে ন্যায্যতা নিশ্চিত না করতে পারলে উন্নয়ন বৈষম্য কমানো সম্ভব হবে না। ধনীরা অধিকতর ধনী হতে থাকবে। অন্যদিকে, বাজেটের ব্যয় খাতে মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন প্রাধান্যকে খাটো করা ঘরের খুঁটিকে দুর্বল করে রেখে ঘরের বেড়াকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কর আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোই সব কথা নয়। কর আদায়ের পদ্ধতি ও কোথায় ব্যয় করলে নব্বই ভাগ সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে, বৈষম্য কমবে এসব কিছুই আসল কথা। বরাদ্দের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। জনসংখ্যার অর্ধেকই যেহেতু শিক্ষা খাতের ওপর নির্ভরশীল, সুতরাং শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, উপকরণ, বিষয়বস্তু, শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়া, শিখন মূল্যায়ন পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম হালনাগাদকরণ, শিক্ষকের মান ও সম্মান বৃদ্ধি, শিক্ষা গবেষণা, ঝরেপড়াদের দক্ষতা উন্নয়ন ও জীবনমুখী শিক্ষার আওতায় আনা, শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন ইত্যাদি কোনোকিছুই সম্ভব নয় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ছাড়া। কৈলাস সত্যার্থী সম্প্রতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেছেন, দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে দেখতে হলে প্রতিটি শিশু, কিশোর-কিশোরীর অধিকার আছে দেশ গড়ার কাজে অবদান রাখার উদ্দেশ্যে নিজের যোগ্যতা তৈরির শিক্ষা পাওয়ার। এই অধিকার নিশ্চিত হলে উন্নয়নের কারিগরের অভাব বাংলাদেশে হবে না। দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ জনগণ নিজেরাই গড়ে তুলতে পারবে যদি তাদের উপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত হয় অথচ আমরা কেবল হতাশাই দেখতে পাচ্ছি। অর্থ মন্ত্রণালয় কি অন্তত একটা ব্যাখ্যা জনগণের সামনে পেশ করতে পারে কী কী যুক্তিতে শিক্ষায় বরাদ্দ কমানো হলো?
লেখক: গল্পকার ও উন্নয়নকর্মী
২০১০ থেকে ২০১৪ সময়কালে বিশ্বব্যাংক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগই ১৪ বছর বয়সের কমে জনগণের মধ্যমা বয়স (মিডিয়ান এজ) এখন ২৫.৪ বছর (http://www.worldometers.info/world-population/bangladesh-population/)। তার মানে জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স পঁচিশের নিচে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সর্বোচ্চ সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে আমরা আছি। এই সুবিধার সঠিক ব্যবহারের ওপরেই নির্ভর করছে আমাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন। এর বাইরে আরো দুটি দৃশ্যমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট আমাদের তৈরি হয়েছে। প্রথমত, মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার প্রান্তিক অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগণের হাতেও পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয়ত, অবাধ অপরিকল্পিত দ্রুত বর্ধমান নগরায়নের বিপরীতে নাগরিক সুবিধা সীমিত হচ্ছে। একইসঙ্গে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে গিয়ে সেবা খাতের অবদান বাড়ছে অথচ আনুপাতিকভাবে শিল্পায়নের বিকাশ থমকে আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের বিরাট জনসংখ্যার অর্ধেক, অর্থাৎ নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত, দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার ওপরেই নির্ভর করছে আগামী দিনের সত্যিকার টেকসই উন্নয়ন। অতএব শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
আমরা বিশ্বাস করি, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের স্বতঃস্ফূর্ত সুবিধার ওপর ভর করে আমরা হয়তো মধ্য আয়ের দেশে সময়মতোই পৌঁছে যাব, দারিদ্র্যও আশানুরূপ কমে যাবে, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম সে অর্জন ধরে রাখতে সক্ষম না হলে সবকিছু অর্থহীন হয়ে পড়বে, যেমনটা হয়েছে নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনের উন্নয়ন ইতিহাস থেকে আমার শিক্ষা নেয়ার আছে। শিক্ষা প্রাসঙ্গিক ও মানসম্পন্ন হলে প্রজন্ম স্বতঃস্ফূর্তভাবেই দায়িত্বশীলতা ও দায়বদ্ধতা অর্জন করবে। এর ইতিবাচক প্রভাব আপনা-আপনি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সবক্ষেত্রেই পড়বে। বিশ্বব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক মহলই অবশ্য বলছে যে, শিক্ষায়; বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ তুলনামূলক ভালো। কিন্তু এই প্রশংসা করার আগে বাংলাদেশের শিক্ষা গ্রহণের যোগ্য বয়সীদের সংখ্যা ও আনুপাতিক প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় নিতে হবে। অন্যদিকে, আমাদের শিক্ষামন্ত্রীসহ সবাই জানেন ও মানেন যে শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। পঞ্চম শ্রেণী পাস করেও আমাদের অনেক শিশু মাতৃভাষায় শুদ্ধ বাক্য লিখতে সক্ষম হচ্ছে না। এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষার পরে শিশুরা ঝরে পড়ে, মানসম্মত শিক্ষকের অভাব প্রকট এবং এই (মাধ্যমিক) স্তরে শিক্ষার মান নিম্ন পর্যায়ে আছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এই বাস্তব উপলব্ধি সত্ত্বেও ঘোষিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। এটা নীতি-নির্ধারকদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বটে। আজকাল বাজেট ঘোষণা টেলিভিশনের পর্দায় দেখা এখন প্রায় ক্রিকেট খেলা দেখার মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাজেট বক্তৃতা দীর্ঘ বা হ্রস্ব যাই হোক, দর্শক তথা জনসাধারণের মনোজগতে তা একটা প্রভাব ফেলে। তরুণরা এখান থেকে শিক্ষাও গ্রহণ করে। বাজেট এখন জনপ্রিয় ডিসকোর্স। করের আওতা বাড়লেও, কর্পোরেট কর কমানো; কালো টাকা সাদা করার চিরায়ত ব্যবস্থা কিংবা বিদেশের ব্যাংকে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া ইত্যাদি বিষয়ে জনগণ সরকারের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করে। ধনীদের টাকা পাচার করার প্রবণতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রচার মাধ্যমের সামনে অর্থমন্ত্রী যখন বলেন যে, ‘এটা আসলে দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ’, তখন এভাবে বিশাল অঙ্কের কর লোকসান মেনে নেয়াকে দুর্নীতিগ্রস্ততাকে উৎসাহিত করার শামিল বিবেচনা করা যায়। করারোপে ন্যায্যতা নিশ্চিত না করতে পারলে উন্নয়ন বৈষম্য কমানো সম্ভব হবে না। ধনীরা অধিকতর ধনী হতে থাকবে। অন্যদিকে, বাজেটের ব্যয় খাতে মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন প্রাধান্যকে খাটো করা ঘরের খুঁটিকে দুর্বল করে রেখে ঘরের বেড়াকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কর আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোই সব কথা নয়। কর আদায়ের পদ্ধতি ও কোথায় ব্যয় করলে নব্বই ভাগ সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে, বৈষম্য কমবে এসব কিছুই আসল কথা। বরাদ্দের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। জনসংখ্যার অর্ধেকই যেহেতু শিক্ষা খাতের ওপর নির্ভরশীল, সুতরাং শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, উপকরণ, বিষয়বস্তু, শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়া, শিখন মূল্যায়ন পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম হালনাগাদকরণ, শিক্ষকের মান ও সম্মান বৃদ্ধি, শিক্ষা গবেষণা, ঝরেপড়াদের দক্ষতা উন্নয়ন ও জীবনমুখী শিক্ষার আওতায় আনা, শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন ইত্যাদি কোনোকিছুই সম্ভব নয় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ছাড়া। কৈলাস সত্যার্থী সম্প্রতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেছেন, দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে দেখতে হলে প্রতিটি শিশু, কিশোর-কিশোরীর অধিকার আছে দেশ গড়ার কাজে অবদান রাখার উদ্দেশ্যে নিজের যোগ্যতা তৈরির শিক্ষা পাওয়ার। এই অধিকার নিশ্চিত হলে উন্নয়নের কারিগরের অভাব বাংলাদেশে হবে না। দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ জনগণ নিজেরাই গড়ে তুলতে পারবে যদি তাদের উপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত হয় অথচ আমরা কেবল হতাশাই দেখতে পাচ্ছি। অর্থ মন্ত্রণালয় কি অন্তত একটা ব্যাখ্যা জনগণের সামনে পেশ করতে পারে কী কী যুক্তিতে শিক্ষায় বরাদ্দ কমানো হলো?
লেখক: গল্পকার ও উন্নয়নকর্মী
No comments