বরখাস্তকৃত জনপ্রতিনিধির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে by সিরাজুস সালেকিন
দীর্ঘ হচ্ছে বরখাস্ত হওয়া জনপ্রতিনিধিদের তালিকা। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ। মেয়র থেকে ইউপি সদস্য। বাদ যাচ্ছেন না কেউই। গত দুই বছরে বরখাস্তকৃত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা অর্ধশতক ছাড়িয়ে গেছে। অপেক্ষায় আছেন আরও অর্ধশত। তারা সবাই রাজনৈতিক সহিংসতার মামলার আসামি। তারা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কারও কারও মতে, বরখাস্তের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। বরখাস্তকৃত এ জনপ্রতিনিধিদের বাইরেও অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।
১১ সিটি কাপোরেশনের ৬টিতেই ২০ দল সমর্থিত মেয়ররা নির্বাচিত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় মেয়র পদেও রয়েছেন তারা। অন্যদিকে সাড়ে চার শতাধিক উপজেলার মধ্যে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা প্রায় ২০০ এবং ভাইস চেয়ারম্যান তার দ্বিগুণ। বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের মামলা দিয়ে কলমের খোঁচায় বরখাস্ত করা হচ্ছে। একই জায়গায় বসানো হচ্ছে সরকারদলীয়দের। ২০০৯ সালে প্রণীত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় (সিটি করপোরেশন) আইনে মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রদের নিয়মিত বরখাস্ত করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের প্রণীত আইনের ধারা ১২-এর ১ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন সিটি করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হলে সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে লিখিত আদেশের মাধ্যমে ওই মেয়র বা কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।’ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর একজন জনপ্রতিনিধিকে ঠুনকো অজুহাতে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তাদের বরখাস্ত করা মানে ওই এলাকার মানুষকে শাস্তি দেয়া। এভাবে গণবরখাস্তের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অর্থহীন হয়ে পড়ছে। স্থানীয় সরকার আইন পরিবর্তনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বরখাস্তের কারণে ও গ্রেপ্তারের কারণে জনপ্রতিনিধিরা এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে পারছে না। আইনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। এই আইনের পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
হরতাল-অবরোধে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় সিটি করপোরেশন, পৌর মেয়র-কাউন্সিলর ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মামলার কারণে এসব জনপ্রতিনিধির অনেকে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতির কারণে নাগরিকরা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্য সুবিধা পাচ্ছেন না। কোন কোন এলাকায় প্যানেল মেয়র বা চেয়ারম্যান না থাকায় বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সুযোগে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন প্যানেল মেয়রের তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা।
চলতি বছরের ৮ই জানুয়ারি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিনি বর্তমানে কারাগারে। এর আগে একই মামলায় অভিযুক্ত বর্তমানে কারারুদ্ধ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছকেও বরখাস্ত করে সরকার। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ৭ই মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বুলবুলের বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যাসহ ১৭টি নাশকতার মামলা আছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের বিরুদ্ধে দু’টি মামলার অভিযোগপত্র এরই মধ্যে দাখিল করা হয়েছে। বরিশাল সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি মামলা দায়ের হয়েছে। চার্জশিট দেয়া হয়েছে খুলনা সিটি মেয়র মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় তারা তিনজন বরখাস্তের তালিকায় আছেন। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে। গত ২৫শে মে একসঙ্গে ৫ জন প্রতিনিধির বরখাস্তের আদেশ জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বরখাস্ত হওয়া জনপ্রতিনিধিরা হলেন- নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামুল আলম, নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাধীন কুমার কুণ্ডু এবং বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. আবদুস ছামাদ। গত ২৭শে মে হবিগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আওয়াল মজনুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ৩০শে এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কেরামত আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কেরামত আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। গত ২০শে এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত আমীর জহিরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়। ১৪ই এপ্রিল চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা শামীম কবীর হেলিমকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় চট্টগ্রামের মীরসরাইয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা নুরুল আমীনকে। একই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা মাইনউদ্দিন মামুন মামলায় পড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে সমপ্রতি সহিংসতার মামলায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা নাজমুল হক রয়েছেন কারাগারে। নাটোর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ এমদাদুল হক আল মামুনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর উচ্চ আদালতের রায়ে দায়িত্ব ফিরে পান। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা সামপ্রতিক সহিংসতার মামলার আসামি। এই উপজেলা পরিষদে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বিরোধীদলীয় তিন জনপ্রতিনিধিই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি নেতা আবুল বাসার আকন্দ, তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা জাকারিয়া হারুনের রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা হয়েছে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল বশর চৌধুরী বরখাস্তের পর উচ্চ আদালতে রায় নিয়ে আবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোর্শেদ হাবীব একটি মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন। এই অবস্থায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সমর্থক রশিদা বেগম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের নেতা আবু সোলায়মানকে মামলার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াত নেতা নজরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আবু তালেবকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জামায়াত নেতা নুরুন্নবী প্রামাণিককে বরখাস্ত করে সেখানে নির্বাচন দেয়া হলে আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র নির্বাচিত হন। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম মণ্ডলের বিরুদ্ধে চারটি মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের পর সমপ্রতি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আবার দায়িত্ব নিয়েছেন। একই জেলার সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আহসানুল তৈয়ব মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দুপচাঁচিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আবদুল গণি মণ্ডল বর্তমানে জেলে আছেন। একই পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুল মোত্তালেব সাময়িক বরখান্ত হয়েছেন। বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলী আসগর তালুকদার জেলে আছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি দবিবুর রহমান সাময়িকভাবে বরখাস্তের পর উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবার দায়িত্ব পান। শেরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সারওয়ার জাহান চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে মামলার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর জহুরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে তিনি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালের ২২শে ডিসেম্বর পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা জহুরুল ইসলাম খানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। গত বছরের ২৯শে সেপ্টেম্বর নলছিটি পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ও বিএনপি নেতা মো. মজিবুর রহমানকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দ্বিতীয় দফায় বরখাস্ত করা হয়। ওই বছরের ১৮ই নভেম্বর বরখাস্ত করা হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার সাজুকে। ডিসেম্বরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু নছর মোহাম্মদ আলমগীর হুসাইনকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৩ই নভেম্বর বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলামকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নাশকতার কয়েকটি মামলায় চার্জশিট হওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ৮ই অক্টোবর গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল করিমকে ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মকুকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলার ফাঁদে ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম মামুন, বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর তালুকদার হেনা ও সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান আহসানুল তৈয়ব জাকির পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন নাশকতা মামলা রয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু কাউসার মো. নজরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিবাদে যশোরে এক মানববন্ধনে হামলার ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের হয়। এতে যশোর পৌরসভা মেয়র মারুফুল ইসলাম, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র আবদুস সামাদ বিশ্বাস, মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র শহীদ ইকবাল, বাঘারপাড়া পৌরসভার মেয়র আবদুর রহিম মনা, কাউন্সিলর হাজী আনিসুর রহমান মুকুলসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। তাদেরও পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ উচ্চ আদালতে সরকারি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা চালাচ্ছেন। যেসব জায়গায় মামলা নেই সেসব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় শুনানি করছে। শুনানি শেষে চূড়ান্তভাবে তাদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হবে।
১১ সিটি কাপোরেশনের ৬টিতেই ২০ দল সমর্থিত মেয়ররা নির্বাচিত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় মেয়র পদেও রয়েছেন তারা। অন্যদিকে সাড়ে চার শতাধিক উপজেলার মধ্যে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা প্রায় ২০০ এবং ভাইস চেয়ারম্যান তার দ্বিগুণ। বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের মামলা দিয়ে কলমের খোঁচায় বরখাস্ত করা হচ্ছে। একই জায়গায় বসানো হচ্ছে সরকারদলীয়দের। ২০০৯ সালে প্রণীত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় (সিটি করপোরেশন) আইনে মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রদের নিয়মিত বরখাস্ত করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের প্রণীত আইনের ধারা ১২-এর ১ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন সিটি করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হলে সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে লিখিত আদেশের মাধ্যমে ওই মেয়র বা কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।’ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর একজন জনপ্রতিনিধিকে ঠুনকো অজুহাতে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তাদের বরখাস্ত করা মানে ওই এলাকার মানুষকে শাস্তি দেয়া। এভাবে গণবরখাস্তের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অর্থহীন হয়ে পড়ছে। স্থানীয় সরকার আইন পরিবর্তনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বরখাস্তের কারণে ও গ্রেপ্তারের কারণে জনপ্রতিনিধিরা এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে পারছে না। আইনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। এই আইনের পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
হরতাল-অবরোধে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় সিটি করপোরেশন, পৌর মেয়র-কাউন্সিলর ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মামলার কারণে এসব জনপ্রতিনিধির অনেকে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতির কারণে নাগরিকরা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্য সুবিধা পাচ্ছেন না। কোন কোন এলাকায় প্যানেল মেয়র বা চেয়ারম্যান না থাকায় বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সুযোগে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন প্যানেল মেয়রের তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা।
চলতি বছরের ৮ই জানুয়ারি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিনি বর্তমানে কারাগারে। এর আগে একই মামলায় অভিযুক্ত বর্তমানে কারারুদ্ধ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছকেও বরখাস্ত করে সরকার। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ৭ই মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বুলবুলের বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যাসহ ১৭টি নাশকতার মামলা আছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের বিরুদ্ধে দু’টি মামলার অভিযোগপত্র এরই মধ্যে দাখিল করা হয়েছে। বরিশাল সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি মামলা দায়ের হয়েছে। চার্জশিট দেয়া হয়েছে খুলনা সিটি মেয়র মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় তারা তিনজন বরখাস্তের তালিকায় আছেন। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে। গত ২৫শে মে একসঙ্গে ৫ জন প্রতিনিধির বরখাস্তের আদেশ জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বরখাস্ত হওয়া জনপ্রতিনিধিরা হলেন- নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামুল আলম, নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাধীন কুমার কুণ্ডু এবং বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. আবদুস ছামাদ। গত ২৭শে মে হবিগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আওয়াল মজনুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ৩০শে এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কেরামত আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কেরামত আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। গত ২০শে এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত আমীর জহিরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়। ১৪ই এপ্রিল চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা শামীম কবীর হেলিমকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় চট্টগ্রামের মীরসরাইয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা নুরুল আমীনকে। একই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা মাইনউদ্দিন মামুন মামলায় পড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে সমপ্রতি সহিংসতার মামলায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা নাজমুল হক রয়েছেন কারাগারে। নাটোর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ এমদাদুল হক আল মামুনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর উচ্চ আদালতের রায়ে দায়িত্ব ফিরে পান। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা সামপ্রতিক সহিংসতার মামলার আসামি। এই উপজেলা পরিষদে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বিরোধীদলীয় তিন জনপ্রতিনিধিই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি নেতা আবুল বাসার আকন্দ, তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা জাকারিয়া হারুনের রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা হয়েছে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল বশর চৌধুরী বরখাস্তের পর উচ্চ আদালতে রায় নিয়ে আবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোর্শেদ হাবীব একটি মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন। এই অবস্থায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সমর্থক রশিদা বেগম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের নেতা আবু সোলায়মানকে মামলার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াত নেতা নজরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আবু তালেবকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জামায়াত নেতা নুরুন্নবী প্রামাণিককে বরখাস্ত করে সেখানে নির্বাচন দেয়া হলে আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র নির্বাচিত হন। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম মণ্ডলের বিরুদ্ধে চারটি মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের পর সমপ্রতি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আবার দায়িত্ব নিয়েছেন। একই জেলার সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আহসানুল তৈয়ব মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দুপচাঁচিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আবদুল গণি মণ্ডল বর্তমানে জেলে আছেন। একই পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুল মোত্তালেব সাময়িক বরখান্ত হয়েছেন। বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলী আসগর তালুকদার জেলে আছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি দবিবুর রহমান সাময়িকভাবে বরখাস্তের পর উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবার দায়িত্ব পান। শেরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সারওয়ার জাহান চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে মামলার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর জহুরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে তিনি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালের ২২শে ডিসেম্বর পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা জহুরুল ইসলাম খানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। গত বছরের ২৯শে সেপ্টেম্বর নলছিটি পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ও বিএনপি নেতা মো. মজিবুর রহমানকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দ্বিতীয় দফায় বরখাস্ত করা হয়। ওই বছরের ১৮ই নভেম্বর বরখাস্ত করা হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার সাজুকে। ডিসেম্বরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু নছর মোহাম্মদ আলমগীর হুসাইনকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৩ই নভেম্বর বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলামকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নাশকতার কয়েকটি মামলায় চার্জশিট হওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ৮ই অক্টোবর গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল করিমকে ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মকুকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলার ফাঁদে ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম মামুন, বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর তালুকদার হেনা ও সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান আহসানুল তৈয়ব জাকির পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন নাশকতা মামলা রয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু কাউসার মো. নজরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিবাদে যশোরে এক মানববন্ধনে হামলার ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের হয়। এতে যশোর পৌরসভা মেয়র মারুফুল ইসলাম, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র আবদুস সামাদ বিশ্বাস, মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র শহীদ ইকবাল, বাঘারপাড়া পৌরসভার মেয়র আবদুর রহিম মনা, কাউন্সিলর হাজী আনিসুর রহমান মুকুলসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। তাদেরও পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ উচ্চ আদালতে সরকারি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা চালাচ্ছেন। যেসব জায়গায় মামলা নেই সেসব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় শুনানি করছে। শুনানি শেষে চূড়ান্তভাবে তাদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হবে।
No comments