কানেকটিভিটি নিয়ে সিপিডির আলোচনা- চুক্তি বাস্তবায়নে আরও গবেষণা প্রয়োজন
বাংলাদেশ,
ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে চুক্তি
বাস্তবায়নে অবকাঠামো উন্নয়ন ও জমি অধিগ্রহণকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন
বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো এবং ট্রানজিট ফি
নির্ধারণ করতে না পারলে চুক্তির কোন সুফল পাওয়া যাবে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন মত
দেন। চুক্তি অনুযায়ী যোগাযোগ স্থাপনের আগেই সড়ক ও বন্দর ব্যবহারে
গ্রহণযোগ্য ফি নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল ‘দক্ষিণ এশিয়ার
আন্তঃযোগাযোগ ও বাণিজ্য সুবিধা’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এতে সভাপতিত্ব করেন
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে
উপস্থিত ছিলেন যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি হিসাবে
উপস্থিত ছিলেন ভারতের হাইকশিনার পঙ্কজ শরণ, নেপালের রাষ্ট্রদূত হারি কুমার
শ্রেষ্ঠা, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এফবিসিসিআই এর সভাপতি
মাতলুব আহমাদসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চার দেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে পৃথক মনিটরিং কমিটি ও যৌথ মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ট্রানজিট ফি নির্ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটান এ চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নসহ আরও গবেষণার প্রয়োজন। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে সম্পাদিত মোটরযান চলাচল চুক্তি বাংলাদেশের ব্যবসা-বিনিয়োগ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করেন তিনি। এ চুক্তি বাণিজ্য, পরিবহন, বিনিয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক ও যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়। সেক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রানজিট মাশুল আদায়সহ বেশকিছু বিষয়ে আরও গবেষণার পরামর্শ দেয়া হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সদ্য চার দেশের মধ্যে আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগ চুক্তি প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এডিবি ৩ বছরের সময় চেয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছি, ৬ মাসের বেশি সময় দেয়া যাবে না। আশা করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে চুক্তি শর্ত অনুসারে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এ আন্তঃযোগাযোগে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাও শামিল হতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী, ডোর ইজ ওপেন, ইট ইজ এ জার্নি। চুক্তিতে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের যে কোন দেশ ৩ মাসের নোটিশ চুক্তির কার্যকারিতা থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারে। আবার যে কেউ যুক্ত হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আঞ্চলিক রেল কানেক্টিভিটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ, এতে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কম। এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনাও করেছেন। মন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ এলে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকায় ২০২০ সালের মধ্যে মেট্রোরেল চালু করা হবে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর লক্ষ্যে চায়নার একটি কোম্পানির সঙ্গে কথা চলছে। রাজধানীর যানজট, জনজট ও জলজট নিরসনে চলমান ফ্লাইওভারসহ এসব উদ্যোগ কাজে আসবে। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামে চার লেনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এ চার লেনের কাজে দেরি হয়েছে। ইতিমধ্যে এ রুটের ১৪০ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ২০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পদ্মাসেতু দিয়ে রেললাইনসহ চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়ক ঈদের আগেই অর্থাৎ ৩০শে জুন খুলে দেয়া হবে। এবার ঈদে এ মহাসড়কে কোন ভোগান্তি হবে না বলেও আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রসঙ্গে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি কত চ্যালেঞ্জিং তা আমি জানি। গত সাড়ে ৩ বছরে ১০৩ বার পরিদর্শন করেছি। রাস্তার পাশে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, শ্মশান, কবরস্থান আছে। এগুলো সরানো আমাদের দেশে অনেক কঠিন। ফলে এগুলো সরাতে অনেক সময় লেগেছে। একটা মসজিদ সরাতে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ১০ বার বসতে হয়েছে। ইতিমধ্যে অন্তত ১৯০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ২০টি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন নির্মিত ১০০ কিলোমিটার সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এ মহাসড়কে ৬ লেনের কাজ অচিরেই শুরু করতে পারা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, আমি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ নই। তবে কানেক্টিভিটি নিয়ে এ যাবত যত আলোচনা হয়েছে তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, জমি অধিগ্রহণই এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সদ্য স্বাক্ষরিত চার দেশীয় কানেক্টিভিটির সব ধরনের ফি সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারণ করতে হবে। এতে সকল দেশ লাভবান হবে। পঙ্কজ শরণ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হওয়ায় আমরাও উদ্বিগ্ন। গত ৫ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তার আগের বছরগুলোর তুলনায় আমদানি-রপ্তানির পার্থক্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি করা হয়েছে ৯৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত মোট রপ্তানি করেছে ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ কে শ্রেষ্ঠা বলেন, চার দেশীয় যান চলাচল চুক্তির ফলে নেপালে ট্যুরিজম ব্যবসার অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে। এ চুক্তিটি নেপালের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভেতর দিয়ে সড়কপথে ত্রাণ পৌঁছাতে সহযোগিতা করায় দুই দেশকেই ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা নেপাল দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশা করেছিল।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে চুক্তির ফলে ব্যবসার নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সংযোগ ও আঞ্চলিক সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চল ব্যবসা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে শীর্ষ অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত রয়েছে তা আরও বিকশিত হবে বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় এ ব্যবসায়ী নেতা।
ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন মোমেন বলেন, মোটর ভেহিকেল সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত হবে। সেই পরিবেশ তৈরি করার জন্য বাংলাদেশে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। এজন্য ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন টাকা লাগবে, সেটা কে দেবে বা কিভাবে সে টাকা উঠে আসবে তার সুরাহা করতে হবে।
রওনক জাহান বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হলে বাংলাদেশের রাস্তাকে চার লেন থেকে ছয় লেন করা লাগবে। আর সে জন্য যেসব মানুষ বাসু্তহারা হয় তাদের পুনর্বাসনের চিন্তা করতে হবে। এটা যারা উন্নয়ন করবে তারা দেখবে, নাকি যারা রাস্তাঘাট ব্যবহার করবে তাদের দেখতে হবে?
উল্লেখ্য গত ১৫ই জুন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির অধীনে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি চলতে পারবে। শুল্ক ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে নিজ নিজ দেশের আইনে। তবে ট্রানজিট ও চলাচলের অনুমতি সংক্রান্ত ফি নির্ধারণ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে।
মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চার দেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে পৃথক মনিটরিং কমিটি ও যৌথ মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ট্রানজিট ফি নির্ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটান এ চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নসহ আরও গবেষণার প্রয়োজন। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে সম্পাদিত মোটরযান চলাচল চুক্তি বাংলাদেশের ব্যবসা-বিনিয়োগ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করেন তিনি। এ চুক্তি বাণিজ্য, পরিবহন, বিনিয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক ও যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়। সেক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রানজিট মাশুল আদায়সহ বেশকিছু বিষয়ে আরও গবেষণার পরামর্শ দেয়া হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সদ্য চার দেশের মধ্যে আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগ চুক্তি প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এডিবি ৩ বছরের সময় চেয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছি, ৬ মাসের বেশি সময় দেয়া যাবে না। আশা করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে চুক্তি শর্ত অনুসারে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এ আন্তঃযোগাযোগে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাও শামিল হতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী, ডোর ইজ ওপেন, ইট ইজ এ জার্নি। চুক্তিতে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের যে কোন দেশ ৩ মাসের নোটিশ চুক্তির কার্যকারিতা থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারে। আবার যে কেউ যুক্ত হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আঞ্চলিক রেল কানেক্টিভিটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ, এতে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কম। এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনাও করেছেন। মন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ এলে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকায় ২০২০ সালের মধ্যে মেট্রোরেল চালু করা হবে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর লক্ষ্যে চায়নার একটি কোম্পানির সঙ্গে কথা চলছে। রাজধানীর যানজট, জনজট ও জলজট নিরসনে চলমান ফ্লাইওভারসহ এসব উদ্যোগ কাজে আসবে। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামে চার লেনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এ চার লেনের কাজে দেরি হয়েছে। ইতিমধ্যে এ রুটের ১৪০ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ২০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পদ্মাসেতু দিয়ে রেললাইনসহ চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়ক ঈদের আগেই অর্থাৎ ৩০শে জুন খুলে দেয়া হবে। এবার ঈদে এ মহাসড়কে কোন ভোগান্তি হবে না বলেও আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রসঙ্গে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি কত চ্যালেঞ্জিং তা আমি জানি। গত সাড়ে ৩ বছরে ১০৩ বার পরিদর্শন করেছি। রাস্তার পাশে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, শ্মশান, কবরস্থান আছে। এগুলো সরানো আমাদের দেশে অনেক কঠিন। ফলে এগুলো সরাতে অনেক সময় লেগেছে। একটা মসজিদ সরাতে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ১০ বার বসতে হয়েছে। ইতিমধ্যে অন্তত ১৯০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ২০টি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন নির্মিত ১০০ কিলোমিটার সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এ মহাসড়কে ৬ লেনের কাজ অচিরেই শুরু করতে পারা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, আমি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ নই। তবে কানেক্টিভিটি নিয়ে এ যাবত যত আলোচনা হয়েছে তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, জমি অধিগ্রহণই এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সদ্য স্বাক্ষরিত চার দেশীয় কানেক্টিভিটির সব ধরনের ফি সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারণ করতে হবে। এতে সকল দেশ লাভবান হবে। পঙ্কজ শরণ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হওয়ায় আমরাও উদ্বিগ্ন। গত ৫ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তার আগের বছরগুলোর তুলনায় আমদানি-রপ্তানির পার্থক্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি করা হয়েছে ৯৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত মোট রপ্তানি করেছে ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ কে শ্রেষ্ঠা বলেন, চার দেশীয় যান চলাচল চুক্তির ফলে নেপালে ট্যুরিজম ব্যবসার অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে। এ চুক্তিটি নেপালের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভেতর দিয়ে সড়কপথে ত্রাণ পৌঁছাতে সহযোগিতা করায় দুই দেশকেই ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা নেপাল দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশা করেছিল।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে চুক্তির ফলে ব্যবসার নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সংযোগ ও আঞ্চলিক সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চল ব্যবসা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে শীর্ষ অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত রয়েছে তা আরও বিকশিত হবে বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় এ ব্যবসায়ী নেতা।
ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন মোমেন বলেন, মোটর ভেহিকেল সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত হবে। সেই পরিবেশ তৈরি করার জন্য বাংলাদেশে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। এজন্য ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন টাকা লাগবে, সেটা কে দেবে বা কিভাবে সে টাকা উঠে আসবে তার সুরাহা করতে হবে।
রওনক জাহান বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হলে বাংলাদেশের রাস্তাকে চার লেন থেকে ছয় লেন করা লাগবে। আর সে জন্য যেসব মানুষ বাসু্তহারা হয় তাদের পুনর্বাসনের চিন্তা করতে হবে। এটা যারা উন্নয়ন করবে তারা দেখবে, নাকি যারা রাস্তাঘাট ব্যবহার করবে তাদের দেখতে হবে?
উল্লেখ্য গত ১৫ই জুন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির অধীনে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি চলতে পারবে। শুল্ক ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে নিজ নিজ দেশের আইনে। তবে ট্রানজিট ও চলাচলের অনুমতি সংক্রান্ত ফি নির্ধারণ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে।
No comments