মোদির যোগ উৎসবের মাজেজা
জাতিসংঘ ঘোষিত প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে আজ রোববার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির রাজপথে আয়োজিত যোগচর্চার অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: পিআইবি ইন্ডিয়া |
রীতিমতো
যোগব্যায়াম জ্বরে আক্রান্ত পুরো ভারত। আজ ২১ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত প্রথম
আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে যোগচর্চার এক মহাযজ্ঞে মেতেছে ভারত। এই আয়োজন নিয়ে
মাতামাতি যেমন আছে, তেমনি আছে সমালোচনা। বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক
বিশ্লেষণে এমনটাই বলা হয়েছে।
‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ কীভাবে এল, তা জানতে একটু পেছনে ফিরতে হবে। দিবসটির উদ্যোক্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম ভাষণ দেন তিনি। সেখানে তিনি এমন একটি দিবসকে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। মোদির আহ্বানে সাড়া দেয় জাতিসংঘ। তাঁর দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করে ২১ জুনকে ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ ঘোষণা করে জাতিসংঘ। দিবসটি এবারই প্রথম পালিত হচ্ছে।
যোগব্যায়াম ও ভেষজ ওষুধকে জনপ্রিয় করতে নভেম্বরে মোদি ভারতে প্রথমবার এ বিষয়ে একজন মন্ত্রী নিয়োগ দেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কর্মস্থলে যোগচর্চার পরিকল্পনা নেন।
পরে মোদি ভারতজুড়ে প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের অনুষ্ঠান মহাসমারোহে করার ঘোষণা দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ সকালে দিবসটির প্রধান অনুষ্ঠান হয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন ও ইন্ডিয়া গেটের মধ্যবর্তী রাজপথে। সেখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সমবেত হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে যোগচর্চা করেছেন। সে এক মহাআয়োজন! ভারতের অন্য অনেক স্থানেও আজ যোগচর্চার আয়োজন করা হয়।
ভারতের সরকারি সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, দিবসটি পালনে প্রায় ৩০-৪০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এত ধুমধাম করে যোগচর্চার এই মহাযজ্ঞ আয়োজনের উদ্দেশ্য কী? রাষ্ট্র কিংবা জনগণের জন্য এই আয়োজনের লাভক্ষতিই-বা কী?-এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করেছে বিবিসি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি যোগচর্চার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি তাঁর এক জীবনী লেখককে বলেছেন, সকালে হাঁটার পর এক ঘণ্টা যোগচর্চা করার চেষ্টা করেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, তিনি নিজে প্রতিদিন যোগচর্চা করেন। যোগচর্চা তাঁর কর্মশক্তি জোগায়। যোগচর্চা করলে রাতে কম ঘুমালেও তাঁর চলে।
এ তো গেল যোগচর্চার ব্যাপারে ব্যক্তি মোদির আগ্রহের কথা। কিন্তু আজ ভারতে যোগচর্চার যে মহাযজ্ঞ বসেছে, তার মাজেজা কী?
বিবিসি বলছে, ভারতীয়রা বিশ্ব রেকর্ড ভালোবাসে। আজ রাজপথে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে হাজারো জনতার অংশগ্রহণে যোগচর্চার যে মহাআয়োজন হয়েছে, তার অন্যতম লক্ষ্য গিনেস বুকে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়া। একক কোনো স্থানে (ভেন্যু) যোগচর্চার সবচেয়ে বড় আয়োজন হিসেবে রাজপথের অনুষ্ঠানটি বিশ্ব রেকর্ড হবে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা। সে জন্য ওই অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ ও তা রেকর্ড করতে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
যোগচর্চা-সংক্রান্ত বেশ কিছু রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভারতের ঝুলিতে আছে। তবে তারা আরও রেকর্ড গড়ে চায়।
বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ও বিশ্ব রেকর্ড ভাঙতে ভারতীয়দের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা আছে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১৩ সালে ভারত থেকে তিন হাজার আবেদন পড়েছে। গত পাঁচ বছরে ভারতে রেকর্ডধারীদের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে। এই বৃদ্ধির হার ২৫০ শতাংশ। ভারতীয়দের এই প্রবণতাকে ‘রেকর্ড গড়ার জ্বরাক্রান্ত উপসংস্কৃতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন লেখক সামান্থ সুব্রামানিয়ান।
রেকর্ড গড়া-সংক্রান্ত আলোচনার বাইরে মোদি আয়োজিত যোগচর্চা মহাযজ্ঞের আরেকটি দিক, রাজনীতি। আজকের দিনকে ঘিরে মোদি যখন তাঁর পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন, তখনই এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
দলিত নেত্রী মায়াবতী অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক ঐক্য দুর্বল করতে মোদির দল ও তার কট্টর মিত্ররা যোগচর্চাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও যোগচর্চার এই আয়োজন নিয়ে কটাক্ষ করা হয়।
যোগচর্চার ব্যাপারে মোদি সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক মুসলিম নেতার মধ্যে অস্বস্তি আছে। যোগচর্চা ও হিন্দুত্ববাদের প্রসারের মধ্যেও কেউ কেউ সম্পর্ক খোঁজেন। এ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও শিরোনাম হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিরজা চৌধুরীর ভাষ্যমতে, যোগচর্চার আজকের আয়োজনে মোদি উপকৃত হবে। এটা তাঁর জন্য ‘স্বস্তির’ পরিস্থিতি। এর মধ্যে দিয়ে তাঁর ভাবমূর্তির উন্নয়ন ঘটবে। কট্টরপন্থীরাও খুশি হবেন।
সমালোচকেরা বলছেন, মোদি এমন এক সময় এই যোগচর্চা নিয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছেন, যখন ভারতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
মোদির এই যোগ-উৎসবকে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ, বাণিজ্যিকীকরণ ও অতি সূক্ষ্ম দমননীতির শাসনের সংমিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিশ্লেষক আজাজ আশরাফ।
‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ কীভাবে এল, তা জানতে একটু পেছনে ফিরতে হবে। দিবসটির উদ্যোক্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম ভাষণ দেন তিনি। সেখানে তিনি এমন একটি দিবসকে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। মোদির আহ্বানে সাড়া দেয় জাতিসংঘ। তাঁর দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করে ২১ জুনকে ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ ঘোষণা করে জাতিসংঘ। দিবসটি এবারই প্রথম পালিত হচ্ছে।
যোগব্যায়াম ও ভেষজ ওষুধকে জনপ্রিয় করতে নভেম্বরে মোদি ভারতে প্রথমবার এ বিষয়ে একজন মন্ত্রী নিয়োগ দেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কর্মস্থলে যোগচর্চার পরিকল্পনা নেন।
পরে মোদি ভারতজুড়ে প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের অনুষ্ঠান মহাসমারোহে করার ঘোষণা দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ সকালে দিবসটির প্রধান অনুষ্ঠান হয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন ও ইন্ডিয়া গেটের মধ্যবর্তী রাজপথে। সেখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সমবেত হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে যোগচর্চা করেছেন। সে এক মহাআয়োজন! ভারতের অন্য অনেক স্থানেও আজ যোগচর্চার আয়োজন করা হয়।
ভারতের সরকারি সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, দিবসটি পালনে প্রায় ৩০-৪০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এত ধুমধাম করে যোগচর্চার এই মহাযজ্ঞ আয়োজনের উদ্দেশ্য কী? রাষ্ট্র কিংবা জনগণের জন্য এই আয়োজনের লাভক্ষতিই-বা কী?-এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করেছে বিবিসি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি যোগচর্চার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি তাঁর এক জীবনী লেখককে বলেছেন, সকালে হাঁটার পর এক ঘণ্টা যোগচর্চা করার চেষ্টা করেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, তিনি নিজে প্রতিদিন যোগচর্চা করেন। যোগচর্চা তাঁর কর্মশক্তি জোগায়। যোগচর্চা করলে রাতে কম ঘুমালেও তাঁর চলে।
এ তো গেল যোগচর্চার ব্যাপারে ব্যক্তি মোদির আগ্রহের কথা। কিন্তু আজ ভারতে যোগচর্চার যে মহাযজ্ঞ বসেছে, তার মাজেজা কী?
বিবিসি বলছে, ভারতীয়রা বিশ্ব রেকর্ড ভালোবাসে। আজ রাজপথে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে হাজারো জনতার অংশগ্রহণে যোগচর্চার যে মহাআয়োজন হয়েছে, তার অন্যতম লক্ষ্য গিনেস বুকে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়া। একক কোনো স্থানে (ভেন্যু) যোগচর্চার সবচেয়ে বড় আয়োজন হিসেবে রাজপথের অনুষ্ঠানটি বিশ্ব রেকর্ড হবে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা। সে জন্য ওই অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ ও তা রেকর্ড করতে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
যোগচর্চা-সংক্রান্ত বেশ কিছু রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভারতের ঝুলিতে আছে। তবে তারা আরও রেকর্ড গড়ে চায়।
বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ও বিশ্ব রেকর্ড ভাঙতে ভারতীয়দের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা আছে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১৩ সালে ভারত থেকে তিন হাজার আবেদন পড়েছে। গত পাঁচ বছরে ভারতে রেকর্ডধারীদের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে। এই বৃদ্ধির হার ২৫০ শতাংশ। ভারতীয়দের এই প্রবণতাকে ‘রেকর্ড গড়ার জ্বরাক্রান্ত উপসংস্কৃতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন লেখক সামান্থ সুব্রামানিয়ান।
রেকর্ড গড়া-সংক্রান্ত আলোচনার বাইরে মোদি আয়োজিত যোগচর্চা মহাযজ্ঞের আরেকটি দিক, রাজনীতি। আজকের দিনকে ঘিরে মোদি যখন তাঁর পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন, তখনই এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
দলিত নেত্রী মায়াবতী অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক ঐক্য দুর্বল করতে মোদির দল ও তার কট্টর মিত্ররা যোগচর্চাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও যোগচর্চার এই আয়োজন নিয়ে কটাক্ষ করা হয়।
যোগচর্চার ব্যাপারে মোদি সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক মুসলিম নেতার মধ্যে অস্বস্তি আছে। যোগচর্চা ও হিন্দুত্ববাদের প্রসারের মধ্যেও কেউ কেউ সম্পর্ক খোঁজেন। এ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও শিরোনাম হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিরজা চৌধুরীর ভাষ্যমতে, যোগচর্চার আজকের আয়োজনে মোদি উপকৃত হবে। এটা তাঁর জন্য ‘স্বস্তির’ পরিস্থিতি। এর মধ্যে দিয়ে তাঁর ভাবমূর্তির উন্নয়ন ঘটবে। কট্টরপন্থীরাও খুশি হবেন।
সমালোচকেরা বলছেন, মোদি এমন এক সময় এই যোগচর্চা নিয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছেন, যখন ভারতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
মোদির এই যোগ-উৎসবকে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ, বাণিজ্যিকীকরণ ও অতি সূক্ষ্ম দমননীতির শাসনের সংমিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিশ্লেষক আজাজ আশরাফ।
No comments