আমার পরিবারের ১৬ সদস্য এ কাজে জড়িত -চোরের রানী হোসনে আরা by মহিউদ্দীন জুয়েল
জামাতার
চুরির কৌশল দেখে মুগ্ধ হয়েছিল হোসনে আরা বেগম। তাই সে আগেই সিদ্ধান্ত
নিয়েছিল ওই ব্যক্তির সঙ্গেই নিজের মেয়ের বিয়ে দেবে। এরপর সবাই মিলে একসঙ্গে
চুরি করবে। পিতার কাছ থেকে শেখা চুরিবিদ্যা রপ্ত করে রাতারাতি টাকা আয়ের
পথ খুলে বসেছিল দুর্ধর্ষ চুরির অন্যতম কৌশলী ৪৫ বছর বয়স্কা হোসনে আরা। তার
চুরির কৌশলটাও অদ্ভূত। ভোরবেলায় চুরি করতো সে। জামাই নাদিম রিকশা নিয়ে বের
হতো। আর হোসনে আরা মানুষ যখন গভীর ঘুমে থাকতো ঠিক সে সময় বাড়ির দরজা খোলা
পেলে ঢুকে পড়তো। কখনও আগেভাগে ঢুকে লুকিয়ে থাকতো ঘরের ভেতর। এরপর নগদ
টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঝটপট সটকে পড়তো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
সোমবার এমনই এক চুরি করে ফেরার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জামাই-শাশুড়ি।
তাদের কাছ থেকে এসময় পাওয়া যায় ল্যাপটপ, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সামগ্রী।
গতকাল দুপুরে নগরীর বাকলিয়া থানায় গিয়ে কথা হলো চুরির অন্যতম কাণ্ডারি
হোসনে আরার সঙ্গে। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে এ মহিলা জানায় কিভাবে সে চুরি
করতো। তার পরিবারের অন্তত ১৬ জন সদস্য চুরির সঙ্গে জড়িত। এর আগে হোসনে
আরাকে পুলিশের একটি দল চুরির সামগ্রীসহ সকালে নগরীর বিএড কলেজ এলাকা থেকে
আটক করে। এ সময় তারা একটি বাসায় চুরি শেষ করে ফিরছিল। জিজ্ঞাসাবাদে হোসনে
আরা বেগম বলে, আমি বহু বছর ধরে চুরি করি। তবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে জামাইর
সঙ্গে এ ব্যবসা করি প্রায় এক বছর। আমার মেয়েজামাই নাদিম দারুণ কৌশলী। একদিন
চুরি করতে তার সঙ্গে গিয়ে দেখা হয়। এরপর তার কাজ থেকে মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে
বিয়ে দেয়ার চিন্তা করি। সে আরও বলে, প্রতিদিন ৩-৪টি বাসায় চুরি করি। মাস
শেষে কখনও ৫০ হাজার টাকা আবার কখনও তার চেয়ে কম টাকা পাই। যা পাই তার বেশির
ভাগই নগদ টাকা পয়সা আর ল্যাপটপ। এটা বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়।
বহুবার চেষ্টা করেছি চুরি থেকে ফিরতে। কিন্তু না খেয়ে মরতে হবে বলে আর আসতে
পারিনি। হোসনে আরা আরও বলে, গত কয়েক বছর শহরের কোতোয়ালি, চান্দগাঁও,
চকবাজার ও বাকলিয়ায় এলাকার অন্তত ১০০ বাসায় হানা দিয়েছি। কিন্তু সব বাসা
থেকে চুরি করতে পারিনি। এবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম। আগে বহুবার ধরা
খেয়েছি। কিন্তু এবার সরাসরি পুলিশের হাতে। ধরা পড়লে আমি ঘটনা অস্বীকার করে
পুলিশকে দোষারোপ করি। নিজের পরিবারের অনেক সদস্য চুরির সঙ্গে জড়িত বলে
জানায় এ জগতের রানী হোসনে আরা বেগম। প্রশ্ন করলে হেসে বলে, আমার বাবাও
একসময় চুরি করতো। পরিবারের অনেক সদস্য এ কাজ করে। কেউ পকেট কাটে। আমার ভাই
আবদুল কাদের জনি চট্টগ্রাম শহরের একজন নামকরা চোর। তার ছেলে কয়েক দিন আগে
গণপিটুনিতে মারা গেছে। টেলিভিশনে খবর দেখাইছে। এ বিষয়ে সে বলে, জীবনের এ
শেষ সময়ে এসে কি কাজ করবো। তাই বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজছি। আমি ভাল করেই
জানি যদি জামাইকে একটা দোকান নিয়ে দিই তাহলে সে বিক্রি করে খাবে। তাই সঙ্গে
নিয়ে এ কাজ করি। পুলিশ জানায়, চুরির রানী হোসনে আরার গ্রামের বাড়ি
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে। তার স্বামীর নাম নজরুল ইসলাম। শহরের বাকলিয়া
এলাকা তক্তারপুলের একটি বাসায় সে থাকে। এর আগে তাকে একাধিকবার থানায় নিয়ে
আসা হয়। কিন্তু যখনি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখনই সে ঘটনা অস্বীকার। এবার
হাতেনাতে আটক হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেয়ার সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন মানবজমিনকে
বলেন, হোসনে আরা বেগমের পুরো পরিবার চুরির সঙ্গে জড়িত। তার এক আত্মীয়কে
কিছু দিন আগে পিটিয়ে মেরেছে উত্তেজিত জনতা। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে
নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। তার চুরিবিদ্যাও অদ্ভুত। জামাই বাইরে রিকশা
নিয়ে অপেক্ষা করে আর সে মালামাল লুট করে চম্পট দেয়। তিনি হোসনে আরার কাছ
থেকে এ জগতের আরও বেশ কয়েকজন দুর্ধর্ষ চোরের নাম জেনেছেন বলে উল্লেখ করেন।
No comments