এমপি’র ভাই বিচারক প্রাণ দিলেন নিরীহ যুবক সম্পদ by দেলোয়ার মানিক
থানা পুলিশ বা আদালত নয়, এলাকার চুরি ডাকাতিসহ নানা ঘটনার বিচারের দায়িত্বে নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই টোকেন চৌধুরী। ওই উপজেলার সব ঘটনার বিচার এখন টোকেন চৌধুরীই করছেন। আর নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে এ ধরনের কথিত বিচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকার এক নিরীহ যুবক। চুরি না করেও টোকেন চৌধুরীর আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয় সম্পদ আলী (২০) নামের ওই যুবককে। এই ক্ষোভে রোববার রাতে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন ওই যুবক। পুলিশ জানায়, উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের একটি টেলিভিশন চুরি যায় শুক্রবার রাতে। শনিবার রাতে ফজলুর ভাই বজলুর রহমানের ছেলে সম্পদ আলীর একটি মোবাইল ফোন সেটও চুরি যায়। তবে রোববার সকালে সম্পদ তার চুরি যাওয়া ফোন সেটটি খুঁজে পান। এতে ফজলুর রহমানের মনে সন্দেহ হয়। তিনি ধারণা করেন ভাতিজা সম্পদ তার টেলিভিশনটি চুরে করেছে। এ অনুযায়ী ফজলু ভাতিজা সম্পদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে ফজলুর রহমান কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই টোকেন চৌধুরীর কাছে যান। এর পর রোববার দুপুরে টোকেন চৌধুরীর ক্যাডাররা সম্পদকে উপজেলার আল্লার দর্গা বাজারে সংসদ সদস্যের অফিসে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেদম মারপিট করেন টোকেন চৌধুরী। কিন্তু সম্পদ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তবে টোকেন চৌধুরী তার কথা আমলে না নিয়ে কথিত চুরির অভিযোগে সম্পদের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আর জরিমানা করেই ক্ষান্ত হননি এমপির ভাই। জরিমানার টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সম্পদকে আটকে রাখারও নির্দেশ দেন তিনি। পরে বাবা বজলুর রহমান জরিমানার টাকা দিয়ে সম্পদকে ছাড়িয়ে আনেন। এদিকে, চুরির মিথ্যা অপবাদ ও প্রহসনের বিচারে ক্ষুব্ধ সম্পদ রোববার রাতে নিজ বাড়িতে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। দৌলতপুর থানার এসআই হারাণ পাল জানান, তিনি খবর পেয়ে গতকাল সকালে ময়না তদন্তের জন্য সম্পদের মৃতদেহ আনতে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেয়ার জন্য তাকে চাপ দেন বলে দাবি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এসআই হারাণ পাল আরও জানান, এমপির ভাইয়ের কথিত বিচারের ঘটনাটি তিনিও শুনেছেন। এ কারণে সংসদ সদস্যের চাপ উপেক্ষা করে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। স্থানীয়রা জানান, প্রায় প্রতিদিনই সংসদ সদস্যের ওই অফিসে এ ধরনের বিচার বসানো হয়। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে ইমরান চৌধুরী জানান, ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্য ও ভিত্তিহীন। ওই ছেলেটি পারিবারিক বিরোধের কারণে আত্মহত্যা করেছে।
No comments