ইটের আঘাতে শিক্ষিকা নিহত- বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া হরতাল ঢিলেঢালা
(ছবি:১ স্বামী-সন্তানের
সামনেই ইটের আঘাতে প্রাণ হারান শামছুন নাহার। আগারগাঁওয়ের একটি স্কুলের এই
শিক্ষিকা গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর পোড়াগাছা গ্রামে
যাচ্ছিলেন ছবি:২
পুলিশের ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন মিরপুরের পোশাকশ্রমিক মনির ইসলাম।
কর্মস্থলে যাওয়ার পথে তিনি পুলিশ ও হরতাল–সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন।
মাথা ও চোখে আঘাত পান তিনি। ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তাঁর এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেেঙ পড়েন স্ত্রী পারুল ও ছোট ভাই আরিফ l
ছবি: প্রথম আলো) হরতাল
চলাকালে নোয়াখালীতে পিকেটারের ছোড়া ইটের আঘাতে নিহত হয়েছেন একজন
স্কুলশিক্ষিকা। এ ছাড়া পল্লবী ও মালিবাগে দুটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া
রাজধানীতে গতকাল সোমবার ২০-দলীয় জোটের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণ ও
কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে বিক্ষিপ্ত ঘটনায় ১৩৫
জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে ১৬টি। ভ্রাম্যমাণ
আদালত ভাঙচুরের অভিযোগে কক্সবাজারে একজনকে ছয় মাসের সশ্রম ও আরেকজনকে এক
মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। রাজধানীতে একজনকে দুই মাস ও অপরজনকে ১৫
দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদিকে সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ককে
গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ জেলায় আধা বেলা হরতাল ডাকা হয়েছে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, শহরের উজ্জ্বলপুর এলাকায় স্বামী-সন্তানের সামনেই পিকেটারের ছোড়া ইটের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকার স্কুলশিক্ষিকা শামছুন নাহার (৩৭)। মাইজদী-সোনাপুর সড়কে এ ঘটনা ঘটে। শামছুন নাহার ঢাকার আগারগাঁওয়ের তাওহীদ ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন পাঁচ যুবককে আটক করা হয়েছে।
শামছুন নাহার স্বামী-সন্তান নিয়ে রোববার রাতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। কাল সকাল পৌনে ১০টায় উজ্জ্বলপুরে পিকেটারের হামলার শিকার হন। তাঁর স্বামী শাহজাহান সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ইটের আঘাতে কাভার্ড ভ্যানের কাচ ভেঙে শামছুন নাহারের মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট ছেলে শাহনূর আলী মায়ের কোলে বসা ছিল। অল্পের জন্য ছেলেটি রক্ষা পায়।
নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, শামছুন নাহারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথায় ও কপালে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কপালের বাঁ পাশের হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁদের বড় ছেলে শাহ মো. সিমান ঢাকার শেরেবাংলা বয়েজ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে শাহনূর তাওহীদ ল্যাবরেটরি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আজ সকাল ১০টায় রামগতির গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।
শিক্ষিকার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত মানুষের লাশ ফেলে ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে গতি ফেরাতে চায়।
রাজধানীর চিত্র: সকালে রাজধানীর পল্লবীতে হরতালের সমর্থনে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিল বের করলে পুলিশ ছররা গুলি ছুড়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে মনিরুল ইসলাম ওরফে স্বপন হাওলাদার নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বপন হাওলাদারের মুখমণ্ডল ও মাথায় ছররা গুলি লেগেছে।
মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার আবুল হোটেলের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় জামায়াত-শিবিরের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে আটটায় ২৫-৩০ জনের জামায়াত-শিবিরের কর্মী ঝটিকা মিছিল বের করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ ছররা গুলি ছুড়লে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সেখান থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ।
এ ছাড়া বিমানবন্দর, উত্তরা ৭ নম্বর, মিরপুরের কল্যাণপুর, ইব্রাহিমপুর, পুরান ঢাকার ইসলামপুর, শ্যামবাজারসহ রাজধানীর ১০টি স্থানে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। জামায়াতের দাবি, মালিবাগে পুলিশের হামলায় দলের পাঁচজনসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। আর বিমানবন্দর এলাকায় মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মীরা লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আকাশ আহমেদ নামের এক কর্মীকে আটক করে। দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। উত্তরার তুরাগে মেজবাহ উদ্দিন নামের এক যুবককে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল সোয়া আটটায় বেইলি রোডে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খানের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সেগুনবাগিচায় ছাত্রদল ও শিবির পরপর দুটি মিছিল বের করে। মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল সাতটায় দয়াগঞ্জের বটতলা মোড়ে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল-সমর্থকেরা
এ ছাড়া রাজধানীতে বিএনপির জোটের নেতা-কর্মীদের তৎপরতা খুব একটা দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের হরতালবিরোধী মিছিলে সরগরম ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা।
১৪৪ ধারা জারি করে ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের জনসভা ‘বানচাল’, দেশের বিভিন্ন স্থানে ওই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের হয়রানি ও গ্রেপ্তার এবং বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ২০-দলীয় জোটের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে এ হরতাল ডাকা হয়।
হরতালের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা সড়কে টহল দেন। পল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো মিছিল বা পিকেটিং হয়নি। তবে ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম। বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ আলামিন, ওবায়দুল, কবির, রিয়াজ, ইব্রাহিম ও কালু নামের ছয়জনকে আটক করে।
পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুশঙ্করের দাবি, সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করায় তাঁদের আটক করা হয়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে সড়কে মিনিবাস চলাচল করছে। তবে তা অন্য দিনের তুলনায় কম। এ ছাড়া সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, রিকশা ও কিছু প্রাইভেট কার চলাচল করে। রাজধানীর বাইরে থেকে আন্তজেলার কিছু বাসকে রাজধানীতে ঢুকতে দেখা গেছে। পরিবহন স্বল্পতার কারণে কর্মজীবী মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
শিক্ষিকা হত্যায় ‘সরকারি এজেন্টরা’ দায়ী: বিকেলে নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম হরতাল চলাকালে নোয়াখালীতে ইটের আঘাতে স্কুলশিক্ষিকা শামছুন নাহারের মৃত্যুর জন্য ‘সরকারি এজেন্টদের’ দায়ী করেন। তাঁর দাবি, বিরোধী দলের হরতালের বিরুদ্ধে অপবাদ দিতে সরকার ‘অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড’ করছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত লোকজনের শাস্তি দাবি করেন ফখরুল ইসলাম। হরতালকেন্দ্রিক নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, আবারও বিরোধী দলের আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার নিখুঁত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। হরতালের প্রাক্কালে পুরোনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি করে আবারও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ আর পেট্রলবোমা ছুড়ে জীবনহানির মতো মানবতাবিরোধী সহিংস কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, হরতালকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত ৩৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১০ জন। সংবাদ সম্মেলনে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান চেষ্টার সমালোচনা করা হয়।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, শহরের উজ্জ্বলপুর এলাকায় স্বামী-সন্তানের সামনেই পিকেটারের ছোড়া ইটের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকার স্কুলশিক্ষিকা শামছুন নাহার (৩৭)। মাইজদী-সোনাপুর সড়কে এ ঘটনা ঘটে। শামছুন নাহার ঢাকার আগারগাঁওয়ের তাওহীদ ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন পাঁচ যুবককে আটক করা হয়েছে।
শামছুন নাহার স্বামী-সন্তান নিয়ে রোববার রাতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। কাল সকাল পৌনে ১০টায় উজ্জ্বলপুরে পিকেটারের হামলার শিকার হন। তাঁর স্বামী শাহজাহান সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ইটের আঘাতে কাভার্ড ভ্যানের কাচ ভেঙে শামছুন নাহারের মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট ছেলে শাহনূর আলী মায়ের কোলে বসা ছিল। অল্পের জন্য ছেলেটি রক্ষা পায়।
নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, শামছুন নাহারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথায় ও কপালে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কপালের বাঁ পাশের হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁদের বড় ছেলে শাহ মো. সিমান ঢাকার শেরেবাংলা বয়েজ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে শাহনূর তাওহীদ ল্যাবরেটরি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আজ সকাল ১০টায় রামগতির গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।
শিক্ষিকার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত মানুষের লাশ ফেলে ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে গতি ফেরাতে চায়।
রাজধানীর চিত্র: সকালে রাজধানীর পল্লবীতে হরতালের সমর্থনে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিল বের করলে পুলিশ ছররা গুলি ছুড়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে মনিরুল ইসলাম ওরফে স্বপন হাওলাদার নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বপন হাওলাদারের মুখমণ্ডল ও মাথায় ছররা গুলি লেগেছে।
মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার আবুল হোটেলের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় জামায়াত-শিবিরের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে আটটায় ২৫-৩০ জনের জামায়াত-শিবিরের কর্মী ঝটিকা মিছিল বের করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ ছররা গুলি ছুড়লে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সেখান থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ।
এ ছাড়া বিমানবন্দর, উত্তরা ৭ নম্বর, মিরপুরের কল্যাণপুর, ইব্রাহিমপুর, পুরান ঢাকার ইসলামপুর, শ্যামবাজারসহ রাজধানীর ১০টি স্থানে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। জামায়াতের দাবি, মালিবাগে পুলিশের হামলায় দলের পাঁচজনসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। আর বিমানবন্দর এলাকায় মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মীরা লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আকাশ আহমেদ নামের এক কর্মীকে আটক করে। দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। উত্তরার তুরাগে মেজবাহ উদ্দিন নামের এক যুবককে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল সোয়া আটটায় বেইলি রোডে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খানের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সেগুনবাগিচায় ছাত্রদল ও শিবির পরপর দুটি মিছিল বের করে। মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল সাতটায় দয়াগঞ্জের বটতলা মোড়ে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল-সমর্থকেরা
এ ছাড়া রাজধানীতে বিএনপির জোটের নেতা-কর্মীদের তৎপরতা খুব একটা দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের হরতালবিরোধী মিছিলে সরগরম ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা।
১৪৪ ধারা জারি করে ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের জনসভা ‘বানচাল’, দেশের বিভিন্ন স্থানে ওই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের হয়রানি ও গ্রেপ্তার এবং বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ২০-দলীয় জোটের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে এ হরতাল ডাকা হয়।
হরতালের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা সড়কে টহল দেন। পল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো মিছিল বা পিকেটিং হয়নি। তবে ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম। বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ আলামিন, ওবায়দুল, কবির, রিয়াজ, ইব্রাহিম ও কালু নামের ছয়জনকে আটক করে।
পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুশঙ্করের দাবি, সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করায় তাঁদের আটক করা হয়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে সড়কে মিনিবাস চলাচল করছে। তবে তা অন্য দিনের তুলনায় কম। এ ছাড়া সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, রিকশা ও কিছু প্রাইভেট কার চলাচল করে। রাজধানীর বাইরে থেকে আন্তজেলার কিছু বাসকে রাজধানীতে ঢুকতে দেখা গেছে। পরিবহন স্বল্পতার কারণে কর্মজীবী মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
শিক্ষিকা হত্যায় ‘সরকারি এজেন্টরা’ দায়ী: বিকেলে নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম হরতাল চলাকালে নোয়াখালীতে ইটের আঘাতে স্কুলশিক্ষিকা শামছুন নাহারের মৃত্যুর জন্য ‘সরকারি এজেন্টদের’ দায়ী করেন। তাঁর দাবি, বিরোধী দলের হরতালের বিরুদ্ধে অপবাদ দিতে সরকার ‘অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড’ করছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত লোকজনের শাস্তি দাবি করেন ফখরুল ইসলাম। হরতালকেন্দ্রিক নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, আবারও বিরোধী দলের আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার নিখুঁত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। হরতালের প্রাক্কালে পুরোনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি করে আবারও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ আর পেট্রলবোমা ছুড়ে জীবনহানির মতো মানবতাবিরোধী সহিংস কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, হরতালকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত ৩৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১০ জন। সংবাদ সম্মেলনে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান চেষ্টার সমালোচনা করা হয়।
No comments