ভোলাগঞ্জ কোয়ারি নিয়ে যে কারণে দ্বন্দ্ব আওয়ামী লীগে, ৬ বছরে শতকোটি টাকা লোপাট by ওয়েছ খছরু
৬ বছরে অন্তত শতকোটি টাকা লুটপাট হয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পাথররাজ্য ভোলাগঞ্জ থেকে। কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই টাকা লুটে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারাই। এ নিয়ে ইতিমধ্যে ৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্যবার হয়েছে গুলি বিনিময়। সর্বশেষ প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদেরই হাতে খুন হন কোয়ারির একাংশের নিয়ন্ত্রক আবদুল আলী। সে খুনের ঘটনায় রক্তক্ষরণ চলছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। তার পরও শেষ হচ্ছে না লুটপাটের মহোৎসব। কোয়ারিতে প্রতি মাসে চলছে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি। এ অভিযোগ করেছে কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের বড় অংশের। চাঁদাবাজির বন্ধের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতারা দিয়েছেন হরতালের হুমকি। দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ। ‘সরকার যার কোয়ারি তার’- এই নিয়মেই গত কয়েক দশক ধরে চলছে ভোলাগঞ্জ কোয়ারির শাসন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোয়ারির আধিপত্য চলে যায় আওয়ামী লীগের হাতে। সরকারের শুরুতেই কোয়ারির অধিপতি হয়ে উঠেছিলেন কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত যুবলীগ নেতা শামীম আহমদ ও আবদুুল আলী। এর মধ্যে আবদুুল আলী খনিজ মন্ত্রণালয়ের লিজ নিয়ে কোয়ারিতে রয়েলটি আদায়ে নামে। আর যুবলীগ নেতা শামীম তার বাহিনী নিয়েই নামে কোম্পানীগঞ্জের নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে সরকারের শুরু থেকেই কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ নিয়ে কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শামীম ও আবদুল আলী বাহিনীর মধ্যে অসংখ্যবার গুলিবিনিময় ঘটে। এতে বিভিন্ন সময় আবদুল আলীসহ কমপক্ষে ৫জন নিহত হন। সর্বশেষ আবদুুল আলী ২৪শে অক্টোবর গুলিতে নিহত হলে তোলপাড় শুরু হয় কোম্পানীগঞ্জে। খুনের ঘটনার পর আবদুল আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত যুবলীগ নেতা শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। ঘটনার পর পুলিশ শামীমের দীর্ঘ দিনের সহযোগী আলতু চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে। ইতিমধ্যে আলতু চেয়ারম্যান আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে খুনের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে। ওদিকে, আবদুল আলী খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়িতে চলছে হামলা ও লুটপাট। আসামিদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, আবদুল আলীর খুনের ঘটনার পর মামলার বাদী পক্ষ বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালিয়েছে। এ ঘটনায় গত সপ্তাহে কোম্পানীগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। আসামিদের স্বজনরা জানিয়েছেন, আবদুুল আলীর মামলার বাদী পক্ষের লোকজন এখন তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ওদিকে, আবদুুল আলী খুনের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। গত সপ্তাহে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে আবদুল আলী খুনের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাদের জড়িত করায় নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা আবদুল আলীর খুনিদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ওদিকে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের যুবলীগ নেতা শামীমকে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতারা। মঙ্গলবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপার বরাবরে কাছে দেয়া অভিযোগে তারা জানিয়েছেন, পাথর শামীম, মাহফুজ ও আজমলের নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীতে চাঁদাবাজি ও অবৈধ বোমামেশিন দ্বারা পাথর উত্তোলন চলছে। অবিলম্বে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারির ঘোষণা দিয়েছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদ ও সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ কোয়ারির খাস কালেশনের ইজারা প্রকাশ্যে লিলামের মাধ্যমে প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগ হরতাল, অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। স্মারকলিপিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে স্বাক্ষর করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলী আমজাদ, সহসভাপতি আবদুল হান্নান, মো. আবু বক্কর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া চেয়ারম্যান, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির মছব্বির, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী, উত্তর রণিখাই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ, ইছাকলস ইউপি চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ শ্রমিক লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ, সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মো. রশিদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, পশ্চিম ইসলামপুর ইউপি আওয়ামী লীগ মো. রফিক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলী, পূর্ব ইসলামপুর ইউপি সভাপতি মো. মুল্লুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন দে, দক্ষিণ রণিখাই ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাশিম, সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র দাস, তেলিখাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. কমর উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আনছার উদ্দিন, ইছাকলস ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক আছার মিয়া, উত্তর রণিখাই ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি কালা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক কৃষধন সিংহ, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ইকবাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম, শৈলেন চন্দ্র নাথ, মুজিবুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অখিল চন্দ্র বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক বজলু মিয়া পাঠান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শফিউদ্দিন রেণু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাবুসহ ৪৮ জন।
No comments