জেরবার বিজেপি সরকার
বিরোধীদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর জেরবার হয়েছে বিজেপি সরকার। সংসদের ভেতর ও বাইরে এ আক্রমণের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হলো। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও প্রশ্ন শুনতে হলো দিনের পর দিন সংসদে গরহাজির থাকা নিয়ে। বেশ কিছুদিন পর কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধীকেও দেখা গেল সংসদ ভবনে দলের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে। সংসদ ভবন চত্বর গমগম করে ওঠে সকাল সাড়ে ১০টায়। রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস সাংসদেরা বিজেপিকে ‘ইউ টার্ন’ সরকার বলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের হাতে হাতে ছিল একটি পুস্তিকা। দলের পক্ষ থেকে এক এক করে ২৫টি ঘটনার উল্লেখ করে তাঁরা বলতে থাকেন, এ সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে এক কথা বলে অন্য পথে হাঁটছে। তারা পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরতে সময় নিচ্ছে না।
কংগ্রেসের এই বিক্ষোভের সামান্য তফাতে তৃণমূল কংগ্রেস সাহারা ডায়েরিতে অমিত শাহর নাম থাকার অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাতে থাকেন। কালোটাকা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল যে রাজনৈতিক লড়াই শুরু করেছে, এদিনের বিক্ষোভ ছিল তারই অংশ। সংসদের বাইরে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেসের বিক্ষোভ যদি প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে, তাহলে সংসদের ভেতরে বিরোধী আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষেই কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, সিপিএম, তৃণমূল সবাই সাধ্বী নিরঞ্জনের ইস্তফার দাবি জানাতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, সোমবার দিল্লিতে এক নির্বাচনী জনসভায় সাধ্বী এমন সব কথা বলেছেন যা শুধু অসংসদীয়ই নয়, ক্ষমারও অযোগ্য। কী বলেছিলেন উত্তর প্রদেশের ফতেপুর কেন্দ্র থেকে প্রথমবার জয়ী কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন? বলেছিলেন, দিল্লির মানুষকেই ঠিক করতে হবে কাদের তারা বাছবেন। রামজাদা (রামের সন্তান) না হারামজাদা (অবৈধ সন্তান)। একই সভায় তিনি সোনিয়াকন্যা প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্টেরও সমালোচনা করে বলেন, অতি সাধারণ পরিবারের ছেলে,
অথচ গান্ধী পরিবারের সদস্য হয়ে গরিবের টাকা মেরে কোটিপতি হয়েছেন। রাজ্যসভায় কংগ্রেস সদস্য আনন্দ শর্মা, অশ্বিনী কুমার, বহুজন নেত্রী মায়াবতী, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, তৃণমূল সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়ানসহ অনেকেই সাধ্বী নিরঞ্জনের পদত্যাগের দাবি করতে থাকেন। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত এখনই ওঁকে ছেঁটে ফেলা। লোকসভায় সব দলই ওয়েলে নেমে এসে একই দাবি জানান। জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অরুণ জেটলি রাজ্যসভায় বলেন, সংসদের বাইরে বলা কারও কোনো বক্তব্য সংসদের আলোচ্য হতে পারে না। কিন্তু লোকসভায় সংসদীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা খোঁজ করেছেন। সরকারকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে সাধ্বী নিরঞ্জন দুই কক্ষেই নিঃশর্ত ক্ষমা চান। বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতি অমিত শাহও ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন, আলটপকা কিছু না বলতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মঙ্গলবার সমালোচিত হন। রাজ্যসভায় ডেরেক ও’ব্রায়ান, সীতারাম ইয়েচুরিরা বলতে থাকেন সংসদের অধিবেশন চলছে অথচ দিনের পর দিন প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত। সভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ যেন জারি করা হয়।
No comments