সিলভিয়া গ্রুপের ৮৮৮ কোটি টাকা খেলাপি করার নির্দেশ
চট্টগ্রামের সিলভিয়া গ্রুপের বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া প্রায় ৮৮৮ কোটি টাকার ঋণ অবিলম্বে খেলাপি হিসেবে
চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গুরুতর অনিয়মের মাধ্যমে ওইসব
ঋণ নিয়েছিল গ্রুপটি। সিলভিয়া গ্রুপের ঋণ রয়েছে এমন ৭টি ব্যাংকের কাছে
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে ওইসব ঋণ খেলাপি
করে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রুপের ১১৪ কোটি
টাকার অবলোপন করা ঋণও আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে-
মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকাব্যাংক,
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। এই প্রথম
কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি শিল্প গ্রুপের বড় অংকের সব ঋণ একসঙ্গে খেলাপি করার
নির্দেশ দিল। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের রিরুদ্ধেও
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে জানাতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সংশ্লিষ্ট
ব্যাংকগুলোর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, এর আগে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক চট্টগ্রামের আরও কয়েকটি বড় গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করেছে।
এর মধ্যে এইচআর গ্রুপের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির সন্ধান
পেয়েছে। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে ইমাম গ্রুপ, নূরজাহানগ্রুপ, এসএ গ্রুপ, এমইএবি
গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করেছে। এখন পর্যন্ত ইমাম
গ্রুপের ৮৫০ কোটি, নূরজাহান গ্রুপের আড়াই হাজার কোটি, মোস্তফা গ্রুপের দেড়
হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল চট্টগ্রামে গিয়ে সিলভিয়া গ্রুপের ঋণের বিষয়ে তদন্ত করেছে। তদন্তে গ্র“পটির ঋণের ভয়াবহ দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। বেশিরভাগ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে কোনো জামানত নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রায় অচল। নিয়মিত ঋণের কিস্তি আদায় হচ্ছে না। তারপরও ব্যাংকগুলো ওইসব ঋণ নিয়মিত হিসাবে রেখে দিয়েছে। এমনকি গ্রুপের দুরবস্থা সম্পর্কে প্রধান কার্যালয়কেও কিছু জানানো হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে সিলভিয়া গ্র“পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। ঋণ ছাড় করার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। ঋণের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহৃত না হওয়ায় এখন ওইসব টাকা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। ব্যাংকগুলো নিজ থেকে কোনো সতর্ক পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টি গোপন করে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ সূত্র থেকে তথ্য পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করেছে।
গ্র“পের ঋণের সার্বিক পরিস্থিতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিশেষ টাস্কফোর্সের নিয়মিত সভায় অবহিত করা হয়। এ ঘটনায় টাস্কফোর্সের সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ব্যাংক সূত্র জানায়, সিলভিয়া গ্রুপের প্রায় ৮৮৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৯৯ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার ১৪০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১২৪ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ১৪৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৮৯ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৪৮ কোটি এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৪৩ কোটি টাকা রয়েছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ আসার আগেই কিছু ঋণ খেলাপি করা হয়েছে। আরও কিছু ঋণ শতভাগ প্রভিশন রেখে অবলোপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ পাওয়ার পর বাকি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ঋণ আদায়ের জোর তৎপরতাও চালানো হচ্ছে। কিছু ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে সিলভিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সানমার হোটেলস নির্মাণের জন্য দুই দফায় ঋণ দেয়া হয়। ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি ২০১০ সালের ২১ আগস্ট ১০ বছর মেয়াদে ৬৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। গ্রাহকের মেয়াদি ঋণের ৬ কোটি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফয়জুন শিপ ব্রেকিংয়ের ৪৮ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য দ্রুত ঋণ ছাড়ের আবেদন করে। তবে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাকে জানিয়ে দেয়া হয়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগের ঋণ শোধ করা যাবে না। যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেয়া হচ্ছে সে কাজেই ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু প্রধান কার্যালয়ের এ নির্দেশ না মেনে ওই শাখা ঋণের ৫৫ কোটি টাকা অন্য ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়। এ ব্যাপারে শাখা থেকে কোনো আপত্তি করা হয়নি। এমনকি প্রধান কার্যালয়কেও জানানো হয়নি। এর মাধ্যমে শাখা গ্রাহককে অনিয়ম করতে সহায়তা করেছে।
সূত্র জানায়, ওই শাখায় সিলভিয়া গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সানমার হোটেল ও ফয়জুন শিপ ব্রেকিংয়ের ১০৬ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হওয়ার কথা থাকলেও এগুলোকে খেলাপি না করে নিয়মিত হিসাবে দেখানো হয়েছে। অথচ এ ঋণের বিপরীতে কোনো কিস্তি আদায় হচ্ছিল না। একই শাখায় গ্র“পের অপর প্রতিষ্ঠান মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিংয়ের জন্য একই দিনে হিসাব খোলার আবেদনের পাশাপাশি ঋণ প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধান কার্যালয় ২০১১ সালের ২৯ মে গ্রাহকের নামে ঋণ মঞ্জুর করে। কিন্তু তার ১৯ দিন আগে ১০ মে গ্রাহককে ২৭ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে শাখা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ঋণের টাকা ছাড় করেছে, যা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় বলে মন্তব্য করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই শাখায় মিসম্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের পাওনা ১৭১ কোটি টাকা। এসব ঋণখেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক এশিয়ার চট্টগ্রামের সিডিএ এভিনিউ শাখায় মিসম্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের নামে জাহাজ আমদানির জন্য ঋণ সুবিধা নিলেও তা পরিশোধ করা হয়নি। ফলে ১১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া আহমাদ মুজতবা স্টিলের অবলোপন করা ২২ কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই ঋণের দায় এড়াতে ব্যাংক তা অবলোপন করেছে। এমআর শিপিং লাইনের বকেয়া ১০৭ কোটি টাকা খেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের হাতে যথেষ্ট জামানত নেই।
অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি কর্পোরেট শাখা থেকে গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিংকে ভুয়া বিল তৈরি করে ব্যাংকের অর্থ সরিয়ে ফেলতে সহায়তা করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের অবলোপন করা ঋণের ৯২ কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মিসপ্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের বকেয়া ৩১ কোটি টাকা খেলাপি করতে বলা হয়েছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ১০ কোটি টাকা এলসির বিপরীতে ১০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদিত হলেও ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকার। অনুমোদনের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। গুরুতর এ অনিয়মের জন্য শাখা ব্যবস্থাপক এককভাবে দায়ী বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ব্যাংকটিতে থাকা ৪৩ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একইভাবে ঢাকা ব্যাংক থেকে ১৪৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে ৮৯ কোটি ও ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গ্রুপটি। এসব ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ঋণের বিপরীতে শাখার হাতে যেমন পর্যাপ্ত জামানত নেই, তেমনি এগুলো আদায় হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
সূত্র জানায়, ওইসব ঋণ খেলাপি করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। যার ফলে সার্বিকভাবে বাড়বে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এই বিবেচনায় ব্যাংকগুলো ওইসব ঋণ এখন অবলোপন করা শুরু করেছে। অবলোপন করা হলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যাবে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল চট্টগ্রামে গিয়ে সিলভিয়া গ্রুপের ঋণের বিষয়ে তদন্ত করেছে। তদন্তে গ্র“পটির ঋণের ভয়াবহ দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। বেশিরভাগ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে কোনো জামানত নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রায় অচল। নিয়মিত ঋণের কিস্তি আদায় হচ্ছে না। তারপরও ব্যাংকগুলো ওইসব ঋণ নিয়মিত হিসাবে রেখে দিয়েছে। এমনকি গ্রুপের দুরবস্থা সম্পর্কে প্রধান কার্যালয়কেও কিছু জানানো হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে সিলভিয়া গ্র“পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। ঋণ ছাড় করার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। ঋণের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহৃত না হওয়ায় এখন ওইসব টাকা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। ব্যাংকগুলো নিজ থেকে কোনো সতর্ক পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টি গোপন করে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ সূত্র থেকে তথ্য পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করেছে।
গ্র“পের ঋণের সার্বিক পরিস্থিতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিশেষ টাস্কফোর্সের নিয়মিত সভায় অবহিত করা হয়। এ ঘটনায় টাস্কফোর্সের সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ব্যাংক সূত্র জানায়, সিলভিয়া গ্রুপের প্রায় ৮৮৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৯৯ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার ১৪০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১২৪ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ১৪৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৮৯ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৪৮ কোটি এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৪৩ কোটি টাকা রয়েছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ আসার আগেই কিছু ঋণ খেলাপি করা হয়েছে। আরও কিছু ঋণ শতভাগ প্রভিশন রেখে অবলোপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ পাওয়ার পর বাকি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ঋণ আদায়ের জোর তৎপরতাও চালানো হচ্ছে। কিছু ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে সিলভিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সানমার হোটেলস নির্মাণের জন্য দুই দফায় ঋণ দেয়া হয়। ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি ২০১০ সালের ২১ আগস্ট ১০ বছর মেয়াদে ৬৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। গ্রাহকের মেয়াদি ঋণের ৬ কোটি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফয়জুন শিপ ব্রেকিংয়ের ৪৮ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য দ্রুত ঋণ ছাড়ের আবেদন করে। তবে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাকে জানিয়ে দেয়া হয়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগের ঋণ শোধ করা যাবে না। যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেয়া হচ্ছে সে কাজেই ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু প্রধান কার্যালয়ের এ নির্দেশ না মেনে ওই শাখা ঋণের ৫৫ কোটি টাকা অন্য ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়। এ ব্যাপারে শাখা থেকে কোনো আপত্তি করা হয়নি। এমনকি প্রধান কার্যালয়কেও জানানো হয়নি। এর মাধ্যমে শাখা গ্রাহককে অনিয়ম করতে সহায়তা করেছে।
সূত্র জানায়, ওই শাখায় সিলভিয়া গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সানমার হোটেল ও ফয়জুন শিপ ব্রেকিংয়ের ১০৬ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হওয়ার কথা থাকলেও এগুলোকে খেলাপি না করে নিয়মিত হিসাবে দেখানো হয়েছে। অথচ এ ঋণের বিপরীতে কোনো কিস্তি আদায় হচ্ছিল না। একই শাখায় গ্র“পের অপর প্রতিষ্ঠান মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিংয়ের জন্য একই দিনে হিসাব খোলার আবেদনের পাশাপাশি ঋণ প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধান কার্যালয় ২০১১ সালের ২৯ মে গ্রাহকের নামে ঋণ মঞ্জুর করে। কিন্তু তার ১৯ দিন আগে ১০ মে গ্রাহককে ২৭ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে শাখা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ঋণের টাকা ছাড় করেছে, যা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় বলে মন্তব্য করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই শাখায় মিসম্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের পাওনা ১৭১ কোটি টাকা। এসব ঋণখেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক এশিয়ার চট্টগ্রামের সিডিএ এভিনিউ শাখায় মিসম্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের নামে জাহাজ আমদানির জন্য ঋণ সুবিধা নিলেও তা পরিশোধ করা হয়নি। ফলে ১১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া আহমাদ মুজতবা স্টিলের অবলোপন করা ২২ কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই ঋণের দায় এড়াতে ব্যাংক তা অবলোপন করেছে। এমআর শিপিং লাইনের বকেয়া ১০৭ কোটি টাকা খেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের হাতে যথেষ্ট জামানত নেই।
অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি কর্পোরেট শাখা থেকে গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিংকে ভুয়া বিল তৈরি করে ব্যাংকের অর্থ সরিয়ে ফেলতে সহায়তা করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের অবলোপন করা ঋণের ৯২ কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মিসপ্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের বকেয়া ৩১ কোটি টাকা খেলাপি করতে বলা হয়েছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ১০ কোটি টাকা এলসির বিপরীতে ১০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদিত হলেও ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকার। অনুমোদনের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। গুরুতর এ অনিয়মের জন্য শাখা ব্যবস্থাপক এককভাবে দায়ী বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ব্যাংকটিতে থাকা ৪৩ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একইভাবে ঢাকা ব্যাংক থেকে ১৪৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে ৮৯ কোটি ও ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গ্রুপটি। এসব ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ঋণের বিপরীতে শাখার হাতে যেমন পর্যাপ্ত জামানত নেই, তেমনি এগুলো আদায় হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
সূত্র জানায়, ওইসব ঋণ খেলাপি করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। যার ফলে সার্বিকভাবে বাড়বে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এই বিবেচনায় ব্যাংকগুলো ওইসব ঋণ এখন অবলোপন করা শুরু করেছে। অবলোপন করা হলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যাবে।
No comments