দুর্নীতি বৃদ্ধির পেছনে দায়ী সরকার
দুর্নীতি বৃদ্ধির পেছনে সরকারকে দায়ী
করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, দুদককে কার্যকর না করা, রাজনৈতিক
সদিচ্ছার অভাব, দুর্নীতি প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল, তা না
নেয়াসহ নানা কারণে দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের
বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা সূচক নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর
প্রতিক্রিয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় তারা যুগান্তরের কাছে এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
বুধবার জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে। এ সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। বিশ্বের ১৭৫টি দেশ ও অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা এ আন্তর্জাতিক সংস্থাটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫ নম্বরে। ০-১০০ ভিত্তিতে স্কেলে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবার ২৫। ২০১৩ সালের সূচকে ১৭৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছিল ১৩৬তম অবস্থানে। সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআই’র প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, কিসের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে তা জানি না। এটা যদি সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে, বাস্তব নিরীক্ষার, গবেষণার ওপর ভিত্তি করে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তি দুর্বল হলে এটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি যদি বেড়েই থাকে তাহলে সরকারকে শক্ত অবস্থানে যাওয়া উচিত। তদন্ত-অনুসন্ধান করে সরকারকে সে রকম পদক্ষেপ নিতে হবে। দুদককে শক্তিশালী করে দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নইলে জনকল্যাণে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে হবে না।
ব্যারিস্টার শফিক আরও বলেন, দুর্নীতি করে যারা সম্পদ আহরণ করছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের আওতায় নিতে হবে। সাজা দিয়ে তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। মন্ত্রী থাকাকালে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পরে ৩২ জন সাব-রেজিস্ট্রার ট্রুথ কমিশনে তাদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছিল। তারা কিভাবে গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট, জমি কিনেছিল তা স্বীকার করেছিল। আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের ফাইল দুদকে পাঠিয়েছি। এখন তাদের অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলেই বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তাহলে সাজাও হবে এবং সামাজিকভাবেও দুর্নীতিবাজরা হেয় হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, দুর্নীতি বেড়েছে। এর মূল কারণ হল দুদক কার্যকর হচ্ছে না। তার মতে, দুদক কার্যকর থাকলে দুর্নীতি বাড়ে না। কারণ দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। তিনি আরও বলেন, দুদক কার্যকর না হওয়ার পেছনে সবার আগে সরকার দায়ী। এছাড়া জাতি দায় এড়াতে পারে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতি বাড়লে মনে করতে হবে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরাসরি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর নিু পর্যায়ে বাড়লে মনে করতে হবে, নজরদারি এবং তদারকির অভাব রয়েছে। তিনি বলেন দুর্নীতি কমাতে সবার আগে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দুর্নীতি নিজেরা করব না এবং সহ্য করব না। এরপর নজরদারির ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকলে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. বদিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতি বৃদ্ধির পেছনে সরকার দায়ী। এক্ষেত্রে টিআই’র সঙ্গে আমি একমত। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে যে ধরনের শক্ত অবস্থান নেয়ার কথা ছিল, সরকার সেটি নেয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হল দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে দুদক। এই প্রতিষ্ঠানের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, তার কিছুই করেনি তারা।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে একটি পারসেপশন তৈরি করা জরুরি। মানুষ মনে করবে, দুদক থাকলে দুর্নীতি করা যাবে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি করেছে তার উল্টো। কিছু লোককে চারিত্রিক সনদ দিয়েছে। ফলে দুদকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ড. বদিউর রহমান আরও বলেন, দেশে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতি হচ্ছে। এটা সবাই স্বীকার করবে। তবে সরকার এবং আওয়ামী লীগের লোক এর বিরোধিতা করতে পারে। কারণ তারাও এর সঙ্গে জড়িত।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নেই। ফলে জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতাও নেই। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় দুর্নীতির কারণে দেশ আজ সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। এ সরকার মুখে যত কথাই বলুক না কেন দেশ আজ দুর্নীতিতে ভরপুর হয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত আশংকাজনক।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি এখন শুধু প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীতেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি বিচার বিভাগেও ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
বুধবার জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে। এ সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। বিশ্বের ১৭৫টি দেশ ও অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা এ আন্তর্জাতিক সংস্থাটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫ নম্বরে। ০-১০০ ভিত্তিতে স্কেলে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবার ২৫। ২০১৩ সালের সূচকে ১৭৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছিল ১৩৬তম অবস্থানে। সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআই’র প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, কিসের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে তা জানি না। এটা যদি সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে, বাস্তব নিরীক্ষার, গবেষণার ওপর ভিত্তি করে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তি দুর্বল হলে এটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি যদি বেড়েই থাকে তাহলে সরকারকে শক্ত অবস্থানে যাওয়া উচিত। তদন্ত-অনুসন্ধান করে সরকারকে সে রকম পদক্ষেপ নিতে হবে। দুদককে শক্তিশালী করে দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নইলে জনকল্যাণে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে হবে না।
ব্যারিস্টার শফিক আরও বলেন, দুর্নীতি করে যারা সম্পদ আহরণ করছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের আওতায় নিতে হবে। সাজা দিয়ে তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। মন্ত্রী থাকাকালে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পরে ৩২ জন সাব-রেজিস্ট্রার ট্রুথ কমিশনে তাদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছিল। তারা কিভাবে গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট, জমি কিনেছিল তা স্বীকার করেছিল। আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের ফাইল দুদকে পাঠিয়েছি। এখন তাদের অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলেই বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তাহলে সাজাও হবে এবং সামাজিকভাবেও দুর্নীতিবাজরা হেয় হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, দুর্নীতি বেড়েছে। এর মূল কারণ হল দুদক কার্যকর হচ্ছে না। তার মতে, দুদক কার্যকর থাকলে দুর্নীতি বাড়ে না। কারণ দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। তিনি আরও বলেন, দুদক কার্যকর না হওয়ার পেছনে সবার আগে সরকার দায়ী। এছাড়া জাতি দায় এড়াতে পারে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতি বাড়লে মনে করতে হবে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরাসরি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর নিু পর্যায়ে বাড়লে মনে করতে হবে, নজরদারি এবং তদারকির অভাব রয়েছে। তিনি বলেন দুর্নীতি কমাতে সবার আগে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দুর্নীতি নিজেরা করব না এবং সহ্য করব না। এরপর নজরদারির ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকলে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. বদিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতি বৃদ্ধির পেছনে সরকার দায়ী। এক্ষেত্রে টিআই’র সঙ্গে আমি একমত। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে যে ধরনের শক্ত অবস্থান নেয়ার কথা ছিল, সরকার সেটি নেয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হল দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে দুদক। এই প্রতিষ্ঠানের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, তার কিছুই করেনি তারা।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে একটি পারসেপশন তৈরি করা জরুরি। মানুষ মনে করবে, দুদক থাকলে দুর্নীতি করা যাবে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি করেছে তার উল্টো। কিছু লোককে চারিত্রিক সনদ দিয়েছে। ফলে দুদকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ড. বদিউর রহমান আরও বলেন, দেশে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতি হচ্ছে। এটা সবাই স্বীকার করবে। তবে সরকার এবং আওয়ামী লীগের লোক এর বিরোধিতা করতে পারে। কারণ তারাও এর সঙ্গে জড়িত।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নেই। ফলে জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতাও নেই। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় দুর্নীতির কারণে দেশ আজ সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। এ সরকার মুখে যত কথাই বলুক না কেন দেশ আজ দুর্নীতিতে ভরপুর হয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত আশংকাজনক।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি এখন শুধু প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীতেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি বিচার বিভাগেও ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
No comments