অজানাই থেকে গেল ব্ল্যাকআউটের কারণ
১লা নভেম্বর সারা দেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং লোড ম্যানেজমেন্ট না থাকায় সারা দেশে ওই বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। গত ১লা নভেম্বর সকাল সাড়ে এগারোটায় গোটা দেশ এক সঙ্গে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ওই দিনই বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কায়কাউসের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে। নির্ধারিত সময়ে ব্যর্থ হয়ে পঞ্চম কার্যদিবসে প্রাথমিক রিপোর্ট দেয় কমিটি। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ কারণেই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায়নি। তদন্ত কমিটি প্রণীত সুপারিশমালা গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, চাহিদা ও সরবরাহের সঙ্গে লোড ম্যানেজমেন্ট না থাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল। মূল কারণ হলো ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ করতে পারেনি। ব্ল্যাকআউটের পর এখনও জাতীয় গ্রিড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের উৎপত্তি বাংলাদেশে নাকি ভারত থেকে হয়েছিল- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, লোড বেশি হওয়ায় আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির জন্য এ ঘটনা ঘটেছিল। চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্য না থাকায় এ অবস্থার তৈরি হয়। তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে ফিডারের নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক লোড অটোমেটিক কন্ট্রোল হবে। এই সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়, সেজন্য আমাদের আরও আধুনিক হতে হবে। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে এজন্য সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশ কিছু পুরনো সিস্টেম রয়েছে, বেশ কিছুর ঘড়ির সময় জিপিএসের সঙ্গে সিনক্রোনাইজ নেই। ফ্রিকোয়েন্সি আপ অ্যান্ড ডাউন হলে অনেক জায়গায় ম্যানুয়ালি ফোন দিয়ে কন্ট্রোল করতে হয়, সময়মতো বন্ধ না করলে ট্রিপ করে যায় বলেন প্রতিমন্ত্রী। পলিসি মিসটেকের কারণে বিপর্যয় ঘটেনি দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সময়ের কারণে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। যত দ্রুত আমরা ডেভেলপ করেছি, তত দ্রুত আমরা পার্টিসিপেট করতে পারিনি। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা তদন্ত কমিটি ২২টি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ১০টি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করেছে। এ ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে এমনটি হয়েছে। এ কারণে যারা ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করেন তারাও ঝুঁকির মধ্যে আছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎসচিব মনোয়ার ইসলাম, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেডের মাসুম আল বেরুনী প্রমুখ।
No comments