দুর্নীতি আরও বেড়েছে: টিআই, রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান দুদকের
বাংলাদেশের দুর্নীতি পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৈশ্বিক দুর্নীতি ধারণা সূচকে দুই ধাপ অবনতি হওয়ায় এবার বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৪তম। গত বছর অবস্থান ছিল ১৬তম। দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতির দিক দিয়ে আফগানিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। গতকাল প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর বৈশ্বিক দুর্নীতির ধারণা সূচকে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের দুর্নীতির সূচক দেশে দুর্নীতির প্রকট রূপেরই ইঙ্গিত করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরও কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে টিআই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিপোর্টের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সিপিআই ২০১৪-এর ফল অনুযায়ী মানের নিচের দিক থেকে দুর্নীতির ধারণা সূচকে গত বছরের চেয়ে ২ ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় হওয়ায় দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান ও ড. এটিএম শামসুল হুদা এবং উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। দুর্নীতির সূচক (সিপিআই) ফেব্রুয়ারি ২০১১ সাল থেকে আগস্ট ২০১৪ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, এ বছর বাংলাদেশ ০-১০০ স্কেলে ২৫ স্কোর পেয়ে ১৭৫টি দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে ১৪৫তম এবং নিচের দিক থেকে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৩ সালের তুলনায় অবস্থানের নিম্নক্রম অনুযায়ী দুই ধাপ নিচে নেমেছে এবং গত বছরের ২৭ স্কোরের চেয়ে দুই স্কোর কম পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া উপরের দিক থেকে গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ এ বছর ৯ ধাপ নিচে নেমে গেছে। ড. ইফতেখারুজামান বলেন, একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নিচের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বনিম্নে অবস্থান করছে এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দুই পয়েন্ট কম পাওয়ায় এবং তা বৈশ্বিক গড় ৪৩-এর চেয়ে অনেক কম হওয়ায় সার্বিকভাবে দুর্নীতির বৈশ্বিক ধারণা সূচকে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের সিপিআই অনুযায়ী ৯২টি দেশের স্কোর বেড়েছে, ৪৭টি দেশ আগের স্কোর ধরে রেখেছে। অন্যদিকে যে ৩৬টি দেশের স্কোরের অবনতি হয়েছে, দুঃখজনকভাবে সেই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে একই স্কোর পাওয়া অন্য চারটি দেশ হলো- গিনি, লাওস, কেনিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি। ২০১৪ সালে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক (স্কোর ৯২)। ৯১ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড (স্কোর ৮৯)। ৮ স্কোর পেয়ে ২০১৪ সালে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে যৌথভাবে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া। ১১ ও ১২ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্নের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দেশ হিসেবে রয়েছে যথাক্রমে সুদান ও আফগানিস্তান।
সূচকে স্কেলের ০ স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণার মাপকাঠিতে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসন প্রতিষ্ঠিত দেশ বলে ধারণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার এবং জবাবদিহির ঘাটতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দরিদ্র জনগণ। আমরা সরকারের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। সে কারণে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অনুযায়ী কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে। যে কোন সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের দাবি উত্থাপনে সোচ্চার হওয়া।
যে কারণে এ অবনতি: ড. ইফতেখারুজামান বলেন, বিভিন্ন কারণে সিপিআই সূচকে এ বছর ক্রমাবনতি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ঘাটতি, কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টান্তের অভাব, দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস, পদ্মাসেতু প্রকল্প, রেলওয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, হলমার্ক ও ডেসটিনি এবং সোনালী ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম, রানা প্লাজার ঘটনার ব্যাপারে শৈথিল্য, ক্ষমতাবানদের বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পদের বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণের দৌরাত্ম্য, সংসদসহ সংশ্লিষ্ট জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা, নিয়োগ বাণিজ্যের রাজনীতিকীকরণ এবং ভূমি ও নদী-জলাশয় দখলের মহোৎসব। তিনি বলেন, বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুদককে অনেক সময়ই দেখা গেছে সরকারের এক প্রকার বি-টিমের ভূমিকা পালন করতে। এ প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজামান বলেন, সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে মনে করা হয় বাংলাদেশ বা তার অধিবাসীরা দুর্নীতিগ্রস্ত। বাস্তবে দেশের মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজামান বলেন, গত বছর সুইস ব্যাংকের সূত্র ধরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে সেকেন্ড হোমের জন্য বাংলাদেশীরা বিগত বছরের তুলনায় দুই-তিন গুণ টাকা জমা রেখেছেন। এছাড়া জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদনও এ অবনতির কারণ হলেও হতে পারে।
সিপিআই ২০১৪-এর জন্য বাংলাদেশের সূত্র হিসেবে যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য নেয়া হয়: বার্টেলসমান ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কর্র্তৃক পরিচালিত কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, গ্লোবাল ইনসাইটের কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস-এর ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এক্সিউকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে এবং ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট পরিচালিত রুল অব ল’ ইনডেক্স-এর রিপোর্টসমূহের জরিপ ব্যবহৃত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিপিআই নির্ণয়ে টিআইবি কোন ভূমিকা পালন করে না। এমনকি টিআইবি’র গবেষণা থেকে প্রাপ্ত কোন তথ্য বা বিশ্লেষণ সিপিআই-এ পাঠানো হয় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের মতোই টিআইবি দুর্নীতির ধারণা সূচক স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ করে মাত্র।
এতে আরও বলা হয় ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার নিচের দিক থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম, ২০০৮এ দশম, ২০০৯ সালে ১৩তম, ২০১০ সালে ১২তম, ২০১১ সালে ১৩তম, ২০১২ সালেও একই অবস্থান ১৩তম ও ২০১৩ সালে ১৬তম অবস্থানে ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে টিআই দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) প্রকাশ করে আসছে।
টিআইয়ের রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়: দুদক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিআইবির পরিসংখ্যান প্রকৃত চিত্রের চেয়ে ভিন্নতর। দুদক তাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নয়। সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বাস্তবতার নিরিখে তাদের (টিআই) প্রকাশিত প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নই। যদিও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনও আমরা হাতে পাই নি, তারপরও বলছি, এ প্রতিবেদন হাতে পেলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের বেলায় ছাড় দেয়ার কথা ঠিক নয়। দুর্নীতিগ্রস্ত যে-ই হোক না কেন কাউকেই কোন রকম ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই হলমার্ক, ডেসটিনির কেলেঙ্কারির মূল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দাবি করেন, আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন দুদক সক্রিয়। এ কারণে দুর্নীতিও কমে এসেছে।
সূচকে স্কেলের ০ স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণার মাপকাঠিতে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসন প্রতিষ্ঠিত দেশ বলে ধারণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার এবং জবাবদিহির ঘাটতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দরিদ্র জনগণ। আমরা সরকারের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। সে কারণে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অনুযায়ী কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে। যে কোন সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের দাবি উত্থাপনে সোচ্চার হওয়া।
যে কারণে এ অবনতি: ড. ইফতেখারুজামান বলেন, বিভিন্ন কারণে সিপিআই সূচকে এ বছর ক্রমাবনতি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ঘাটতি, কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টান্তের অভাব, দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস, পদ্মাসেতু প্রকল্প, রেলওয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, হলমার্ক ও ডেসটিনি এবং সোনালী ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম, রানা প্লাজার ঘটনার ব্যাপারে শৈথিল্য, ক্ষমতাবানদের বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পদের বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণের দৌরাত্ম্য, সংসদসহ সংশ্লিষ্ট জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা, নিয়োগ বাণিজ্যের রাজনীতিকীকরণ এবং ভূমি ও নদী-জলাশয় দখলের মহোৎসব। তিনি বলেন, বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুদককে অনেক সময়ই দেখা গেছে সরকারের এক প্রকার বি-টিমের ভূমিকা পালন করতে। এ প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজামান বলেন, সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে মনে করা হয় বাংলাদেশ বা তার অধিবাসীরা দুর্নীতিগ্রস্ত। বাস্তবে দেশের মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজামান বলেন, গত বছর সুইস ব্যাংকের সূত্র ধরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে সেকেন্ড হোমের জন্য বাংলাদেশীরা বিগত বছরের তুলনায় দুই-তিন গুণ টাকা জমা রেখেছেন। এছাড়া জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদনও এ অবনতির কারণ হলেও হতে পারে।
সিপিআই ২০১৪-এর জন্য বাংলাদেশের সূত্র হিসেবে যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য নেয়া হয়: বার্টেলসমান ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কর্র্তৃক পরিচালিত কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, গ্লোবাল ইনসাইটের কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস-এর ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এক্সিউকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে এবং ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট পরিচালিত রুল অব ল’ ইনডেক্স-এর রিপোর্টসমূহের জরিপ ব্যবহৃত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিপিআই নির্ণয়ে টিআইবি কোন ভূমিকা পালন করে না। এমনকি টিআইবি’র গবেষণা থেকে প্রাপ্ত কোন তথ্য বা বিশ্লেষণ সিপিআই-এ পাঠানো হয় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের মতোই টিআইবি দুর্নীতির ধারণা সূচক স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ করে মাত্র।
এতে আরও বলা হয় ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার নিচের দিক থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম, ২০০৮এ দশম, ২০০৯ সালে ১৩তম, ২০১০ সালে ১২তম, ২০১১ সালে ১৩তম, ২০১২ সালেও একই অবস্থান ১৩তম ও ২০১৩ সালে ১৬তম অবস্থানে ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে টিআই দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) প্রকাশ করে আসছে।
টিআইয়ের রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়: দুদক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিআইবির পরিসংখ্যান প্রকৃত চিত্রের চেয়ে ভিন্নতর। দুদক তাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নয়। সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বাস্তবতার নিরিখে তাদের (টিআই) প্রকাশিত প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নই। যদিও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনও আমরা হাতে পাই নি, তারপরও বলছি, এ প্রতিবেদন হাতে পেলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের বেলায় ছাড় দেয়ার কথা ঠিক নয়। দুর্নীতিগ্রস্ত যে-ই হোক না কেন কাউকেই কোন রকম ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই হলমার্ক, ডেসটিনির কেলেঙ্কারির মূল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দাবি করেন, আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন দুদক সক্রিয়। এ কারণে দুর্নীতিও কমে এসেছে।
No comments