গর্ভপাত থেকে সমকামী বিয়ে, কথা চান পোপ

সমকামী সম্পর্ক থেকে গর্ভপাত ধর্মের অনুশাসন যে সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে বারণ করে, তেমন সব বিতর্কিত বিষয়ে এবার মন খুলে কথা বলার আহ্বান জানালেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকানে শুরু হওয়া দু’সপ্তাহব্যাপী এক সম্মেলনে গর্ভপাত, সমকামী সম্পর্ক, গর্ভনিরোধ, বিবাহ বিচ্ছেদ, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের মতো বিষয়গুলি নিয়ে পোপ কথা বলবেন বিশ্বের প্রায় ২০০ জন ক্যাথলিক যাজকের সঙ্গে। ক্যাথলিক অনুশাসন এক দিন যে বিষয়গুলিকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে,  সেগুলি নিয়েই প্রশ্ন তোলা এবং সার্বিক ভাবে সাধারণ মানুষের মনোভাব জানতে চেয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন। আজ সম্মলেনের শুরুতেই পোপ বলেন, সামাজিক প্রতিষ্ঠা এবং ভয়ের বাইরে বেরিয়ে এসে আমাদের মনের কথা খুলে বলতে হবে। মনে মনে যেটা ভাবছি, ঈশ্বরের কথা ভেবেই  সেটা সামনে আনতে হবে। পাশাপাশি, উপস্থিত যাজক ও ধর্মীয় প্রধানদের পোপের অনুরোধ, মানবতার খাতিরে আলোচনা করুন। আপনার পাশের জন কী বলছে, তা মন দিয়ে শুনুন। খোলা মনে বিচার করুন।

সম্মেলন শুরুর প্রথম থেকেই এই বিষয়গুলি নিয়ে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। বিবাহবিচ্ছেদ এবং পুনর্বিবাহকে ক্যাথলিক অনুশাসনের আওতাভুক্ত করার অনুরোধ জানান অনেকে। যদিও এর তীব্র বিরোধিতা করে কট্টরপন্থীদের দাবি, এমনটা কার্যকর হলে বিয়ের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে  ভেঙে পড়বে। সামনে আসে সমকামী সম্পর্ক এবং সমকামী বিয়ের প্রসঙ্গও। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে পোপ বলেন, আমি  তো বিচার করার কেউ নই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আর্জেন্টিনা সফরে গিয়ে এক সমকামী দম্পতির পুত্রসন্তানকে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা দিয়ে তিনি প্রকাশ্যেই  নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আজ গির্জার কাছে তার অনুরোধ, যে সব মানুষ বিয়ে না করেই এক সঙ্গে থাকেন, বা সামাজিক রীতি না মেনে জীবন কাটাচ্ছেন, তাদের প্রতি সংবেদনশীল হোক যাজকেরা। ধর্মের অনুশাসনের বাইরে বেরনোর ডাক অনেক আগেই দিয়েছেন  পোপ। প্রতি পদে নিজেও ধর্মের উপরে মানবতাকে  রেখেছেন। তবে আচমকা এই সম্মেলনের আয়োজন কেন?  পোপ জানালেন, এক যাজক তাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, যাজকেরা যা বিশ্বাস করেন বা যে ভাবে জীবনযাপন করেন, তা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চান না অনেকেই। এটা লজ্জাজনক। তারা পোপের কাছেও নিজেদের মনের কথা বলেন না কেন? সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই দু’সপ্তাহের এই সম্মেলনের ডাক দেন পোপ ফ্রান্সিস।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ধর্মের গোঁড়া অনুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং আলোচনা করার এই সম্মেলনের খবর যাতে সংবাদমাধ্যমের কাছে না পৌঁছায়, সে জন্য এই সম্মেলনকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে ভ্যাটিকান। তবে কিছু যাজকেরা নিজেরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই সম্মেলনের কথা জানাচ্ছেন। আর পোপ ফ্রান্সিসও এই নিয়ে রাখঢাক করেননি।

No comments

Powered by Blogger.