ভাষামতিনের মরদেহ ঢামেকে হস্তান্তর by ঊর্মি মাহবুব ও আবাদুজ্জামান শিমুল
ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের মরদেহ ঢাকা
মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার
দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ভাষামতিনের মরদেহ ঢামেক উপাধ্যক্ষ মো. ইসমাইল খানের
কাছে হস্তান্তর করেন তার স্ত্রী গুলবদন নেসা মনিকা। এ সময় ঢামেক অ্যানাটমি
বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামীম আরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর দুপুর সোয়া দুইটায়
ঢামেক অ্যানাটমি বিভাগে ভাষা সৈনিকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের মরদেহ গাড়িবহরে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘর থেকে সর্ব সাধারণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়।
বুধবার সকাল নয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মৃত্যুবরণ করেন এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামীম আরা বাংলানিউজকে বলেন, সবার শ্রদ্ধা শেষে এই মহান ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের মরদেহ অ্যানাটমি বিভাগে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভাষা মতিনের পরিবারের সম্মতিতে তার মরদেহ প্রিজার্ভ (সংরক্ষণ) করা হবে। বৃহস্পতিবার থেকেই এই সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে এবং সাত থেকে আট দিন সময় লাগবে এ কাজ শেষ হতে। অধ্যাপক শামীম আরা বলেন, পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই মাসে লেগে যাবে। এরপর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য তা ব্যবহৃত হবে।
তিনি জানান, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবকল্যাণে সন্ধানীকে মরণোত্তর চোখ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেহদান করেন। সে মোতাবেক বুধবার সন্ধানী তার চোখ সংগ্রহ করে এবং বৃহস্পতিবার শহীদ মিনারে সর্বজনের শ্রদ্ধা শেষে মরদেহ ঢামেক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন স্ত্রী গুলবদন নেসা মনিকা।
গার্ড অব অনার পেলেন না ভাষা সৈনিক
সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শহীদ মিনারে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনকে সর্বজন শ্রদ্ধা জানানোর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসন গার্ড অব অনার প্রদান করবে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে জানান, প্রটোকলের অভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া গেল না। ভাষাসৈনিক হওয়া সত্ত্বেও কেন আব্দুল মতিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি, এ প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের অভাব ছিল।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া না হলেও প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও সরকারের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হয়েছে।
নাসিম বলেন, ভাষাসৈনিক মতিন রাষ্ট্রের সম্পদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে মতিনের অবদান রাষ্ট্র ও জনগণ ভুলবে না।
গত ১৮ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়েন ভাষামতিন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নগরীর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৯ আগস্ট তাকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে গেলে চলতি মাসের ৪ তারিখে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয় ভাষামতিনকে।
বিএসএমএমইউ’র ১০ তলায় সম্প্রসারিত আধুনিক আইসিইউ কক্ষের ৯ নম্বর বেডে শিফট অনুযায়ী তার শারীরিক অবস্থা দেখভাল করেন ডাক্তাররা।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ও সংগ্রামী আব্দুল মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলায় এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে। তাঁর বাবার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান।
১৯৩০ সালে গ্রামের বাড়ী যমুনায় বিলীন হলে আব্দুল জলিল জীবিকার সন্ধানে সপরিবারে ভারতের দার্জিলিংয়ে চলে যান। সেখানে জালাপাহারের ক্যান্টনমেন্টে সুপারভাইজ স্টাফ হিসেবে চাকরি পান।
১৯৩২ সালে দার্জিলিং-এর বাংলা মিডিয়াম স্কুল মহারাণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হন। শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। ১৯৩৩ সালে আব্দুল মতিনের বয়স যখন মাত্র ৮ বছর, তখন তার মায়ের মৃত্যু হয় অ্যাকলামশিয়া রোগে।
মহারানী গার্লস স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পাস করে ১৯৩৬ সালে দার্জিলিং গভর্মেন্ট হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন মতিন। ১৯৪৩ সালে এন্ট্রান্স (Secondary Certificate Examination) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
ছেলে দার্জিলিংয়ে ভাল কোনো কলেজে ভর্তি হোক বাবা তা চাইলেও আব্দুল মতিন ১৯৪৩ সালে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ২ বছর পর ১৯৪৫ সালে তিনি এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আব্দুল মতিন ব্রিটিশ আর্মির কমিশন্ড র্যাঙ্কে ভর্তিপরীক্ষা দেন।
দৈহিক আকৃতি, উচ্চতা, আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার বলে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কমিশন পান। এরপর তিনি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর যান। কিন্তু ততদিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে তিনি একটি সার্টিফিকেট নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস (পাস কোর্স) এ ভর্তি হন। ফজলুল হক হলে তাঁর সিট হয়। ১৯৪৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস বিভাগ থেকে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় তার অবদান অন্যতম। ১৯৫২ সালে আব্দুল মতিনসহ অন্যরা ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। তারই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারা বাংলার জন্য আন্দোলনের নানা কর্মসূচি।
তিনি ছিলেন সর্বদলীয় ইমেজের অধিকারী এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
আব্দুল মতিন বেশ ক’টি বইও রচনা করেন। এগুলো হলো-‘ইউরোপের দেশে দেশে’ (১৯৬০), ‘কাস্তে’ (১৯৮৭), ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি’ (১৯৮৯), ‘প্রবাসীর দৃষ্টিতে বাংলাদেশ’ (১৯৯১), ‘শামসুদ্দিন আবুল কালাম ও তার পত্রাবলী’ (১৯৯৮), ‘শেখ হাসিনা: একটি রাজনৈতিক আলেখ্য’ (১৯৯২), আত্মজীবনী ‘স্মৃতিচারণ পাঁচ অধ্যায়’ (১৯৯৫), ‘জীবনস্মৃতি: একটি বিশেষ অধ্যায়’ (২০১২), রাজনীতি বিষয়ক ‘জেনেভায় বঙ্গবন্ধু’ (১৯৮৪), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়’ (১৯৯৩), ‘খালেদা জিয়ার শাসনকাল: একটি পর্যালোচনা’ (১৯৯৭), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মুক্তিযুদ্ধের পর’ (১৯৯৯), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: কয়েকটি ঐতিহাসিক দলিল’ (২০০৮), ‘বিজয় দিবসের পর: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ (২০০৯), ইতিহাস বিষয়ক ‘রোমের উত্থান ও পতন’ (১৯৯৫), ‘মহানগরী লন্ডন’ (১৯৯৬), ‘ক্লিওপেট্রা’ (২০০০), ‘দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিষবৃক্ষ’ (২০০১), ‘ভলতেয়ার: একটি অনন্য জীবনকাহিনী’ (২০০২), ‘কামাল আতাতুর্ক: আধুনিক তুরস্কের জনক’ (২০০৩), ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি: যুক্তরাজ্য’ (২০০৫), ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৫); ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৭), ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৯)।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের মরদেহ গাড়িবহরে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘর থেকে সর্ব সাধারণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়।
বুধবার সকাল নয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মৃত্যুবরণ করেন এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামীম আরা বাংলানিউজকে বলেন, সবার শ্রদ্ধা শেষে এই মহান ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের মরদেহ অ্যানাটমি বিভাগে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভাষা মতিনের পরিবারের সম্মতিতে তার মরদেহ প্রিজার্ভ (সংরক্ষণ) করা হবে। বৃহস্পতিবার থেকেই এই সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে এবং সাত থেকে আট দিন সময় লাগবে এ কাজ শেষ হতে। অধ্যাপক শামীম আরা বলেন, পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই মাসে লেগে যাবে। এরপর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য তা ব্যবহৃত হবে।
তিনি জানান, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবকল্যাণে সন্ধানীকে মরণোত্তর চোখ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেহদান করেন। সে মোতাবেক বুধবার সন্ধানী তার চোখ সংগ্রহ করে এবং বৃহস্পতিবার শহীদ মিনারে সর্বজনের শ্রদ্ধা শেষে মরদেহ ঢামেক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন স্ত্রী গুলবদন নেসা মনিকা।
গার্ড অব অনার পেলেন না ভাষা সৈনিক
সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শহীদ মিনারে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনকে সর্বজন শ্রদ্ধা জানানোর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসন গার্ড অব অনার প্রদান করবে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে জানান, প্রটোকলের অভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া গেল না। ভাষাসৈনিক হওয়া সত্ত্বেও কেন আব্দুল মতিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি, এ প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের অভাব ছিল।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া না হলেও প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও সরকারের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হয়েছে।
নাসিম বলেন, ভাষাসৈনিক মতিন রাষ্ট্রের সম্পদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে মতিনের অবদান রাষ্ট্র ও জনগণ ভুলবে না।
গত ১৮ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়েন ভাষামতিন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নগরীর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৯ আগস্ট তাকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে গেলে চলতি মাসের ৪ তারিখে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয় ভাষামতিনকে।
বিএসএমএমইউ’র ১০ তলায় সম্প্রসারিত আধুনিক আইসিইউ কক্ষের ৯ নম্বর বেডে শিফট অনুযায়ী তার শারীরিক অবস্থা দেখভাল করেন ডাক্তাররা।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ও সংগ্রামী আব্দুল মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলায় এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে। তাঁর বাবার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান।
১৯৩০ সালে গ্রামের বাড়ী যমুনায় বিলীন হলে আব্দুল জলিল জীবিকার সন্ধানে সপরিবারে ভারতের দার্জিলিংয়ে চলে যান। সেখানে জালাপাহারের ক্যান্টনমেন্টে সুপারভাইজ স্টাফ হিসেবে চাকরি পান।
১৯৩২ সালে দার্জিলিং-এর বাংলা মিডিয়াম স্কুল মহারাণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হন। শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। ১৯৩৩ সালে আব্দুল মতিনের বয়স যখন মাত্র ৮ বছর, তখন তার মায়ের মৃত্যু হয় অ্যাকলামশিয়া রোগে।
মহারানী গার্লস স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পাস করে ১৯৩৬ সালে দার্জিলিং গভর্মেন্ট হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন মতিন। ১৯৪৩ সালে এন্ট্রান্স (Secondary Certificate Examination) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
ছেলে দার্জিলিংয়ে ভাল কোনো কলেজে ভর্তি হোক বাবা তা চাইলেও আব্দুল মতিন ১৯৪৩ সালে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ২ বছর পর ১৯৪৫ সালে তিনি এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আব্দুল মতিন ব্রিটিশ আর্মির কমিশন্ড র্যাঙ্কে ভর্তিপরীক্ষা দেন।
দৈহিক আকৃতি, উচ্চতা, আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার বলে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কমিশন পান। এরপর তিনি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর যান। কিন্তু ততদিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে তিনি একটি সার্টিফিকেট নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস (পাস কোর্স) এ ভর্তি হন। ফজলুল হক হলে তাঁর সিট হয়। ১৯৪৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস বিভাগ থেকে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় তার অবদান অন্যতম। ১৯৫২ সালে আব্দুল মতিনসহ অন্যরা ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। তারই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারা বাংলার জন্য আন্দোলনের নানা কর্মসূচি।
তিনি ছিলেন সর্বদলীয় ইমেজের অধিকারী এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
আব্দুল মতিন বেশ ক’টি বইও রচনা করেন। এগুলো হলো-‘ইউরোপের দেশে দেশে’ (১৯৬০), ‘কাস্তে’ (১৯৮৭), ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি’ (১৯৮৯), ‘প্রবাসীর দৃষ্টিতে বাংলাদেশ’ (১৯৯১), ‘শামসুদ্দিন আবুল কালাম ও তার পত্রাবলী’ (১৯৯৮), ‘শেখ হাসিনা: একটি রাজনৈতিক আলেখ্য’ (১৯৯২), আত্মজীবনী ‘স্মৃতিচারণ পাঁচ অধ্যায়’ (১৯৯৫), ‘জীবনস্মৃতি: একটি বিশেষ অধ্যায়’ (২০১২), রাজনীতি বিষয়ক ‘জেনেভায় বঙ্গবন্ধু’ (১৯৮৪), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়’ (১৯৯৩), ‘খালেদা জিয়ার শাসনকাল: একটি পর্যালোচনা’ (১৯৯৭), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মুক্তিযুদ্ধের পর’ (১৯৯৯), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: কয়েকটি ঐতিহাসিক দলিল’ (২০০৮), ‘বিজয় দিবসের পর: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ (২০০৯), ইতিহাস বিষয়ক ‘রোমের উত্থান ও পতন’ (১৯৯৫), ‘মহানগরী লন্ডন’ (১৯৯৬), ‘ক্লিওপেট্রা’ (২০০০), ‘দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিষবৃক্ষ’ (২০০১), ‘ভলতেয়ার: একটি অনন্য জীবনকাহিনী’ (২০০২), ‘কামাল আতাতুর্ক: আধুনিক তুরস্কের জনক’ (২০০৩), ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি: যুক্তরাজ্য’ (২০০৫), ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৫); ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৭), ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৯)।
No comments