যার ইচ্ছা হরতাল ডাকো by সালাম সরকার
ইদানীং খুব অস্থিরতায় ভুগছি। কিভাবে হরতাল
ডাকা যায়? দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে হরতাল ডাকার ব্যাপারে
কেমন উৎসাহবোধ করছি। বিরোধী দল, সরকারি দল, শরিক দল, অঙ্গসংগঠন থেকে শুরু
করে যার ইচ্ছা সেই হরতাল ডাকতে পারে। ব্যাপার অনেকটাই এমনÑ ও পারলে আমিও
পারি। এমন গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড দেখে সচেতন নাগরিক হিসেবে কিভাবে হাত
গুটিয়ে বসে থাকি? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও হরতাল ডাকব।
প্রথমে হরতাল ডাকব পরিবারে। উদ্দেশ্য স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সতর্ক করা। তারা যখন যা ইচ্ছা হয় তাই করবে, নতুন নতুন আবদার করবেÑ তা হবে না। আমার কথা গুরুত্বসহকারে শ্রবণ করতে হবে এবং মানতে হবে। তা না হলে হরতাল ডাকব। পরিবারের সদস্যদের দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদস্বরূপ ১২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচির আহ্বান করব। অবশ্য দাবি-দাওয়ার ওপর নির্ভর করে কত ঘণ্টার হবে কর্মসূচি। পরিবারের সদস্যরা হরতাল প্রতিরোধে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারবে। উভয় পক্ষের আলোচনার ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী কর্মসূচি বা করণীয় কী?
যদি আলোচনায় বসতে না চায় তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। এতেও যদি আলোচনা ফলপ্রসূ না হয় তাহলে প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি করা হবে। সংসারে আগুন জ্বলবে দাউ দাউ করে। আসবাবপত্রে আগুন জ্বলবে অনবরত। এ আগুন থামবে না। হরতালের কর্মসূচি যদি শান্তিপূর্ণভাবে পালন হয় তাহলে পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি ঘোষণা করব। সফল হলে জাতীয় পর্যায়ে হরতাল-অবরোধ ডাকার সম্ভাবনাও আছে।
‘নাম নাই দাম নাই সুন্দর আলীর ভাতিজা’ মার্কা লোকেরা যদি হরতাল-অবরোধ ডাকতে পারে, আমি কেন পারব না। আমি তো স্বীকৃত ‘সরকার’। সরকার বংশের ছেলে। দাদা-বাবার নামের পাশে ‘সরকার’ ব্যবহার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। এখন আমার নামের পাশেও সরকার উপাধি ব্যবহৃত হচ্ছে। উপাধির যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের জন্য হলেও হরতাল-অবরোধ ডাকা উচিত। জন্মের পর থেকে বংশের প্রভাব দেখে আসছি। আত্মস্বীকৃত বংশ। বংশের একটা পাওয়ার আছে না! এই পাওয়ার দেখালে অসুবিধা কোথায়?
পাওয়ারের কথা বলতেই মনে পড়ে গেল একটি গল্প। শোনা গল্প নিজের মতো করে বলছিÑ ঢাকায় বসবাসরত একজন লোক স্ত্রীকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা দেখার জন্য। অনেক ঘোরাঘুরির পর স্ত্রী বলল, তুমি এত দিন ধরে ঢাকায় থাকো, তোমার তো কোনো পাওয়ার দেখলাম না। স্ত্রীর এমন কথায় লোকটির সম্মানে আঘাত লাগল। পাওয়ার দেখানোর জন্য ত্ব্রিত রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে লাল গামছা দেখাল। লাল সঙ্কেত দেখে ড্রাইভার ট্রেন থামিয়ে দেন। স্ত্রী এমন কাণ্ড দেখে আশ্চর্য হলো, স্বামীর কত পাওয়ার? ড্রাইভার নেমে এসে প্রশ্ন করলেন, কেন লাল সঙ্কেত দেখাল। লোকটি বলল, এমনি। শুনে ড্রাইভার রাগে লোকটির গালে বড় একটি চড় বসিয়ে দিলেন। চোট সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে গেল। স্ত্রী হতবাক। প্রশ্ন করল স্বামীকে। এটা কী হলো। লোকটি গাল ধরে বলল, বউ, আমার পাওয়ার আমি দেখাইলাম, উনার পাওয়ার উনি দেখাইলেন।
পাওয়ারের বিষয় যখন উঠল, তখন না বললেই নয়। বর্তমানে দেশে পাওয়ারসর্বস্ব দলের সংখ্যা যে কত, গুনে বলা যাবে না। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে, যারা পাওয়ার খাটানোর জন্য হরতাল-অবরোধ এমনকি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। যার ইচ্ছা হয় সে নতুন দল গড়ে তোলে। গণতন্ত্র বলে কথা। গণতন্ত্রের জন্য সবাই উদগ্রীব।
No comments