আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ সোহাগ
সন্দেহজনক অ্যাকশনের বোলারদের বিরুদ্ধে
আইসিসি যেন রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে মাঠে নেমেছে। যেটিকে বলা হচ্ছে আইসিসির
‘ক্র্যাকডাউন’। একের পর এক বোলারের অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ করার এই ধারায়
দুঃসংবাদ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনার সোহাগ গাজীও। পরীক্ষাগারে নিজের
অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে আসা সোহাগ শুনলেন আরও বড় দুঃসংবাদ। তাঁর বোলিং
অ্যাকশন অবৈধ বলেই রায় দিয়েছেন পরীক্ষকেরা। ফলে অ্যাকশন না শোধরানো
পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর বোলিং করতে পারবেন না একই টেস্টে সেঞ্চুরি
ও হ্যাটট্রিক করা ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার।
গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই এই দুঃসংবাদ শুনতে হয় সোহাগকে। এর আগেও একবার তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে অনুমোদিত যেকোনো বায়োমেকানিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা দিতে হতো। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের কার্ডিফে সেই পরীক্ষাও দিয়ে এসেছিলেন। সে সময় পরীক্ষকেরা প্রাথমিকভাবে সোহাগকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় নেতিবাচক ফলই এল। সোহাগের নিষিদ্ধ হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী বোলিং করার সময় কোনো বোলার সর্বোচ্চ ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হাত বাঁকাতে পারবেন। সোহাগ ঠিক কত ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকাচ্ছেন, তা অবশ্য জানাননি নিজামউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আইসিসি আমাদের নিশ্চিত করেছে সোহাগের বোলিং অ্যাকশন অনুমিত সীমার চেয়েও বেশি ডিগ্রি বাঁকানো হচ্ছে। কিন্তু কত ডিগ্রি, তা এখনো আমরা বলব না। আইসিসি নিজেই এ ব্যাপারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেবে।’
এখন বিসিবির পদক্ষেপ কী হবে, জানতে চাইলে নিজামউদ্দীন বলেন, ‘আমরা আইসিসির প্রক্রিয়াই অনুসরণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। তবে সোহাগ যত দ্রুত সম্ভব আবার ক্রিকেটে ফিরে আসতে পারে, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বোলিং অ্যাকশন শুধরে নিলে ওর ফিরতে কোনো বাধা থাকবে না।’
সোহাগকে ফোন করার সময়ও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেননি। বলেছেন, ‘আমি এখনো কিছুই জানি না। সাংবাদিকদের কাছ থেকেই শুনেছি আমার অ্যাকশন অবৈধ বলে ফল এসেছে। তবে আমি যখন পরীক্ষা দিতে গেলাম, সেখানকার বিশেষজ্ঞরা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। অ্যাকশন ঠিক আছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা অনুমান করছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন ৮-৯, সর্বোচ্চ ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকা হতে পারে। কিন্তু ১৫ ডিগ্রি হবে না।’
বোলিং করতে না পারলেও ব্যাটিং করতে কোনো বাধা নেই সোহাগের। তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ২৮-এর ওপরে, টেস্টেও সেটি ২২-এর মতো হলেও সোহাগ বাস্তবতা বুঝছেন, ‘যদি আমাকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে নেওয়া হয়, অবশ্যই সাধ্যমতো দলকে দেওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু আমাকে জাতীয় দলে বোলার হিসেবেই নেওয়া হয়। ব্যাটিংটা হচ্ছে আমার বোনাস। সে ক্ষেত্রে হয়তো আমাকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে নেওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই।’
তবে সোহাগ একেবারেই ভেঙে পড়ছেন না, ‘আমি যথেষ্ট ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছি। যদি খুব নেতিবাচক কোনো খবরও পাই, তখনো চেষ্টা করব বোলিং অ্যাকশন শুধরে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় দলে ফিরে আসার।’
সাম্প্রতিক সময়ে বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছেন পাকিস্তানের সাঈদ আজমল। পাকিস্তানেরই মোহাম্মদ হাফিজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইনের বোলিং অ্যাকশনও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
No comments