এক বালকের আত্মঘাতী হয়ে ওঠা
‘আমার ভাইয়ের চমৎকার জীবন ছিল। অর্থ ছিল।
মার্সিডিজ গাড়ি ছিল না বটে, তবে একটা অপেল ছিল। সব মিলিয়ে আমরা সুখী
পরিবার ছিলাম। আমি বুঝতে পারছি না, কেন সে এমন করল।’
আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ভাই ব্লেরিম হেটার ছোটবেলার ছবিগুলো হাতে নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে কথাগুলো বলছিলেন বড় বোন এরিয়েটা। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘দেখেন, তার চোখগুলো কত নিষ্পাপ!’
এরপর একে একে এরিয়েটা বলতে থাকেন পুরোনো কথা। ব্লেরিম ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট কসোভো ছাড়েন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। এর দুদিন পর তিনি বোনকে ফোনে বার্তা পাঠান, তিনি তুরস্কে আছেন।
এ কথা শুনে বোন আর তেমন ভাবেননি। কারণ, ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে ইমামদের বয়ান শুনতে ভাই প্রায়ই এখানে-সেখানে যান। এরপর বোন এরিয়েটা ভাইকে ফোন করেন। সঙ্গে সঙ্গে ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠে, ‘সিরিয়ায় স্বাগত’।
স্কাইপেতে ভাইবোনের যখন কথা হচ্ছিল, তখন বোন এরিয়েটা ভাই ব্লেরিমের কাছে তাঁর সিরিয়ায় থাকার বিষয়টি জানতে চাইলেন। তখন আর তিনি তা স্বীকার করলেন না। বারবারই তিনি বলছিলেন, তিনি তুরস্কে আছেন। এখানে আরবি শিখছেন আর বিয়ের জন্য পর্দানশিন পাত্রী খুঁজছেন। ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করলেন বোন।
আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ভাই ব্লেরিম হেটার ছোটবেলার ছবিগুলো হাতে নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে কথাগুলো বলছিলেন বড় বোন এরিয়েটা। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘দেখেন, তার চোখগুলো কত নিষ্পাপ!’
এরপর একে একে এরিয়েটা বলতে থাকেন পুরোনো কথা। ব্লেরিম ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট কসোভো ছাড়েন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। এর দুদিন পর তিনি বোনকে ফোনে বার্তা পাঠান, তিনি তুরস্কে আছেন।
এ কথা শুনে বোন আর তেমন ভাবেননি। কারণ, ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে ইমামদের বয়ান শুনতে ভাই প্রায়ই এখানে-সেখানে যান। এরপর বোন এরিয়েটা ভাইকে ফোন করেন। সঙ্গে সঙ্গে ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠে, ‘সিরিয়ায় স্বাগত’।
স্কাইপেতে ভাইবোনের যখন কথা হচ্ছিল, তখন বোন এরিয়েটা ভাই ব্লেরিমের কাছে তাঁর সিরিয়ায় থাকার বিষয়টি জানতে চাইলেন। তখন আর তিনি তা স্বীকার করলেন না। বারবারই তিনি বলছিলেন, তিনি তুরস্কে আছেন। এখানে আরবি শিখছেন আর বিয়ের জন্য পর্দানশিন পাত্রী খুঁজছেন। ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করলেন বোন।
কিন্তু মা ছেলের ঘর থেকে একটি পোস্টকার্ড পাওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হতে থাকে। পোস্টকার্ডে লেখা, তিনি আর ফিরবেন না।
কসোভোর অধিকাংশ পরিবার মুসলিম। মুসলিম পরিবারের সদস্য হিসেবে ব্লেরিম নিয়মিত মসজিদে যেতেন। কসোভোর বিভিন্ন শহর ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মেসিডোনিয়ার বিভিন্ন মসজিদে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর।
কীভাবে ভাই এমন পথে গেলেন, এ ব্যাপারে বলতে গিয়ে এরিয়েটা বললেন, ‘একজন বিশেষ তরুণের কথা মনে আছে। আমি তাঁকে প্রায় প্রতিদিনই দেখতাম। তিনি ছিলেন এমন একজন, যিনি আমার ভাইকে প্রভাবিত করেছিলেন। তিনি আমার ভাইকে সিরিয়া যাওয়ার টিকিট কেটে দেয়নি ঠিকই, কিন্তু তাঁর মাথায় ঢুকিয়েছে জিহাদ ভালো।’
বাড়ি ছাড়ার আগের দিনগুলোয় বেশ বদলে গিয়েছিলেন ব্লেরিম হেটা। দাড়ি রেখেছিল, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু মুসলমানের মতো পায়জামাটা একটু উঁচু করে পরতেন, ইউটিউবে ইমামদের বয়ান শুনতেন।
স্কাইপেতে মাঝেমধ্যে ভাইবোনের কথা হতো। বোন এরিয়েটাকে তিনি বলেছিলেন, তিনি তাঁর ধর্মের জন্য যুদ্ধ করছেন। তিনি আল্লাহর জন্য মরতে চান। এমনটা হলে তা হবে তাঁর জন্য পরম তৃপ্তির। বোন বললেন, ‘আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষকে ও নিজেকে হত্যার কথা তুমি ধর্মের কোথায় পেলে? তখন সে উত্তর দিল, তুমি এভাবে বললে আমি আর কখনো তোমাকে কল করব না।’
জিহাদের টানে ব্লেরিমের মতোই ঘর ছেড়েছেন কসোভোর আরেক নাগরিক আরবেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে সঙ্গে নিয়ে গেছেন তাঁর আট বছর বয়সী ছেলে এরিয়ন আবাজিকে। ১০ জুলাই স্ত্রী প্রাভেরার কাছে আরবেন বার্তা পাঠান, তিনি সিরিয়ায় আছেন।
প্রাভেরার ভাই সউদ সাদুল্লাহি জানান, ছেলেকে নিয়ে পাহাড়ে যাওয়ার কথা বলে ৭ জুলাই বাড়ি থেকে বের হন আরবেন। তারপর ছেলেকে নিয়ে আলবেনিয়ায় গিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তুরস্কে চলে যান তিনি।
কসোভোর কর্তৃপক্ষ বলছে, কসোভোর ২০০ নাগরিক সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর পক্ষে কাজ করছে। তবে সৌদ সাদুল্লাহির মতে, এই সংখ্যাটা আরও বেশি।
এমন অবস্থায় কসভো সরকার জিহাদিদের ঠেকাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। আইএসের উগ্রপন্থীদের দলে ছেলে যোগ দিলে বাবাকে চাকরিচ্যুত করার মতো কঠোর অবস্থানে আছে দেশটি। ইসলামী উগ্রপন্থী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য পুলিশ ৭০ জনকে আটক করেছে।
এ বছরের ২৪ মার্চ ব্লেরিম কসোভোতে তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করেছিলেন। বাড়ি কবে আসবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ বা কাল আল্লাহর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে।’ পরদিন তিনি ইরাকে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান, এতে তিনিসহ ৫৩ জন নিহত হন।
বোন জানান, ‘ব্লেরিম যখন কসোভোতে ছিল, তখন বলত আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা মুসলিম নয়। কিন্তু সে যখন সিরিয়ায় ছিল, আমি তখন তাকে জিজ্ঞেস করতাম, মানুষ হত্যা কি ভালো? উত্তরে সে বলেছিল, তারা যদি মুসলিম না হয়, উত্তরটা হবে “হ্যাঁ”।’
No comments