বাবাকে মনে করে কিছু কথা by মাতিয়া বানু শুকু
বাণিজ্যিকভাবে লেখালেখি করি আমি। কিন্তু
নিজের বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা লেখা আমার জন্য বেশ কঠিন। হয়তো এ জন্যই
বাবা সব সময় আমাকে লেখার জন্য চাপ দিতেন। বাবার কাছ থেকে শিখে নেওয়া
হয়নি জীবনের কথামালা লেখার স্বতঃস্ফূর্ততা। অথচ ছোটবেলা থেকে তাঁর লেখা
পড়ে আসছি, নির্ভয়ে সমালোচনাও করে আসছি। তিনি এত বড় মাপের মানুষ যে আমার
মতো ক্ষুদ্র জ্ঞানের মানুষের সমালোচনাও শুনতেন মনোযোগ দিয়ে; তা নিয়ে
ভাবতে বসতেনও নতুন করে। তিনি আমাদের হাতে ধরে কোনো কিছু শিক্ষা দেননি,
শিখিয়েছেন পাশে বসিয়ে। শিখিয়েছেন কাউকে অবহেলা না করতে এবং মানুষকে তার
প্রাপ্য সম্মান দিতে।
আজকে চলে গেলেন ভাষা-সংগ্রামী এবং প্রকৃত অর্থে সম্পূর্ণ মানুষ আবদুল মতিন। সৌভাগ্যক্রমে আমি তাঁর প্রথম সন্তান। বাবা হিসেবে তাঁকে কাছে পাওয়ায় মানুষ, সমাজ আর ইতিহাস নিয়ে আমার সমসাময়িকদের থেকে অনেক বেশি জেনেছি আমি ছোটবেলাতেই। ছোটবেলায় আমার বইপত্র পড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল কম; অথচ যখন যে বিষয় নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, বাবা সেই আগ্রহ মিটিয়েছেন উইকিপিডিয়ার মতো। আর এখন বারবার বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস—এখন যদি কোনো বিষয় নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন তৈরি হয়, চাইলেও তো তাঁর কাছে গিয়ে জানতে পারব না, শুনতে পারব না তাঁর চিন্তাপ্রসূত ব্যাখ্যা।
এই লোকটার ত্যাগের কথা সবাই কমবেশি জানেন। এ নিয়ে নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। নিজের জন্য কোনো কালেই তাঁর অনেক চাওয়া ছিল না। মৃত্যুর পরে তো নেই-ই কোনো চাওয়া। কেবল ছোট্ট কিছু চাওয়া তিনি নিজে লিখে রেখে গেছেন, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সব অনুশাসনের ঊর্ধ্বে, শুধুই জনগণের কল্যাণে। আশা করব, দেশের জনগণ, তাঁর এই চাওয়াকে শ্রদ্ধাভরে দেখবেন।
ভাষা-সংগ্রামী আবদুল মতিনের সন্তান হিসেবে দেশ-জাতির কাছে প্রার্থনা, আপনারা প্রাণের ভাষা বাংলাকে বিসর্জন দেবেন না। বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচলে আবদুল মতিনের আত্মা শান্তি পাবে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
মাতিয়া বানু শুকু: আবদুল মতিনের মেয়ে
No comments