দেড় কোটি চামড়া সংগ্রহ সংরক্ষণ নিয়ে শঙ্কা by হামিদ বিশ্বাস
এবার কোরবানিতে কোটি টাকার চামড়া সংগ্রহ
করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ সব চামড়ার একটি অংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন
সংশ্লিষ্টরা। গরম ও গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে তাদের
আশঙ্কা। এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের টার্গেট ছিল প্রায় দেড় কোটি
পিস। এর মধ্যে গরু ও মহিষের ৪৫ থেকে ৫০ লাখ পিস। আর ছাগল ও ভেড়ার এক কোটি
পিস। ইতিমধ্যে টার্গেট পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড
স্কিন মার্চেন্টস এসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন। তিনি মানবজমিনকে জানান,
অতীতের চেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় টার্গেট পূরণে সক্ষম হয়েছি। তবে
কিছু চামড়া নষ্ট হতে পারে। নষ্ট হওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একসঙ্গে
চামড়াবাহী শতাধিক ট্রাক রাজধানীতে ঢুকে লালবাগ ও হাজারীবাগের সরু রাস্তা
দিয়ে আড়তে পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা
চামড়ার ট্রাক হাজারীবাগে ঢোকার পর দিনের অর্ধেক সময় কাটে যানজটে। সে কারণে
গরমের মধ্যে আড়তে পৌঁছতে এত সময় লাগায় এবার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট
হতে পারে বলে তার ধারণা। তরে এর আগে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে চামড়ায় পর্যাপ্ত
লবণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ব্যবসায়ীরা যদি সে অনুযায়ী
কাজ করে চামড়া নষ্টের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে। ইতিমধ্যে নষ্ট চামড়া
পেয়েছেন বলে একই সংগঠনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আফতাব আহমেদ দাবি করেছেন। এবার
গরম পড়ায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যেই লবণ দেয়ার ব্যবস্থা না করলে চামড়া নষ্ট
হয়ে যাবে জানিয়ে ওই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে মওসুমি ও ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। একাধিক চামড়া সংগ্রহে নিয়োজিত
প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাদের গুদামে যেসব চামড়া
আসছে তার মধ্যে অনেক নষ্ট চামড়া রয়েছে। মূলত গরমের কারণেই এসব চামড়া নষ্ট
হয়েছে বলে জানান তারা। চামড়াবোঝাই যানবাহন যাতে সহজেই পোস্তা ও হাজারীবাগ
এলাকায় ঢুকতে এবং সেখান থেকে বের হতে পারে সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার
কথা জানিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। যদিও পুলিশ
বলছে, ট্রাক থেকে মাল নামাতে সময় নেয়ার কারণে এ যানজট দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স মালিক এসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ বলেন,
মালিকপক্ষ ৫% চামড়াও নিজেদের প্রতিনিধির মাধ্যমে কেনেনি। তারা ২-৩ দিন পর
বিভিন্ন আড়তে গিয়ে চামড়া কেনা শুরু করবেন। গরমের কারণে চামড়া নষ্ট হওয়ার
আশঙ্কা খুব বেশি নেই বলে মনে করছেন তিনি। এবার লবণের দাম আওতার মধ্যে
রয়েছে। ব্যবসায়ীরা ঠিক সময়ে ঠিকমতো চামড়ায় লবণ দিলে গরমে সমস্যা হওয়ার কথা
নয় বলে জানান তিনি। এদিকে এ বছর ট্যানার্স এসোসিয়েশনের বেঁধে দেয়া দামের
চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে বলে মওসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা দাবি
করেছেন। ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিরা পাড়া-মহল্লা থেকে বেশি
দামে চামড়া কিনতে শুরু করায় এছাড়া তাদের কোন উপায় ছিল না বলে দাবি করেন
একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের দাবির সত্যতা পাওয়া যায় বাংলাদেশ হাইড
অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আলী হোসেনের কথায়ও। তিনি
বলেন, শুধু মওসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনছেন না। মওসুমি
ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও ট্যানারি মালিকপক্ষও বেশি দামে চামড়া ক্রয় করছেন।
প্রতিযোগিতা করে চামড়া কিনতে যাওয়ায় বেশি দাম দিতে হয়েছে বলে মনে করছেন
তিনি। একজন মওসুমি ব্যবসায়ী বলেন, নয়াবাজার থেকে ১০-১২টি চামড়া সঠিক দামে
কিনেছি। কিন্তু পরে বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে আর কোন চামড়া কিনতে পারছি না। যে
দাম বলেছি তার চেয়ে কয়েক শ’ টাকা বেশি দাম বলেছিলেন অন্য ক্রেতারা। পরে
বাধ্য হয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায়
প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং চট্টগ্রামে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা
দরে কেনার ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া সারা দেশে প্রতি বর্গফুট মহিষের চামড়ার দাম ৩৫
থেকে ৪০ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ধরে দেয় তারা। এদিকে
ঢাকার অনেক জায়গায় ঈদের পরদিন মঙ্গলবারও পশু কোরবানি হওয়ায় ফড়িয়া ও মওসুমি
ব্যবসায়ীদের পাড়া-মহল্লায় চামড়ার খোঁজ করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স
এসোসিয়েশন জানায়, এবার ঈদের ঢাকায় প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ এবং সারা দেশে
প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ গরু কোরবানি করা হয়।
No comments