মন্ত্রীদের মনগড়া সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছে রেলওয়ে by আনোয়ার হোসেন
‘সৈয়দ আবুল হোসেনের ডেমু’কে যাত্রীরা বলেন
‘অবাস্তব এক্সপ্রেস’। ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কালনী এক্সপ্রেস’ চলছে খুঁড়িয়ে
খুঁড়িয়ে। ওবায়দুল কাদের সময়সূচি বদলানোয় উপকূল এক্সপ্রেসের যাত্রী কমে
গেছে।
সর্বশেষ মুজিবুল হক রেলমন্ত্রী হয়ে ছয় বগি দিয়ে
সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করেছেন। রেলের সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তাদের ভাষায় এটা ‘অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা’।
বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে চারজন মন্ত্রী রেলওয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন সৈয়দ আবুল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের ও মুজিবুল হক। দায়িত্ব নিয়েই এই মন্ত্রীরা নতুন ট্রেন চালু কিংবা নতুন প্রকল্প নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু বছর না ঘুরতেই এগুলো রেলওয়েকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আর মন্ত্রী-সাংসদদের সুপারিশে বা চাপে ৪৪টি স্টেশনে আন্তনগর ট্রেন থামার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টপেজ বাড়ানোর কারণে বেশ কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন কার্যত লোকাল ট্রেনে পরিণত হয়েছে। চলাচলের সময় দীর্ঘ হওয়ায় এই ট্রেনগুলো যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে না। এতে যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রেনের সময়সূচির শৃঙ্খলাও নষ্ট হচ্ছে।
বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে রেলের উন্নয়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ থেকে ভেঙে নতুন রেল মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রীরা মনগড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে এর সুফল পাচ্ছে না যাত্রীরা। বছরে রেলের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
সৈয়দ আবুল হোসেন ও ডেমু: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ আবুল হোসেনকে। তিনি এসেই প্রায় ৬০০ কোটি টাকায় চীন থেকে ডেমু ট্রেন আমদানির প্রকল্প হাতে নেন। সম্পূর্ণ সরকারি টাকায় কেনা এসব ডেমু এখন রেলের গলার কাঁটা। এর যাত্রী ধারণ- ক্ষমতা কম। বিশেষ করে, রেলের বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মের চেয়ে ডেমুর উচ্চতা বেশি বলে যাত্রীরা সহজে ওঠানামা করতে পারে না। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় ভেতরে প্রচণ্ড গরমে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। টয়লেট না থাকায় দূরের পথে এই ট্রেন চালানো যায় না। ফলে বিশেষ করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে চলাচলকারী ডেমু এখন রেলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ডেমু কেনার আগে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। সাধারণত নতুন ট্রেন আমদানির আগে রেলের অপারেশন বিভাগের মতামত নেওয়া হয়। ডেমু প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটাও করা হয়নি।
জানতে চাইলে মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ডেমু অদরকারি ছিল না। কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে। এগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।
আর রেলের মহাপরিচালক আবু তাহের বললেন, এটা চট্টগ্রামে ভালো চলছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জেই সমস্যা হচ্ছে।
আবার ইঞ্জিন-কোচ আমদানি না করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ নামে নতুন এক জোড়া ট্রেন চালু করেছিলেন আবুল হোসেন। নামে নতুন হলেও ট্রেনের ইঞ্জিন-বগি সবই ছিল পুরোনো, বিভিন্ন ট্রেন থেকে বগি ধার করা। আন্তনগর ট্রেন হিসেবে চালু করলেও এখন এটি লোকাল হিসেবে চলছে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে রেলের কোনো বগি বা ইঞ্জিন বিকল হলে তাৎক্ষণিক প্রতিস্থাপনের জন্য কিছু ইঞ্জিন ও কোচ মজুত রাখতে হয়। চট্টলা ট্রেনটি বিকল্প ব্যবহারের ওই সব ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে চালু করা হয়েছিল। ফলে এর চাপ পড়েছে পুরো রেল ব্যবস্থাপনায়। বিকল্প না থাকায় কোনো ইঞ্জিন বা বগি নষ্ট হলে অন্য ট্রেনের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও কালনী: আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। ওই মাসেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙে নতুন রেলপথ মন্ত্রণালয় করা হয় এবং দায়িত্ব দেওয়া হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তিনি এসেই তাঁর নিজ এলাকা সিলেটের পথে ‘কালনী এক্সপ্রেস’ নামে একটি নতুন ট্রেন চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেন।
কিন্তু ‘মধ্যরাতে ৭০ লাখ টাকা কেলেঙ্কারি’র ঘটনায় পরে সুরঞ্জিত পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের কিছুদিন পরেই ট্রেনটি চালু হয়। এখন এই ট্রেনের অর্ধেক আসনই খালি যাচ্ছে। অথচ একই পথের অন্য ট্রেনগুলোতে আসনের অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
রেলের নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, কালনী ট্রেনটি চালু হওয়ার পর থেকেই যাত্রী কম হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ট্রেনটিতে গড়ে ৪৬ শতাংশ আসন খালি ছিল। জানুয়ারি মাসে কালনীর যাত্রী আরও কমে যায়। এই মাসে গড়ে ৪৮ শতাংশ আসনই খালি যায়।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, এখনো ট্রেনটিতে যাত্রী হচ্ছে না। এ জন্যই শুরুতে ১৮ বগি নিয়ে চললেও এখন বগির সংখ্যা আটে নামিয়ে আনা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট পথে চলাচলকারী পারাবত ট্রেনে ডিসেম্বর মাসে যাত্রী ছিল ৮১ শতাংশ। জয়ন্তিকা ও উপবন ট্রেনে এই মাসে যাত্রী ছিল যথাক্রমে ৬৮ ও ৭৯ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা ট্রেনে যাত্রী ছিল যথাক্রমে ৮১, ৮৪ ও ৭৫ শতাংশ।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, একটা ট্রেন চালুর আগে যাত্রী চাহিদা আছে কি না, ট্রেন চালানোর মতো ভালো সময় আছে কি না, ইঞ্জিন-কোচ কতটা পর্যাপ্ত—এসব বিষয় সমীক্ষা করতে হয়। কালনীর বেলায় কোনোটাই করা হয়নি।
রেলের মহাপরিচালক বলেন, কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রী চাহিদা নিয়ে তাঁরা সমীক্ষা করবেন।
তবে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, আসলে যাত্রী চাহিদা আছে। ইঞ্জিন-কোচের অভাবে সময়মতো ট্রেন চালানো যায় না। এটাই মূল সমস্যা।
ওবায়দুল কাদের ও উপকূল: ২০১২ সালের এপ্রিলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করার পর রেল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি এসেই তাঁর নিজ জেলা ঢাকা-নোয়াখালীর পথে চলাচলকারী উপকূল ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করে দেন। এতে ট্রেনটির যাত্রী ব্যাপকভাবে কমে যায় বলে রেল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আগে উপকূল ঢাকা থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে নোয়াখালীতে পৌঁছত বেলা দেড়টায়। নোয়াখালী থেকে ছাড়ার সময় ছিল বেলা দুইটা ৪০ মিনিট। এখন ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বিকেল চারটা ২০ মিনিটে। নোয়াখালী পৌঁছায় রাত ১০টায়। আর নোয়াখালী থেকে ছাড়ে সকাল ছয়টা ২০ মিনিটে।
যাত্রী আগের তুলনায় কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো ট্রেনটিতে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী হয়। গত জানুয়ারি মাসে ট্রেনটিতে গড়ে ১০৯ শতাংশ যাত্রী হয়েছিল। এর মধ্যে নোয়াখালী থেকে আসার পথে ১২৩ শতাংশ এবং ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে ৯৫ শতাংশ যাত্রী হয়। তবে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ওই বছর জানুয়ারিতে গড়ে যাত্রী হয়েছিল ১৯০ শতাংশ। নোয়াখালী থেকে আসার সময় ট্রেনটিতে যাত্রী হতো ২৬৯ শতাংশ এবং যাওয়ার পথে ১১১ শতাংশ।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, আগে ট্রেনটি নোয়াখালী থেকে দুপুরে ছেড়ে আসত বলে জেলার দূরদূরান্তের যাত্রীরা অনায়াসে এসে ট্রেন ধরতে পারত। কিন্তু এখন ভোর সাড়ে ছয়টায় বলে ট্রেন ধরতে পারে না অনেকেই। আবার ঢাকা থেকে সকালে ছাড়ত বলে নোয়াখালীতে পৌঁছে সহজেই লোকজন গন্তব্যে যেতে পারত। কিন্তু এখন ট্রেনটি নোয়াখালী গিয়ে পৌঁছায় গভীর রাতে। ফলে দূরদূরান্তের যাত্রীদের পক্ষে গন্তব্যে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্যই যাত্রী কমে গেছে।
জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্থানীয় মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সময়সূচি পরিবর্তন করেছিলাম। ট্রেন সময়মতো চলে না বলেই এখন মানুষের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, এখন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, পূর্বের সময়সূচিতে ফিরে গেলে ভালো হয়, তাহলে সেটি করা যেতে পারে।
তবে রেলমন্ত্রী বললেন, ‘যাত্রীদের সমস্যা হলে আমরা দেখব। তবে এটা (উপকূল) কাদের ভাইয়ের করা সময়সূচিতেই চলবে।’
নতুন মন্ত্রী ও নতুন ট্রেন: বর্তমান রেলমন্ত্রী আসার পর ঢাকা-সিরাজগঞ্জের মধ্যে নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, সিরাজগঞ্জ শহর থেকে শহীদ মনসুর আলী স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার। মনসুর আলী স্টেশনে ট্রেনের স্টপেজ দিলেই হতো। নতুন করে ট্রেনটি সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত চালু করার কারণে জামতৈল, সিরাজগঞ্জ, ঈশ্বরদীর মধ্যে ঘোরাঘুরিতে অযথা সময়ক্ষেপণ ও জ্বালানি খরচ হয়। যাত্রী কম বলে ট্রেনটি চালুই করা হয় ছয়টি বগি দিয়ে। রেলের কর্মকর্তারা বলেন, একটি ট্রেন লাভজনক করতে হলে কমপক্ষে ১০টি বগি ও পরিপূর্ণ ধারণক্ষমতার যাত্রী বহন করতে হয়।
সূত্র জানায়, রেলের কর্মকর্তারা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—এই যুক্তিতে ট্রেনটি চালু করা হয়। লাভ-লোকসানের কথা ভাবা হয়নি।
মুজিবুল হক বলেন, সিরাজগঞ্জে ট্রেন চালু করার দাবি ৫০ বছরের পুরোনো। মানুষ যে কী খুশি হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। মানুষকে খুশি করতে পারাই তো সব।
মন্ত্রী-সাংসদের ইচ্ছায় আন্তনগর ট্রেন থামছে: সারা দেশে অন্তত ৪৪টি স্টেশনে আন্তনগর ও মেইল ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয়েছে সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদদের চাহিদা অনুযায়ী। এসব স্টেশনের অনেকগুলোর ক্ষেত্রেই যাত্রীর চাহিদা বিবেচনা করা হয়নি। এখন ট্রেন থামলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
মহানগর প্রভাতি ট্রেনটি লাকসামে থামানো শুরু হয় স্থানীয় সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।
বর্তমান রেলমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই নাঙ্গলকোটের হাসানপুরে এবং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদলে চট্টলা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করেছেন।
ওবায়দুল কাদেরের ইচ্ছায় নোয়াখালীর বজরা স্টেশনে থামানোর সিদ্ধান্ত হয় উপকূল এক্সপ্রেস।
ঢাকা-দিনাজপুর পথের একতা ও দ্রুতযান দুটি ট্রেনের চিরিরবন্দরে যাত্রাবিরতি দেওয়া হয় স্থানীয় সাংসদ মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর চাওয়া অনুযায়ী। কুষ্টিয়ার মিরপুরে চিত্রা ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের ইচ্ছায়। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে খুলনার দৌলতপুরে থামছে সুন্দরবন এক্সপ্রেস। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এই ট্রেন থামছে সাবেক রেলসচিব মাহবুব উর রহমানের আবেদন অনুযায়ী।
এ ছাড়া অনেকগুলো মেইল ট্রেনকে নতুন নতুন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করতে হচ্ছে সাংসদের ইচ্ছায়। আরও কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংসদ নিজ নিজ এলাকায় আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির জন্য চিঠি দিয়ে রেখেছেন।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, স্টেশন বৃদ্ধির সঙ্গে ওই স্টেশনের জন্য আসন বরাদ্দ করতে হয়। এতে করে দূরের যাত্রার এবং বেশি দামে টিকিট কিনে যেসব যাত্রী চড়ার কথা, তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন কমিয়ে দিতে হয়। একপর্যায়ে আন্তনগর ট্রেনগুলো লোকাল ট্রেনে পরিণত হয় এবং যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হয়।
উদাহরণ হিসেবে রেলের কর্মকর্তারা বলেন, লালমনিরহাট এক্সপ্রেস চলাচলে গড়ে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা দেরি করছে। এর মূল কারণ, ২২টি স্টপেজে থামতে হচ্ছে ট্রেনটিকে। এটি সাত-আটটি স্টপেজ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও রাজনীতিবিদদের চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে এখন কার্যত লোকাল ট্রেনে পরিণত হয়েছে।
মন্ত্রী-সাংসদদের ইচ্ছায় যত্রতত্র আন্তনগর ট্রেন থামানোর বিষয়ে মুজিবুল হক বলেন, এটা আসলে জনগণের ইচ্ছায় হয়েছে। মন্ত্রী-সাংসদেরা জনগণের জন্যই করছেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রেলের লাভ-লোকসান বিবেচনার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলের মহাপরিচালক আবু তাহের বলেন, ‘জনগণের স্বার্থেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে যদি মনে হয়, যেকোনো সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে কিংবা লাভজনক নয়, তখন তা পরিবর্তন করা হয়।’
বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে চারজন মন্ত্রী রেলওয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন সৈয়দ আবুল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের ও মুজিবুল হক। দায়িত্ব নিয়েই এই মন্ত্রীরা নতুন ট্রেন চালু কিংবা নতুন প্রকল্প নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু বছর না ঘুরতেই এগুলো রেলওয়েকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আর মন্ত্রী-সাংসদদের সুপারিশে বা চাপে ৪৪টি স্টেশনে আন্তনগর ট্রেন থামার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টপেজ বাড়ানোর কারণে বেশ কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন কার্যত লোকাল ট্রেনে পরিণত হয়েছে। চলাচলের সময় দীর্ঘ হওয়ায় এই ট্রেনগুলো যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে না। এতে যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রেনের সময়সূচির শৃঙ্খলাও নষ্ট হচ্ছে।
বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে রেলের উন্নয়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ থেকে ভেঙে নতুন রেল মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রীরা মনগড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে এর সুফল পাচ্ছে না যাত্রীরা। বছরে রেলের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
সৈয়দ আবুল হোসেন ও ডেমু: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ আবুল হোসেনকে। তিনি এসেই প্রায় ৬০০ কোটি টাকায় চীন থেকে ডেমু ট্রেন আমদানির প্রকল্প হাতে নেন। সম্পূর্ণ সরকারি টাকায় কেনা এসব ডেমু এখন রেলের গলার কাঁটা। এর যাত্রী ধারণ- ক্ষমতা কম। বিশেষ করে, রেলের বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মের চেয়ে ডেমুর উচ্চতা বেশি বলে যাত্রীরা সহজে ওঠানামা করতে পারে না। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় ভেতরে প্রচণ্ড গরমে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। টয়লেট না থাকায় দূরের পথে এই ট্রেন চালানো যায় না। ফলে বিশেষ করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে চলাচলকারী ডেমু এখন রেলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ডেমু কেনার আগে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। সাধারণত নতুন ট্রেন আমদানির আগে রেলের অপারেশন বিভাগের মতামত নেওয়া হয়। ডেমু প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটাও করা হয়নি।
জানতে চাইলে মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ডেমু অদরকারি ছিল না। কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে। এগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।
আর রেলের মহাপরিচালক আবু তাহের বললেন, এটা চট্টগ্রামে ভালো চলছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জেই সমস্যা হচ্ছে।
আবার ইঞ্জিন-কোচ আমদানি না করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ নামে নতুন এক জোড়া ট্রেন চালু করেছিলেন আবুল হোসেন। নামে নতুন হলেও ট্রেনের ইঞ্জিন-বগি সবই ছিল পুরোনো, বিভিন্ন ট্রেন থেকে বগি ধার করা। আন্তনগর ট্রেন হিসেবে চালু করলেও এখন এটি লোকাল হিসেবে চলছে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে রেলের কোনো বগি বা ইঞ্জিন বিকল হলে তাৎক্ষণিক প্রতিস্থাপনের জন্য কিছু ইঞ্জিন ও কোচ মজুত রাখতে হয়। চট্টলা ট্রেনটি বিকল্প ব্যবহারের ওই সব ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে চালু করা হয়েছিল। ফলে এর চাপ পড়েছে পুরো রেল ব্যবস্থাপনায়। বিকল্প না থাকায় কোনো ইঞ্জিন বা বগি নষ্ট হলে অন্য ট্রেনের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও কালনী: আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। ওই মাসেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙে নতুন রেলপথ মন্ত্রণালয় করা হয় এবং দায়িত্ব দেওয়া হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তিনি এসেই তাঁর নিজ এলাকা সিলেটের পথে ‘কালনী এক্সপ্রেস’ নামে একটি নতুন ট্রেন চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেন।
কিন্তু ‘মধ্যরাতে ৭০ লাখ টাকা কেলেঙ্কারি’র ঘটনায় পরে সুরঞ্জিত পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের কিছুদিন পরেই ট্রেনটি চালু হয়। এখন এই ট্রেনের অর্ধেক আসনই খালি যাচ্ছে। অথচ একই পথের অন্য ট্রেনগুলোতে আসনের অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
রেলের নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, কালনী ট্রেনটি চালু হওয়ার পর থেকেই যাত্রী কম হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ট্রেনটিতে গড়ে ৪৬ শতাংশ আসন খালি ছিল। জানুয়ারি মাসে কালনীর যাত্রী আরও কমে যায়। এই মাসে গড়ে ৪৮ শতাংশ আসনই খালি যায়।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, এখনো ট্রেনটিতে যাত্রী হচ্ছে না। এ জন্যই শুরুতে ১৮ বগি নিয়ে চললেও এখন বগির সংখ্যা আটে নামিয়ে আনা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট পথে চলাচলকারী পারাবত ট্রেনে ডিসেম্বর মাসে যাত্রী ছিল ৮১ শতাংশ। জয়ন্তিকা ও উপবন ট্রেনে এই মাসে যাত্রী ছিল যথাক্রমে ৬৮ ও ৭৯ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা ট্রেনে যাত্রী ছিল যথাক্রমে ৮১, ৮৪ ও ৭৫ শতাংশ।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, একটা ট্রেন চালুর আগে যাত্রী চাহিদা আছে কি না, ট্রেন চালানোর মতো ভালো সময় আছে কি না, ইঞ্জিন-কোচ কতটা পর্যাপ্ত—এসব বিষয় সমীক্ষা করতে হয়। কালনীর বেলায় কোনোটাই করা হয়নি।
রেলের মহাপরিচালক বলেন, কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রী চাহিদা নিয়ে তাঁরা সমীক্ষা করবেন।
তবে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, আসলে যাত্রী চাহিদা আছে। ইঞ্জিন-কোচের অভাবে সময়মতো ট্রেন চালানো যায় না। এটাই মূল সমস্যা।
ওবায়দুল কাদের ও উপকূল: ২০১২ সালের এপ্রিলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করার পর রেল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি এসেই তাঁর নিজ জেলা ঢাকা-নোয়াখালীর পথে চলাচলকারী উপকূল ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করে দেন। এতে ট্রেনটির যাত্রী ব্যাপকভাবে কমে যায় বলে রেল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আগে উপকূল ঢাকা থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে নোয়াখালীতে পৌঁছত বেলা দেড়টায়। নোয়াখালী থেকে ছাড়ার সময় ছিল বেলা দুইটা ৪০ মিনিট। এখন ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বিকেল চারটা ২০ মিনিটে। নোয়াখালী পৌঁছায় রাত ১০টায়। আর নোয়াখালী থেকে ছাড়ে সকাল ছয়টা ২০ মিনিটে।
যাত্রী আগের তুলনায় কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো ট্রেনটিতে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী হয়। গত জানুয়ারি মাসে ট্রেনটিতে গড়ে ১০৯ শতাংশ যাত্রী হয়েছিল। এর মধ্যে নোয়াখালী থেকে আসার পথে ১২৩ শতাংশ এবং ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে ৯৫ শতাংশ যাত্রী হয়। তবে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ওই বছর জানুয়ারিতে গড়ে যাত্রী হয়েছিল ১৯০ শতাংশ। নোয়াখালী থেকে আসার সময় ট্রেনটিতে যাত্রী হতো ২৬৯ শতাংশ এবং যাওয়ার পথে ১১১ শতাংশ।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, আগে ট্রেনটি নোয়াখালী থেকে দুপুরে ছেড়ে আসত বলে জেলার দূরদূরান্তের যাত্রীরা অনায়াসে এসে ট্রেন ধরতে পারত। কিন্তু এখন ভোর সাড়ে ছয়টায় বলে ট্রেন ধরতে পারে না অনেকেই। আবার ঢাকা থেকে সকালে ছাড়ত বলে নোয়াখালীতে পৌঁছে সহজেই লোকজন গন্তব্যে যেতে পারত। কিন্তু এখন ট্রেনটি নোয়াখালী গিয়ে পৌঁছায় গভীর রাতে। ফলে দূরদূরান্তের যাত্রীদের পক্ষে গন্তব্যে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্যই যাত্রী কমে গেছে।
জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্থানীয় মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সময়সূচি পরিবর্তন করেছিলাম। ট্রেন সময়মতো চলে না বলেই এখন মানুষের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, এখন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, পূর্বের সময়সূচিতে ফিরে গেলে ভালো হয়, তাহলে সেটি করা যেতে পারে।
তবে রেলমন্ত্রী বললেন, ‘যাত্রীদের সমস্যা হলে আমরা দেখব। তবে এটা (উপকূল) কাদের ভাইয়ের করা সময়সূচিতেই চলবে।’
নতুন মন্ত্রী ও নতুন ট্রেন: বর্তমান রেলমন্ত্রী আসার পর ঢাকা-সিরাজগঞ্জের মধ্যে নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, সিরাজগঞ্জ শহর থেকে শহীদ মনসুর আলী স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার। মনসুর আলী স্টেশনে ট্রেনের স্টপেজ দিলেই হতো। নতুন করে ট্রেনটি সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত চালু করার কারণে জামতৈল, সিরাজগঞ্জ, ঈশ্বরদীর মধ্যে ঘোরাঘুরিতে অযথা সময়ক্ষেপণ ও জ্বালানি খরচ হয়। যাত্রী কম বলে ট্রেনটি চালুই করা হয় ছয়টি বগি দিয়ে। রেলের কর্মকর্তারা বলেন, একটি ট্রেন লাভজনক করতে হলে কমপক্ষে ১০টি বগি ও পরিপূর্ণ ধারণক্ষমতার যাত্রী বহন করতে হয়।
সূত্র জানায়, রেলের কর্মকর্তারা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—এই যুক্তিতে ট্রেনটি চালু করা হয়। লাভ-লোকসানের কথা ভাবা হয়নি।
মুজিবুল হক বলেন, সিরাজগঞ্জে ট্রেন চালু করার দাবি ৫০ বছরের পুরোনো। মানুষ যে কী খুশি হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। মানুষকে খুশি করতে পারাই তো সব।
মন্ত্রী-সাংসদের ইচ্ছায় আন্তনগর ট্রেন থামছে: সারা দেশে অন্তত ৪৪টি স্টেশনে আন্তনগর ও মেইল ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয়েছে সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদদের চাহিদা অনুযায়ী। এসব স্টেশনের অনেকগুলোর ক্ষেত্রেই যাত্রীর চাহিদা বিবেচনা করা হয়নি। এখন ট্রেন থামলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
মহানগর প্রভাতি ট্রেনটি লাকসামে থামানো শুরু হয় স্থানীয় সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।
বর্তমান রেলমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই নাঙ্গলকোটের হাসানপুরে এবং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদলে চট্টলা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করেছেন।
ওবায়দুল কাদেরের ইচ্ছায় নোয়াখালীর বজরা স্টেশনে থামানোর সিদ্ধান্ত হয় উপকূল এক্সপ্রেস।
ঢাকা-দিনাজপুর পথের একতা ও দ্রুতযান দুটি ট্রেনের চিরিরবন্দরে যাত্রাবিরতি দেওয়া হয় স্থানীয় সাংসদ মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর চাওয়া অনুযায়ী। কুষ্টিয়ার মিরপুরে চিত্রা ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের ইচ্ছায়। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে খুলনার দৌলতপুরে থামছে সুন্দরবন এক্সপ্রেস। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এই ট্রেন থামছে সাবেক রেলসচিব মাহবুব উর রহমানের আবেদন অনুযায়ী।
এ ছাড়া অনেকগুলো মেইল ট্রেনকে নতুন নতুন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করতে হচ্ছে সাংসদের ইচ্ছায়। আরও কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংসদ নিজ নিজ এলাকায় আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির জন্য চিঠি দিয়ে রেখেছেন।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, স্টেশন বৃদ্ধির সঙ্গে ওই স্টেশনের জন্য আসন বরাদ্দ করতে হয়। এতে করে দূরের যাত্রার এবং বেশি দামে টিকিট কিনে যেসব যাত্রী চড়ার কথা, তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন কমিয়ে দিতে হয়। একপর্যায়ে আন্তনগর ট্রেনগুলো লোকাল ট্রেনে পরিণত হয় এবং যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হয়।
উদাহরণ হিসেবে রেলের কর্মকর্তারা বলেন, লালমনিরহাট এক্সপ্রেস চলাচলে গড়ে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা দেরি করছে। এর মূল কারণ, ২২টি স্টপেজে থামতে হচ্ছে ট্রেনটিকে। এটি সাত-আটটি স্টপেজ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও রাজনীতিবিদদের চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে এখন কার্যত লোকাল ট্রেনে পরিণত হয়েছে।
মন্ত্রী-সাংসদদের ইচ্ছায় যত্রতত্র আন্তনগর ট্রেন থামানোর বিষয়ে মুজিবুল হক বলেন, এটা আসলে জনগণের ইচ্ছায় হয়েছে। মন্ত্রী-সাংসদেরা জনগণের জন্যই করছেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রেলের লাভ-লোকসান বিবেচনার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলের মহাপরিচালক আবু তাহের বলেন, ‘জনগণের স্বার্থেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে যদি মনে হয়, যেকোনো সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে কিংবা লাভজনক নয়, তখন তা পরিবর্তন করা হয়।’
No comments