মামলায় ঢালাও আসামি- সব পক্ষই প্রজ্ঞার পরিচয় দিক
আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে,
ভাংচুর ও সংঘাতের প্রতিবিধান হিসেবে আবারও 'অজ্ঞাত' অবিধায় ঢালাও আসামি
করে মামলা দায়ের হচ্ছে। এবার এর শিকার কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামা শিক্ষিত ও
মেধাবী তরুণরা। আমরা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই।
সুযোগবঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে
হবে। শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাংচুর ও সংঘাতের দায়ে দায়ের করা
দুটি মামলায় যেভাবে 'অজ্ঞাত' শত শত আসামি করা হয়েছে, তা সুবিবেচনাপ্রসূত
হতে পারে না। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের আইনের আওতায়
আনা যেতে পারে। কিন্তু এতে বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাত অভিযুক্ত সাধারণ আন্দোলনকারী
ও শিক্ষার্থীর হয়রানি হবে। আশঙ্কা রয়েছে গ্রেফতার-বাণিজ্যেরও। বিভিন্ন সময়
এ ধরনের গণআসামি মামলায় এর নজির রয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এর
পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। মেয়াদের শেষ দিকে এ ধরনের ব্যবস্থা
দেশব্যাপী অসন্তোষ যে তৈরি করতে পারে, সেই হুঁশও প্রত্যাশিত। আমরা আশা করি,
অবিলম্বে সরকার চরমপন্থার বদলে সংলাপ ও সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে
আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ প্রশমনের উদ্যোগ নেবে। কোটা পদ্ধতির ভালো-মন্দ নিয়েও
মুক্তমনে আলোচনা হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকমিশনসহ সব পাবলিক
পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে যেভাবে আন্দোলন চলছে, তাও সমর্থনযোগ্য
নয়। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চার দশক পরও কোনো দেশে
নাগরিকের একটি অংশের জন্য নির্দিষ্ট কোটা থাকতে পারে কি-না, তা নিয়ে বিতর্ক
চলতেই পারে। সর্বশেষ ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় ওই পদ্ধতির কারণে বাদ পড়া
পরীক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নামার বিষয়টিও অস্বাভাবিক নয়। বস্তুত
সরকারি কর্মকমিশন প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষাতেই কোটা প্রয়োগ করে অদূরদর্শিতারই
পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তার জবাবে আন্দোলনের নামে যেভাবে চারুকলায় মঙ্গল
শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত উপকরণে অগি্নসংযোগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের ভবন ও কার্যালয়, প্রক্টর কার্যালয়, সমাজবিজ্ঞান ভবনসহ বিভিন্ন
স্থানে ভাংচুর করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। যৌক্তিক কোনো দাবির পক্ষে
নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই প্রত্যাশিত। আন্দোলনকারী কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের
নিয়ে কটূক্তি করেছেন_ এটা অমার্জনীয় অপরাধ। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধারা
জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের অমর্যাদা জাতি হিসেবে আমাদের
নিজেদেরই দীনতা প্রকাশ করে। আমরা আশা করছি, আন্দোলনকারীরা আচরণে ও উচ্চারণে
সংযত থাকবেন। নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা তাদের প্রতি জনসাধারণের সহানুভূতি
ক্ষুণ্ন ছাড়া আর কিছু করবে না। আমরা চাই, কোটা পদ্ধতি নিয়ে সস্তা রাজনীতিও
যেন না হয়। আমরা বিশ্বাস করি না যে, বিরোধী দল আন্দোলনকারীদের প্রতি
সহানুভূতি থেকে কোটা তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দেশবাসীর নিশ্চয়ই মনে
আছে, তারাও ক্ষমতায় থাকাকালে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হননি। বস্তুত সংশ্লিষ্ট
সব পক্ষেরই হটকারিতা পরিহার করা উচিত। এ ধরনের সংকটে মেধা, প্রজ্ঞা ও
বিবেচনাই একমাত্র জবাব।
No comments