জীবনের সার্থকতা কীসে? by মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
নৈতিকতা কাকে বলে তা পড়েছি কিন্তু শিখিনি।
তাহলে কি শুধু পড়ার জন্যই নৈতিকতার সংজ্ঞা বইয়ে ছাপানো হয়েছিল, শেখার জন্য
নয়? মনে পড়ে ছোটবেলায় ভাবসম্প্রসারণ পড়েছিলাম ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না,
পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও’। স্যার খুব সুন্দর করে
বুঝিয়েছিলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সব বস্তুকে অন্যের উপকারের জন্য
সৃষ্টি করেছেন। অপরের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যে রয়েছে মানব জীবনের
প্রকৃত সার্থকতা। মানুষ অপরের মঙ্গলের জন্য নিজের প্রচেষ্টা নিয়োজিত করলে
তাতে তার মহান চরিত্রের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। ফুলকে এখানে রূপক অর্থে
ব্যবহার করা হয়েছে। ফুলের সৌন্দর্য ও ঘ্রাণ কিছুই নিজের জন্য নয়। অন্যের
মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই ফুলের সার্থকতা। এভাবে নিজেকে বিলিয়ে যখন
ফুলের জীবনের অবসান ঘটে তখন উজাড় করা ভালোবাসা মানুষের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে
থাকে। পৃথিবীতে যারা মহৎ ব্যক্তি তারা অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত
করেছেন। ফুল এবং মহৎ ব্যক্তি আদর্শের প্রতীক। অপরের জন্য জীবন উৎসর্গ কখনও
জীবনের সমাপ্তি নয়, বরং তা জীবনের সার্থকতা। ‘বিশ্বমানবতাকে উদার হৃদয়ে
গ্রহণ করে মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই মানুষের নীতি হওয়া উচিত।’ এ
ভাবসম্প্রসারণটিও আমরা সবাই পড়েছি, কিন্তু আমরা কি শিখেছি? তাহলে প্রশ্ন?
আমাদের কি উচিত ছিল না এ ভাবসম্প্রসারণটি শিখে, হৃদয়ে আবৃত করে দেশ, জাতি ও
বিশ্বে প্রয়োগ করা? তাহলে কি আমরা বলতে পারি না? আমাদের বড় বড় চেয়ারের বড়
বড় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্য এত বড় বড় পড়ার ডিগ্রির প্রয়োজন নেই,
শুধু একটা ভাবসম্প্রসারণই যথেষ্ট ছিল।
আমি মনে করি, আজ আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত ‘পুষ্প যেমন আপনার জন্য ফোটে না, তেমনি আমরা সম্মিলিতভাবে দেশ, জাতি ও বিশ্বের জন্য আমাদের হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করি।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অন্তিম মুহূর্তে দুঃখ করে বলেছিলেন ‘আমার আÍা অতৃপ্তি রয়ে গেল, এই জন্যই যে আমি গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষদের নিয়ে কিছুই লিখে যেতে পারলাম না। এই জন্যই পারিনি যে, আমি তাদের মধ্যে সৃষ্ট হইনি।’ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসহায় মানুষদের নিয়ে এত লেখালেখি করার পরও যদি তিনি দুঃখ করে এ কথা বলতে পারেন, তাহলে আমাদের অবস্থা কী? গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষদেরই বা হবে কী? বলা হয়ে থাকে, একবিংশ শতাব্দীর এই যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। অর্থের প্রতিযোগিতা, লোভের প্রতিযোগিতা, হিংসা-বিদ্বেষের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার প্রতিযোগিতা; শুধু নেই নৈতিকতার প্রতিযোগিতা। আমরা ভাবি না এসব প্রতিযোগিতা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে, অধঃপতনের দিকে।
মনে পড়ে আব্রাহাম লিংকনের ঐহিতাসিক ভাষণের কথা, তিনি বলেছিলেন- ‘কারোর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করে সবার প্রতি উদার মনোভাব নিয়ে বাকি কাজগুলো শেষ করে জাতিকে সম্মুখের দিকে অগ্রসর করি।’ তার আহ্বানে সাড়াও এসেছিল ভালোভাবে। আব্রাহাম লিংকনের ভাষণ ও সাড়াদানকারী সমর্থকরা আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত। এখন আমাদের মধ্য থেকে কে আহ্বান করবে? আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসবেই বা কে? আমরা যার যার মনে সে সে। দুঃখ করে বলতে হয়, আমরা আমাদের ভুলের কথা কখন বুঝব? আমরা কি সেই সময় বুঝব যখন বুঝেও কোনো কাজ হবে না। জাতির অন্তিম মুহূর্তে বুঝেও জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। গ্রিক লেখক সফক্লিস বলেছিলেন- ‘আমরা আমাদের শেষ সময়ে শিখি, যখন শিখেও কাজে আসে না’।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম : শিক্ষক
আমি মনে করি, আজ আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত ‘পুষ্প যেমন আপনার জন্য ফোটে না, তেমনি আমরা সম্মিলিতভাবে দেশ, জাতি ও বিশ্বের জন্য আমাদের হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করি।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অন্তিম মুহূর্তে দুঃখ করে বলেছিলেন ‘আমার আÍা অতৃপ্তি রয়ে গেল, এই জন্যই যে আমি গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষদের নিয়ে কিছুই লিখে যেতে পারলাম না। এই জন্যই পারিনি যে, আমি তাদের মধ্যে সৃষ্ট হইনি।’ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসহায় মানুষদের নিয়ে এত লেখালেখি করার পরও যদি তিনি দুঃখ করে এ কথা বলতে পারেন, তাহলে আমাদের অবস্থা কী? গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষদেরই বা হবে কী? বলা হয়ে থাকে, একবিংশ শতাব্দীর এই যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। অর্থের প্রতিযোগিতা, লোভের প্রতিযোগিতা, হিংসা-বিদ্বেষের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার প্রতিযোগিতা; শুধু নেই নৈতিকতার প্রতিযোগিতা। আমরা ভাবি না এসব প্রতিযোগিতা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে, অধঃপতনের দিকে।
মনে পড়ে আব্রাহাম লিংকনের ঐহিতাসিক ভাষণের কথা, তিনি বলেছিলেন- ‘কারোর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করে সবার প্রতি উদার মনোভাব নিয়ে বাকি কাজগুলো শেষ করে জাতিকে সম্মুখের দিকে অগ্রসর করি।’ তার আহ্বানে সাড়াও এসেছিল ভালোভাবে। আব্রাহাম লিংকনের ভাষণ ও সাড়াদানকারী সমর্থকরা আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত। এখন আমাদের মধ্য থেকে কে আহ্বান করবে? আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসবেই বা কে? আমরা যার যার মনে সে সে। দুঃখ করে বলতে হয়, আমরা আমাদের ভুলের কথা কখন বুঝব? আমরা কি সেই সময় বুঝব যখন বুঝেও কোনো কাজ হবে না। জাতির অন্তিম মুহূর্তে বুঝেও জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। গ্রিক লেখক সফক্লিস বলেছিলেন- ‘আমরা আমাদের শেষ সময়ে শিখি, যখন শিখেও কাজে আসে না’।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম : শিক্ষক
No comments