সাত বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন সরকার বলছে সংখ্যা নয়, মানের দিকে নজর জনশক্তি রপ্তানির দুঃসময় by শরিফুল হাসান
২০১২ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন)
বিদেশে গিয়েছিলেন তিন লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৭ জন কর্মী। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে
এ সংখ্যা এক লাখ ৬৬ হাজার ৪৯৭ জন কমে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ আট
হাজার ৩৪০ জন।
এ তথ্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে জনশক্তি রপ্তানি ছিল গত সাত বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে দুঃসময় চলছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও কুয়েতের মতো প্রচলিত শ্রমবাজারগুলো অনেক দিন ধরে বন্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মতো বড় বাজার। মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে কর্মী পাঠানো সেভাবে চালু হয়নি। গড়ে ওঠেনি নতুন শ্রমবাজার। এ অবস্থায় সরকার ও জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মধ্যে দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে এ খাতে এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ সৌদি আরব ও কুয়েতের মতো প্রচলিত বাজারগুলো আবার চালু না হওয়া। ইউএইর বাজার চালু করতে সরকারের তেমন কূটনৈতিক উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। মালয়েশিয়া লাখ লাখ কর্মী নেবে শোনা গেলেও সেখানে মাত্র ১৯৮ জন কর্মী গেছেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে মন্ত্রী একাই সব করার চেষ্টা করছেন। এসব কারণেই শ্রমবাজারের এই অবস্থা। সবাই সম্মিলিত উদ্যোগ না নিলে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে না।
অবশ্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনিয়মের কারণেই অনেক বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা বিদেশে পাঠানোর জন্য পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা নিতেন। অনেক শ্রমিক বিদেশে গিয়ে কাজ পাননি। প্রতারণার ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব বন্ধ করতেই সরকারিভাবে কম খরচে লোক পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকার এখন প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে লোক পাঠাচ্ছে। এসবের সুফল শিগগিরই আসবে।
এ মুহূর্তে সংকট কাটানোর উপায় কী—জানতে চাইলে অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, এখন সমস্যা সমাধানে সরকার, ব্যবসায়ী—সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামছুন্নাহার বলেন, ‘এখন আমরা সংখ্যার দিকে নয়, মানের দিকে নজর দিচ্ছি। আমাদের ৮৫ লাখ শ্রমিক বিদেশে আছেন। আমরা চাই তাঁরা ভালোভাবে থাকুন। নতুন করে যাঁরা যাবেন, তাঁরা যেন কম খরচে দক্ষতা নিয়ে বেশি বেতনে চাকরি নিয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। এ কারণে জনশক্তি রপ্তানি কিছুটা কমতে পারে। তবে এ বছর চার লাখ লোক বিদেশ যাবেন বলে আমরা ধারণা করছি।’ বন্ধ বাজার চালুর জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্রই সৌদি আরব ও ইউএই সফর করে ফিরেছি। নভেম্বরে সৌদি আরবে অবৈধ বিদেশিদের বৈধ করার কাজ শেষ হবে। এরপর দেশটিতে স্বাভাবিকভাবে কর্মী যাওয়া শুরু হবে। ইউএইর বাজার স্বাভাবিক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। মালয়েশিয়া শিগগিরই নতুন করে চাহিদাপত্র পাঠাবে।’
গত সাত বছরের চিত্র: ২০০৭ সালে আট লাখ ৩২ হাজার এবং ২০০৮ সালে আট লাখ ৭৫ হাজার কর্মী বিদেশে যান। ওই দুই বছরেরই প্রথম ছয় মাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ করে কর্মী বিদেশে যান। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রথম বছর ২০০৯ সালে জনশক্তি রপ্তানি কমে যায়। ওই বছর পৌনে পাঁচ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে গেছেন দুই লাখ ৫০ হাজার ৯০০। পরের বছর এ সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৯১ হাজার, এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৮৭৮ জন। তবে পরের বছর থেকে পরিস্থিতি ভালো হতে থাকে। ২০১১ সালে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ জন এবং ২০১২ সালে ছয় লাখ সাত হাজার ৭৯৮ কর্মী বিদেশে যান। কিন্তু এবার প্রথম ছয় মাসে জনশক্তি রপ্তানির যে ধারা তাতে বছর শেষে এ সংখ্যা চার লাখ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্ধ রয়েছে ইউএইর বাজার: বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার ছিল ইউএই। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছরই সেখানে কর্মী যাওয়া বেড়েছে। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে আড়াই লাখ কর্মী গেছেন দেশটিতে। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। গত ছয় মাসে মাত্র পাঁচ হাজার ৭১৩ জন কর্মী সেখানে গেছেন। ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ এটিই।
ইউএই বলছে, বাংলাদেশি কর্মীদের অপরাধপ্রবণতার কারণেই তারা বাজার বন্ধ করে দিয়েছে। আর সরকার বলছে, এই বাজার চালুর চেষ্টা চলছে।
কুয়েতের বাজারও বন্ধ: বাংলাদেশের আরেক বৃহৎ শ্রমবাজার কুয়েতে ২০০৮ সাল থেকেই কর্মী যাওয়া কমে যায়। ২০০৯ সালের পর বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের গত সাড়ে চার বছরে মাত্র ৮৯ জন কুয়েতে গেছেন। গত ছয় মাসে একজনও যাননি।
জনশক্তি রপ্তানির সমস্যা সমাধানে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েত সফর করেন। তিনি সফরকালে কুয়েতের আমিরকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
অগ্রগতি নেই মালয়েশিয়ায়: ২০০৭ ও ২০০৮ সালেও মালয়েশিয়ায় চার লাখ কর্মী গেছেন। কিন্তু প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০০৯ সালের মার্চে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। দীর্ঘ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর গত নভেম্বরে মালয়েশিয়া এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ২৬ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কর্মী আদান-প্রদানের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, মালয়েশিয়া প্রতি মাসে ১০ হাজার করে কর্মী নেবে। আগামী কয়েক বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে। ঢাকঢোল পিটিয়ে এ বছরের এপ্রিলে প্রথম সরকারিভাবে কর্মী যাওয়া শুরু হয় মালয়েশিয়ায়। কিন্তু এ পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে মাত্র ১৯৮ জন কর্মী।
বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, গত ছয় মাসে এক হাজার ১০৭ জন কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়।
সৌদি বাজার চালু হলেও গতি নেই: বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। একসময় বছরে দেড় থেকে দুই লাখ কর্মী সেখানে গেলেও গত সাড়ে চার বছরে গেছেন ৬০ হাজার কর্মী। এর মধ্যে এ বছর গেছেন ১০ হাজার ১৫৭ জন।
সরকার বলছে, বর্তমানে সৌদি আরবে অবৈধ বিদেশিদের জন্য সাধারণ ক্ষমা চলছে। এই সাধারণ ক্ষমা শেষে সৌদি বাজার আবার স্বাভাবিক হবে।
আশার আলো: এই সংকটের মধ্যে আশার আলো হয়ে আছে ওমান, কাতার, বাহরাইন ও সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার। গত ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭১ হাজার কর্মী গেছেন ওমানে। এ ছাড়া ৩০ হাজার সিঙ্গাপুরে, ২৮ হাজার কাতারে, ১৪ হাজার বাহরাইনে, পৌনে ১২ হাজার জর্ডানে, পৌনে আট হাজার লেবাননে, সাড়ে ছয় হাজার লিবিয়ায়, তিন হাজার ইতালিতে, তিন হাজার মরিশাসে, দুই হাজার ব্রুনাই এবং আড়াই হাজার কর্মী ইরাকে গেছেন।
নতুন বাজার নেই: জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সরকার বারবার নতুন বাজার খোঁজার কথা বললেও সেই অর্থে নতুন কোনো বড় বাজার চালু করতে পারেনি। সে কারণেই প্রচলিত বড় শ্রমবাজারগুলো বন্ধ হলেই জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নামছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে সহযোগিতা না করে নানা সময়ে রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ কারণেই সংকট বাড়ছে। সমস্যা সমাধানে দুই পক্ষই সম্মিলিতভাবে কাজ করার কথা বলছেন।
সর্বশেষ সংবাদ শুনতে আপনার মোবাইল ফোন থেকে ডায়াল করুন ২২২১
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে জনশক্তি রপ্তানি ছিল গত সাত বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে দুঃসময় চলছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও কুয়েতের মতো প্রচলিত শ্রমবাজারগুলো অনেক দিন ধরে বন্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মতো বড় বাজার। মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে কর্মী পাঠানো সেভাবে চালু হয়নি। গড়ে ওঠেনি নতুন শ্রমবাজার। এ অবস্থায় সরকার ও জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মধ্যে দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে এ খাতে এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ সৌদি আরব ও কুয়েতের মতো প্রচলিত বাজারগুলো আবার চালু না হওয়া। ইউএইর বাজার চালু করতে সরকারের তেমন কূটনৈতিক উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। মালয়েশিয়া লাখ লাখ কর্মী নেবে শোনা গেলেও সেখানে মাত্র ১৯৮ জন কর্মী গেছেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে মন্ত্রী একাই সব করার চেষ্টা করছেন। এসব কারণেই শ্রমবাজারের এই অবস্থা। সবাই সম্মিলিত উদ্যোগ না নিলে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে না।
অবশ্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনিয়মের কারণেই অনেক বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা বিদেশে পাঠানোর জন্য পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা নিতেন। অনেক শ্রমিক বিদেশে গিয়ে কাজ পাননি। প্রতারণার ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব বন্ধ করতেই সরকারিভাবে কম খরচে লোক পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকার এখন প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে লোক পাঠাচ্ছে। এসবের সুফল শিগগিরই আসবে।
এ মুহূর্তে সংকট কাটানোর উপায় কী—জানতে চাইলে অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, এখন সমস্যা সমাধানে সরকার, ব্যবসায়ী—সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামছুন্নাহার বলেন, ‘এখন আমরা সংখ্যার দিকে নয়, মানের দিকে নজর দিচ্ছি। আমাদের ৮৫ লাখ শ্রমিক বিদেশে আছেন। আমরা চাই তাঁরা ভালোভাবে থাকুন। নতুন করে যাঁরা যাবেন, তাঁরা যেন কম খরচে দক্ষতা নিয়ে বেশি বেতনে চাকরি নিয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। এ কারণে জনশক্তি রপ্তানি কিছুটা কমতে পারে। তবে এ বছর চার লাখ লোক বিদেশ যাবেন বলে আমরা ধারণা করছি।’ বন্ধ বাজার চালুর জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্রই সৌদি আরব ও ইউএই সফর করে ফিরেছি। নভেম্বরে সৌদি আরবে অবৈধ বিদেশিদের বৈধ করার কাজ শেষ হবে। এরপর দেশটিতে স্বাভাবিকভাবে কর্মী যাওয়া শুরু হবে। ইউএইর বাজার স্বাভাবিক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। মালয়েশিয়া শিগগিরই নতুন করে চাহিদাপত্র পাঠাবে।’
গত সাত বছরের চিত্র: ২০০৭ সালে আট লাখ ৩২ হাজার এবং ২০০৮ সালে আট লাখ ৭৫ হাজার কর্মী বিদেশে যান। ওই দুই বছরেরই প্রথম ছয় মাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ করে কর্মী বিদেশে যান। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রথম বছর ২০০৯ সালে জনশক্তি রপ্তানি কমে যায়। ওই বছর পৌনে পাঁচ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে গেছেন দুই লাখ ৫০ হাজার ৯০০। পরের বছর এ সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৯১ হাজার, এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৮৭৮ জন। তবে পরের বছর থেকে পরিস্থিতি ভালো হতে থাকে। ২০১১ সালে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ জন এবং ২০১২ সালে ছয় লাখ সাত হাজার ৭৯৮ কর্মী বিদেশে যান। কিন্তু এবার প্রথম ছয় মাসে জনশক্তি রপ্তানির যে ধারা তাতে বছর শেষে এ সংখ্যা চার লাখ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্ধ রয়েছে ইউএইর বাজার: বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার ছিল ইউএই। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছরই সেখানে কর্মী যাওয়া বেড়েছে। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে আড়াই লাখ কর্মী গেছেন দেশটিতে। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। গত ছয় মাসে মাত্র পাঁচ হাজার ৭১৩ জন কর্মী সেখানে গেছেন। ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ এটিই।
ইউএই বলছে, বাংলাদেশি কর্মীদের অপরাধপ্রবণতার কারণেই তারা বাজার বন্ধ করে দিয়েছে। আর সরকার বলছে, এই বাজার চালুর চেষ্টা চলছে।
কুয়েতের বাজারও বন্ধ: বাংলাদেশের আরেক বৃহৎ শ্রমবাজার কুয়েতে ২০০৮ সাল থেকেই কর্মী যাওয়া কমে যায়। ২০০৯ সালের পর বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের গত সাড়ে চার বছরে মাত্র ৮৯ জন কুয়েতে গেছেন। গত ছয় মাসে একজনও যাননি।
জনশক্তি রপ্তানির সমস্যা সমাধানে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েত সফর করেন। তিনি সফরকালে কুয়েতের আমিরকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
অগ্রগতি নেই মালয়েশিয়ায়: ২০০৭ ও ২০০৮ সালেও মালয়েশিয়ায় চার লাখ কর্মী গেছেন। কিন্তু প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০০৯ সালের মার্চে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। দীর্ঘ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর গত নভেম্বরে মালয়েশিয়া এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ২৬ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কর্মী আদান-প্রদানের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, মালয়েশিয়া প্রতি মাসে ১০ হাজার করে কর্মী নেবে। আগামী কয়েক বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে। ঢাকঢোল পিটিয়ে এ বছরের এপ্রিলে প্রথম সরকারিভাবে কর্মী যাওয়া শুরু হয় মালয়েশিয়ায়। কিন্তু এ পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে মাত্র ১৯৮ জন কর্মী।
বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, গত ছয় মাসে এক হাজার ১০৭ জন কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়।
সৌদি বাজার চালু হলেও গতি নেই: বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। একসময় বছরে দেড় থেকে দুই লাখ কর্মী সেখানে গেলেও গত সাড়ে চার বছরে গেছেন ৬০ হাজার কর্মী। এর মধ্যে এ বছর গেছেন ১০ হাজার ১৫৭ জন।
সরকার বলছে, বর্তমানে সৌদি আরবে অবৈধ বিদেশিদের জন্য সাধারণ ক্ষমা চলছে। এই সাধারণ ক্ষমা শেষে সৌদি বাজার আবার স্বাভাবিক হবে।
আশার আলো: এই সংকটের মধ্যে আশার আলো হয়ে আছে ওমান, কাতার, বাহরাইন ও সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার। গত ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭১ হাজার কর্মী গেছেন ওমানে। এ ছাড়া ৩০ হাজার সিঙ্গাপুরে, ২৮ হাজার কাতারে, ১৪ হাজার বাহরাইনে, পৌনে ১২ হাজার জর্ডানে, পৌনে আট হাজার লেবাননে, সাড়ে ছয় হাজার লিবিয়ায়, তিন হাজার ইতালিতে, তিন হাজার মরিশাসে, দুই হাজার ব্রুনাই এবং আড়াই হাজার কর্মী ইরাকে গেছেন।
নতুন বাজার নেই: জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সরকার বারবার নতুন বাজার খোঁজার কথা বললেও সেই অর্থে নতুন কোনো বড় বাজার চালু করতে পারেনি। সে কারণেই প্রচলিত বড় শ্রমবাজারগুলো বন্ধ হলেই জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নামছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে সহযোগিতা না করে নানা সময়ে রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ কারণেই সংকট বাড়ছে। সমস্যা সমাধানে দুই পক্ষই সম্মিলিতভাবে কাজ করার কথা বলছেন।
সর্বশেষ সংবাদ শুনতে আপনার মোবাইল ফোন থেকে ডায়াল করুন ২২২১
No comments