শিক্ষা শেষে কাজ চাই by মিঠুন গোস্বামী
৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল
প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে
লাগাতার ছাত্র আন্দোলন স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলে রূপ নিয়েছিল।
তাদের আন্দোলন দমাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে। এতে তাদের সঙ্গে
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। পরে এটি ধর্মঘট পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সরকার ৪৪২টি পদে বিভিন্ন ক্যাডারসহ মোট ২ হাজার ৫২টি পদে নিয়োগ দেবে বলে
বিজ্ঞপ্তি দেয়। এতে ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী নিবন্ধন করে।
প্রিলিমিনারির ফলেই শুধু ১২ হাজার ৩৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে, যা আরও দুই ধাপে
কমে হবে মাত্র আড়াই হাজার। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে
পিএসসি আরও প্রায় ৩৪ হাজার ছাত্রছাত্রীকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফল ঘোষণা করেছে।
সুশীল সমাজসহ বিশিষ্টজনের মতামত হচ্ছে, কোটা বাতিল নয়, সংস্কার করা
প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন শিক্ষার্থীদের এত ক্ষোভ? পিএসসি থেকে জানা
যায়, এবার কোটার হিসাবটা প্রিলিমিনারিতেই কার্যকর করা হয়েছে। যার ফলে দেখা
গেছে, কেউ ৮০ নম্বরের ওপরে পেয়েও চান্স পায়নি। কোটাধারীরা ৫০-৬০ পেয়েই
চান্স পেয়ে গেছে। তাই ছাত্রসমাজের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু
কিছু ঘটনার অন্তরালেও অনেক ঘটনা লুক্কায়িত থাকে। আমাদের দেশে পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা পড়াশোনা করে, তার অধিকাংশই মধ্যবিত্ত এবং
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। এর মধ্যে অনেকে টিউশনি করে, এনজিও
প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে, জমিজমা বিক্রি করে এসেছে। পড়াশোনা শেষে তাদের
একটি চাকরি আশু প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এদিকে বাড়ি থেকে প্রতিনিয়ত বলতে থাকে_
কিছু একটা কর। কিন্তু চাকরি কোথায়? অনার্স পাস করার পরই তাদের মধ্যে হতাশা
গ্রাস করে। কোনো একটি চাকরির সার্কুলার দিলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এই
প্রযোগিতায় যারা সুযোগ পায় তারা মেধাবী। আর যারা পায় না তারা মেধাহীন বলে
আখ্যায়িত হয়! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আজকে যে কোটা দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের
প্রহসন করা হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার করা হচ্ছে; কোটা বাতিল করে দিলেই কি
সবার চাকরি নিশ্চিত হবে? পিএসসি যত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ততই তো নেবে। বাকিরা
নিজেদের মেধাহীন বলে আখ্যায়িত করে অন্যথায় মাথা ঠুকবে। এতে কি মেধা যাচাই
করা সম্ভব? মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বিশেষ করে
তরুণ ভোটারদের, ক্ষমতায় এলে প্রতি ঘরে চাকরি দেবে। আজকে শেষ সময়ে এসে এই
হচ্ছে তার নমুনা। সরকারের শেষ সময়ে দেশের ইতিহাসে মহাবাজেট (২ লাখ ২২ হাজার
৪৯১ কোটি টাকা) পেশ করলেও বাজেটে নতুন কোনো শিল্প-কারখানা বা খাত
প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। এমন কোনো দিকনির্দেশনাও নেই, যাতে নতুন কর্মসংস্থান
সৃষ্টি হতে পারে। আগামীতেও ছাত্রদের ক্ষোভের মুখে ভোটের রাজনীতির
প্রতিশ্রুতি আসতে পারে। আমাদের সময় এসেছে ইতিহাসকে স্মরণ করার। ১৯৯০ সালে
স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ১০ দফা দাবি
দিয়েছিল, তা যে সরকারই ক্ষমতায় আসবে পূরণ করবে বলে লিখিত দিলেও তা আজ
পর্যন্ত অমীমাংসিতই রয়েছে। আজকে আমাদের দাবি উত্থাপন করতে হবে_ শুধু কোটা
বাতিল নয়, সব শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
কোটাধারীদের যেমন চাকরি করার অধিকার রয়েছে, তেমনি অন্যদেরও রয়েছে।
ছাত্রসমাজকে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করতে হবে। এই রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের যে
অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিয়ে মেধাবী অথবা মেধাহীন বলে আখ্যায়িত
করছে, এই পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে যাতে সবার কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে
পারে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।
য় মিঠুন গোস্বামী :মাস্টার্স শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি, সিলেট mitun37@student.sust.edu
য় মিঠুন গোস্বামী :মাস্টার্স শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি, সিলেট mitun37@student.sust.edu
No comments