পাটের বাজার মন্দা- সোনালি দিন ফেরাতে উদ্যোগ চাই
তিন বছর ধরে অব্যাহতভাবে পাটের বাজারে
মন্দা চলার পরও শুধু পাট কমিশনের সুপারিশ প্রণয়ন ছাড়া নাজুক পরিস্থিতি থেকে
উত্তরণের আর কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দুর্ভাগ্যজনক
হলেও সত্য যে, পাট কমিশনের সুপারিশও গত দুই বছরে বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।
বলা যায়, পাটের সুদিন ফেরানোর ব্যাপারটি এখনও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ
ব্যাপারে বাস্তবসম্মত সরকারি পদক্ষেপ নজরে আসছে না। 'পাটের বাজার মন্দা'
শিরোনামে শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত এক মাস ধরে দেশে-বিদেশে
পাটের দাম অব্যাহতভাবে কমার কারণে পাটচাষ এখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে
দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেএমসির কাছে কৃষকদের বকেয়া পাওনার
পরিমাণ ১৪১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে অর্থ না থাকায় কৃষকদের পাওনা
টাকা শোধ করতে পারছে না। ফলে পাট অভ্যন্তরীণ বাজারে কেনাবেচায় অনিশ্চয়তা
দেখা দিয়েছে। তদুপরি সরকারি এ সংস্থাটি পাটের দাম হঠাৎ করে অনেক কমিয়ে
দেওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
পত্রিকার প্রতিবেদনেই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের
চিরাচরিত ক্রেতা দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অন্যান্য সংকটের কারণে এখন
সেখানে পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, সরকারি ও বেসরকারি পাটকলগুলো ও পাট ব্যবসায়ীদের নতুন বাজার ধরায়
তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার
সম্প্রসারিত হচ্ছে না। অথচ বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি
পাচ্ছে। তবে পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত করতে হলে এ ব্যাপারে
যথেষ্ট গবেষণা ও নতুন নতুন উদ্ভাবনা চাই। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় আর্থিক
সংস্থান। বাংলাদেশের পাট উন্নত মানের হওয়ার কারণে এ থেকে প্রস্তুতকৃত পণ্যও
গুণে-মানে সেরা হওয়ার কথা। কিন্তু পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণের
জন্যও এর বহুমুখী, চলনসই আর টেকসই ব্যবহার চাই। পাটজাত পণ্যের মানোন্নয়নের
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে অবদান রাখবে। নতুন নতুন বাজারের
সন্ধান এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পাট ও পাটজাত পণ্য সরবরাহ
নিশ্চিত করা গেলে এই খাতের সোনালি দিন আবার ফিরতে পারে। চাষিরা যাতে
পাটচাষে উদ্যোগী হয় সে জন্য পাটের দাম কৃষকদের পুনরুৎপাদনে উৎসাহী করার
পর্যায়ে হতে হবে। পাটের সুদিন ফেরাতে হলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেই
প্রয়োজনীয় উদ্যোগের নির্দেশনা আসতে হবে।
No comments