শাহরি রমজান-কোরআন শরিফে রোজা ও রমজানুল মোবারক by মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের ওপর
প্রতিষ্ঠিত। রমজানুল মোবারকের রোজা এর মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা সমগ্র
মানবজাতির মধ্যে উম্মতে মুহাম্মদীকে মধ্যপন্থী, উত্তম ও শ্রেষ্ঠ উম্মত
হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে যোগ্যতা
অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। তাই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রমজান মাসে
ধারাবাহিক পবিত্র সিয়াম সাধনা করাকে ফরজ আমল হিসেবে প্রত্যেক মুসলিম
নর-নারীর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কোরআন শরিফে রোজা ও রমজানুল মোবারক
প্রসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে
ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের ওপর। উদ্দেশ্য হলো, এর মাধ্যমে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে
পারবে।' (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
কোরআন শরিফের অনেক জায়গায় পবিত্র রোজা ও রমজানুল মোবারক সম্পর্কে আলোচনা করা হলেও এ আয়াতটিই সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত। রমজানুল মোবারকে রোজা পালনের বিধান কার্যকর করার এই নির্দেশনায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'এটি শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর জন্যই বিধান করা হয়নি, তা অতীতের উম্মতের জন্যও কার্যকর ছিল। তারাও রোজা পালন করেছে।' এখানে 'তোমাদের পূর্ববর্তীদের' কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক। এর মাধ্যমে প্রথম মানব এবং আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বে আগমনকারী হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত দুনিয়াতে যুগে যুগে দেশে দেশে যত নবী-রাসুলের আবির্ভাব হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেককেই বোঝানো হয়েছে। তাফসিরে রুহুল মাআনিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগেকার সব নবী-রাসুলের উম্মতের মধ্যে রোজার বিধান থাকলেও তা উম্মতে মুহাম্মদীর রোজার মতো ছিল না। অর্থাৎ আমাদের জন্য রমজানুল মোবারকের পুরো মাস রোজা রাখতে হয়। আমাদের রোজা সুবহে সাদিক থেকে শুরু হয়ে তা গুরুবিশ শামস তথা সন্ধ্যা পর্যন্ত রাখতে হয়। এ ছাড়া রোজার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো শুধু উম্মতে মুহাম্মদী তথা আমাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, অন্য উম্মতের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য ছিল না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন। তিনি আমাদের স্রষ্টা, মালিক এবং প্রতিপালক। আমাদের ওপর রোজার বিধান কার্যকর করতে গিয়ে উপমা পেশ করে বলেছেন, 'এই রোজা রাখাটা তোমরা হয়তো মনে করবে কষ্টকর একটি ইবাদত। তো এমন কষ্ট শুধু তোমাদের জন্যই বিধান করা হচ্ছে না, এর আগেও সব নবী-রাসুলের উম্মতের জন্য কার্যকর ছিল।' রোজার বিধান পালন করা সত্যিই কষ্টসাধ্য। তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সম্মিলিতভাবে তা যখন বিশ্ব মুসলিম পালন করবে, তখন তা কষ্টকর হলেও সম্মিলিতভাবে পালনযোগ্য বিধান হওয়ায় এই কষ্ট অনেকটাই হালকা মনে হবে। তা ছাড়া রোজার এই কষ্টকর বিধানের বিপরীতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য অসংখ্য নেয়ামত ও উপহার ঘোষণা করেছেন। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানুল মোবারকের প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত এবং শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুবর্ণ সুযোগ। এ মাসের একটি নফল ইবাদত ফরজের এবং একটি ফরজ ইবাদত ৭০টি ফরজের সমতুল্য সওয়াব মিলবে। এ মাসেই লাইলাতুল কদরের মতো মহাপুণ্যময় রাতের সন্ধান মিলে। এ ধরনের অসংখ্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া আলোচ্য আয়াতেই রোজার বিধান পালন করলে 'মুত্তাকি' হওয়া যাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি মুত্তাকি হওয়া মানে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রিয় জান্নাতি বান্দা হয়ে যাওয়া। একজন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে বড় কোনো প্রত্যাশা থাকতে পারে না।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, '(রমজানের রোজা) গণনার কয়েকটি দিনের জন্য। এরপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম সম্পাদন করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। যদি রোজা রাখে, তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।' (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৪)। একই সুরার পরের আয়াতে বলা হয়েছে, 'রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে কোরআন শরিফ নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যবিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর...।'
কোরআন শরিফের বিভিন্ন আয়াতে রোজা ও রমজানুল মোবারক সম্পর্কে যেসব আলোচনা হয়েছে, তা সঠিকভাবে বোঝার জন্য নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাব, পবিত্র হাদিসের কিতাবগুলো এবং মাসআলা-মাসায়েলের কিতাব সংগ্রহ করে অধ্যয়ন করতে হবে। বরেণ্য আলেমদের কাছ থেকেও বিস্তারিত জেনে নেওয়া এবং সে অনুযায়ী আমল করাই কর্তব্য। আল্লাহ আমাদেরকে তওফিক দিন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি
কোরআন শরিফের অনেক জায়গায় পবিত্র রোজা ও রমজানুল মোবারক সম্পর্কে আলোচনা করা হলেও এ আয়াতটিই সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত। রমজানুল মোবারকে রোজা পালনের বিধান কার্যকর করার এই নির্দেশনায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'এটি শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর জন্যই বিধান করা হয়নি, তা অতীতের উম্মতের জন্যও কার্যকর ছিল। তারাও রোজা পালন করেছে।' এখানে 'তোমাদের পূর্ববর্তীদের' কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক। এর মাধ্যমে প্রথম মানব এবং আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বে আগমনকারী হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত দুনিয়াতে যুগে যুগে দেশে দেশে যত নবী-রাসুলের আবির্ভাব হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেককেই বোঝানো হয়েছে। তাফসিরে রুহুল মাআনিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগেকার সব নবী-রাসুলের উম্মতের মধ্যে রোজার বিধান থাকলেও তা উম্মতে মুহাম্মদীর রোজার মতো ছিল না। অর্থাৎ আমাদের জন্য রমজানুল মোবারকের পুরো মাস রোজা রাখতে হয়। আমাদের রোজা সুবহে সাদিক থেকে শুরু হয়ে তা গুরুবিশ শামস তথা সন্ধ্যা পর্যন্ত রাখতে হয়। এ ছাড়া রোজার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো শুধু উম্মতে মুহাম্মদী তথা আমাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, অন্য উম্মতের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য ছিল না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন। তিনি আমাদের স্রষ্টা, মালিক এবং প্রতিপালক। আমাদের ওপর রোজার বিধান কার্যকর করতে গিয়ে উপমা পেশ করে বলেছেন, 'এই রোজা রাখাটা তোমরা হয়তো মনে করবে কষ্টকর একটি ইবাদত। তো এমন কষ্ট শুধু তোমাদের জন্যই বিধান করা হচ্ছে না, এর আগেও সব নবী-রাসুলের উম্মতের জন্য কার্যকর ছিল।' রোজার বিধান পালন করা সত্যিই কষ্টসাধ্য। তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সম্মিলিতভাবে তা যখন বিশ্ব মুসলিম পালন করবে, তখন তা কষ্টকর হলেও সম্মিলিতভাবে পালনযোগ্য বিধান হওয়ায় এই কষ্ট অনেকটাই হালকা মনে হবে। তা ছাড়া রোজার এই কষ্টকর বিধানের বিপরীতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য অসংখ্য নেয়ামত ও উপহার ঘোষণা করেছেন। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানুল মোবারকের প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত এবং শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুবর্ণ সুযোগ। এ মাসের একটি নফল ইবাদত ফরজের এবং একটি ফরজ ইবাদত ৭০টি ফরজের সমতুল্য সওয়াব মিলবে। এ মাসেই লাইলাতুল কদরের মতো মহাপুণ্যময় রাতের সন্ধান মিলে। এ ধরনের অসংখ্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া আলোচ্য আয়াতেই রোজার বিধান পালন করলে 'মুত্তাকি' হওয়া যাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি মুত্তাকি হওয়া মানে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রিয় জান্নাতি বান্দা হয়ে যাওয়া। একজন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে বড় কোনো প্রত্যাশা থাকতে পারে না।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, '(রমজানের রোজা) গণনার কয়েকটি দিনের জন্য। এরপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম সম্পাদন করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। যদি রোজা রাখে, তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।' (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৪)। একই সুরার পরের আয়াতে বলা হয়েছে, 'রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে কোরআন শরিফ নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যবিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর...।'
কোরআন শরিফের বিভিন্ন আয়াতে রোজা ও রমজানুল মোবারক সম্পর্কে যেসব আলোচনা হয়েছে, তা সঠিকভাবে বোঝার জন্য নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাব, পবিত্র হাদিসের কিতাবগুলো এবং মাসআলা-মাসায়েলের কিতাব সংগ্রহ করে অধ্যয়ন করতে হবে। বরেণ্য আলেমদের কাছ থেকেও বিস্তারিত জেনে নেওয়া এবং সে অনুযায়ী আমল করাই কর্তব্য। আল্লাহ আমাদেরকে তওফিক দিন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি
No comments