মন্ত্রিসভা প্রত্যাখ্যান, বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন মুরসিপন্থীরা
মিসরে সদ্যগঠিত অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভাকে
প্রত্যাখ্যান করেছে মুসলিম ব্রাদারহুড। মন্ত্রিসভা গঠনের প্রতিবাদে নতুন
করে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ
মুরসির সমর্থকেরা। গতকাল বুধবার এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। এর আগের দিন
নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম
প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ৩ জুলাই দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত
হন। এরপর তাঁকে পুনর্বহাল করার দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে তাঁর
সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড। সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, মুরসির সমর্থকেরা
দেশটির সামরিক ঘাঁটিগুলোর বাইরে সশস্ত্র বিক্ষোভ উসকে দিচ্ছেন এবং চলমান
রাজনৈতিক বিরোধকে ধর্মীয় বিরোধে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মিসরে মঙ্গলবার
৩৪ সদস্যের যে অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই
আমলা এবং উদারপন্থী। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তা আল-সিসি নতুন
সরকারের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর যৌথ দায়িত্বে
রয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় তিনজন নারী এবং সংখ্যালঘু কপটিক খ্রিষ্টান
সম্প্রদায়ের তিনজন প্রতিনিধি রয়েছেন। স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর
অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভকারী প্রধান দুটি ইসলামপন্থী দলের কোনো সদস্য
মন্ত্রিসভায় নেই। মুসলিম ব্রাদারহুড এ সরকারে থাকবে না বলে আগেই জানিয়ে
দিয়েছিল। নতুন সরকার যেসব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তার মধ্যে
রয়েছে, দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। তা কঠিন কাজ
হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রভাবশালী সংগঠন ব্রাদারহুডের পাশাপাশি
অতিরক্ষণশীল আল-নুর পার্টিও নতুন মন্ত্রিসভাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ব্রাদারহুডের জ্যেষ্ঠ নেতা এসাম আল-ইরিয়ান নতুন মন্ত্রিসভা গঠন প্রসঙ্গে
বলেন, ‘তারা কি নিজেরাই নিজেদের বিশ্বাস করে? অন্য কে-ইবা তাদের বিশ্বাস
করে? তাদের কোনো কর্তৃত্ব কীভাবে থাকে, যখন তারা এটা জানে যে সামরিক
বাহিনীর একটি শব্দই তাদের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করাতে পারে?’ ব্রাদারহুডের
মুখপাত্র জিহাদ আল-হাদ্দাদ অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা গঠনকে প্রত্যাখ্যান করে
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা এ মন্ত্রিসভার বৈধতা বা এর
কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেব না।’ মিসরের রাস্তায় রাস্তায় মুরসি-সমর্থকদের
সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রিসভার
সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। সংঘর্ষে এদিন অন্তত সাতজন নিহত এবং ২৬০ জনের বেশি
আহত হয়েছেন, যা গত এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা। এ ছাড়া
সিনাই উপত্যকায়ও নতুন করে সহিংসতা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সেখানে জঙ্গিদের
ছোড়া গুলিতে ছয় সেনা ও দুই বেসামরিক লোক আহত হয়েছেন। এদিকে মিসরের চলমান
পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির অন্তর্বর্তী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে ইউরোপীয়
ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন কায়রো সফর
করছেন। তিনি অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর ও সেনাপ্রধান আবদেল
ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন। মিসরে চলমান সংকট দেশটির পশ্চিমা এবং
আঞ্চলিক মিত্রদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ক্যাথরিন অ্যাস্টনের আগে মার্কিন
পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি বিল বার্নস সে দেশ সফর করেন। রয়টার্স
ও এএফপি।
No comments