যারা প্রতারিত হচ্ছেন তারাও কি দায়ী নন? by অরবিন্দ রয়
ইদানীং পত্রিকার পাতা মেললেই কোনো না কোনো
মাল্টিপারপাস কোম্পানির উধাও হয়ে যাওয়ার খবর চোখে পড়ে। ক্রিকেট খেলায় যেমন
একটির পর একটি উইকেটের পতন ঘটতে দেখা যায়। এসব খবর শোনার পরও যারা
কুম্ভকর্ণের নিদ্রার মতো নিজের গচ্ছিত টাকা উঠানোর গরজ করছেন না, তাদের কী
বলা যায় এর ভাষা আমার জানা নেই। অনেকেই ভাবছেন, সবুরে মেওয়া ফলে। আর কটা
দিন সবুর করলেই হয়তো পুঁজি এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিন্তু আর কটা দিন
যেতে না যেতেই অনেক কোম্পানি পাততাড়ি গুটিয়ে হাওয়া হয়ে যেতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে কিছু লোক অল্প সময়ে বেশি লাভবান হতে গিয়ে সর্বাংশে প্রতারিত
হচ্ছে কিছু মাল্টি বাটপারের হাতে।
কিশোর কুমারের একটি বিখ্যাত গান আছে- কী আশায় বাঁধি খেলাঘর; বেদনার বালুচরে। নিয়তি আমার ভাগ্য লয়ে যে নিশিদিন খেলা করে। গানের প্রথম অন্তরায় দেখা যাচ্ছে, গীতিকার তার ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য সরাসরি নিয়তিকেই দায়ী করেছেন। নিয়তির প্রধান নিয়ন্ত্রক বিধাতাই মূলত ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মূল নায়ক। কিন্তু আজ যারা রকমারি প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে পথে নামার উপক্রম হয়েছেন, তাদের এ করুণ পরিণতির জন্য কিছুতেই বিধাতাকে দায়ী করা যায় না। সাধারণভাবে যদি চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে ভাগ্য বিড়ম্বিতরা তাদের ভাগ্য বিড়ম্বনার জন্য নিজেরাই দায়ী। কেননা একজন বিষপান করবেন আর অন্যজন কাতরাবেন এমন নজির ত্রিভুবনে নেই। যিনি বিষ খাবেন, মূলত কাতরাতে হবে তাকেই। কাজেই বর্তমানে যারা আমানত খুইয়ে আহাজারি করছেন তা অন্যের দোষে নয়, ব্যক্তিগত লোভ-লালসায় জর্জরিত হয়ে রাতারাতি বড়লোক হতে গিয়েই আজ তারা সর্বস্বান্ত। কাজেই এ ভুলের দায় কারও ঘাড়ে বর্তানোর বিষয়টি নিছক সান্ত্বনা খুঁজে ফেরা ছাড়া আর কিছুই নয়। এক্ষেত্রে বিধাতার ওপর দোষারোপ করার প্রশ্নই আসে না।
পল্লীর অনেক এলাকায় এখনও বিষ খেয়ে আÍহত্যার চেষ্টাকারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে মানব বিষ্ঠা খাওয়াতে দেখা যায়। পর্যাপ্ত বমি করানোর মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে বিষের কার্যকারিতা কমানোই এ টোটকার মূল কাজ। তাৎক্ষণিকভাবে জিনিসটি পাওয়া না গেলে অনেককেই পচা গোবর খাওয়াতেও দেখা যায়। পাঠক হয়তো ভাবতে পারেন, মাল্টিপারপাস নিয়ে লেখার মধ্যে আচমকা বিষ খেয়ে আÍহত্যার চেষ্টাকারীকে নিয়ে আসা হচ্ছে কেন? প্রসঙ্গটি নিয়ে আসার একটাই কারণ সেটি হচ্ছে, বিষখেকোর কার্যক্রমের সঙ্গে সর্বস্ব হারানো ব্যক্তিদের একটা সম্পর্ক দেখানো। কারণ বিষ খাওয়ার পরের অবস্থার মতো আমানত হারানোর ক্ষেত্রেও কাতরানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রেক্ষাপট যাই হোক, কাতরানোর কারণ উভয় ক্ষেত্রেই অভিন্ন বলা যায় এবং উভয়ের জন্য দায়ী স্ব স্ব ব্যক্তি। বিষপানকারীর ক্ষেত্রে যেমন অন্যের ওপর দোষ চাপানো অযৌক্তিক, তেমনি এমএলএম বা মাল্টিপারপাস নামধারী কিছু মাল্টি বাটপারের ফাঁদে পা দিয়ে আজ যারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাদের এ করুণ পরিণতির জন্যও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা যায় না। আজ যারা বুদ্ধিদোষে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এবং নিত্যনতুন সর্বস্বান্তের পথে পা বাড়াচ্ছেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, তারা যেন নিজ অপকর্মের দায় নিজ কাঁধে নিয়ে আÍশুদ্ধির চেষ্টা করেন। এমনকি সরকারও এর দায় বহনে খুব একটা সক্ষম বলে মনে হয় না। কারণ কোন ব্যক্তি কী উদ্দেশ্যে কাকে টাকা ধার দেবেন, সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা রাষ্ট্রের ধর্ম নয়। তাছাড়া টাকা দেয়ার সময় কোনো সরকারি লোকের সঙ্গে কেউ পরামর্শ করেন বলেও মনে হয় না। কেবল ফতুর হওয়ার পরই সরকারের কাঁধে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট যদি এদেশে পা রাখতেন, তাহলে লাখ লাখ লোকের মাল্টি প্রতারিত হওয়ার ধরন দেখলে বোধহয় কী বিচিত্র এদেশ, সত্যিই সেলুকাস বলার আগেই হার্টফেল করতেন। দুঃখ যে, এত প্রতারণার পরও কারও বোধোদয়ের কোনো খবর নেই। বোধহীনভাবে চলাটা বংশানুক্রমিক কি-না কে জানে। ইতিহাসও তো সে কথাই বলে। আজ থেকে প্রায় আড়াইশ বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া নামক একটি ব্রিটিশ কোম্পানি হাতেগোনা আট-দশজন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসা করতে এসে গোটা ভারতবর্ষ দখল করেছিল। শুধু তাই নয়, ১৯০ বছর শাসনও করে গেছে তারা। পরাজিত হওয়া ও দীর্ঘদিন পরাধীন থাকার ধরন দেখলেই নিজেদের মূল রক্তের সন্ধান পাওয়া যায়। আজ জোর করে যারা আমাদের আধুনিক বানিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক ফায়দা লুটে নিচ্ছে, সেই অতি আধুনিকের লেবাসে গণ্ডমূর্খ হওয়ার পাপই বুঝি লাখ লাখ লোকের ভ্রষ্টপথে চলার কারণ হতে পারে। তা না হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদলে সাত-আটজন কর্মচারীবেষ্টিত কিছু মাল্টিপারপাস কোম্পানি রাতারাতি পাবলিকের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিনা বাধায় পালিয়ে যাওয়ার হিম্মত দেখাচ্ছে কিভাবে?
কী বিচিত্র এ ডিজিটাল জাতি! সেলুকাস! যেখানে বড়লোক বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা কামানো যায়! মওকা মতোন স্বপ্নটা দেখাতে পারলেই হল- টাকা রাখার জায়গা পাবেন না। মানে এ জাতি স্বপ্ন কিনতে এতটাই পটু যে স্বপ্ন বিক্রেতারা বিক্রি করে কুলিয়ে উঠতে পারে না। ফলে রাতারাতি দেশজুড়ে শাখা সেন্টার খুলে বসে। সেসব সেন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেন কিছু ডিজিটাল নির্বোধ। বিনিময়ে তারা চোখে সরষে ফুল ছাড়া কিছুই দেখতে পান না।
অরবিন্দ রায় : একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি পরিচালক
কিশোর কুমারের একটি বিখ্যাত গান আছে- কী আশায় বাঁধি খেলাঘর; বেদনার বালুচরে। নিয়তি আমার ভাগ্য লয়ে যে নিশিদিন খেলা করে। গানের প্রথম অন্তরায় দেখা যাচ্ছে, গীতিকার তার ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য সরাসরি নিয়তিকেই দায়ী করেছেন। নিয়তির প্রধান নিয়ন্ত্রক বিধাতাই মূলত ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মূল নায়ক। কিন্তু আজ যারা রকমারি প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে পথে নামার উপক্রম হয়েছেন, তাদের এ করুণ পরিণতির জন্য কিছুতেই বিধাতাকে দায়ী করা যায় না। সাধারণভাবে যদি চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে ভাগ্য বিড়ম্বিতরা তাদের ভাগ্য বিড়ম্বনার জন্য নিজেরাই দায়ী। কেননা একজন বিষপান করবেন আর অন্যজন কাতরাবেন এমন নজির ত্রিভুবনে নেই। যিনি বিষ খাবেন, মূলত কাতরাতে হবে তাকেই। কাজেই বর্তমানে যারা আমানত খুইয়ে আহাজারি করছেন তা অন্যের দোষে নয়, ব্যক্তিগত লোভ-লালসায় জর্জরিত হয়ে রাতারাতি বড়লোক হতে গিয়েই আজ তারা সর্বস্বান্ত। কাজেই এ ভুলের দায় কারও ঘাড়ে বর্তানোর বিষয়টি নিছক সান্ত্বনা খুঁজে ফেরা ছাড়া আর কিছুই নয়। এক্ষেত্রে বিধাতার ওপর দোষারোপ করার প্রশ্নই আসে না।
পল্লীর অনেক এলাকায় এখনও বিষ খেয়ে আÍহত্যার চেষ্টাকারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে মানব বিষ্ঠা খাওয়াতে দেখা যায়। পর্যাপ্ত বমি করানোর মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে বিষের কার্যকারিতা কমানোই এ টোটকার মূল কাজ। তাৎক্ষণিকভাবে জিনিসটি পাওয়া না গেলে অনেককেই পচা গোবর খাওয়াতেও দেখা যায়। পাঠক হয়তো ভাবতে পারেন, মাল্টিপারপাস নিয়ে লেখার মধ্যে আচমকা বিষ খেয়ে আÍহত্যার চেষ্টাকারীকে নিয়ে আসা হচ্ছে কেন? প্রসঙ্গটি নিয়ে আসার একটাই কারণ সেটি হচ্ছে, বিষখেকোর কার্যক্রমের সঙ্গে সর্বস্ব হারানো ব্যক্তিদের একটা সম্পর্ক দেখানো। কারণ বিষ খাওয়ার পরের অবস্থার মতো আমানত হারানোর ক্ষেত্রেও কাতরানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রেক্ষাপট যাই হোক, কাতরানোর কারণ উভয় ক্ষেত্রেই অভিন্ন বলা যায় এবং উভয়ের জন্য দায়ী স্ব স্ব ব্যক্তি। বিষপানকারীর ক্ষেত্রে যেমন অন্যের ওপর দোষ চাপানো অযৌক্তিক, তেমনি এমএলএম বা মাল্টিপারপাস নামধারী কিছু মাল্টি বাটপারের ফাঁদে পা দিয়ে আজ যারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাদের এ করুণ পরিণতির জন্যও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা যায় না। আজ যারা বুদ্ধিদোষে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এবং নিত্যনতুন সর্বস্বান্তের পথে পা বাড়াচ্ছেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, তারা যেন নিজ অপকর্মের দায় নিজ কাঁধে নিয়ে আÍশুদ্ধির চেষ্টা করেন। এমনকি সরকারও এর দায় বহনে খুব একটা সক্ষম বলে মনে হয় না। কারণ কোন ব্যক্তি কী উদ্দেশ্যে কাকে টাকা ধার দেবেন, সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা রাষ্ট্রের ধর্ম নয়। তাছাড়া টাকা দেয়ার সময় কোনো সরকারি লোকের সঙ্গে কেউ পরামর্শ করেন বলেও মনে হয় না। কেবল ফতুর হওয়ার পরই সরকারের কাঁধে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট যদি এদেশে পা রাখতেন, তাহলে লাখ লাখ লোকের মাল্টি প্রতারিত হওয়ার ধরন দেখলে বোধহয় কী বিচিত্র এদেশ, সত্যিই সেলুকাস বলার আগেই হার্টফেল করতেন। দুঃখ যে, এত প্রতারণার পরও কারও বোধোদয়ের কোনো খবর নেই। বোধহীনভাবে চলাটা বংশানুক্রমিক কি-না কে জানে। ইতিহাসও তো সে কথাই বলে। আজ থেকে প্রায় আড়াইশ বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া নামক একটি ব্রিটিশ কোম্পানি হাতেগোনা আট-দশজন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসা করতে এসে গোটা ভারতবর্ষ দখল করেছিল। শুধু তাই নয়, ১৯০ বছর শাসনও করে গেছে তারা। পরাজিত হওয়া ও দীর্ঘদিন পরাধীন থাকার ধরন দেখলেই নিজেদের মূল রক্তের সন্ধান পাওয়া যায়। আজ জোর করে যারা আমাদের আধুনিক বানিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক ফায়দা লুটে নিচ্ছে, সেই অতি আধুনিকের লেবাসে গণ্ডমূর্খ হওয়ার পাপই বুঝি লাখ লাখ লোকের ভ্রষ্টপথে চলার কারণ হতে পারে। তা না হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদলে সাত-আটজন কর্মচারীবেষ্টিত কিছু মাল্টিপারপাস কোম্পানি রাতারাতি পাবলিকের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিনা বাধায় পালিয়ে যাওয়ার হিম্মত দেখাচ্ছে কিভাবে?
কী বিচিত্র এ ডিজিটাল জাতি! সেলুকাস! যেখানে বড়লোক বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা কামানো যায়! মওকা মতোন স্বপ্নটা দেখাতে পারলেই হল- টাকা রাখার জায়গা পাবেন না। মানে এ জাতি স্বপ্ন কিনতে এতটাই পটু যে স্বপ্ন বিক্রেতারা বিক্রি করে কুলিয়ে উঠতে পারে না। ফলে রাতারাতি দেশজুড়ে শাখা সেন্টার খুলে বসে। সেসব সেন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেন কিছু ডিজিটাল নির্বোধ। বিনিময়ে তারা চোখে সরষে ফুল ছাড়া কিছুই দেখতে পান না।
অরবিন্দ রায় : একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি পরিচালক
No comments