রমজান আসিয়াছে বাজার নাচিতেছে by মমতাজ উদদীন আহমদ
রমজান আসিয়াছে। সিয়াম সাধনার আহ্বান
আসিয়াছে। আর আর মাসে পারি আর না-ই পারি এই একটি মাস সংযম সাধনা করিব।
চক্ষুতে সংযম, জিহ্বায় সংযম, বুদ্ধিতে সংযম, সর্বোপরি হৃদয়ে সংযম।
এটা বড় পবিত্র আহ্বান, বড়ই মনোরম শিক্ষা। এমন শিক্ষা ও সাধনা অন্য কোথাও
মিলিবে না। অতএব আইস, আমরা সবাই মিলিয়া সংযম সাধনায় লিপ্ত হই। রমজান
আসিয়াছে। বড় ভাগ্যের ব্যাপার। পবিত্র রমজান আসিয়াছে। আমরা সব বিষয়ে সংযমী
হইব। কম গাইব, কম ঘুমাইব, কম বলিব, আর কম লোভ-লালসা করিব।
১১ মাস মেলা কিছু করিয়াছি, খাদ্যে বিষ মিশাইয়াছি, কৃত্রিম অভাব সৃজন করিয়া শিশুখাদ্যের দাম বাড়াইয়া দিয়াছি। উপায় নাই, আমাকে তো লাভ-মুনাফা করিতে হয়। নইলে বিরাট সংসার চলে কী করিয়া। পুত্র-কন্যার কোচিং ফিস অনেক। মাস্টার সাহেবরা ফিস ডবল করিয়াছেন। ওষুধের মূল্য চড়া। জান বাঁচাইতে ওষুধ লাগে। কোথায় যাই, তাই আদা-রসুন-পেঁয়াজ, টমেটো, ঝিঙার বুকে চাক্কু মারিয়া সব কিছুর মূল্য তিন গুণ করিয়া মুনাফা ঘরে তুলিয়াছি। অগ্নিমূল্যে এইসব অবশ্য প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করিতে বাধ্য নিরীহ পাবলিক যতই আহাজারি করুক, আমি নিজ ব্যবসা করিতেছি। তোমাদের ঘরে হাহাকার, তাহার জন্য আমি দায়ী নহি। প্রয়োজন হয়, তোমরা বেশি বেশি ঘুষ লও। জরুরি ফাইল গোপন করো অথবা নিজ আসনের নিচে চাপা দিয়া রাখো। বেকুবের দল বাধ্য হইয়া জমি আর অলংকার বিক্রয় করিয়া তোমার ঘুষের টাকা সংগ্রহ করিবে। এ দেশে এই জামানাতে কেউ কাউকেও ছাড় দিয়ো না। বড় বড় কথার মহাজনরা বড় বড় কথা বলিতে থাকুক, তোমরা কর্ণপাত করিও না আপন ধান্ধায় বিভোর থাকো। বিধাতা তোমাদের সহায়। তবে পবিত্র রমজানের কথা আলাদা। এ মাস সংযম সাধনার। বেশি কিছু করিও না। সীমার মধ্যে থাকো। সীমা লঙ্ঘন করা ভুল হইবে। সংযমী হও। নীরবে সহ্য করো। কাউকেও নিন্দা করিও না। সে অন্যায় করিলে তুমি অন্যায় করিও না। ওরে লোভী বান্দা, এ মাসে অন্যায় অধর্ম করিও না। তোমার সমূহ ক্ষতি হইবে। তুমি বরবাদ হইয়া যাইবে।
কিন্তু একটি মহা কিন্তুর মধ্যে পড়িয়া গিয়াছি। কী করি, ভাবিয়া কূল-কিনারা পাই না। এই মাসেই তো মহাসুযোগ। এই মাসেই তো ১১ মাসের ক্ষতি পূরণ করিবার সুযোগ। পাবলিকরা এ মাসে খায় বেশি। হালিম খায়, শসা খায়। কাঁচামরিচও খায়। বুট-ছোলার মধ্যে টমেটো দেয়, ধনেপাতাও মেশায়। এ মাসেই আদা-পেঁয়াজ বড় বেশি খরচ হয়। তাই নিরীহ লোভী পাবলিককে দোহন করিবার উপযুক্ত মাস এই রমজান। পাবলিক মহানন্দে পেঁয়াজ মাখিয়া হালিম খাইবে, কচি শসা কচকচ করিয়া চিবাইবে, আর আমি আড়ত লইয়া বসিয়া থাকিয়া করে আঙুল কামড়াইব তাহা হইবে না। তাহারা সংযম ছাড়িবে, আমি কেন সংযম ধরিব। অতএব আমিও ১০০ টাকার কাঁচামরিচ, ২০০ টাকায়, পঁচিশ টাকার পেঁয়াজ পঞ্চাশ টাকায় ছাড়িব। প্রথমে কম কম, পরে ধাপে ধাপে বাড়িবে। পাবলিক আমার ট্রিকস্ বুঝিতে পারিবে না। কী আনন্দ। সংযম নিজের কাছে। কিন্তু লোভের মুনাফা ঘরের কাছে।
শুনিয়াছি সাগরের ওইপারে ক্রিসমাস ইত্যাদি উৎসবে দ্রব্যমূল্য কমাইয়া 'সেলে' মাল ছাড়িয়া দেওয়া হয়। পাবলিকরা দেদারসে, মহানন্দে সেলের মাল কেনে। ইহা তো নাছারা জাতের মানুষের কাজ। আমি তো সে রকম নহি। আমি ইমানদার, আমি ধার্মিক। আমার ধর্মের মহিমা আমার কাছে। আমি বিধর্মীর কাছে শিক্ষা লই না। অতএব প্রিয় বেরাদর রোজাদার এবং পাবলিকগণ, তোমরা চড়ামূল্যে শসা, মরিচ খাও। আনন্দ করো। সুখী হও। রমজান আসিয়াছে। এখন কোনো কারণে নিরানন্দ থাকিও না, গুনাহ হইবে।
লেখক : নাট্যব্যক্তিত্ব
১১ মাস মেলা কিছু করিয়াছি, খাদ্যে বিষ মিশাইয়াছি, কৃত্রিম অভাব সৃজন করিয়া শিশুখাদ্যের দাম বাড়াইয়া দিয়াছি। উপায় নাই, আমাকে তো লাভ-মুনাফা করিতে হয়। নইলে বিরাট সংসার চলে কী করিয়া। পুত্র-কন্যার কোচিং ফিস অনেক। মাস্টার সাহেবরা ফিস ডবল করিয়াছেন। ওষুধের মূল্য চড়া। জান বাঁচাইতে ওষুধ লাগে। কোথায় যাই, তাই আদা-রসুন-পেঁয়াজ, টমেটো, ঝিঙার বুকে চাক্কু মারিয়া সব কিছুর মূল্য তিন গুণ করিয়া মুনাফা ঘরে তুলিয়াছি। অগ্নিমূল্যে এইসব অবশ্য প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করিতে বাধ্য নিরীহ পাবলিক যতই আহাজারি করুক, আমি নিজ ব্যবসা করিতেছি। তোমাদের ঘরে হাহাকার, তাহার জন্য আমি দায়ী নহি। প্রয়োজন হয়, তোমরা বেশি বেশি ঘুষ লও। জরুরি ফাইল গোপন করো অথবা নিজ আসনের নিচে চাপা দিয়া রাখো। বেকুবের দল বাধ্য হইয়া জমি আর অলংকার বিক্রয় করিয়া তোমার ঘুষের টাকা সংগ্রহ করিবে। এ দেশে এই জামানাতে কেউ কাউকেও ছাড় দিয়ো না। বড় বড় কথার মহাজনরা বড় বড় কথা বলিতে থাকুক, তোমরা কর্ণপাত করিও না আপন ধান্ধায় বিভোর থাকো। বিধাতা তোমাদের সহায়। তবে পবিত্র রমজানের কথা আলাদা। এ মাস সংযম সাধনার। বেশি কিছু করিও না। সীমার মধ্যে থাকো। সীমা লঙ্ঘন করা ভুল হইবে। সংযমী হও। নীরবে সহ্য করো। কাউকেও নিন্দা করিও না। সে অন্যায় করিলে তুমি অন্যায় করিও না। ওরে লোভী বান্দা, এ মাসে অন্যায় অধর্ম করিও না। তোমার সমূহ ক্ষতি হইবে। তুমি বরবাদ হইয়া যাইবে।
কিন্তু একটি মহা কিন্তুর মধ্যে পড়িয়া গিয়াছি। কী করি, ভাবিয়া কূল-কিনারা পাই না। এই মাসেই তো মহাসুযোগ। এই মাসেই তো ১১ মাসের ক্ষতি পূরণ করিবার সুযোগ। পাবলিকরা এ মাসে খায় বেশি। হালিম খায়, শসা খায়। কাঁচামরিচও খায়। বুট-ছোলার মধ্যে টমেটো দেয়, ধনেপাতাও মেশায়। এ মাসেই আদা-পেঁয়াজ বড় বেশি খরচ হয়। তাই নিরীহ লোভী পাবলিককে দোহন করিবার উপযুক্ত মাস এই রমজান। পাবলিক মহানন্দে পেঁয়াজ মাখিয়া হালিম খাইবে, কচি শসা কচকচ করিয়া চিবাইবে, আর আমি আড়ত লইয়া বসিয়া থাকিয়া করে আঙুল কামড়াইব তাহা হইবে না। তাহারা সংযম ছাড়িবে, আমি কেন সংযম ধরিব। অতএব আমিও ১০০ টাকার কাঁচামরিচ, ২০০ টাকায়, পঁচিশ টাকার পেঁয়াজ পঞ্চাশ টাকায় ছাড়িব। প্রথমে কম কম, পরে ধাপে ধাপে বাড়িবে। পাবলিক আমার ট্রিকস্ বুঝিতে পারিবে না। কী আনন্দ। সংযম নিজের কাছে। কিন্তু লোভের মুনাফা ঘরের কাছে।
শুনিয়াছি সাগরের ওইপারে ক্রিসমাস ইত্যাদি উৎসবে দ্রব্যমূল্য কমাইয়া 'সেলে' মাল ছাড়িয়া দেওয়া হয়। পাবলিকরা দেদারসে, মহানন্দে সেলের মাল কেনে। ইহা তো নাছারা জাতের মানুষের কাজ। আমি তো সে রকম নহি। আমি ইমানদার, আমি ধার্মিক। আমার ধর্মের মহিমা আমার কাছে। আমি বিধর্মীর কাছে শিক্ষা লই না। অতএব প্রিয় বেরাদর রোজাদার এবং পাবলিকগণ, তোমরা চড়ামূল্যে শসা, মরিচ খাও। আনন্দ করো। সুখী হও। রমজান আসিয়াছে। এখন কোনো কারণে নিরানন্দ থাকিও না, গুনাহ হইবে।
লেখক : নাট্যব্যক্তিত্ব
No comments