তৃতীয় দিনেও বোমা, আগুন ভাঙচুর-আজও জামায়াতের হরতাল
টানা হরতালের তৃতীয় দিনে গতকাল বুধবার
জামায়াত-শিবিরের একটি অভিন্ন 'কর্মসূচি' ছিল হাতবোমার বিস্ফোরণ। রাজধানী
ঢাকাসহ প্রায় সব স্থানেই অসংখ্য হাতবোমার (ককটেল) বিস্ফোরণ ঘটায় তারা।
এর পাশাপাশি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটায় দেশজুড়ে। এর বাইরে
সড়ক অবরোধ, পুলিশের ওপর হামলা এবং ঝটিকা মিছিলও দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে।
গতকাল এভাবেই জামায়াত-শিবিরের ডাকা টানা তৃতীয় দিনের হরতাল অতিবাহিত হয়
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে কোথাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালে সাড়া
দেয়নি সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল না করলেও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ
সব জেলা-উপজেলায় স্থানীয় গণপরিবহনের চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। যদিও গতকাল
জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর থেকে
সারা দেশেই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মারমুখী ছিল।
রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সোনারগাঁ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুই ডজনেরও বেশি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা। ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েক শ যানবাহন। বিস্ফোরণ ঘটানো হয় শত শত হাতবোমার। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। গতকাল রাজধানীতে পিকেটারদের ইটের আঘাতে পুলিশের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। মতিঝিল, শাহজাহানপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, পল্লবী, মগবাজার, তেজগাঁও, বাংলামটর, মহাখালী, জুরাইন ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সহিংস ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের নেতাসহ ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা মেরে পালানোর সময় ইবনে সিনার দুই সহকারী ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায়ের দিন ও পরের দিন হরতাল আহ্বান করে জামায়াত। গতকাল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রায়ের দিন হরতাল ডাকে দলটি। মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবারও সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত।
গত দুই দিনের মতো গতকালও রাজধানীতে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল শেষ হয়। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি এলাকায় জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল করলেও নগরীতে যানবাহন চলাচল, ব্যাংক-বীমাসহ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজকর্ম স্বাভাবিক ছিল। বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার চারটি সড়কের প্রবেশপথে ব্যারিকেড ও হাইকোর্টের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক র্যাব। শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, বঙ্গবাজার এলাকা, সচিবালয়ের প্রবেশপথ ও মৎস্যভবনসংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।
হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর বোমা মেরে পালিয়ে যাওয়ার সময় কল্যাণপুর থেকে ইবনে সিনার দুই সহকারী ম্যানেজার জাহাঙ্গীর ও নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সকালে মিরহাজারীবাগে দুটি গাড়ি ভাঙচুর, রায়েরবাগ ও দনিয়ায় তিনটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সকালে মতিঝিল থানাধীন শাহজাহানপুর বটতলায় জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালালে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। শিবিরকর্মীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। শাহজাহানপুর থানার ওসি আনিসুল হক বলেন, শিবিরের অতর্কিত হামলায় এক এসআইসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে শাহজাহানপুর কাঁচাবাজার ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় আ. লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মোকছেদ আলী সরকারকে মারধর করে পুলিশ। পরে বাগ্বিতণ্ডার জের ধরে বিরোধের সৃষ্টি হলে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় মোকছেদ আলী গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চাঁদার টাকা না পেয়ে হরতাল পরিস্থিতিতে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালায় পুলিশ। ঠিক একই সময়ে পুরান ঢাকার বংশাল থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকিরের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে পিকেটাররা। এ ছাড়া রাজধানীর কল্যাণপুর ও পল্লবীতে ককটেলের বিস্ফোরণ ও পল্লবীতে ঝটিকা মিছিল থেকে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বাসেও আগুন দেয় তারা। এর আগে দয়াগঞ্জে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে পিকেটাররা। সকাল পৌনে ৭টায় শহীদ মিনার রোডের মাথায় পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাংলামটরে অবস্থিত পুলিশ বঙ্ েককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। সে সময় পুলিশ বঙ্ েভাঙচুরও চালায়। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় পিকেটাররা। রমনা থানার এসআই শামিম জানান, এ ঘটনায় সেখানে টহল টিম পাঠানো হয়েছে।
এরপর মহাখালীতে রাত ৮টার দিকে হঠাৎ করে ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। এ সময় রাস্তায় তারা চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পিকআপ ভ্যানের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বনানী থানার ওসি ভুঁইয়া মাহবুব হাসান জানান, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
হরতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতালে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এ ছাড়া প্রতিটি থানা এলাকায় চেকপোস্টের পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোয়েন্দা নজরদারির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। নাশকতার আশঙ্কায় বিভিন্ন জায়গায় পোশাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুটি গাড়িতে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কের সদর উপজেলার ফতুল্লার ভোলাইল এলাকায় হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করে শিবিরকর্মীরা ক্রাউন সিমেন্টের একটি ট্রাক ও প্রিমিয়ার সিমেন্টের একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকেলে শহরের কালীরবাজারে যানবাহন ভাঙচুর ও রাস্তায় আগুন দিয়েছে শিবিরের লোকজন। এ ঘটনায় এক শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মরিচটেক এলাকায় রাতে একটি তুলাবাহী ট্রাকে আগুন দিয়েছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় আরো ৮-১০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই জামায়াত-শিবিরের লোকজন পালিয়ে যায়।
সোনারগাঁ থানার ওসি আতিকুর রহমান খাঁন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই একটি তুলাবাহী ট্রাকে আগুন দিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ আগুন দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে গাজীপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহনেওয়াজ দিলরুবা খানের সরকারি গাড়িসহ তিনটি যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয় হরতাল সমর্থকরা। বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে সরকারি গাড়ি রেখে দিলরুবা খান পাশের মোশাররফ টাওয়ারে কেনাকাটা করছিলেন। এর আগে সকালে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তার ভোগড়া এলাকায় হরতাল সমর্থকরা পিকেটিং করার সময় যাত্রীবাহী বলাকা পরিবহনের একটি বাস এবং টঙ্গী কলেজ গেট এলাকার হোসেন মার্কেটের সামনে একটি চলন্ত পিক-আপে আগুন দেয়। ফায়ার সার্ভিস তিনটি গাড়ির আগুন নেভাতে পারলেও গাড়িগুলো প্রায় ভস্মীভূত হয়ে যায়। অন্যদিকে গতকাল ভোররাত ও গত মঙ্গলবার রাতে মহানগরের চান্দনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম খানসহ সংগঠনের ৯ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে আটক করে র্যাব।
সিলেট মহানগরে যাত্রীদের ভেতরে আটকে রেখে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে মিরাবাজার এলাকায় গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে। বাসটি (সিলেট জ ০৪-০২৩৬) যাত্রী নিয়ে শহরের সুবহানীঘাট থেকে জাফলং যাচ্ছিল। এ ছাড়া শহরের শাহী ঈদগাহ, তেমুখি, কুমারপাড়া, মদীনা মার্কেট, রিকাবি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। ভাঙচুরকৃত গাড়িগুলোর মধ্যে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে দোকানপাট ভাঙচুর করে এবং অন্তত ১৫ থেকে ২০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
চট্টগ্রাম নগরে গতকালের হরতালকে স্থানীয় লোকজন 'হালকা যানজটযুক্ত' হরতাল নামে আখ্যায়িত করেছে। গতকাল হরতালের সময় যানজটের মাত্রা তীব্র ছিল না। নগরের জেল রোড এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের পর মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তিন শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। আর চান্দগাঁও এলাকায় পিকেটিংয়ের সময় এক শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে, জেলার সীতাকুণ্ডে পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১৫ শিবিরের কর্মী আহত হয়। পুলিশ এ সময়ে শিবিরের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ৩০০টি রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ে। এর মধ্যে প্রথমে সকালে শিবিরকর্মীরা সীতাকুণ্ড বাজারে দুটি মালবাহী ট্রাকসহ তিনটি অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করে। দুপুরে দক্ষিণ বাইপাস সড়ক সম্মুখে ও বাড়বকুণ্ড বাজারে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
খুলনায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা প্রথমে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের গোয়ালখালী মোড়ে এবং দুপুরে সিটি করপোরেশনের একটি ট্রাকে আগুনসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, আট-দশটি গাড়ি ভাঙচুর ও অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
বরিশালে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের প্রধান গেট এলাকা অবরোধ করে সড়কে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে কলেজ শাখা ছাত্রশিবির। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ছাড়া শহরে ও জেলার কোথাও হরতালের সমর্থনে মিছিল বা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লায় মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরপরই চান্দিনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া, দোতলা, কুটুম্বপুর, তীরচর ও বুড়িচং-চান্দিনা উপজেলাসংলগ্ন এলাকা সৈয়দপুর, নিমসার ও কোরপাই এলাকায় ২২টি যানবাহন ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঝিনাইদহ শহরের আলহেরা এলাকায় বিকেল ৩টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ১৬টি শর্টগানের গুলি ও শিবির ১২-১৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় আবু হাসান নামের এক শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় দুপুরে জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ মিছিল শেষে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ইটপাটকেলের আঘাতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়। বাগেরহাটে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মেহগীতনা এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ ছাড়া বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের শহরতলির দশানী এলাকায় দুটি বাস ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া করে ওবায়দুর রহমান (১৫) ও শামীম আহসান (১৪) নামের ছাত্রশিবিরের দুই কর্মীকে আটক করে।
রংপুরের মিঠাপুকুরের দমদমা এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে একটি কাভার্ড ভ্যানসহ দুটি ট্রাকে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। অন্যদিকে রংপুর শহরের দর্শনা এলাকায় দুটি নৈশ কোচসহ চারটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। এ সময় পুলিশ পাঁচ শিবিরকর্মীকে আটক করেছে।
সাতক্ষীরায় পরিস্থিতি ছিল একটু ব্যতিক্রম। দুপুর ১টা পর্যন্ত রাস্তাঘাটসহ সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হলেও জামায়াত নেতা মুজাহিদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই রাস্তা ছেড়ে দেয় হরতালকারীরা। এর আগে সকাল থেকে শহরের সঙ্গে যোগাযোগের সড়ক আশাশুনি-সাতক্ষীরার রামচন্দ্রপুর, সাতক্ষীরা-শ্যামনগরের বাকাল, বেজোরাটি, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ছয়ঘরিয়া, অন্নের মোড়ে গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক লাইট পোস্ট ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে চকলেট বোমা ফাটানো হয়। বিকেলে বাকাল মোড়ে পিকেটাররা আবদুল করিম নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে জখম করে।
লক্ষ্মীপুরে প্রায় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে হরতাল পালন করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেয় হরতাল সমর্থকরা। প্রতিবেদনটি তৈরি সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা এবং নারায়ণগঞ্জ, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম), বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।
রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সোনারগাঁ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুই ডজনেরও বেশি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা। ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েক শ যানবাহন। বিস্ফোরণ ঘটানো হয় শত শত হাতবোমার। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। গতকাল রাজধানীতে পিকেটারদের ইটের আঘাতে পুলিশের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। মতিঝিল, শাহজাহানপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, পল্লবী, মগবাজার, তেজগাঁও, বাংলামটর, মহাখালী, জুরাইন ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সহিংস ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের নেতাসহ ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা মেরে পালানোর সময় ইবনে সিনার দুই সহকারী ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায়ের দিন ও পরের দিন হরতাল আহ্বান করে জামায়াত। গতকাল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রায়ের দিন হরতাল ডাকে দলটি। মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবারও সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত।
গত দুই দিনের মতো গতকালও রাজধানীতে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল শেষ হয়। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি এলাকায় জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল করলেও নগরীতে যানবাহন চলাচল, ব্যাংক-বীমাসহ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজকর্ম স্বাভাবিক ছিল। বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার চারটি সড়কের প্রবেশপথে ব্যারিকেড ও হাইকোর্টের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক র্যাব। শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, বঙ্গবাজার এলাকা, সচিবালয়ের প্রবেশপথ ও মৎস্যভবনসংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।
হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর বোমা মেরে পালিয়ে যাওয়ার সময় কল্যাণপুর থেকে ইবনে সিনার দুই সহকারী ম্যানেজার জাহাঙ্গীর ও নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সকালে মিরহাজারীবাগে দুটি গাড়ি ভাঙচুর, রায়েরবাগ ও দনিয়ায় তিনটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সকালে মতিঝিল থানাধীন শাহজাহানপুর বটতলায় জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালালে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। শিবিরকর্মীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। শাহজাহানপুর থানার ওসি আনিসুল হক বলেন, শিবিরের অতর্কিত হামলায় এক এসআইসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে শাহজাহানপুর কাঁচাবাজার ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় আ. লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মোকছেদ আলী সরকারকে মারধর করে পুলিশ। পরে বাগ্বিতণ্ডার জের ধরে বিরোধের সৃষ্টি হলে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় মোকছেদ আলী গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চাঁদার টাকা না পেয়ে হরতাল পরিস্থিতিতে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালায় পুলিশ। ঠিক একই সময়ে পুরান ঢাকার বংশাল থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকিরের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে পিকেটাররা। এ ছাড়া রাজধানীর কল্যাণপুর ও পল্লবীতে ককটেলের বিস্ফোরণ ও পল্লবীতে ঝটিকা মিছিল থেকে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বাসেও আগুন দেয় তারা। এর আগে দয়াগঞ্জে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে পিকেটাররা। সকাল পৌনে ৭টায় শহীদ মিনার রোডের মাথায় পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাংলামটরে অবস্থিত পুলিশ বঙ্ েককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। সে সময় পুলিশ বঙ্ েভাঙচুরও চালায়। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় পিকেটাররা। রমনা থানার এসআই শামিম জানান, এ ঘটনায় সেখানে টহল টিম পাঠানো হয়েছে।
এরপর মহাখালীতে রাত ৮টার দিকে হঠাৎ করে ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। এ সময় রাস্তায় তারা চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পিকআপ ভ্যানের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বনানী থানার ওসি ভুঁইয়া মাহবুব হাসান জানান, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
হরতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতালে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এ ছাড়া প্রতিটি থানা এলাকায় চেকপোস্টের পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোয়েন্দা নজরদারির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। নাশকতার আশঙ্কায় বিভিন্ন জায়গায় পোশাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুটি গাড়িতে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কের সদর উপজেলার ফতুল্লার ভোলাইল এলাকায় হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করে শিবিরকর্মীরা ক্রাউন সিমেন্টের একটি ট্রাক ও প্রিমিয়ার সিমেন্টের একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকেলে শহরের কালীরবাজারে যানবাহন ভাঙচুর ও রাস্তায় আগুন দিয়েছে শিবিরের লোকজন। এ ঘটনায় এক শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মরিচটেক এলাকায় রাতে একটি তুলাবাহী ট্রাকে আগুন দিয়েছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় আরো ৮-১০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই জামায়াত-শিবিরের লোকজন পালিয়ে যায়।
সোনারগাঁ থানার ওসি আতিকুর রহমান খাঁন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই একটি তুলাবাহী ট্রাকে আগুন দিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ আগুন দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে গাজীপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহনেওয়াজ দিলরুবা খানের সরকারি গাড়িসহ তিনটি যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয় হরতাল সমর্থকরা। বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে সরকারি গাড়ি রেখে দিলরুবা খান পাশের মোশাররফ টাওয়ারে কেনাকাটা করছিলেন। এর আগে সকালে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তার ভোগড়া এলাকায় হরতাল সমর্থকরা পিকেটিং করার সময় যাত্রীবাহী বলাকা পরিবহনের একটি বাস এবং টঙ্গী কলেজ গেট এলাকার হোসেন মার্কেটের সামনে একটি চলন্ত পিক-আপে আগুন দেয়। ফায়ার সার্ভিস তিনটি গাড়ির আগুন নেভাতে পারলেও গাড়িগুলো প্রায় ভস্মীভূত হয়ে যায়। অন্যদিকে গতকাল ভোররাত ও গত মঙ্গলবার রাতে মহানগরের চান্দনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম খানসহ সংগঠনের ৯ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে আটক করে র্যাব।
সিলেট মহানগরে যাত্রীদের ভেতরে আটকে রেখে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে মিরাবাজার এলাকায় গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে। বাসটি (সিলেট জ ০৪-০২৩৬) যাত্রী নিয়ে শহরের সুবহানীঘাট থেকে জাফলং যাচ্ছিল। এ ছাড়া শহরের শাহী ঈদগাহ, তেমুখি, কুমারপাড়া, মদীনা মার্কেট, রিকাবি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। ভাঙচুরকৃত গাড়িগুলোর মধ্যে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে দোকানপাট ভাঙচুর করে এবং অন্তত ১৫ থেকে ২০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
চট্টগ্রাম নগরে গতকালের হরতালকে স্থানীয় লোকজন 'হালকা যানজটযুক্ত' হরতাল নামে আখ্যায়িত করেছে। গতকাল হরতালের সময় যানজটের মাত্রা তীব্র ছিল না। নগরের জেল রোড এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের পর মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তিন শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। আর চান্দগাঁও এলাকায় পিকেটিংয়ের সময় এক শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে, জেলার সীতাকুণ্ডে পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১৫ শিবিরের কর্মী আহত হয়। পুলিশ এ সময়ে শিবিরের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ৩০০টি রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ে। এর মধ্যে প্রথমে সকালে শিবিরকর্মীরা সীতাকুণ্ড বাজারে দুটি মালবাহী ট্রাকসহ তিনটি অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করে। দুপুরে দক্ষিণ বাইপাস সড়ক সম্মুখে ও বাড়বকুণ্ড বাজারে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
খুলনায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা প্রথমে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের গোয়ালখালী মোড়ে এবং দুপুরে সিটি করপোরেশনের একটি ট্রাকে আগুনসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, আট-দশটি গাড়ি ভাঙচুর ও অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
বরিশালে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের প্রধান গেট এলাকা অবরোধ করে সড়কে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে কলেজ শাখা ছাত্রশিবির। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ছাড়া শহরে ও জেলার কোথাও হরতালের সমর্থনে মিছিল বা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লায় মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরপরই চান্দিনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া, দোতলা, কুটুম্বপুর, তীরচর ও বুড়িচং-চান্দিনা উপজেলাসংলগ্ন এলাকা সৈয়দপুর, নিমসার ও কোরপাই এলাকায় ২২টি যানবাহন ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঝিনাইদহ শহরের আলহেরা এলাকায় বিকেল ৩টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ১৬টি শর্টগানের গুলি ও শিবির ১২-১৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় আবু হাসান নামের এক শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় দুপুরে জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ মিছিল শেষে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ইটপাটকেলের আঘাতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়। বাগেরহাটে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মেহগীতনা এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ ছাড়া বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের শহরতলির দশানী এলাকায় দুটি বাস ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া করে ওবায়দুর রহমান (১৫) ও শামীম আহসান (১৪) নামের ছাত্রশিবিরের দুই কর্মীকে আটক করে।
রংপুরের মিঠাপুকুরের দমদমা এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে একটি কাভার্ড ভ্যানসহ দুটি ট্রাকে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। অন্যদিকে রংপুর শহরের দর্শনা এলাকায় দুটি নৈশ কোচসহ চারটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। এ সময় পুলিশ পাঁচ শিবিরকর্মীকে আটক করেছে।
সাতক্ষীরায় পরিস্থিতি ছিল একটু ব্যতিক্রম। দুপুর ১টা পর্যন্ত রাস্তাঘাটসহ সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হলেও জামায়াত নেতা মুজাহিদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই রাস্তা ছেড়ে দেয় হরতালকারীরা। এর আগে সকাল থেকে শহরের সঙ্গে যোগাযোগের সড়ক আশাশুনি-সাতক্ষীরার রামচন্দ্রপুর, সাতক্ষীরা-শ্যামনগরের বাকাল, বেজোরাটি, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ছয়ঘরিয়া, অন্নের মোড়ে গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক লাইট পোস্ট ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে চকলেট বোমা ফাটানো হয়। বিকেলে বাকাল মোড়ে পিকেটাররা আবদুল করিম নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে জখম করে।
লক্ষ্মীপুরে প্রায় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে হরতাল পালন করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেয় হরতাল সমর্থকরা। প্রতিবেদনটি তৈরি সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা এবং নারায়ণগঞ্জ, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম), বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।
No comments