বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় মুজাহিদের-জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকাও স্পষ্ট by আশরাফ-উল-আলম ও এম বদি-উজ-জামান
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়
বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায় আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এড়াতে পারেন না। কারণ
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন আলবদর বাহিনী। আর এই
আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মুজাহিদ।
মুজাহিদের মামলার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গতকাল বুধবার মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে বলা হয়, একাত্তরে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, ড. ফজলে রাব্বী, সেলিনা পারভীন, মুনীর চৌধুরী প্রমুখ বুদ্ধিজীবী অপহৃত হন এবং তাঁদেরসহ আরো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে ফেলে দেওয়া হয়। অনেকের লাশ চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ কয়েকজনের লাশ চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। আর তাঁদের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে আলবদর বাহিনী জড়িত ছিল বলে সাক্ষ্য-প্রমাণে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার মূল্যবান দলিলপত্রেও এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার রায়ে আবারও একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা উঠে এসেছে। রায়ে বলা হয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা দিতে এবং পাকিস্তান রক্ষা করতে আলবদর, আল শামস, রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। আলবদর ও আলশামস বাহিনী ছিল রাজাকার বাহিনীর দুটি শাখা। এ বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে। বিশেষ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের শেষ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী দেশের শত শত বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় : রায়ে বলা হয়েছে, আলবদর বাহিনীর নীতি ও পরিকল্পনা ছিল স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালি, জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা। তাঁদের আলবদর বাহিনী দুষ্কৃতকারী বলত। এই আলবদর বাহিনী ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর 'ডেথ স্কোয়াড'। তাদের কাজ ছিল সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা।
রায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয় যেখানে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ বদর বাহিনীকে আজরাইলের সঙ্গে তুলনা করেন। ২০০৫ সালে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত হোসাইন হাক্কানীর 'পাকিস্তান বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি' বইয়ের ৭৯ পৃষ্ঠা থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আলবদর বাহিনী পাকিস্তান আর্মির ডেথ স্কোয়াড হিসেবে কাজ করত। তারা বামপন্থী অধ্যাপক, সাহিত্যিক এমনকি সাংবাদিকদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ডেথ স্কোয়াড হিসেবে কাজ করার নীতি ও পরিকল্পনা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে, আলবদর বাহিনী ছিল একটি প্যারা মিলিশিয়া বাহিনী; যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পাকিস্তানি আর্মির সহায়ক হিসেবে কাজ করতে।
গতকাল ঘোষিত রায়ে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের 'বাংলাদেশ : দ্য আনফিনিশড রেভ্যুলেশন' বইয়ের উদ্ধৃতিও তুলে ধরা হয়। ওই বইয়ে আলবদরকে বলা হয়েছে একটি ধর্মীয় গোঁড়া সংগঠন, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করত। এরা বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী।
এই দুই বই থেকে উদ্ধৃতির পর রায়ে উল্লেখ করা হয়, এটা বলতে হয় যে আলবদর পাকিস্তানিদের প্যারা মিলিটারি বাহিনী ছিল। তাদের নীতি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বাংলার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ মানুষ, জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী, হিন্দুদের ধ্বংস করে দিত। আবার তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারি বলতো।
রায়ে বলা হয়, ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীর এক সভায় আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, 'আলবদর একটি নাম, একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই থাকবে আলবদর। মুক্তিবাহিনী তথা ভারতীয় চরদের কাছে আলবদর হবে সাক্ষাৎ আজরাইল।' এ ছাড়া চকবজারসহ বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য-বিবৃতিতে মুজাহিদ বুদ্ধিজীবীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। সুতরাং আলবদর বাহিনীর অপকর্মের দায় অবশ্যই মুজাহিদের।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, এ বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি ফরিদপুরে। ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিক পাসের পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন তিনি। আর ওই সময়েই মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘে (জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন) যোগ দেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একপর্যায়ে তিনি ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় নেতায় পরিণত হন। আর এ সুযোগে আলবদর বাহিনীর নেতৃত্বেও চলে আসেন মুজাহিদ। ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর সুপিরিয়র নেতা হিসেবে আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন মুজাহিদ। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই মুজাহিদ ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী নিধন অভিযান পরিচালনা করেন।
রায়ের বিভিন্ন অংশে উল্লেখ রয়েছে, মুজাহিদের নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনী পাকিস্তানিদের পরাজয়ের আগ মুহূর্তে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে এ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের। আর সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকা এবং সুরকার আলতাফ মাহমুদকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মুজাহিদকে দায়ী করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে, এরপর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান (অবরুদ্ধ বাংলাদেশ) শাখার সেক্রেটারি হিসেবে এবং পরে অক্টোবর থেকে এই সংগঠনের প্রাদেশিক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুজাহিদ।
বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- সে জন্যই এ দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আলবদর বাহিনী। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায় ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের আলবদর হেডকোয়ার্টারে। সেখানে নিজামী-মুজাহিদসহ আলবদর হাইকমান্ডের অন্যদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সেখানে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিসহ অজ্ঞাত স্থানে। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে তারা এ কাজগুলো করত। ছাত্রসংগঠনের নেতা হিসেবে পাকিস্তানের সেনা ক্যাম্পগুলোতে মুজাহিদের অবাধ যাতায়াত ছিল। সেখানে বাঙালিদের নির্যাতন করা হতো। আলবদর বাহিনীর ওপর মূল নিয়ন্ত্রণ ছিল মুজাহিদের।
রায়ে বলা হয়, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীনকে অপহরণ করার পর হত্যা করা হয়, লাশ গুম করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে আলবদর বাহিনী তাঁকে বাসা থেকে অপহরণ করে। তাঁকে অপহরণ ও হত্যার পেছনে মুজাহিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত। সিরাজুদ্দীন হোসেন পাকিস্তানের বিরোধিতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে প্রবন্ধ লিখতেন। ওই লেখার পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন মুজাহিদ, যা একাত্তরের ২৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হয়। সেখানে সিরাজুদ্দীন হোসেনকে মুজাহিদ ভারতের দালাল হিসেবে উল্লেখ করেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা ও নকশার অংশ হিসেবে সিরাজুদ্দীনকে আলবদর বাহিনী অপহরণের পর গুম করে।
সুরকার আলতাফ মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদকে হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, তাঁদের হত্যাকাণ্ডে মুজাহিদ ও নিজামী সচেতনভাবেই জড়িত ছিলেন। তাঁদের নির্যাতনের সময় নাখালপাড়া আর্মি ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে মুজাহিদ বলেন, রাষ্ট্রপতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে পারেন। তার আগেই এদের খতম করতে হবে। এ কথা বলে আসার পর পাকিস্তানি সেনারা আলতাফ মাহমুদ, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে হত্যা করে। প্রাণে রক্ষা পান এ মামলার সাক্ষী জহিরউদ্দিন জালাল। এতেই প্রমাণিত হয় মুজাহিদের উপদেশ ও সম্মিলিত পরিকল্পনায় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যবহার করে মুজাহিদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অপরাধ সংগঠনে উসকানি দেন।
আলবদর হেডকোয়ার্টারে বুদ্ধিজীবীদের নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডে মুজাহিদের উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দানের অভিযোগও প্রমাণিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডকে ট্রাইব্যুনাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত নাৎসি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল টেনিং সেন্টার ছিল আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর কিলিং ক্যাম্প।
রায়ে বলা হয়, মুজাহিদ ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে সচেতনভাবে সব অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ জন্য আলবদর বাহিনীর সব অপরাধের দায় মুজাহিদের। ওই বাহিনীর অপরাধের জন্য তাঁর শাস্তি প্রাপ্য।
হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করা প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, মুজাহিদ ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সচেতনভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানোর নির্দেশ দেন। হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এ কাজ করা হয়। বদর বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর এ হামলায় অনেকেই নিহত হন। হিন্দু নিশ্চিহ্ন করার এ দায়ও মুজাহিদ এড়াতে পারেন না।
জামায়াতের ভূমিকা স্পষ্ট : রায়ে বলা হয়, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়। এ ছাড়া জামায়াতের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী। এ আধাসামরিক দুটি বাহিনীর মধ্যে রাজাকাররা পাকিস্তান সরকারের বেতনভুক্ত ছিল। এসব বাহিনীর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, দেশান্তরের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে। ওইসব বাহিনী নিয়ন্ত্রিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী দিয়ে। এর প্রমাণ একাত্তরে দৈনিক সংগ্রামসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জামায়াত নেতাদের প্রকাশিত বক্তব্য-বিবৃতি। ইসলাম রক্ষার নামে জামায়াত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে দুষ্কৃতকারী ও ইসলামে শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেছে।
রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামে নিধনযজ্ঞ শুরু করে সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় নিরস্ত্র মানুষ, হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপকর্মের সঙ্গে সহযোগী বাহিনী হিসেবে জামায়াতের গড়া রাজাকার, আলবদর ও আল শামস মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বনাম চিফ প্রসিকিউটর মামলার রায়ে সবিস্তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, আলবদর বাহিনী ছিল একটি সশস্ত্র প্যারা মিলিটারি ফোর্স। পাকিস্তান সরকারের ব্যবস্থাপনায় আলবদর ও রাজাকার বাহিনীকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর 'ডেথ স্কোয়াড' ছিল আলবদর। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এবং স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যার জন্য পাকিস্তান বাহিনীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করত এই আলবদর বাহিনী। রায়ে বলা হয়, আলবদর বাহিনী একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। আলবদররা ছিল জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র রাজনৈতিক ক্যাডার।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গতকাল বুধবার মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে বলা হয়, একাত্তরে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, ড. ফজলে রাব্বী, সেলিনা পারভীন, মুনীর চৌধুরী প্রমুখ বুদ্ধিজীবী অপহৃত হন এবং তাঁদেরসহ আরো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে ফেলে দেওয়া হয়। অনেকের লাশ চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ কয়েকজনের লাশ চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। আর তাঁদের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে আলবদর বাহিনী জড়িত ছিল বলে সাক্ষ্য-প্রমাণে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার মূল্যবান দলিলপত্রেও এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার রায়ে আবারও একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা উঠে এসেছে। রায়ে বলা হয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা দিতে এবং পাকিস্তান রক্ষা করতে আলবদর, আল শামস, রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। আলবদর ও আলশামস বাহিনী ছিল রাজাকার বাহিনীর দুটি শাখা। এ বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে। বিশেষ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের শেষ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী দেশের শত শত বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় : রায়ে বলা হয়েছে, আলবদর বাহিনীর নীতি ও পরিকল্পনা ছিল স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালি, জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা। তাঁদের আলবদর বাহিনী দুষ্কৃতকারী বলত। এই আলবদর বাহিনী ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর 'ডেথ স্কোয়াড'। তাদের কাজ ছিল সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা।
রায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয় যেখানে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ বদর বাহিনীকে আজরাইলের সঙ্গে তুলনা করেন। ২০০৫ সালে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত হোসাইন হাক্কানীর 'পাকিস্তান বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি' বইয়ের ৭৯ পৃষ্ঠা থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আলবদর বাহিনী পাকিস্তান আর্মির ডেথ স্কোয়াড হিসেবে কাজ করত। তারা বামপন্থী অধ্যাপক, সাহিত্যিক এমনকি সাংবাদিকদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ডেথ স্কোয়াড হিসেবে কাজ করার নীতি ও পরিকল্পনা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে, আলবদর বাহিনী ছিল একটি প্যারা মিলিশিয়া বাহিনী; যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পাকিস্তানি আর্মির সহায়ক হিসেবে কাজ করতে।
গতকাল ঘোষিত রায়ে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের 'বাংলাদেশ : দ্য আনফিনিশড রেভ্যুলেশন' বইয়ের উদ্ধৃতিও তুলে ধরা হয়। ওই বইয়ে আলবদরকে বলা হয়েছে একটি ধর্মীয় গোঁড়া সংগঠন, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করত। এরা বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী।
এই দুই বই থেকে উদ্ধৃতির পর রায়ে উল্লেখ করা হয়, এটা বলতে হয় যে আলবদর পাকিস্তানিদের প্যারা মিলিটারি বাহিনী ছিল। তাদের নীতি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বাংলার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ মানুষ, জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী, হিন্দুদের ধ্বংস করে দিত। আবার তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারি বলতো।
রায়ে বলা হয়, ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীর এক সভায় আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, 'আলবদর একটি নাম, একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই থাকবে আলবদর। মুক্তিবাহিনী তথা ভারতীয় চরদের কাছে আলবদর হবে সাক্ষাৎ আজরাইল।' এ ছাড়া চকবজারসহ বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য-বিবৃতিতে মুজাহিদ বুদ্ধিজীবীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। সুতরাং আলবদর বাহিনীর অপকর্মের দায় অবশ্যই মুজাহিদের।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, এ বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি ফরিদপুরে। ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিক পাসের পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন তিনি। আর ওই সময়েই মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘে (জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন) যোগ দেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একপর্যায়ে তিনি ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় নেতায় পরিণত হন। আর এ সুযোগে আলবদর বাহিনীর নেতৃত্বেও চলে আসেন মুজাহিদ। ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর সুপিরিয়র নেতা হিসেবে আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন মুজাহিদ। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই মুজাহিদ ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী নিধন অভিযান পরিচালনা করেন।
রায়ের বিভিন্ন অংশে উল্লেখ রয়েছে, মুজাহিদের নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনী পাকিস্তানিদের পরাজয়ের আগ মুহূর্তে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে এ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের। আর সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকা এবং সুরকার আলতাফ মাহমুদকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মুজাহিদকে দায়ী করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে, এরপর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান (অবরুদ্ধ বাংলাদেশ) শাখার সেক্রেটারি হিসেবে এবং পরে অক্টোবর থেকে এই সংগঠনের প্রাদেশিক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুজাহিদ।
বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- সে জন্যই এ দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আলবদর বাহিনী। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায় ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের আলবদর হেডকোয়ার্টারে। সেখানে নিজামী-মুজাহিদসহ আলবদর হাইকমান্ডের অন্যদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সেখানে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিসহ অজ্ঞাত স্থানে। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে তারা এ কাজগুলো করত। ছাত্রসংগঠনের নেতা হিসেবে পাকিস্তানের সেনা ক্যাম্পগুলোতে মুজাহিদের অবাধ যাতায়াত ছিল। সেখানে বাঙালিদের নির্যাতন করা হতো। আলবদর বাহিনীর ওপর মূল নিয়ন্ত্রণ ছিল মুজাহিদের।
রায়ে বলা হয়, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীনকে অপহরণ করার পর হত্যা করা হয়, লাশ গুম করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে আলবদর বাহিনী তাঁকে বাসা থেকে অপহরণ করে। তাঁকে অপহরণ ও হত্যার পেছনে মুজাহিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত। সিরাজুদ্দীন হোসেন পাকিস্তানের বিরোধিতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে প্রবন্ধ লিখতেন। ওই লেখার পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন মুজাহিদ, যা একাত্তরের ২৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হয়। সেখানে সিরাজুদ্দীন হোসেনকে মুজাহিদ ভারতের দালাল হিসেবে উল্লেখ করেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা ও নকশার অংশ হিসেবে সিরাজুদ্দীনকে আলবদর বাহিনী অপহরণের পর গুম করে।
সুরকার আলতাফ মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদকে হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, তাঁদের হত্যাকাণ্ডে মুজাহিদ ও নিজামী সচেতনভাবেই জড়িত ছিলেন। তাঁদের নির্যাতনের সময় নাখালপাড়া আর্মি ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে মুজাহিদ বলেন, রাষ্ট্রপতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে পারেন। তার আগেই এদের খতম করতে হবে। এ কথা বলে আসার পর পাকিস্তানি সেনারা আলতাফ মাহমুদ, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে হত্যা করে। প্রাণে রক্ষা পান এ মামলার সাক্ষী জহিরউদ্দিন জালাল। এতেই প্রমাণিত হয় মুজাহিদের উপদেশ ও সম্মিলিত পরিকল্পনায় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যবহার করে মুজাহিদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অপরাধ সংগঠনে উসকানি দেন।
আলবদর হেডকোয়ার্টারে বুদ্ধিজীবীদের নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডে মুজাহিদের উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দানের অভিযোগও প্রমাণিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডকে ট্রাইব্যুনাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত নাৎসি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল টেনিং সেন্টার ছিল আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর কিলিং ক্যাম্প।
রায়ে বলা হয়, মুজাহিদ ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে সচেতনভাবে সব অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ জন্য আলবদর বাহিনীর সব অপরাধের দায় মুজাহিদের। ওই বাহিনীর অপরাধের জন্য তাঁর শাস্তি প্রাপ্য।
হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করা প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, মুজাহিদ ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সচেতনভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানোর নির্দেশ দেন। হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এ কাজ করা হয়। বদর বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর এ হামলায় অনেকেই নিহত হন। হিন্দু নিশ্চিহ্ন করার এ দায়ও মুজাহিদ এড়াতে পারেন না।
জামায়াতের ভূমিকা স্পষ্ট : রায়ে বলা হয়, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়। এ ছাড়া জামায়াতের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী। এ আধাসামরিক দুটি বাহিনীর মধ্যে রাজাকাররা পাকিস্তান সরকারের বেতনভুক্ত ছিল। এসব বাহিনীর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, দেশান্তরের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে। ওইসব বাহিনী নিয়ন্ত্রিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী দিয়ে। এর প্রমাণ একাত্তরে দৈনিক সংগ্রামসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জামায়াত নেতাদের প্রকাশিত বক্তব্য-বিবৃতি। ইসলাম রক্ষার নামে জামায়াত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে দুষ্কৃতকারী ও ইসলামে শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেছে।
রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামে নিধনযজ্ঞ শুরু করে সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় নিরস্ত্র মানুষ, হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপকর্মের সঙ্গে সহযোগী বাহিনী হিসেবে জামায়াতের গড়া রাজাকার, আলবদর ও আল শামস মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বনাম চিফ প্রসিকিউটর মামলার রায়ে সবিস্তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, আলবদর বাহিনী ছিল একটি সশস্ত্র প্যারা মিলিটারি ফোর্স। পাকিস্তান সরকারের ব্যবস্থাপনায় আলবদর ও রাজাকার বাহিনীকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর 'ডেথ স্কোয়াড' ছিল আলবদর। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এবং স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যার জন্য পাকিস্তান বাহিনীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করত এই আলবদর বাহিনী। রায়ে বলা হয়, আলবদর বাহিনী একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। আলবদররা ছিল জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র রাজনৈতিক ক্যাডার।
No comments