‘ইফতারের সময় আম্মার জন্য মন কেমন করে’ by আহমেদ মুনির
পরনে মেরুন রঙের পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি।
পাক্কা রোজাদার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মোহাম্মদ জাহেদ প্লেট-ভর্তি ইফতারি
সামনে নিয়ে সাইরেন পড়ার অপেক্ষায় বসে আছে। সারা দিনের উপবাসে ছোট্ট মুখটা
শুকিয়ে গেলেও হাসিটুকু এখনো তরতাজা।
রোজা রাখতে কেমন
লাগে, প্রশ্ন করতেই মিষ্টি হাসিটুকু আরও খানিকটা চওড়া হলো। বলল, ‘খুব ভালো
লাগে, বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করি। তবে মায়ের জন্য খারাপ লাগে। ইফতারের সময়
মনে হয় আম্মা আমার কথা ভাবতেছে, ঠিকমতো খাইতেছে না।’
চার বছর ধরে কদমমোবারক এতিমখানায় থেকে লেখাপড়া করছে জাহেদ। কেবল জাহেদ নয়, এতিমখানার শ পাঁচেক শিশুর কাছে রমজান মাসটা বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে আলাদা। ভোররাতে উঠে সেহরি খাওয়া, তারপর সারা দিন রোজা রেখে দলবেঁধে ইফতার করার আনন্দই অন্য রকম।
গত সোমবারের কথা। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নগরের আন্দরকিল্লায় অবস্থিত কদমমোবারক এতিমখানায় ঢুকতেই দেখা গেল মসজিদের সামনের খোলা আঙিনায় শামিয়ানা টানিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইন ধরে দাঁড়ানো শিশুদের প্লেটে বড় বড় পাতিল থেকে ইফতারি তুলে দিচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। টেবিল ও বেঞ্চ বসানো হয়েছে চার সারিতে। প্লেটে ইফতারি নিয়ে সেখানেই একে একে বসছিল শিশুরা।
মোগল আমলে নির্মিত কারুকার্য খচিত কদম মোবারক মসজিদের প্রধান ফটকে তখন অস্তগামী সূর্যের লাল আভা এসে পড়েছে। তার সামনে প্রশস্ত আঙিনার পাশেই এতিম ছাত্রদের সারি সারি ছাত্রাবাস। পাঁচটি ছাত্রাবাসের প্রায় সবাই তখন হাজির আঙিনায়। কেউ ইফতারি নিচ্ছে, কেউ তদারক করছে। ১৯৩০ সালে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর গড়ে তোলা এতিমখানায় শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এতিমদের বেশির ভাগই হেফজখানার শিক্ষা শেষ করে কদমমোবারক মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়ছে।
দশম শ্রেণীর ছাত্র নুরুল আলম ছোটদের তদারকিতে ব্যস্ত। বলল, এখানে রোজার সময় অনেকে এতিমদের জন্য ইফতারি নিয়ে আসেন। এ ছাড়া এতিমখানায়ও ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, সেমাই রান্না হয়।
সারি সারি সাজানো পাতিলগুলোর কোনোটিতে দেখা গেল ছোলা, পেঁয়াজু বেগুনি, কোনোটিতে জিলাপি, কোনোটিতে সেমাই। এসবের মধ্যে একটি বড় পাতিলে আখনি বিরিয়ানি আর ডিমও দেখা গেল। স্বেচ্ছাসেবকেরা জানাল, একজন দানশীল ব্যক্তি আজ এতিমদের জন্য এই ‘স্পেশাল’ ইফতারি পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনই এমন কিছু না কিছু থাকে।
হল সুপার মোহাম্মদ ফরহাদ জানালেন, এতিমখানার ৫০০ শিশুর মধ্যে ১১৫ জনের খাওয়ার খরচ আসে সরকারি বরাদ্দ থেকে। দানের টাকা থেকে উঠে আসে বাকিদের খরচ। এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবুল কাশেম নিজেই সব কিছুর তদারকি করছিলেন। বললেন, এই শিশুদের জন্য অনেকেই প্রতিদিন কিছু না কিছু পাঠায়। সবার সাহায্যেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। চট করে প্রসঙ্গ পালটে যোগ করেন তিনি, ‘কেবল ইফতার নিয়ে লিখবেন? এ বছর আমাদের এতিম ছেলেদের একজন মেডিকেল ও তিনজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পেয়েছে। সে কথাগুলো লিখলে সবাই জানবে এখানে থেকেও ছেলেরা উঠে আসছে।’ কথাগুলো বলে ব্যস্ত তত্ত্বাবধায়ক আবারও কাজে মগ্ন হয়ে যান।
সারি সারি টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়া মুখগুলোর শেষ বিকেলের আলোয় উদ্ভাসিত দেখাচ্ছিল। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিদোয়ান হোসেন, চতুর্থ শ্রেণীর রিজানুল হাসান, সাইফুল ইসলাম বসেছিল পাশাপাশি। তাদের কেউ এসেছে সাতকানিয়া, কেউ রাঙ্গুনিয়া আর কেউ বা রাউজান থেকে। বাড়ির জন্য মন কেমন করে না? এমন প্রশ্ন করতেই সবাই একযোগে হেসে ওঠে। হাসি চলছেই, এর মধ্যে একজন গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে, করবেই তো। প্রথম প্রথম খারাপ লাগে। তারপর ঠিক হয়ে যায় সবকিছু।
চার বছর ধরে কদমমোবারক এতিমখানায় থেকে লেখাপড়া করছে জাহেদ। কেবল জাহেদ নয়, এতিমখানার শ পাঁচেক শিশুর কাছে রমজান মাসটা বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে আলাদা। ভোররাতে উঠে সেহরি খাওয়া, তারপর সারা দিন রোজা রেখে দলবেঁধে ইফতার করার আনন্দই অন্য রকম।
গত সোমবারের কথা। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নগরের আন্দরকিল্লায় অবস্থিত কদমমোবারক এতিমখানায় ঢুকতেই দেখা গেল মসজিদের সামনের খোলা আঙিনায় শামিয়ানা টানিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইন ধরে দাঁড়ানো শিশুদের প্লেটে বড় বড় পাতিল থেকে ইফতারি তুলে দিচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। টেবিল ও বেঞ্চ বসানো হয়েছে চার সারিতে। প্লেটে ইফতারি নিয়ে সেখানেই একে একে বসছিল শিশুরা।
মোগল আমলে নির্মিত কারুকার্য খচিত কদম মোবারক মসজিদের প্রধান ফটকে তখন অস্তগামী সূর্যের লাল আভা এসে পড়েছে। তার সামনে প্রশস্ত আঙিনার পাশেই এতিম ছাত্রদের সারি সারি ছাত্রাবাস। পাঁচটি ছাত্রাবাসের প্রায় সবাই তখন হাজির আঙিনায়। কেউ ইফতারি নিচ্ছে, কেউ তদারক করছে। ১৯৩০ সালে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর গড়ে তোলা এতিমখানায় শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এতিমদের বেশির ভাগই হেফজখানার শিক্ষা শেষ করে কদমমোবারক মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়ছে।
দশম শ্রেণীর ছাত্র নুরুল আলম ছোটদের তদারকিতে ব্যস্ত। বলল, এখানে রোজার সময় অনেকে এতিমদের জন্য ইফতারি নিয়ে আসেন। এ ছাড়া এতিমখানায়ও ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, সেমাই রান্না হয়।
সারি সারি সাজানো পাতিলগুলোর কোনোটিতে দেখা গেল ছোলা, পেঁয়াজু বেগুনি, কোনোটিতে জিলাপি, কোনোটিতে সেমাই। এসবের মধ্যে একটি বড় পাতিলে আখনি বিরিয়ানি আর ডিমও দেখা গেল। স্বেচ্ছাসেবকেরা জানাল, একজন দানশীল ব্যক্তি আজ এতিমদের জন্য এই ‘স্পেশাল’ ইফতারি পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনই এমন কিছু না কিছু থাকে।
হল সুপার মোহাম্মদ ফরহাদ জানালেন, এতিমখানার ৫০০ শিশুর মধ্যে ১১৫ জনের খাওয়ার খরচ আসে সরকারি বরাদ্দ থেকে। দানের টাকা থেকে উঠে আসে বাকিদের খরচ। এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবুল কাশেম নিজেই সব কিছুর তদারকি করছিলেন। বললেন, এই শিশুদের জন্য অনেকেই প্রতিদিন কিছু না কিছু পাঠায়। সবার সাহায্যেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। চট করে প্রসঙ্গ পালটে যোগ করেন তিনি, ‘কেবল ইফতার নিয়ে লিখবেন? এ বছর আমাদের এতিম ছেলেদের একজন মেডিকেল ও তিনজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পেয়েছে। সে কথাগুলো লিখলে সবাই জানবে এখানে থেকেও ছেলেরা উঠে আসছে।’ কথাগুলো বলে ব্যস্ত তত্ত্বাবধায়ক আবারও কাজে মগ্ন হয়ে যান।
সারি সারি টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়া মুখগুলোর শেষ বিকেলের আলোয় উদ্ভাসিত দেখাচ্ছিল। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিদোয়ান হোসেন, চতুর্থ শ্রেণীর রিজানুল হাসান, সাইফুল ইসলাম বসেছিল পাশাপাশি। তাদের কেউ এসেছে সাতকানিয়া, কেউ রাঙ্গুনিয়া আর কেউ বা রাউজান থেকে। বাড়ির জন্য মন কেমন করে না? এমন প্রশ্ন করতেই সবাই একযোগে হেসে ওঠে। হাসি চলছেই, এর মধ্যে একজন গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে, করবেই তো। প্রথম প্রথম খারাপ লাগে। তারপর ঠিক হয়ে যায় সবকিছু।
No comments