চালের মূল্য বৃদ্ধির রাস টানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি by মিজান চৌধুরী
চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির রাস টানতে বাজারে নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ওই নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়।
ওই চিঠিতে জেলা প্রশাসকদের বাজারে নজরদারি বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারদের চিঠি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সংশিস্নষ্ট সূত্র মতে, সপ্তাহের শুরম্নতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের ওই নির্দেশ পেঁৗছে দেয়া হবে। চালের বাজার তারা নজরদারি করবে এবং মূল্য রম্নখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা চালের মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্য মিল মালিকদের প্রতিযোগিতামূলক চাল ক্রয়, পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ সুবিধা, শৈত্যপ্রবাহ, ভারতে চাল উৎপাদন কম, মূল্য বৃদ্ধির আশায় ধান-চাল হাতে ধরে রাখা, মিল মালিকদের ধান মজুদ ও ইচ্ছামতো মূল্য বৃদ্ধি, আগামীতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় অসাধু ব্যবসায়ীদের চাল মজুদকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ চিঠির সঙ্গে গোয়েন্দা প্রতিবেদনও পাঠানো হয়।সূত্র মতে, মৌসুমেও চালের মূল্য কমছে না। খোলা বাজারে ওএমএস শুরম্নর পর মোটা চালের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ টাকায়। কিন্তু মাঝারি ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইজাম চাল ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩ টাকায় উঠেছে। উন্নতমানে পাইজাম ৩৩ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ টাকায় উঠে। ৩৬ টাকা মূল্যের নাজির শাইল এক টাকা বেড়ে ৩৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ডালের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের টনক নড়েছে। ডালের মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর পর থেকে বাজারে ডালের মূল্যের উর্ধগতি থমকে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে প্রতি সপ্তাহে ডালের মূল্য কমছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেয়ার পর তুরস্কের ডালের কেজিতে ১০ টাকা কমে এক শ' টাকা কেজি থেকে নেমে ৯০ টাকায় এসেছে। নেপালী ডাল ১৩৫ টাকা থেকে হ্রাস পেয়ে ১২৪ টাকায় এসেছে। প্রতিকেজিতে কমেছে ১১ টাকা ও দেশীয় ডাল ১২২ টাকা থেকে কমে ১১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় ডালে কমেছে ৮ টাকা। গোয়েন্দা সংস্থা ডালের বাজারে কারসাজির সন্ধান পায়। ওই কারসাজিতে আটকে যাওয়ার ভয় থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন প্রতিদিন ডালের দাম হ্রাস করছে। অথচ গোয়েন্দা সংস্থা বাজারে নামার আগে ডালের মূল্য বেড়ে ১শ' টাকা থেকে ১৩৫ টাকা পর্যনত্ম ওঠে। ফলে গরিব মানুষের প েডাল খাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
এদিকে ফের বাড়ছে চিনির মূল্য। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে বেড়েই চলছে দাম। এক সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতিকেজি চিনিতে ২ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার এককেজি চিনি সর্বোচ্চ ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৫৬ টাকা। এর আগের মূল্য ছিল ৫৪ টাকা। চিনির বাজারের ব্যাপারে সরকার নজরদারি কমানোর পর ফের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘূরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এককেজি পেঁয়াজের মূল্য নিচে ২৮ টাকা থেকে সবের্াচ্চ ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম কমেছে আটা, আলু ও সয়াবিন তেলের।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কতিপয় বড় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীর আনত্মরিকতার অভাব ও অতি মুনাফা প্রবণতার কারণে সরকারের চেষ্টা অনেক েেত্র সফল হচ্ছে না। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারও উদ্বেগে আছে। সরকার স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে, খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা গত এক বছরে বাজারে জিনিসপত্রের দাম সহনশীল রাখতে কোন ভূমিকা পালন করেনি। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি ও সরকারীভাবে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি, ইপিজেডের বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় নিত্যপণ্য কেনার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে।
No comments