রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা- ছাত্রদলের সন্ত্রাসী, মুক্তি পেলেন আ.লীগ পরিচয়ে by রোজিনা ইসলাম
অর্থের বিনিময়ে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের নামে সন্ত্রাসীদের ছাড় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদলের থানা পর্যায়ের একজন নেতাকে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আর এখন দলের ভেতর থেকেই লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে যে টাকার বিনিময়ে এই সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের মামলা রাজনৈতিক বলে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মীর সনদ নিয়ে অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিটি হচ্ছেন আতিকুর রহমান ওরফে অলক। ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির ১৩তম সভায় রাজনৈতিক বিবেচনায় এ মামলা প্রত্যাহার করা হয়। আতিকুর রহমানের মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত আবেদনে সুপারিশ করেন ক্যান্টনমেন্ট থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই সভাপতি। আতিকুর রহমান এখন বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
জানতে চাইলে আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এসব ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি সম্ভবত বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ বিষয় নিয়ে অভিনব সব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ২০০৩ সালেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সে সময় আতিকুর রহমান মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে লিখেছিলেন, তিনি ছাত্রদলের ক্যান্টনমেন্ট থানার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন, বর্তমানে যুবদলের সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানি এবং ওই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবেদনে সুপারিশ করেছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার কাইয়ুম খান এবং কাফরুল থানা বিএনপির সভাপতি আলী আজগর।
আবেদন পাওয়ার পর ২০০৩ সালের ৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার তৎকালীন উপসচিব শফিক উদ দৌলা মামলা থেকে এ আসামির নাম প্রত্যাহারের চিঠি সরকারি কৌঁসুলির কাছে পাঠান। কিন্তু আতিকুর রহমান পলাতক থাকায় তাঁর মামলাটি সে সময় প্রত্যাহার করেননি আদালত।
এরপর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০৯ সালেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন আতিকুর রহমান। তবে তিনি আবেদনে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় দেননি।
তবে, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। মামলা প্রত্যাহারের প্রায় দুই বছর পর ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আদেশ বাতিল করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার-সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করে পুনরায় মামলাটি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে জেলার বিজ্ঞ সরকারি কৌঁসুলিকে (পিপি) প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হাজার হাজার মামলার সুপারিশ করি, আমার স্মরণে নাই। কখন, কার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করি, মনে থাকে নাকি? বাংলাদেশে মামলা অনেক হয়, সব স্মরণে থাকার কথা নয়, আর স্মরণশক্তির ওপরে তো কারও হাত নেই।’
এদিকে, নতুন করা আবেদনে বলা হয়, আতিকুর রহমান একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তৎকালীন থানা ছাত্রদলের এই যুগ্ম সম্পাদক আওয়ামী লীগবিরোধী অপপ্রচার ও দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে থানা থেকে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া আবেদনপত্রে আরও অভিযোগ করা হয়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নামধারী একটি সংঘবদ্ধ চক্র টাকার বিনিময়ে এই সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের মামলা রাজনৈতিক বলে প্রত্যাহার করেছে।
জানা গেছে, অস্ত্র আইনের ১৯(এ) এবং (এফ) ধারা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা হিসেবে আদালতে এ মামলা বিচারাধীন ছিল। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকেন এই সন্ত্রাসী।
মামলার এজাহারে তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক সুরু ব্যানার্জি জানান, ১৯৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুরে কচুক্ষেতে তামান্না কমপ্লেক্সের সামনে বিএনপির সমাবেশের আশপাশে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে গোপন সংবাদ আসে যে কমপ্লেক্সের পাশে কয়েকজন সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ ঘোরাফেরা করছে। এ সময় তিনি থানা থেকে পুলিশ ফোর্স এনে সন্ত্রাসীদের ঘেরাও করলে আতিকুর রহমান তাঁর কোমর থেকে পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করেন। পরে অনেক ধস্তাধস্তির পর আতিকুর রহমানকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী উল্লেখ করে ‘ক্যান্টনমেন্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ’-এর প্যাডে প্রত্যয়ন করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, ‘আবেদনকারী আওয়ামী পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি দলের কাজে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন। এলাকার প্রতিপক্ষ কথিত বিএনপির নেতাদের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার। আমি তাহার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কামনা করছি।’ প্রত্যয়নপত্রে সই করেন ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউদ্দিন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহসিনুল ইসলাম।
জানতে চাইলে সফিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁদের মনে নেই, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বিষয়টি বলতে পারবেন।
আর সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে এসব করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, আতিকুল একজন নামকরা সন্ত্রাসী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সাজিয়ে তাঁর মামলা প্রত্যাহারের পরপরই তিনি বিদেশে চলে গেছেন। তবে কীভাবে, কারা এ ধরনের সুপারিশ করলেন, তা তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এভাবে টাকা দিয়ে অনেক অপরাধীর মামলাই প্রত্যাহার হয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বিএনপি, আওয়ামী লীগের নেতা সাজিয়ে এসব মামলা সুকৌশলে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হচ্ছে। এমনকি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মামলাও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সুপারিশ করার অনেক অভিযোগ রয়েছে। মামলা প্রত্যাহার নিয়ে বাণিজ্য চলেছে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত দুই মাসে কয়েকটি মামলা প্রত্যাহারের আদেশ বাতিলও হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের আমলে মোট সাত হাজার ১০১টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছে জাতীয় কমিটি। ফলে খুনি, সন্ত্রাসী, ধর্ষণকারীসহ প্রায় এক লাখ অভিযুক্ত অব্যাহতি পেয়েছেন বা পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।
মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। তবে এ কমিটি শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ খুন বা ডাকাতির মতো ফৌজদারি মামলার আসামিদের মামলাও প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী, সরকারের সুপারিশ করা যেকোনো মামলা রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। তবে সিআর বা ব্যক্তির করা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার এখতিয়ার সরকারের নেই।
আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মীর সনদ নিয়ে অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিটি হচ্ছেন আতিকুর রহমান ওরফে অলক। ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির ১৩তম সভায় রাজনৈতিক বিবেচনায় এ মামলা প্রত্যাহার করা হয়। আতিকুর রহমানের মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত আবেদনে সুপারিশ করেন ক্যান্টনমেন্ট থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই সভাপতি। আতিকুর রহমান এখন বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
জানতে চাইলে আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এসব ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি সম্ভবত বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ বিষয় নিয়ে অভিনব সব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ২০০৩ সালেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সে সময় আতিকুর রহমান মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে লিখেছিলেন, তিনি ছাত্রদলের ক্যান্টনমেন্ট থানার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন, বর্তমানে যুবদলের সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানি এবং ওই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবেদনে সুপারিশ করেছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার কাইয়ুম খান এবং কাফরুল থানা বিএনপির সভাপতি আলী আজগর।
আবেদন পাওয়ার পর ২০০৩ সালের ৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার তৎকালীন উপসচিব শফিক উদ দৌলা মামলা থেকে এ আসামির নাম প্রত্যাহারের চিঠি সরকারি কৌঁসুলির কাছে পাঠান। কিন্তু আতিকুর রহমান পলাতক থাকায় তাঁর মামলাটি সে সময় প্রত্যাহার করেননি আদালত।
এরপর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০৯ সালেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন আতিকুর রহমান। তবে তিনি আবেদনে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় দেননি।
তবে, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। মামলা প্রত্যাহারের প্রায় দুই বছর পর ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আদেশ বাতিল করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার-সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করে পুনরায় মামলাটি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে জেলার বিজ্ঞ সরকারি কৌঁসুলিকে (পিপি) প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হাজার হাজার মামলার সুপারিশ করি, আমার স্মরণে নাই। কখন, কার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করি, মনে থাকে নাকি? বাংলাদেশে মামলা অনেক হয়, সব স্মরণে থাকার কথা নয়, আর স্মরণশক্তির ওপরে তো কারও হাত নেই।’
এদিকে, নতুন করা আবেদনে বলা হয়, আতিকুর রহমান একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তৎকালীন থানা ছাত্রদলের এই যুগ্ম সম্পাদক আওয়ামী লীগবিরোধী অপপ্রচার ও দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে থানা থেকে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া আবেদনপত্রে আরও অভিযোগ করা হয়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নামধারী একটি সংঘবদ্ধ চক্র টাকার বিনিময়ে এই সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের মামলা রাজনৈতিক বলে প্রত্যাহার করেছে।
জানা গেছে, অস্ত্র আইনের ১৯(এ) এবং (এফ) ধারা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা হিসেবে আদালতে এ মামলা বিচারাধীন ছিল। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকেন এই সন্ত্রাসী।
মামলার এজাহারে তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক সুরু ব্যানার্জি জানান, ১৯৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুরে কচুক্ষেতে তামান্না কমপ্লেক্সের সামনে বিএনপির সমাবেশের আশপাশে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে গোপন সংবাদ আসে যে কমপ্লেক্সের পাশে কয়েকজন সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ ঘোরাফেরা করছে। এ সময় তিনি থানা থেকে পুলিশ ফোর্স এনে সন্ত্রাসীদের ঘেরাও করলে আতিকুর রহমান তাঁর কোমর থেকে পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করেন। পরে অনেক ধস্তাধস্তির পর আতিকুর রহমানকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী উল্লেখ করে ‘ক্যান্টনমেন্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ’-এর প্যাডে প্রত্যয়ন করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, ‘আবেদনকারী আওয়ামী পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি দলের কাজে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন। এলাকার প্রতিপক্ষ কথিত বিএনপির নেতাদের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার। আমি তাহার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কামনা করছি।’ প্রত্যয়নপত্রে সই করেন ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউদ্দিন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহসিনুল ইসলাম।
জানতে চাইলে সফিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁদের মনে নেই, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বিষয়টি বলতে পারবেন।
আর সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে এসব করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, আতিকুল একজন নামকরা সন্ত্রাসী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সাজিয়ে তাঁর মামলা প্রত্যাহারের পরপরই তিনি বিদেশে চলে গেছেন। তবে কীভাবে, কারা এ ধরনের সুপারিশ করলেন, তা তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এভাবে টাকা দিয়ে অনেক অপরাধীর মামলাই প্রত্যাহার হয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বিএনপি, আওয়ামী লীগের নেতা সাজিয়ে এসব মামলা সুকৌশলে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হচ্ছে। এমনকি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মামলাও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সুপারিশ করার অনেক অভিযোগ রয়েছে। মামলা প্রত্যাহার নিয়ে বাণিজ্য চলেছে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত দুই মাসে কয়েকটি মামলা প্রত্যাহারের আদেশ বাতিলও হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের আমলে মোট সাত হাজার ১০১টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছে জাতীয় কমিটি। ফলে খুনি, সন্ত্রাসী, ধর্ষণকারীসহ প্রায় এক লাখ অভিযুক্ত অব্যাহতি পেয়েছেন বা পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।
মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। তবে এ কমিটি শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ খুন বা ডাকাতির মতো ফৌজদারি মামলার আসামিদের মামলাও প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী, সরকারের সুপারিশ করা যেকোনো মামলা রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। তবে সিআর বা ব্যক্তির করা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার এখতিয়ার সরকারের নেই।
No comments