যে কলঙ্ক মুক্ত হলো জাতি
মামুন-অর-রশিদ অতঃপর দীর্ঘ ৩৪ বছরের প্রতীৰার অবসান। শেষ পর্যনত্ম সকল অপকৌশলের দেয়াল ভেঙ্গে কার্যকর হতে যাচ্ছে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যাকারীদের ফাঁসির রায়। পৃথিবীর ইতিহাসকে হতভম্ব করে জাতি রাষ্ট্রের স্থপতি, গর্ভবতী নারী আর শিশু হত্যাকারীদের দীর্ঘ ৩৪ বছরের বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র-সরকার আর দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা আশ্রয়-প্রশ্রয় আর পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। খুনীদের দোসর আর বেনিফিসিয়ারী চক্র ইনডেমনিটি দিয়ে ন্যায় সত্য আর আইনের শাসনকে অবরম্নদ্ধ করে দিয়েছিল। বিচারের বাণী কেঁদেছে নীরবে-নিভৃতে। কিন্তু রাষ্ট্রৰমতার পালা বদলে ইনডেমনিটি প্রত্যাহার করে জাতির জনককে হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা। কিন্তু এরপরও বিচারকার্য নিয়ে অনেক টালবাহানা হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার খুনীদের রিভিউ আপীল আবেদন খারিজ হওয়ার পর জাতি জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে দেয়া অভিশাপ মুক্ত হলো।
শুধু আওয়ামী লীগই নয়, হাতেগোনা খুনীদের দোসর ও বেনিফিশিয়ারি ছাড়া গোটা দেশের মানুষই প্রত্যাশিত ফাঁসিতে নিঃশ্বাস ফেলেছে। ইতিহাসের দায়মুক্তিতে আজ সবাই উলস্নসিত, েআবেগতাড়িত। মৃতু্যঞ্জয়ী মুজিব আজ জীবনদর্শনে, বাঙালীর মুক্তির নিঃশ্বাসে, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে 'বাঙালীকে' যেন 'মানুষ' করে তুলেছে। সবুজ বাংলার সজীব ইতিহাসে চির অমরত্বের ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে ১৫ আগস্টের শোকাবহ মুজিব উপাখ্যানের নামই আজ 'বাংলাদেশ'। বীর বাঙালী আজ ন্যায়ের পতাকা উর্ধে তুলে ধরে বলতে পারবে 'জাতির জনককে হত্যার দায় চাপানো অভিশাপ থেকে আমরা মুক্ত।'
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কুঠারাঘাত ১৫ আগস্ট
রক্তৰরা ১৫ আগস্ট। বেদনাবিধুর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় ইতিহাসের সেই ভয়ঙ্কর দিনটির কথা স্মরণ করে এখনও শিহরিত হন দেশের মানুষ। বাংলাদেশ ও বাঙালীর গভীর মর্মস্পশর্ী শোকের এ দিনে কী ঘটেছিল? ৩৪ বছরেও বাঙালী জাতি তা একটি দিনের জন্যও ভোলেনি। একাত্তরের এ কৃষ্ণদিনে পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রানত্মে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার পরিজন। দেশীয় ও আনত্মর্জাতিক ষড়যন্ত্রে নিরপিশাচ ঘাতক দলের অদম্য রক্তপিপাসায় এদিন রক্তগঙ্গায় ভেসে গিয়েছিল বাঙালীর স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার বঙ্গবন্ধুর অসম্ভব প্রিয় ঐতিহাসিক ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িটি। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুরাও রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরম্নষ এ ঘাতকচক্রের হাত থেকে। বিদেশ থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা_ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এ দিনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পিছনে কাজ করেছিল একটি জঘন্য চক্রানত্ম। চক্রানত্মে শরিক ছিল বিশ্বাসঘাতক আর পাকিসত্মানপ্রেমী কিছু নিমকহারাম। বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনককে হত্যার পর পেরিয়ে গেছে ৩৪টি বছর। খুনী, খুনীদের দোসর এবং তাদের মদদদাতারা দীর্ঘ সময় ৰমতায় থাকায় বিচারের বাণী নীরবে কেঁদেছে। এ অপশক্তিরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তো করেইনি, উল্টো আত্মস্বীকৃত খুনীদের প্রতিষ্ঠিত, পুরস্কৃত এবং বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে খুনীদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রতার সুস্পষ্ট প্রমাণ রেখেছে। জাতি দীর্ঘ ৩৪ বছর পর পিতৃহত্যার বিচার পাচ্ছে।
কী ঘটেছিল সর্বনাশা সেই রাতে
'৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রত্যৰদশর্ীদের বরাতে বেরিয়ে আসে ওই ভয়াল রাতে বর্বরোচিত ঘটনার ভয়াবহ চিত্র। শিশুপুত্র রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ঘুমাচ্ছিলেন দোতলায় তাঁর বেডরম্নমে। তিনতলায় শেখ কামাল ও তাঁর স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, তাঁর স্ত্রী রোজী জামাল এবং বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের ঘুমিয়েছিলেন দোতলায়। বাড়ির নিচতলায় নিরাপত্তা রৰী, কাজের ছেলেসহ সবাই ডিউটিতে ছিলেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খুনীরা তিনটি গ্রম্নপে বিভক্ত হয়ে ভোর পাঁচটার মধ্যেই তিন টার্গেট ঘেরাও করে ফেলে। আত্মস্বীকৃত খুনী মেজর ফারম্নক যখন রৰীবাহিনীকে ঠেকাতে ব্যসত্ম, ততৰণে সব টার্গেটে বিভিন্ন গ্রম্নপের ঝটিকা অপারেশন শুরম্ন হয়ে যায়। ১২টি ট্রাক ও কয়েকটি জীপে করে আক্রমণকারী ল্যান্সার ও আর্টিলারির প্রায় ৫শ' রাইফেলস টু্রপস আশপাশে ছেয়ে যায়। খুনীদের প্রধান টার্গেটই ছিল ৩২ নম্বর রোডের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। খুনী মেজর মহিউদ্দিন, মেজর হুদা, মেজর পাশা, মেজর নূরের নেতৃত্বে আউটার ও ইনার দুটি বৃত্তে ঘেরাও করে ফেলে ওই বাড়িটি। আনুমানিক সাড়ে পাঁচটার দিকে ৩২ নম্বর ভবনে আক্রমণ শুরম্ন হয়ে যায়। প্রথমে গেটে ঢুকতে গিয়েই গোলাগুলির সূত্রপাত হয়। তারপর তা প্রবল আকার ধারণ করে। ৩২ নম্বর ভবন থেকে পুলিশ গার্ডরা অবিরাম গুলি চালিয়ে সেনাদের আক্রমণে বাধা দিতে থাকে। এ সময় বঙ্গবন্ধু নিচের বারান্দায় বেরিয়ে আসেন এবং পুলিশদের ফায়ার বন্ধ করতে বলেন। এতে আক্রমণকারী সৈন্যরা বিনা বাধায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রবেশের সহজ সুযোগ পেয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু যখন গোলাগুলির মধ্যে আক্রানত্ম ছিলেন, তখন তিনি বাসা থেকে বিভিন্ন দিকে ফোন করতে সৰম হয়েছিলেন। তিনি পুলিশ কন্ট্রোল রম্নমে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কেউ ফোন ধরছিল না। তিনি তাঁর মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিল উদ্দিনকে ফোনে পেয়েছিলেন। তাঁকে বলেন, 'জামিল তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোক আমার বাসায় আক্রমণ করেছে। শফিউলস্নাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।' জামিল ফোন পেয়ে তাৎৰণিক ঘটনাস্থলে তাঁর প্রাইভেট লাল কার করে ছুটে যান ৩২ নম্বরে, কিন্তু সৈন্যদের গুলিতে বাসার কাছেই নিহত হন তিনি।
অনেক চেষ্টার পর সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউলস্নাহকে পেয়ে যান বঙ্গবন্ধু। তাঁকে বলেন, 'শফিউলস্নাহ, আমার বাসা তোমার ফোর্স এ্যাটাক করেছে। কামালকে হয়ত মেরেই ফেলেছে। তুমি তাড়াতাড়ি ফোর্স পাঠাও।' জবাবে শফিউলস্নাহ বলেন, 'স্যার, ক্যান ইউ গেট আউট, আই এ্যাম ডুয়িং সামথিং।' এর পর ফোনে আর তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। শফিউলস্নাহ ফোনে গুলাগুলির শব্দ শুনতে পান। তখন ভোর আনুমানিক ৫টা ৫০ মিনিট। কিন্তু শফিউলস্নাহ রাষ্ট্রপতির সাহায্যার্থে একটি সৈন্যও মুভ করাতে পারলেন না। ইতিহাসের নির্মম হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ার পর রেডিওতে ভেসে এল খুনী মেজর ডালিমের পৈশাচিক ঘোষণা_ "শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।" এমন ঘোষণা শুনে হতভম্ব বাংলাদেশ, শোকে মুহ্যমান বাঙালী জাতি।
ওই ভয়াল মুহূর্তের যে ক'জন প্রত্যৰদশর্ী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাজের ছেলে আবদুর রহমান শেখ ওরফে রমা উলেস্নখযোগ্য। প্রত্যৰদশর্ী হিসেবে তিনি এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনাকারী আদালতে। তাঁর এ বর্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে পনেরো আগস্ট রাতের বর্বরোচিত ঘটনার ভয়াবহ চিত্র।
আবদুর রহমান রমার বর্ণনায়, '৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর ৫টায় যখন বঙ্গবন্ধু নিহত হন, তখন আমি সেখানেই ছিলাম। ঘটনার দিন রাতে আমি এবং অপর কাজের ছেলে সেলিম দোতলায় বঙ্গবন্ধুর বেডরম্নমের সামনে বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলাম। আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে হঠাৎ বেগম মুজিব দরজা খুলে বাইরে আসেন এবং বলেন যে, সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। তিনতলায় শেখ কামাল ও তাঁর স্ত্রী সুলতানা কামাল ঘুমিয়েছিলেন। শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রী রোজী এবং বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের ঘুমিয়েছিলেন দোতলায়। বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব এবং শেখ রাসেল দোতলায় একই রম্নমে ঘুমিয়েছিলেন। বাড়ির নিচতলায় পিএ মহিতুল ইসলামসহ অন্যরা ডিউটিতে ছিলেন।
বেগম মুজিবের কথা শুনে তাড়াতাড়ি লেকের পারে গিয়ে দেখি কিছু আর্মি গুলি করতে করতে আমাদের বাড়ির দিকে আসছে। আবার বাসায় ঢুকে দেখি রিসেপশন রম্নমে পিএ মহিতুলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কথা বলছেন। পিছনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় গিয়ে দেখি বেগম মুজিব ছোটাছুটি করছেন। তিনতলায় গিয়ে কামাল ভাইকে উঠাই। তাঁকে বলি_ আমাদের বাসায় আর্মিরা আক্রমণ করেছে। কামাল ভাই তাড়াতাড়ি শার্টপ্যান্ট পরে নিচে নেমে যান। সুলতানাকে নিয়ে আমি দোতলায় আসি। একইভাবে জামাল ভাইকে উঠাই। তিনিও তাড়াতাড়ি শার্টপ্যান্ট পরে তাঁর মার রম্নমে যান। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও যান। এ সময় বাইরে প্রচ- গোলাগুলির শব্দ হচ্ছিল।
এক পর্যায়ে কামাল ভাইয়ের আর্তচিৎকার শুনতে পাই। একই সময় বঙ্গবন্ধু দোতলায় এসে রম্নমে প্রবেশ করেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন। গোলাগুলি এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে আবার বাইরে এলে আর্মিরা তাঁর বেডরম্নমের সামনে তাঁকে ঘিরে ফেলে। আর্মিদের লৰ্য করে অমিত তেজী বঙ্গবন্ধু বলেন, "তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?" বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির দুই তিন ধাপ নামার পরে নিচের দিক থেকে ক'জন আর্মি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন। আমি তখন আর্মিদের পেছনে ছিলাম। খুনীরা আমাকে জিজ্ঞাস করে, তুমি কি কর? উত্তরে আমি বলি, বাসায় কাজ করি। তারা আমাকে ভিতরে যেতে বলে।
আমি বেগম মুজিবের রম্নমের বাথরম্নমে গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখানে বেগম মুজিবকে বলি, বঙ্গবন্ধুকে আর্মিরা গুলি করেছে। বাথরম্নমে শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রী রোজী, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব ও বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের এবং আমি আশ্রয় নিই। শেখ নাসের ওই বাথরম্নমে আসার আগে তাঁর হাতে গুলি লাগে। তাঁর হাত থেকে তখনও রক্ত ঝরছিল। বেগম মুজিব শাড়ির অাঁচল ছিঁড়ে তাঁর রক্ত মুছতে থাকেন। এর মধ্যে আর্মিরা দোতলায় আসে এবং দরজা পিটাতে থাকলে বেগম মুজিব দরজা খুলে দেন।
আর্মিরা রম্নমের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং শেখ নাসের, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব এবং আমাকে নিচের দিকে নিয়ে যায়। সিঁড়িতে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বলেন, আমি যাব না। আমাকে এখানেই মেরে ফেল। আর্মিরা তাঁকে দোতলায় তাঁর রম্নমের দিকে নিয়ে যায়। একটু পরেই ওই রম্নমে গুলির শব্দসহ মেয়েদের আর্তচিৎকার শুনতে পাই। আর্মিরা শেখ নাসের, রাসেল ও আমাকে নিচতলায় এনে লাইনে দাঁড় করায়। সেখানে সাদা পোশাকে এক পুলিশের লাশ দেখতে পাই। নিচে শেখ নাসেরকে লৰ্য করে আর্মিরা জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? পরিচয় দিয়ে তাঁকে নিচতলার বাথরম্নমে নিয়ে যায়। একটু পরে গুলির শব্দ ও 'মাগে' বলে চিৎকার শুনতে পাই।
বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেল মার কাছে যাবে বলে তখন কান্নাকাটি করছিল এবং পিএ মহিতুল ইসলামকে ধরে বলছিল, ভাই আমাকে মারবে না তো? এ সময় এক আর্মি শেখ রাসেলকে বলে, চল তোমার মার কাছে নিয়ে যাই। তাকেও দোতলায় নিয়ে যায়। একটু পরেই আর্তচিৎকার ও গুলির শব্দ শুনতে পাই। লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় সেলিমের হাত ও পেটে দুটি গুলির জখম দেখলাম। দেখলাম কালো পোশাক পরিহিত আর্মিরা আমাদের বাসার সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ডিএসপি নুরম্নল ইসলাম ও পিএ মহিতুল ইসলামকে আহত অবস্থায় দেখি। এর পর আমাদের বাসার সামনে একটি ট্যাঙ্ক আসে। ট্যাঙ্ক থেকে কয়েক আর্মি নেমে বাড়ির ভেতরের আর্মিদের লৰ্য করে জিজ্ঞাস করে, ভেতরে কে আছে? উত্তরে ভিতরের আর্মিরা বলে, 'অল আর ফিনিশড।'
পরে জানা গেছে, মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ঘৃণ্য খুনীরা শেখ রাসেলের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। শুধু বঙ্গবন্ধুর বাসভবনই নয়, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করার ঘৃণ্য পরিকল্পনায় একই সময় শেখ ফজলুল হক মণি এবং আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতেও আক্রমণ চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে সবাইকে হত্যা করে। এ তিনটি বাড়িতেই এ দিন বইয়ে যায় রক্তগঙ্গা।
কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রানত্ম, পরাজিত পাকিসত্মানী দোসরদের পরিকল্পনা এবং সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সদস্যরা পৈশাচিক কায়দায় গুলি করে সেদিন বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, একসঙ্গে তিন বাড়িতে হামলা করে মেতে উঠেছিল অদম্য রক্তপিপাসায়। নিষ্ঠুর কায়দায় একে একে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর অনুজ পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ নাসের, ভগি্নপতি পানিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ ও শিশুপৌত্র সুকানত্ম বাবু, ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অনত্মঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, আবদুর নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলসহ কয়েক নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
মোশতাক-জিয়ার
ইনডেমনিটি আইন
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার রহিত করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি সংবিধানে আনেন জেনারেল জিয়া । একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রানত্মে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশ ডুবে গিয়েছিল অমানিশার অন্ধকারে। মুহূর্তেই দেশ হয়েছিল নেতৃত্বহীন আর রাষ্ট্র হয়েছিল পথচু্যত। ভেঙ্গে পড়ে সামরিক বাহিনীর চেন অব কমান্ড। এ সুযোগে খুনীচক্র ও মদদদাতা এবং কিছু উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে শুরম্ন হয় অভু্যত্থান পাল্টাঅভু্যত্থানপর্ব। চলে রক্তের হোলিখেলা। সর্বশেষ খুনীদের বাঁচাতে জারি করা হয় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। আর ৩৪ বছর পর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকা- সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে নানা অজানা তথ্য।
পৈশাচিক হত্যাকা-ের মাত্র ক'দিনের মধ্যেই মীরজাফর খন্দকার মোশতাক কতর্ৃক জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান নিয়োগ, আত্মস্বীকৃত খুনীদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দেয়া, ৭ নবেম্বর কথিত বিপস্নবের নামে সামরিক শাসন দিয়ে ৰমতা দখল, এরপর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের পুরস্কৃত করা, একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের নিয়ে জেনারেল জিয়ার দল গঠন স্পষ্ট হয়_ বঙ্গবন্ধুকে কারা এবং কেন হত্যা করেছে।
অতি গোপনেই ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুখ্যাত অর্ডিন্যান্সটি জারি করে খোন্দকার মোশতাক। ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ভয়েই তা প্রকাশ করা হয়নি। একটা এক্সটা অর্ডিনারি গেজেট নোটিফিকেশন আকারে প্রকাশ পেয়েছিল এবং গোপনে। এ গোপন অধ্যাদেশটির মাধ্যমে মেজরদের সকল প্রকার হত্যা খুনের অপরাধকে সম্পূর্ণভাবে ৰমা এবং তাদের আইনের উর্ধে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কেবল খুনী রশিদ-ফারম্নকই এ আইনটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি, মোশতাক তার নিজের চলার পিচ্ছিল পথে একটা নিরাপত্তা খুঁটি হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কিন্তু অক্টোবরের শেষ দিকে মোশতাক, ফারম্নক-রশিদ গং পরিষ্কারভাবে আভাস পেল দেশে একটি অভু্যত্থান অত্যাসন্ন।
৩ নবেম্বরে খালেদ মোশারফ ও শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে সামরিক অভু্যত্থানে মোশতাকের পতন ঘটে। পরে পাল্টা অভু্যত্থানে খালেদ মোশারফ নিহত হন, ৰমতার মসনদে আসীন হন জেনারেল জিয়া। তাঁর আমলে ১৯৭৯ সালের সংসদে বিচারের পথ বন্ধ করতে জারি করা কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংবিধানে অনত্মভর্ুক্ত করা এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিষোদগার প্রমাণ হয় এ নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের মূল বেনিফিশিয়ারি কারা। আর মুজিব হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততার প্রশ্নটিও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বার বার এসেছে। এ মামলার অন্যতম আসামি কর্নেল ফারম্নক ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া স্বেচ্ছা জবানবন্দীতে বলেছেন, 'আলাপের মাধ্যমে তিনি (জিয়া) আমাকে লৰ্য করে বলেছিলেন দেশ বাঁচানোর জন্য কিছু একটা করা দরকার। ....তোমরা কিছু পারলে কর।' আসামি তাহেরউদ্দিন ঠাকুর তাঁর জবানবন্দীতে বলেন যে, জিয়া দু'বার এসেছিল মোশতাকের কাছে। তারা জোরপূর্বক ৰমতা বদলাতে অস্থির হয়ে পড়েছিল। এরপর জিয়ার পথ অনুসরণ করেন প্রথমে এরশাদ পরে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া। সেই থেকে দীর্ঘ ২১টি বছর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুধু বন্ধই নয়, খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছিল বাংলাদেশকে।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটিকে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে অনত্মভর্ুক্ত করে বৈধতার সিল দেয়া হয় দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকে ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল।
খুনীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ঘাতকচক্রকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকার। আর জিয়াউর রহমান রক্তপিপাসু হিংস্র খুনীদের প্রায় সবাইকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত করেন। পরবতর্ীতে জেনারেল এরশাদ ও জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একই পথ অনুসরণ করে খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পুরস্কৃত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগসুবিধা দিয়েছেন। অন্যদিকে দেশবাসীকে বঞ্চিত করেছেন পিতৃহত্যার বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে। বিচার পেতে ৩৪টি বছর অপেৰা করতে হলেও খুনীদের পুনর্বাসনে কার কি ভূমিকা, আর এই নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের নেপথ্যের নায়ক ও বেনিফিশিয়ারি কারা তা দেশবাসীর সামনে এখন দিবালোকের মতোই স্পষ্ট।
১৯৭৬ সালের ৮ জুন জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ১২ খুনীকে বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত করেন। এর আগে খুনী ডালিম, আজিজ পাশা, শাহরিয়ার রশিদ, আহমেদ শরিফুল হোসেন, বজলুল হুদা, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, এ কে এম মহিউদ্দিন, নাজমুল হোসেন, কিসমত হোসেন, খায়রম্নজ্জামান ও মাজেদের চাকরি সামরিক বাহিনী থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যসত্ম করা হয়। তাদের নিয়োগ দেয়া হয় বিভিন্ন দূতাবাসে।
এর মধ্যে খুনী ডালিমকে চীনে, আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনা ও মহিউদ্দিনকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, শাহরিয়ারকে ইন্দোনেশিয়ায়, বজলুল হুদাকে পাকিসত্মানে, রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে, নূর চৌধুরীকে ইরান ও আহমেদ শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব এবং কিসমতকে আবুধাবিতে, খায়রম্নজ্জামানকে মিসরে, নাজমুলকে কানাডায়, মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবতর্ীতে তারা আরও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি করেছে। ১৯৮০ সালে খুনীদের চাকরি পররাষ্ট্র ক্যাডার সার্ভিসে অনত্মভর্ুক্ত করে সরকারী সকল সুযোগসুবিধা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত করা হয়। তবে খুনী ফারম্নক ও রশিদ সরকারী চাকরি নেয়নি।
১৯৮০ সালের ১৭ জুন ঢাকায় একটি ব্যর্থ সামরিক অভু্যত্থান হয়। তখন খুনী হুদা পাকিসত্মানে ও শাহরিয়ার ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব এবং ডালিম চীনে প্রথম সচিব পদে নিযুক্ত ছিল। এই অভু্যত্থানে জড়িত থাকার দায়ে আটক হতে পারে আশঙ্কায় বজলুল হুদা, শাহরিয়ার রশিদ খান ও ডালিম কর্মস্থল ছেড়ে তখন পালিয়ে যায়। অভু্যত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে আজিজ পাশাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই মামলায় সে রাজসাৰী হয়ে ছাড়া পায় এবং রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে আবার কূটনীতিকের দায়িত্ব পায়। এছাড়া দেশে অবাধে যাতায়াতসহ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে নানা রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা গ্রহণ করে খুনীরা।
ইনডেমনিটি বাতিলের মুহূর্ত
'৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর ৰমতাসীন জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সরকার জাতিকে মিথ্যার ধূম্রজালে আটকে রেখে পিতৃহত্যার বিচারের পথ বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হানিসার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৰমতায় এসেই ওই ধারণাটি ভুল প্রমাণ করে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সাধারণ একটি আইন এবং সংসদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েই তা বাতিল করা যেতে পারে এই সত্য উদঘাটন করে।
সে অনুযায়ী দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বর কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি সংসদে বাতিল হবার পরই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথে থাকা সকল বাধা অপসারিত হয়। ওইদিন সংসদে হত্যাকা-ের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি-জামায়াত অনুপস্থিত থাকলেও জাতীয় পার্টির সদস্যরা তা সমর্থন করে। ১৪ নবেম্বর রাষ্ট্রপতি এ বিলে সম্মতি দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংসদে বাতিল হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। ট্রাইবু্যনালে নয়, বরং সাধারণ আইনে বিচার করার ঘোষণা দিয়ে মহানুভবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টানত্ম স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগ ৰমতায় আসার পরপরই ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট বিশেষ ৰমতা আইনে কর্নেল ফারম্নকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর ধানম-ি থানায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এজাহার দাখিল করা হয়। ১২ নবেম্বর সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের পর ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি ফৌজদারি কার্যবিধির ১২০ (বি), ৩০২/৩৪ এবং ২০১ ধারায় মামলার চার্জশীট দাখিল করা হয়। ২০ জানুয়ারি গ্রেফতার করা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি পলাতক আসামিদের নামে গ্রেজেট নোটিস জারি, ১ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে বিশেষ এজলাস গঠন করে বিচারক করা হয় কাজী গোলাম রসুলকে। রাষ্ট্রপৰের বিশেষ পিপি হন প্রবীণ আইনজীবী সিরাজুল হক। একই বছরের ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরম্ন হয়। ৭ এপ্রিল মামলার অভিযোগ গঠন, ৬ জুলাই সাৰ্য শুরম্ন হয়ে '৯৮ সালের ২০ জুলাই সাৰ্যপ্রমাণ শেষ হয়। ১২ আগস্ট সওয়াল জবাব শেষে রায় প্রদানের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে ৮ নবেম্বর আসামি বজলুল হুদাকে ব্যাঙ্কক থেকে ফেরত আনা হয় এবং ওইদিনই রায়ে আসামিদের ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃতু্যদ-ের আদেশ দেয়া হয়। একই বছরের ১১ নবেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের জন্য পাঠানো হয়। নানা আইনী জটিলতা পেরিয়ে ২০০০ সালের ২৮ জুন হাইকোর্টের মামলার শুনানি শুরম্ন হয় এবং ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে দ্বিমতে বিভক্ত রায় ঘোষণা করে।
বিভক্তি রায় নিষ্পত্তিতে ২০০১ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারি তৃতীয় বিচারপতির আদালতে শুনানি শুরম্ন হয়। ১৯ এপ্রিল শুনানি শেষে তৃতীয় বিচারপতির সিদ্ধানত্ম ঘোষণার মধ্য দিয়ে হাইকোর্ট পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি হয়। তৃতীয় বিচারপতি ১২ আসামির মৃতু্যদ-াদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। চূড়ানত্ম রায়ে মৃতু্যদ- বহাল থাকা ১২ আসামির মধ্যে পরে ওই বছরই কারাবন্দী চার আসামি আপীল বিভাগে লিভ টু আপীল করে। ২০০৭ সালে মৃতু্যদ-াদেশপ্রাপ্ত অপর আসামি ল্যান্সার একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ অক্টোবর আপীল বিভাগের বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ গঠন করা হয় এবং ৫ অক্টোবরে লিভ টু আপীল শুনানি শুরম্ন হয়। ১২ অক্টোবর শুনানি শেষে ১৯ নবেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। সুপ্রীমকোর্ট হাইকোর্টের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে। সর্বশেষ খুনীদের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরই শেষ নিয়তি হয় ফাঁসির রজ্জু। খুনীদের দীর্ঘ ৩৪ বছরের নানা চক্রানত্ম-ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের মৃতু্যদ-াদেশ কার্যকর দেখতে এখন অধীর অপেৰায় গোটা দেশবাসী।
No comments