কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে বুক ভাসালেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাধ না মানা অঝোর ধারার এ কান্না ৩৪ বছর ধরে বইয়ে বেড়ানো সব হারানোর তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, আর বিচার পাওয়ার প্রশানত্মির।
দু'ধরনের এমন অনুভূতি, আর সারারাত তসবি জপে, দোয়া-দরম্নদ পাঠ আর শোকরানা নামাজ পড়েই একটি দিন কাটালেন প্রধানমন্ত্রী। দেখা করতে আসা দলীয় নেতাকমর্ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন বুকের মধ্যে পুষে রাখা যন্ত্রণা, কষ্টের অনুভূতি ভাগাভাগি করেন তিনি।বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দেশ বহু দূর এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, রায় কার্যকর হওয়ায় জাতির কলঙ্ক মোচন হয়েছে। তিনি এ জন্য মহান আলস্নাহ্ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মধ্যরাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি রায় কার্যকর শুরম্ন হওয়ার বিষয়ে ১৫ আগস্ট সেই ভয়াল রাতে শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ফোন পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টেলিফোনে সংবাদ পাওয়ামাত্রই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বাবাকে হারানোর যন্ত্রণা আর তার থেকে দায়মুক্তির যে অনুভূতি, তা ভাগ করে নেন পিতৃহারা শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার তাপস। এর পরই প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারী বাসভবন যমুনায় সাঁটানো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপর জায়নামাজে বসে আলস্নাহ্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করে শোকরানা নামাজ পড়েন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর ছোট বোন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা লন্ডন প্রবাসী শেখ রেহানা ও আমেরিকা প্রবাসী একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দফায় দফায় টেলিফোনে কথা বলেন। আর টেলিফোনে আলাপকালেও চোখের জলে ৩৪ বছর ধরে বুকের মধ্যে পুষে রাখা যন্ত্রণা-কষ্টের অনুভূতি ভাগাভাগি করেন বোন ও ছেলের সঙ্গে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যনত্ম জায়নামাজে বসে তসবি জপেছেন, কোরান তেলাওয়াত ও দোয়া-দরম্নদ পড়েছেন তাঁর মা-বাবা-ভাইসহ ভয়াল রাতের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায়।
রায় কার্যকরের আগে রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধুর কেঁৗসুলি এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। তাঁরা জানান, রায় শুনার সঙ্গে সঙ্গে আলস্নাহ্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করে প্রধানমন্ত্রী শোকরানা নামাজ আদায় করেছেন। সারারাত কোরান তেলাওয়াত ও দোয়া-দরম্নদ পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, খুঈদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সারারাত প্রধানমন্ত্রীর দু'চোখ ছিল অশ্রম্নসিক্ত।
এদিকে কলঙ্ক মুক্তির দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত অবধি আওয়ামী লীগ, মহাজোটের নেতাকমর্ী ছাড়াও আত্মীয়স্বজন, পরিবারের সদস্য ও সমাজের সর্বসত্মরের মানুষ যমুনায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাৰাত করেছেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ায় জাতির কলঙ্ক মোচন হয়েছে।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল জলিল, মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যবৃন্দ, ১৪ দলনেতা ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শরীফ নুরম্নল আম্বিয়াসহ মহাজোটের নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকমর্ী এবং আত্মীয়স্বজনসহ সমাজের সর্বসত্মরের মানুষ যমুনায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাৰাত করেন।
উলেস্নখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা।
No comments