বাজেনি করুণ সুর... by মুহম্মদ জসিম উদ্দিন
বখতেয়ার নোমানী তার জন্মভূমি থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুরে উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে ৬৫ বছর বয়সে। তার প্রিয় স্বদেশ তাকে দিতে পারেনি প্রশান্তি, প্রতিনিয়ত যার ক্ষরণ হতো। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তাকে টলাতে পারেনি রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ থেকে।
তবুও তিনি ছিলেন আশাবাদী, এ রাষ্ট্র দাঁড়াবে মাথা উঁচু করে বিশ্ব পরিসরে, যে রাষ্ট্রের জন্ম সংগ্রামে, যিনি সঁপে দিয়েছিলেন তার উদ্ধত যৌবন, তার বীরগাথা বিবৃত রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মুক্তিসংগ্রাম বিষয়ক প্রকাশনাগুলোতে। অথচ তিনি নিবন্ধিত নন গেজেটে অথবা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের লাল বইয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেননি ব্যক্তি-স্বাচ্ছন্দ্যে বা পারিবারিক কল্যাণে। দুই কন্যা, এক পুত্র স্বীয় মেধাবলে সাধারণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অধ্যয়নকাল শেষ করেছেন ও করছেন। মুক্তিযুদ্ধকে ব্যক্তিলাভের বিষয়ে আনতে অপছন্দ করতেন। তাকে সুহৃদরা অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি নিবন্ধিত হননি।
যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি ধৃত হন, অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান হায়েনাদের খাঁচা থেকে। মৃত ভেবে সহযোদ্ধারা গায়েবানা জানাজাও সমাধা করেন। যুদ্ধদিন শেষে সৃজনশীল কর্মে নিমগ্ন হন মুক্ত স্বদেশে। শুরু করেন সৃজনশীল প্রকাশনা আ. হালিম রচিত বিখ্যাত 'মানুষের ইতিহাস' প্রকাশনার মাধ্যমে। পরে ব্যাংকে পেশাগত জীবন শুরু করেন।
প্রকৃত জানাজার পর সমাধি হয় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে। সহযোদ্ধা বন্ধু-স্বজনরা চেয়েছিল 'গান স্যালুট' হোক সমাধির পূর্বে। মিরপুর থানা জানাল লাল বইয়ে তার নাম চাই। যে লাল সূর্যটা তিনি ও তার সহযোদ্ধারা স্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশের পতাকায়, অথচ লাল বইতে নাম নেই।
লাল বইয়ে নাম নেই আরও অনেকের, কেউ যাননি অথবা চাননি অন্তর্ভুক্তি। সদ্য প্রয়াত সফিকুল ইসলাম, কে শোনেনি তার উচ্চকিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাঁপানো স্লোগান সেই সত্তরের দশকে। তিনিও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেননি, স্বউদ্যোগে-প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছেন দেশে-বিদেশে। স্বদেশের বুকেই শেষে আশ্রয় নিয়েছেন, পরাভূত হয়েছেন বর্তমানের কাছে, তবুও অবনত হয়নি তার শির, আত্মমর্যাদা। তার সহযোদ্ধা ও বন্ধুরা উদ্যোগ নিয়েছেন তার স্মৃতি রক্ষা ও পরিবারকে সহায়তা প্রদানের। লাল বইয়ে নাম নেই প্রয়াত আবদুর রহমানের, চাঁদপুরের বামপন্থি নেতা।
নামহীন আছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাসুদুল গনি (ড্যানী)। যার সহযোদ্ধারা নিহত হয়েছেন ঢাকা মুক্ত হওয়ার পর বুড়িগঙ্গা নদী পার হওয়ার সময় নৌকাডুবিতে। অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন। নামহীন-শিরোনামহীনদের তালিকা দীর্ঘ হবে প্রকৃত অনুসন্ধানে। রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নয় তাদের খুঁজে বের করা ও সম্মান প্রদর্শন করা।
বখতেয়ার নোমানী ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর বোয়ালখালী থানার পূর্ব গোমদণ্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের দশকের শুরুতে তিনি স্যার আশুতোষ কলেজে ভর্তি হয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বোয়ালখালী থানা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে তিনি বোয়ালখালী থানা ন্যাপের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূবালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন।
মুক্তিযু্দ্ধ চলাকালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করার প্রাক্কালে এক পর্যায়ে মিরসরাইয়ে আলবদর বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি ধৃত হন, অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান হায়েনাদের খাঁচা থেকে। মৃত ভেবে সহযোদ্ধারা গায়েবানা জানাজাও সমাধা করেন। যুদ্ধদিন শেষে সৃজনশীল কর্মে নিমগ্ন হন মুক্ত স্বদেশে। শুরু করেন সৃজনশীল প্রকাশনা আ. হালিম রচিত বিখ্যাত 'মানুষের ইতিহাস' প্রকাশনার মাধ্যমে। পরে ব্যাংকে পেশাগত জীবন শুরু করেন।
প্রকৃত জানাজার পর সমাধি হয় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে। সহযোদ্ধা বন্ধু-স্বজনরা চেয়েছিল 'গান স্যালুট' হোক সমাধির পূর্বে। মিরপুর থানা জানাল লাল বইয়ে তার নাম চাই। যে লাল সূর্যটা তিনি ও তার সহযোদ্ধারা স্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশের পতাকায়, অথচ লাল বইতে নাম নেই।
লাল বইয়ে নাম নেই আরও অনেকের, কেউ যাননি অথবা চাননি অন্তর্ভুক্তি। সদ্য প্রয়াত সফিকুল ইসলাম, কে শোনেনি তার উচ্চকিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাঁপানো স্লোগান সেই সত্তরের দশকে। তিনিও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেননি, স্বউদ্যোগে-প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছেন দেশে-বিদেশে। স্বদেশের বুকেই শেষে আশ্রয় নিয়েছেন, পরাভূত হয়েছেন বর্তমানের কাছে, তবুও অবনত হয়নি তার শির, আত্মমর্যাদা। তার সহযোদ্ধা ও বন্ধুরা উদ্যোগ নিয়েছেন তার স্মৃতি রক্ষা ও পরিবারকে সহায়তা প্রদানের। লাল বইয়ে নাম নেই প্রয়াত আবদুর রহমানের, চাঁদপুরের বামপন্থি নেতা।
নামহীন আছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাসুদুল গনি (ড্যানী)। যার সহযোদ্ধারা নিহত হয়েছেন ঢাকা মুক্ত হওয়ার পর বুড়িগঙ্গা নদী পার হওয়ার সময় নৌকাডুবিতে। অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন। নামহীন-শিরোনামহীনদের তালিকা দীর্ঘ হবে প্রকৃত অনুসন্ধানে। রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নয় তাদের খুঁজে বের করা ও সম্মান প্রদর্শন করা।
বখতেয়ার নোমানী ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর বোয়ালখালী থানার পূর্ব গোমদণ্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের দশকের শুরুতে তিনি স্যার আশুতোষ কলেজে ভর্তি হয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বোয়ালখালী থানা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে তিনি বোয়ালখালী থানা ন্যাপের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূবালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন।
মুক্তিযু্দ্ধ চলাকালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করার প্রাক্কালে এক পর্যায়ে মিরসরাইয়ে আলবদর বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
No comments