কোরবানির গোশত by কাজী কোহিনূর বেগম তিথি

কাল উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানরা এদিন কোরবানি করবেন। কোরবানি করতে হবে একমাত্র আল্লাহর হুকুম পালন ও সওয়াব অর্জনের জন্য। কোরবানির ক্ষেত্রে মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না।


শুধু গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। এমনকি শরিকানা কোরবানির ক্ষেত্রে একজনের নিয়তে গলদ থাকলে অন্য শরিকদের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তাই কোরবানির ক্ষেত্রে নিয়ত এবং এ সংক্রান্ত সবকিছু সম্পর্কে হুশিয়ার থাকতে হবে। নিচে কোরবানির গোশত সম্পর্কে কিছু বিধান নিয়ে আলোচনা করা হলো।
শরিকানা কোরবানির অংশীদাররা একান্নভুক্ত পরিবারের হলে গোশত বণ্টনের প্রয়োজন নেই, অন্যথায় গোশত বণ্টন করতে হবে। অংশীদাররা গোশত অনুমান করে বণ্টন করবেন না বরং বাটখারা দিয়ে ওজন করে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। অন্যথায় ভাগের মধ্যে কমবেশি হলে গোনাহগার হতে হবে। অবশ্য কোনো অংশীদার মাথা, পায়া ইত্যাদি নিলে অন্যদের এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি না থাকলে তার ভাগে গোশত কিছু কম হলেও তা দুরস্ত হবে; অন্যথায় নয়। শরিকানা কোরবানির ক্ষেত্রে অন্য শরিকদের ঠকানোর মনোবৃত্তি কোরবানি নষ্ট করে দেয়। অংশীদারদের সবাই যদি সম্পূর্ণ গোশত দান করে দিতে চায় বা সম্পূর্ণটা রান্না করে বিলাতে বা খাওয়াতে চায়, তাহলে আর গোশত বণ্টনের প্রয়োজন নেই।
কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া, পরিবারবর্গকে খাওয়ানো ও আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং গরিব-মিসকিনকে দান করা জায়েজ আছে। তবে মান্নতের কোরবানির গোশত হলে নিজে খেতে পারবে না এবং কোনো মালদারকে গোশত দিতে পারবে না, বরং পুরো গোশতই গরিব-মিসকিনদের দান করে দেওয়া ওয়াজিব। যদি কোনো মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর আগে কোরবানির জন্য অসিয়ত করে থাকেন, তবে সেই কোরবানির গোশতও মান্নতের কোরবানির গোশতের মতো পুরোটাই দান করে দেওয়া ওয়াজিব। কোরবানির গোশত বা বিশেষ কোনো অংশ (যেমন_ মাথা, পায়া, ভুঁড়ি) পারিশ্রমিকরূপে দেওয়া জায়েজ নয়। এমনকি কাজের লোককেও বিনিময় হিসেবে কোরবানির গোশত দিয়ে খাওয়ানো জায়েজ নয়। যাদের বাসায় নির্দিষ্ট কাজের লোক আছে, তারা কোরবানির গোশত যে কয়দিন খাবেন, সে কয়দিন কাজের লোককে বিনিময় হিসেবে না খাইয়ে দাওয়াত হিসেবে খাওয়ান। অনেক এলাকায় নিয়ম আছে, জবেহকারীকে জবেহর পারিশ্রমিক বাবদ মাথা দিয়ে দেওয়া হয়; এটা জায়েজ নয়। তাকে জবেহর বিনিময়ে অন্যভাবে পারিশ্রমিক দিতে হবে; কোরবানির অংশ দিয়ে নয়। কোরবানির গোশত শুকিয়ে বা ফ্রিজে রেখে দীর্ঘদিন খাওয়ায় কোনো অসুবিধা নেই।
 

No comments

Powered by Blogger.