পবিত্র ঈদুল আজহা-সহমর্মিতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদ মানে তো আনন্দ। বছর ঘুরে সেই উৎসব আবার এসেছে আমাদের মধ্যে। সব ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সবার পাশে দাঁড়ানোর দিন ঈদুল আজহা।


পবিত্র এই দিনটিতে আল্লাহর রাহে প্রিয় জিনিস হিসেবে পশু উৎসর্গ করা হয়। কোরবানির ভেতর দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে অগ্রসর হয় মুসলিম সম্প্রদায়। কোরবানির অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ করা। পশু কোরবানি হচ্ছে তার মাধ্যম। ত্যাগের মহিমার এক প্রতীকী আচার এই কোরবানি। যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ মূর্ত হয় মানুষের জীবনে, সেই সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের প্রতীক কোরবানি। ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ বিতাড়িত করা। পশু কোরবানির ভেতর দিয়ে মানুষের ভেতরের পশুশক্তি, কাম-ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকেই কোরবানি দিতে হয়। কোরবানির আনন্দ, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মনোভাব নিয়ে এবারও পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা।
কোরবানির ফজিলত অর্জন করতে হলে প্রয়োজন ওই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম, ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতার, যে আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কোরবানি করেছিলেন আল্লাহর খলিল হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহ তায়ালার আদেশে তাঁর প্রথম পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে জল ও বৃক্ষলতাশূন্য মক্কা উপত্যকায় এনে বাস করতে রেখে যান। সেখানে জীবনধারণের কিছুই ছিল না। আল্লাহ তায়ালা পুত্র কোরবানির পরিবর্তে বাহ্যিকভাবে পশু কোরবানির আদেশ করেন। বর্বর যুগের মানুষ আল্লাহর বিধান থেকে বিচ্যুত হয়ে মানুষও কোরবানি করত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সময়ে মানুষ কোরবানি চিরতরে নিষিদ্ধ হয়েছিল এবং মানুষ কোরবানির তাৎপর্য পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে আল্লাহর পথে উপস্থিত করা হয়েছিল। পশু কোরবানির মাধ্যমে কোরবানিদাতা কেবল পশুর গলায় ছুরি চালায় না, বরং সে যেন ছুরি চালায় সব কুপ্রবৃত্তির গলায়। কবির ভাষায়, '...হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ...'। এটাই হলো কোরবানির মূল শিক্ষা। ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য তাই স্রষ্টার উদ্দেশে নিজেকে উৎসর্গ করা।
মহান আল্লাহর প্রেমে সর্বোচ্চ ত্যাগই হচ্ছে ঈদুল আজহার শিক্ষা। কিন্তু দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই ত্যাগের চেয়ে ভোগ-বিলাসের দিকটিই প্রধান হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে অসংখ্য মানুষ আছে যাদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। অনেকেরই দুবেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। সেসব ম্লান মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। সমাজের হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ভেতর দিয়ে আমরা আমাদের এবারের ঈদুল আজহাকে নতুন তাৎপর্য দিতে পারি। সার্থক করে তুলতে পারি ঈদের আনন্দ। বঞ্চিত মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার ভেতর দিয়ে আমরা স্থাপন করতে পারি সহমর্মিতার নতুন দৃষ্টান্ত।
কালের কণ্ঠের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, বিপণনকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

No comments

Powered by Blogger.