ট্রিপল মার্ডারঃ পুলিশের দাবি মোবাইল সেটের জন্য এই খুন
ছেলেমেয়েদের পড়ানো সংক্রান্ত বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে বিরোধ থেকে প্রবাসীর স্ত্রী ডলি`র উপর ক্ষোভ জন্মায় গৃহশিক্ষক তারেকের। এছাড়া তাদের বাসায় থাকা দু`টি দামী মোবাইল সেট চুরি করারও ইচ্ছে জাগে তারেকের। প্রতিশোধ নিতে এবং মোবাইল সেটগুলো চুরি করতেই ডলি এবং তার দু`সন্তান আলভী ও পায়েলকে গৃহশিক্ষক তারেক খুন করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
তবে পুলিশের এ দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে নিহতের পরিবার তারেককে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে হত্যাকান্ডের মোটিভ খুঁজতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এক উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে ডলি`র ছেলেমেয়েদের পড়ানো শুরুর পর থেকেই ডলির উপর কুনজর পড়ে তারেকের। ডলি তার বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হয়ে এক পর্যায়ে নভেম্বর থেকে তাকে আর পড়াতে না যাবার কথা বলে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারেক এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার বলেন, `হত্যাকান্ডের জন্য তারেক যেসব কারণের কথা বলেছে সেগুলো যুক্তিসঙ্গত নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। কিন্তু তারেক এগুলোই আমাদের বলেছে এবং এটাই সম্ভবত বাস্তবতা। আর অনৈতিক সম্পর্ক কিংবা অন্যান্য বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোন তথ্য পাইনি।`
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার খতিবের হাট এলাকায় নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন আবুধাবি প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ডলি (৩০), ছেলে আলভি (১০) ও পায়েল (৫)। এর দু`দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আলভি ও পায়েলের গৃহশিক্ষককে তারেককে (২২) পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
শুক্রবার সকালে তারেককে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এছাড়া নগর পুলিশ কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম তারেককে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন।
সিএমপি কমিশনারের বিবরণ মতে, গত এপ্রিল মাসে বাচ্চাগুলোকে পড়ানো শুরুর পর প্রথম দু`মাস ঠিক সময়ে শিক্ষকের বেতন দু`হাজার টাকা করে পরিশোধ করেন ডলি। এরপর থেকে বেতন অনিয়মিত হয়ে যায়। টাকা খুঁজলেও দিতে গড়িমসি শুরু করেন। এছাড়া টাকা খোঁজার সঙ্গে সঙ্গে পড়ালেখার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি শুরু করেন। তারেক প্রতিদিন দু`ঘণ্টা পড়াত। ডলি এতে আপত্তি তুলে আরও বেশি সময় নিয়ে পড়ানোর কথা বলেন। আবার বেতনও পাঁচশ টাকা করে কমিয়ে দেন। এতে তারেকের মনে ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহা জন্ম নেয়।
এছাড়া ডলি`র বাসায় বিদেশি দু`টি দামী মোবাইল সেট ছিল। তারেকের দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল সে একটি দামী মোবাইল সেট ব্যবহার করবে। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় মোবাইল সেট কিনতে পারছিল না। এজন্য তারেক ডলির বাসার মোবাইল সেটগুলো চুরি করার পরিকল্পনা করে।
হত্যাকান্ডের আগের দিন সোমবার রাতে সে পরদিন দু`টি মোবাইল সেট চুরি করার পরিকল্পনা করে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে পড়াতে আসার কিছুক্ষণ পর ডলি বাসার নিচে তার জন্য নাস্তা আনতে যান। এর কিছুক্ষণ পর পায়েল বাথরুমে যান। সুযোগ বুঝে তারেক মোবাইল সেটগুলো চুরি করার মতলব শুরু করলে আলভি সেটা ধরে ফেলে। এসময় আলভিকে তারেক গলা টিপে ধরে এবং পরে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে ছোরা ও দা দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে।
এরপর বাথরুম থেকে বেরিয়ে রক্তাক্ত আলভিকে দেখে চীৎকার দিয়ে উঠে পায়েল। এসময় তারেক পায়েলকেও গলা টিপে এবং কুপিয়ে হত্যা করে।
দু`জনকে হত্যার পর তাদের মা ডলি`র অপেক্ষায় তারেক বাসার ফ্রিজের পাশে আত্মগোপন করে থাকে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর ডলি রুমে ঢোকার পর তারেক তার মাথায় দু`টি কোপ দেয়। ডলি লুটিয়ে পড়ার পর তার নিথর দেহ টেনে বেডরুমে নিয়ে যায় তারেক। এরপর তার পায়জামা খুলে বিকৃত রুচির কিছু কর্মকান্ড করে তারেক। এরপর তার শরীরের নিচের দিকে কুপিয়ে উরু প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
তবে বিকৃত রুচির কোন কর্মকান্ড করার কথা সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেছে গৃহশিক্ষক তারেক। এমনকি মোবাইল চুরির পরিকল্পনার কথাও সে অস্বীকার করেছে। তার দাবি, পড়ালেখা নিয়ে ক্ষোভ থেকেই সে তিনজনকে হত্যা করেছে।
তাহলে দু`ছেলেমেয়েকেও কেন খুন করা হয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করা হলে তারেক বলেন, `এটার জন্য আমি লজ্জিত। বাচ্চাগুলোকে মারার কোন কারণ নেই।`
সাংবাদিকরা কেন এ নৃশংস হত্যাকান্ড সে ঘটাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক বারবার বলতে থাকেন, `স্যাররা (পুলিশ কর্মকর্তা) যা বলেছেন সেটাই ঠিক।` তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে তারেককে সেখান থেকে নিয়ে যান।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো.শহীদুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, হত্যাকান্ডের পর তারেক রান্নাঘরের বেসিনে গিয়ে হাত ধোঁয়ার চেষ্টা করে। সেখানে পানি না থাকায় তারেক বালতিতে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে নিজের রক্তমাখা প্যান্ট খুলে ওই বাসার একটি লুঙ্গি পরে নেয়। এছাড়া তিনজনকে কোপানোর সময় সে নিজেও হাতে জখম হয়। প্যান্ট দিয়ে হাতের জখমের স্থানটি ঢেকে তারেক ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারেক আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, `বাসা থেকে বের হয়ে তারেক নাসির নামে একজন ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে তার জখমের স্থান ব্যান্ডেজ করে। সেখানে সে জানায়, মাকে মাছ কাটতে সহায়তা করতে গিয়ে হাত কেটেছে। এরপর চাচার বাসায় গিয়ে বলে সিএনজি অটোরিক্সায় অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। রক্তাক্ত শার্ট আর প্যান্টগুলো সে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়েও দেয়।`
হত্যাকান্ডের মোটিভ খুঁজতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা নগরীর কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) সদীপ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, `আলভি ও পায়েলের আগের তিন শিক্ষক শিলা, সনেট ও রিদওয়ানের মাধ্যমে এবং মোবাইল ট্র্যাকিং করে আমরা তারেককে ধরতে সক্ষম হয়েছি। আটকের পর সে প্রথমে বিভিন্ন কৌশল নেয়ার চেষ্টা করে। পরে আমাদের জেরার মুখে তারেক হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।`
নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, `তারেককে খুবই লোভী বলে মনে হয়েছে। ডলির ভ্যানিটি ব্যাগে মাত্র ১১২ টাকা ছিল। খুনের পর তারেক টাকাগুলোও নিয়ে গেছে। এছাড়া তার ব্যাগের ভেতর থেকে আমরা ডলি`র দু`টি মোবাইল সেটও উদ্ধার করেছি।`
নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার মনজুর মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, `তারেক নিজের মুখে হত্যাকান্ডের যে বিবরণ এবং কারণের কথা বলেছে, তাতে আমাদেরও বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে সে খুন করেছে এবং নিজের মুখে যে কথাগুলো বলেছে সেই কারণেই করেছে।`
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, `আমরা চেষ্টা করব যাতে তারেক হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে দ্রুত ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। না হলে আমরা তার ডিএনএ টেস্ট করব। আর আমাদের কাছে ফুট প্রিন্ট, হাতের ছাপ, রক্ত সহ যেসব আলামত আছে তাতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, খুনী একজনই এবং সেটা তারেক।`
সংবাদ সম্মেলনের পর নিহত ডলি`র স্বামী আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, `সামান্য মোবাইল সেটের জন্য এতবড় ঘটনা ঘটবে সেটি আমি কল্পনাও করতে পারছিনা। এর পেছনে নিশ্চয় অন্য কোন কারণ আছে। পুলিশের উচিৎ সেগুলো জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করা। কারণ, আমার বিদেশ থেকে পাঠানো অনেক মোবাইল সে অনেকজনকে দিয়েছে। আর টিচারের বেতন নিয়ে আমার স্ত্রী কখনও কার্পণ্য করতেন না। এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা।`
ডলি`র বাবা মো.ইছহাক বাংলানিউজকে বলেন, `মোবাইলের জন্য তিনটা মানুষকে মেরে ফেলবে এটি কি বিশ্বাসযোগ্য কথা। তাকে রিমান্ডে নিয়ে কথা বের করা উচিৎ। এ হত্যাকান্ডের পেছনে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে।
গ্রেপ্তার হওয়া গৃহশিক্ষক তারেক কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। সে নগরীর হামজারবাগ এলাকায় তার চাচার বাসায় থাকত। তাদের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট এলাকায়।
তারেকের চাচাত ভাই ফাহিম বাংলানিউজকে বলেন, `ফাহিম আমাদের বাসায় থাকত, একই খাটে আমরা ঘুমাতাম। আমি তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু কোনদিন দেখিনি। সে এতবড় ঘটনা কেন ঘটাল সেটিও বুঝতে পারছিনা।`
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্বামী সহ পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, `যে আমার স্ত্রী, সন্তানদের কুপিয়ে মেরেছে আমি চাই, তার মরণও যেন সেভাবে হয়। তাকেও যেন কুপিয়ে মারা হয়।`
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার বলেন, `হত্যাকান্ডের জন্য তারেক যেসব কারণের কথা বলেছে সেগুলো যুক্তিসঙ্গত নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। কিন্তু তারেক এগুলোই আমাদের বলেছে এবং এটাই সম্ভবত বাস্তবতা। আর অনৈতিক সম্পর্ক কিংবা অন্যান্য বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোন তথ্য পাইনি।`
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার খতিবের হাট এলাকায় নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন আবুধাবি প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ডলি (৩০), ছেলে আলভি (১০) ও পায়েল (৫)। এর দু`দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আলভি ও পায়েলের গৃহশিক্ষককে তারেককে (২২) পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
শুক্রবার সকালে তারেককে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এছাড়া নগর পুলিশ কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম তারেককে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন।
সিএমপি কমিশনারের বিবরণ মতে, গত এপ্রিল মাসে বাচ্চাগুলোকে পড়ানো শুরুর পর প্রথম দু`মাস ঠিক সময়ে শিক্ষকের বেতন দু`হাজার টাকা করে পরিশোধ করেন ডলি। এরপর থেকে বেতন অনিয়মিত হয়ে যায়। টাকা খুঁজলেও দিতে গড়িমসি শুরু করেন। এছাড়া টাকা খোঁজার সঙ্গে সঙ্গে পড়ালেখার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি শুরু করেন। তারেক প্রতিদিন দু`ঘণ্টা পড়াত। ডলি এতে আপত্তি তুলে আরও বেশি সময় নিয়ে পড়ানোর কথা বলেন। আবার বেতনও পাঁচশ টাকা করে কমিয়ে দেন। এতে তারেকের মনে ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহা জন্ম নেয়।
এছাড়া ডলি`র বাসায় বিদেশি দু`টি দামী মোবাইল সেট ছিল। তারেকের দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল সে একটি দামী মোবাইল সেট ব্যবহার করবে। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় মোবাইল সেট কিনতে পারছিল না। এজন্য তারেক ডলির বাসার মোবাইল সেটগুলো চুরি করার পরিকল্পনা করে।
হত্যাকান্ডের আগের দিন সোমবার রাতে সে পরদিন দু`টি মোবাইল সেট চুরি করার পরিকল্পনা করে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে পড়াতে আসার কিছুক্ষণ পর ডলি বাসার নিচে তার জন্য নাস্তা আনতে যান। এর কিছুক্ষণ পর পায়েল বাথরুমে যান। সুযোগ বুঝে তারেক মোবাইল সেটগুলো চুরি করার মতলব শুরু করলে আলভি সেটা ধরে ফেলে। এসময় আলভিকে তারেক গলা টিপে ধরে এবং পরে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে ছোরা ও দা দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে।
এরপর বাথরুম থেকে বেরিয়ে রক্তাক্ত আলভিকে দেখে চীৎকার দিয়ে উঠে পায়েল। এসময় তারেক পায়েলকেও গলা টিপে এবং কুপিয়ে হত্যা করে।
দু`জনকে হত্যার পর তাদের মা ডলি`র অপেক্ষায় তারেক বাসার ফ্রিজের পাশে আত্মগোপন করে থাকে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর ডলি রুমে ঢোকার পর তারেক তার মাথায় দু`টি কোপ দেয়। ডলি লুটিয়ে পড়ার পর তার নিথর দেহ টেনে বেডরুমে নিয়ে যায় তারেক। এরপর তার পায়জামা খুলে বিকৃত রুচির কিছু কর্মকান্ড করে তারেক। এরপর তার শরীরের নিচের দিকে কুপিয়ে উরু প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
তবে বিকৃত রুচির কোন কর্মকান্ড করার কথা সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেছে গৃহশিক্ষক তারেক। এমনকি মোবাইল চুরির পরিকল্পনার কথাও সে অস্বীকার করেছে। তার দাবি, পড়ালেখা নিয়ে ক্ষোভ থেকেই সে তিনজনকে হত্যা করেছে।
তাহলে দু`ছেলেমেয়েকেও কেন খুন করা হয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করা হলে তারেক বলেন, `এটার জন্য আমি লজ্জিত। বাচ্চাগুলোকে মারার কোন কারণ নেই।`
সাংবাদিকরা কেন এ নৃশংস হত্যাকান্ড সে ঘটাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক বারবার বলতে থাকেন, `স্যাররা (পুলিশ কর্মকর্তা) যা বলেছেন সেটাই ঠিক।` তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে তারেককে সেখান থেকে নিয়ে যান।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো.শহীদুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, হত্যাকান্ডের পর তারেক রান্নাঘরের বেসিনে গিয়ে হাত ধোঁয়ার চেষ্টা করে। সেখানে পানি না থাকায় তারেক বালতিতে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে নিজের রক্তমাখা প্যান্ট খুলে ওই বাসার একটি লুঙ্গি পরে নেয়। এছাড়া তিনজনকে কোপানোর সময় সে নিজেও হাতে জখম হয়। প্যান্ট দিয়ে হাতের জখমের স্থানটি ঢেকে তারেক ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারেক আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, `বাসা থেকে বের হয়ে তারেক নাসির নামে একজন ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে তার জখমের স্থান ব্যান্ডেজ করে। সেখানে সে জানায়, মাকে মাছ কাটতে সহায়তা করতে গিয়ে হাত কেটেছে। এরপর চাচার বাসায় গিয়ে বলে সিএনজি অটোরিক্সায় অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। রক্তাক্ত শার্ট আর প্যান্টগুলো সে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়েও দেয়।`
হত্যাকান্ডের মোটিভ খুঁজতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা নগরীর কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) সদীপ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, `আলভি ও পায়েলের আগের তিন শিক্ষক শিলা, সনেট ও রিদওয়ানের মাধ্যমে এবং মোবাইল ট্র্যাকিং করে আমরা তারেককে ধরতে সক্ষম হয়েছি। আটকের পর সে প্রথমে বিভিন্ন কৌশল নেয়ার চেষ্টা করে। পরে আমাদের জেরার মুখে তারেক হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।`
নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, `তারেককে খুবই লোভী বলে মনে হয়েছে। ডলির ভ্যানিটি ব্যাগে মাত্র ১১২ টাকা ছিল। খুনের পর তারেক টাকাগুলোও নিয়ে গেছে। এছাড়া তার ব্যাগের ভেতর থেকে আমরা ডলি`র দু`টি মোবাইল সেটও উদ্ধার করেছি।`
নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার মনজুর মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, `তারেক নিজের মুখে হত্যাকান্ডের যে বিবরণ এবং কারণের কথা বলেছে, তাতে আমাদেরও বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে সে খুন করেছে এবং নিজের মুখে যে কথাগুলো বলেছে সেই কারণেই করেছে।`
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, `আমরা চেষ্টা করব যাতে তারেক হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে দ্রুত ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। না হলে আমরা তার ডিএনএ টেস্ট করব। আর আমাদের কাছে ফুট প্রিন্ট, হাতের ছাপ, রক্ত সহ যেসব আলামত আছে তাতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, খুনী একজনই এবং সেটা তারেক।`
সংবাদ সম্মেলনের পর নিহত ডলি`র স্বামী আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, `সামান্য মোবাইল সেটের জন্য এতবড় ঘটনা ঘটবে সেটি আমি কল্পনাও করতে পারছিনা। এর পেছনে নিশ্চয় অন্য কোন কারণ আছে। পুলিশের উচিৎ সেগুলো জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করা। কারণ, আমার বিদেশ থেকে পাঠানো অনেক মোবাইল সে অনেকজনকে দিয়েছে। আর টিচারের বেতন নিয়ে আমার স্ত্রী কখনও কার্পণ্য করতেন না। এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা।`
ডলি`র বাবা মো.ইছহাক বাংলানিউজকে বলেন, `মোবাইলের জন্য তিনটা মানুষকে মেরে ফেলবে এটি কি বিশ্বাসযোগ্য কথা। তাকে রিমান্ডে নিয়ে কথা বের করা উচিৎ। এ হত্যাকান্ডের পেছনে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে।
গ্রেপ্তার হওয়া গৃহশিক্ষক তারেক কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। সে নগরীর হামজারবাগ এলাকায় তার চাচার বাসায় থাকত। তাদের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট এলাকায়।
তারেকের চাচাত ভাই ফাহিম বাংলানিউজকে বলেন, `ফাহিম আমাদের বাসায় থাকত, একই খাটে আমরা ঘুমাতাম। আমি তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু কোনদিন দেখিনি। সে এতবড় ঘটনা কেন ঘটাল সেটিও বুঝতে পারছিনা।`
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্বামী সহ পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, `যে আমার স্ত্রী, সন্তানদের কুপিয়ে মেরেছে আমি চাই, তার মরণও যেন সেভাবে হয়। তাকেও যেন কুপিয়ে মারা হয়।`
No comments