দেশে ২৫৫টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী? by পার্থ শঙ্কর সাহা

দেশে আদিবাসী জাতির সংখ্যা নির্ণয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে আদিবাসী জাতির (সরকারের ভাষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) সংখ্যা ২৫৫টি।


তালিকায় সাঁওতালদের বিভিন্ন গোত্রকে ও ওঁরাওদের পদবিকে পৃথক জাতি বলা হয়েছে। বাঙালি হিন্দুদের ক্ষেত্রেও তাই। তালিকায় ‘খ্রিষ্টান’ একটি পৃথক জাতি।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বলেছেন, এই তালিকা ভুল। জেলা প্রশাসকেরা কাজটি যত্নের সঙ্গে করেননি। আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন ব্যক্তিরা এবং আদিবাসী নেতারা বলেছেন, তালিকাটি আদিবাসীদের প্রতি প্রশাসনের অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, জেলায় আদিবাসী জাতির সংখ্যা জানতে চেয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়েছিল দেশের সব জেলা প্রশাসককে। দেশের আদিবাসী জাতির তালিকা তৈরির জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক আইনে ২৭টি জাতিসত্তার উল্লেখ ছিল। ওই ২৭টি বাদ দিয়েই জেলা প্রশাসকেরা আরও ২২৮টি জাতিসত্তার নাম পাঠিয়েছেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক আইন পাস হওয়ার পর তালিকাটি অসম্পূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেন আদিবাসীদের অনেকেই। ওই তালিকায় যেসব জাতির নাম ছিল না, তারা অসুবিধায় পড়ে, বিশেষ করে আদিবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট ৫ শতাংশ কোটায় ভর্তি বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে। কোটার সুযোগ পেতে স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের সনদ দরকার হয়। সমস্যা সমাধানে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে গত বছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার আদিবাসীদের একটি ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্মেলনের পর আদিবাসী জাতির তালিকা পাঠানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়। এ বছর আগস্ট মাসে সব তালিকা এসে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। তালিকাগুলো একত্র করে ২২৮টি জাতির নাম পায় মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে সভা হয়। সভায় তালিকা গ্রহণ না করে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন প্রমোদ মানকিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসকেরা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই শুনে শুনে এই তালিকা করেছেন। এ তালিকা অগ্রহণযোগ্য।
যত ভুল: কিসকু, টুডু, মুর্মু—এগুলো সাঁওতালদের বিভিন্ন গোত্রের নাম। এসব গোত্রকে জেলা প্রশাসকেরা পৃথক জাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। ওঁরাও জাতির পদবি কুজুর, কেরকটা, খালকো, তিগ্যা। এগুলো জাতি হিসেবে স্থান পেয়েছে তালিকায়।
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক পদবিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে জাতির তালিকায়। বিশ্বাস, বসাক, ঘোষ, পাল, দাস—এদের জাতি বলা হয়েছে। জাতির তালিকায় ‘খ্রিষ্টান’ও আছে। ওঁরাও জাতির নাম উরাং ও উড়াও উল্লেখ করায় সংখ্যা বেড়েছে। একই ঘটনা হয়েছে চাড়াল-চণ্ডাল, ঋষি-ঋষিদাসের ক্ষেত্রে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মেজবাহ কামাল বলেন, আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করেন, এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। আমলাতন্ত্র জড়িত হওয়ায় বিপত্তি ঘটেছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘এটি আদিবাসীদের প্রতি অবজ্ঞার নিদর্শন। আমাদের আমলাতন্ত্র আদিবাসীবান্ধব নয়—এই তালিকাই তার প্রমাণ।’
তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, তালিকাটি নির্ভুল করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাজ শেষ হলে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.