সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য হুমকি- ঠিকানার জন্য রিমান্ড
আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও অন্যান্য সাংবাদিকের তথাকথিত নাম-ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ড প্রার্থনার আবেদন সংবাদপত্রের প্রতি একটি হুমকি। এমনকি এই ঘটনা পুলিশের রাজনৈতিক অপব্যবহারের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
পত্রিকার কোনো প্রতিবেদন বা ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হলে সরকার নির্দিষ্টভাবে আইনি প্রতিকার লাভের পূর্ণ অধিকার রাখে। কিন্তু ২০১০ সালে সরকার যে প্রক্রিয়ায় পত্রিকাটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যত হয়েছিল, তা আইনি প্রক্রিয়াসম্মত ছিল না বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রকাশকসংক্রান্ত একটি জটিলতাকে ব্যবহার করে ২০১০ সালের ১ জুন পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর পরদিনই তেজগাঁও থানায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দানের অভিযোগে নতুন মামলা দায়ের করা হয়। এতে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ ৪০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পত্রিকাটির একজন মুখপাত্র বলেন, পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীদের মোট সংখ্যা ৪০০, যাঁদের সবাইকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার নির্দিষ্ট আসামিরা প্রায় আড়াই বছর ধরে জামিনে রয়েছেন। জিআর মামলা হিসেবে পাঁচ-ছয়জন সাংবাদিক নিম্ন আদালতে যথারীতি হাজিরা দিয়ে চলছিলেন। কিন্তু পত্রিকার সাংবাদিকেরা হঠাৎ জানতে পারেন, তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অপূর্ব হাসান আদালতে রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছেন। এই পরিদর্শকের কথায়, ‘সঠিক ও পূর্ণ নাম-ঠিকানার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের জামিন বাতিলপূর্বক এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করতে মর্জি হয়।’ এই সাংবাদিকদের মধ্যে পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, এমনকি জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন। এ রকম বাস্তবতায় পুলিশের পরিদর্শক তাঁদের ‘সঠিক ও পূর্ণ নাম-ঠিকানার বিষয়ে’ রিমান্ড চেয়ে পেশাগত অসদাচরণ করছেন। এই ঘটনা ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে পুলিশ বাহিনীর পেশাগত মর্যাদা ও নিরপেক্ষতা নির্লজ্জভাবে বিসর্জিত হওয়ার উদাহরণ বটে। ২২ অক্টোবর পত্রিকাটির শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারী ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। সেদিন রিমান্ডের শুনানি না হলেও আদালত আগামী ৩ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন।
আমরা স্মরণ করতে পারি, রিমান্ডকে যথেষ্ট নিরুৎসাহিত করে ইতিপূর্বে ঘোষিত সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় সরকার পদ্ধতিগতভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে। সুপ্রিম কোর্টের রিমান্ডসংক্রান্ত নীতিমালায় উল্লিখিত হাস্যকর কারণে রিমান্ড চাওয়ার বিষয়টি আদালতে নাকচ হওয়ার কথা। আমরা আশা করব, পুলিশ অবিলম্বে রিমান্ডের অন্যায্য আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেবে।
আমরা স্মরণ করতে পারি, রিমান্ডকে যথেষ্ট নিরুৎসাহিত করে ইতিপূর্বে ঘোষিত সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় সরকার পদ্ধতিগতভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে। সুপ্রিম কোর্টের রিমান্ডসংক্রান্ত নীতিমালায় উল্লিখিত হাস্যকর কারণে রিমান্ড চাওয়ার বিষয়টি আদালতে নাকচ হওয়ার কথা। আমরা আশা করব, পুলিশ অবিলম্বে রিমান্ডের অন্যায্য আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেবে।
No comments