যৌতুকের অভিশাপ-পলি আর রেণুর ভাগ্য একই
কোটালীপাড়ার মাদারবাড়ী গ্রামের গৃহবধূ পলি রানী বিশ্বাস এবং মধুখালীর গোন্দারদিয়া গ্রামের গৃহবধূ রেণু বেগম যৌতুকের দাবি মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বামীর পরিবারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়,
নিত্য গঞ্জনা সওয়া আর চুল কেটে নেওয়ার পর পলি রানী পিত্রালয়ে চলে গিয়ে প্রাণে বাঁচলেও রিনা বেগম নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন ফরিদপুর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। পলি রানীর বিয়ে হয় মাত্র পাঁচ মাস আগে আর রেণু বেগমের বিয়ের বয়স ১১ মাস। দেশে যৌতুকবিরোধী আইন কার্যকর থাকার পরও এটা সামাজিক ব্যাধির অভিশাপ হিসেবে আমাদের সমাজে কীভাবে শক্ত আসন গেড়ে বসেছে, তার প্রমাণ উলি্লখিত দুটি ঘটনা। যারা যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়েছে, সে অপরাধে শাস্তির বিধান থাকার কথা তাদেরও অজানা নয়। কিন্তু তার পরও এ ধরনের নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে কীভাবে? লক্ষ্য করার বিষয় হলো, দুই গৃহবধূর বিয়ের বয়স এক বছর পেরোনোর আগেই তারা যৌতুকের দাবি মেটানোর জন্য চাপ ও নির্যাতনের শিকার হন। আসলে আমাদের সমাজ এখনও নারীকে তার প্রকৃত মর্যাদার আসন ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত নয়। কি কর্মক্ষেত্র, কি পারিবারিক পরিবেশ_ কোথাও কি নারীর অগ্রযাত্রা বাধাহীনভাবে সম্পন্ন হচ্ছে? নারী উচ্চপদে আসীন হলেও আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাকে পুরুষের সমকক্ষ বলে মেনে নিতে চায় না। এ কারণেই নারীর অধিকার রক্ষার পক্ষে এখানে আইন করা হলেও সমাজ সে আইন সব সময় মেনে চলে না। এ জন্য প্রশাসনকে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কঠোর মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়। পলি রানী ও রেণু বেগমকে যারা যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ ও নির্যাতন করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। আমরা চাই, যৌতুকের জন্য এ দুটি নির্যাতন চালানোর ঘটনাসহ নারীর ওপর নির্যাতনের সব ঘটনাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিরোধ করা হোক। আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি যৌতুকের অভিশাপমুক্তিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে পারে।
No comments